ব্রাহ্মণ বংশে জন্ম গ্রহন করলেই তাকে ব্রাহ্মণ বলে না
বরং সংস্কার দ্বারা তার দ্বিজ পদবাচ্য হইয়া থাকে। সুতরাং সংস্কারগুলো যাতে লুপ্ত
না হয় সেই বিষয়ে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিৎ। সনাতন ধর্মে দশ বিধ সংস্কারের কথা বলা
হয়েছে। যা বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক সমাজেও স্বীকৃত। আজ আমি সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।
সংস্কারগুলো চার শ্রেণীতে বিভক্ত, যথা-
ক. গর্ভ-সংস্কার
১) গর্ভাধান ২) পুং-সবন ৩) সীমন্তোন্নয়ন
খ. শৈশব-সংস্কার
৪) জাতকর্ম ৫) নাম করণ ৬) অন্নপ্রাশন
গ. কৈশোর-সংস্কার
৭) চুড়া করণ ৮) উপনয়ন ৯) সমাবর্তন
ঘ. যৌবন-সংস্কার
১০) বিবাহ
০১) গর্ভাধানঃ-
গর্ভাধান দশ বিধ সংস্কারের মধ্যে প্রথম ও প্রধান। এর
উদ্দেশ্য সত্ত্ব গুনের উৎকর্ষ সাধন। ঋষিগণ বেদ আলোচনা দ্বারা স্থির করেছেন যে, পিতৃ শরীর হইতে উৎপন্ন হয় অস্থি, স্নায়ু ও মর্জ্জা এবং মাতৃ শরীর
উৎপন্ন হয় ত্বক, মাংস ও রক্ত এই ষড়্বিধ কোষের সমন্নয়ে মানবদেহ গঠিত। তাই
গর্ভাধান, গর্ভগ্রহণ যোগ্যতা তদুপযুক্ত সময় নিরুপণ করতঃ
সন্তানোৎপত্তিকালে যাহাতে জনক-জননীর মন পশু-ভাবাপন্ন না হইয়া সত্ত্ব-ভাবাপন্ন তাহাই গর্ভাধানের মূল
উদ্দেশ্য।
০২) পুং-সবনঃ-
পুং-সবন শব্দের অর্থ পুত্র সন্তান
উৎপত্তি। গর্ভগ্রহণের তৃতীয় মাসের দশ দিনের মধ্যে ইহা নির্বাহ করতে হয়। প্রথমে হোম
করিয়া স্বামী বধূর পিছনে দাঁড়িয়ে স্ত্রী-র কাঁধ স্পর্শ করিয়া ডান হাতের কর
নাভিদেশ স্পর্শ করিয়া নিম্নোক্ত মন্ত্র
পাঠ করিবে, “সূর্য, বরুণ, অশ্বিনীকূমার যুগল, অগ্নি, বায়ু যেমন পুরুষ, তোমার গর্ভেও এইরূপ পুরুষেরই
আবির্ভাব হউক”।
০৩) সীমন্তোন্নয়নঃ-
গর্ভধারণের ষষ্ঠ বা অষ্টম মাসে সীমন্তোন্নয়ন সংস্কার
করতে হয়। এর মূল কাজ হলো সীমান্ত বা সিঁথি তুলিয়া দেওয়া এর অর্থ এখন থেকে
পতিগামিনী না হওয়া বা স্বামীর সাথে সহবাস না করা। শেষে পতিপুত্রবতী (যে নারীর স্বামী ও পুত্র জীবিত আছে)রমনী গন বধূকে একটি বেদীর উপরে
বসাইয়া জল পূর্ণ ঘট/কলস দ্বারা মঙ্গল স্নান করাবেন এবং বধুকে বলবেন “তুমি বীর প্রসবিনী, জীববৎসা ও জীবপতিকা হও”।
০৪) জাতকর্মঃ-
সন্তান ভূমিষ্ট হইবার সাথে সাথে পিতা নবজাতকের মুখে যব ও
ব্রীহিচূর্ন (আউশ ধান) দ্বারা পরে স্বর্ণ দ্বারা ঘৃষ্টমধু
ও ঘৃত গ্রহন পূর্বক সদ্যোজাত সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করিবেন।
০৫) নামকরণঃ-
সন্তান ভূমিষ্ট হইবার দশ রাত্রির বা বর্ষ পূর্ন হইলে
নামকরণ করা হয়। অনেকে ষষ্ট রাত্রিতে নামকরণ করে থাকে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস
করে বিধাতা এই দিয়ে নবজাতকের ভাগ্য নির্ণয় করে থাকেন। অধুনা অন্নপ্রাশনের সময়ও
নামকরণ করা যায়।
০৬) অন্নপ্রাশনঃ-
পুত্র সন্তানদের ষষ্ঠ বা অষ্টম মাসে এবং কন্যা সন্তানের
পঞ্চম বা সপ্তম মাসে অন্নপ্রাশন / মুখেভাত দেয়া হয়।
০৭) চুড়া করণঃ-
গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তকে যে কেশ / চুল থাকে তাহা নিঃশেষে কাটিয়া উহা দ্বারা শিশুকে শিক্ষা ও সংস্কারের পাত্রী
ভূত করা হয়।
০৮) উপনয়নঃ-
বর্ন ভেদে উপনয়ন সময় ও নিয়ম পরিবর্তন হয়, ব্রাহ্মণ শিশু জম্মের অষ্টম বর্ষ হতে
ষোড়শ বর্ষ বয়ঃক্রম পর্যন্ত (ষোড়শ বর্ষের পর সাবিত্রী পতিত হয়, সুতরাং উপনয়ন হয় না)। ক্ষত্রীয় একাদশ হইতে দ্বাবিংশ বর্ষ পর্যন্ত এবং বৈশ্য
দ্বাদশ হইতে চতুর্বিংশ বর্ষ পর্যন্ত এই সংস্কারের অধিকারি। নির্দিষ্ট মাসের পরে
যদি কেহ উপনয়ন নিতে চায় তাকে ব্রাত্যতাদোষের প্রায়শ্চিত্ত করিয়া উপনয়ন নিতে হবে।
০৯) সমাবর্তনঃ-
এই নিয়ম এখন আর দেখা যায় না। পূর্বে উপনয়ন এর পর
গুরুগৃহে বাস করার রীতি ছিল এবং পাঠ সমাপ্তনান্তে গুরুর আদেশে গৃহে প্রত্যাগত হয়ে
গার্হস্থ্য জীবন শুরু করত।
১০) বিবাহঃ-
যৌবনাবস্থা একমাত্র সংস্কার এটি যাতে সকল জাতিরই এতে
অধিকার রয়েছে। বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী পুরুষ এক হয়। ধর্ম মতে ব্রাহ্মণ ২৪, ক্ষত্রীয় ২৮, বৈশ্য ৩২ এবং শূদ্র ১৬ পর ৪৮
বৎসরের মধ্যে এই সংস্কারের অধিকারি। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বিবাহ বিষয়ে খুব
জোর দিয়েছেন, তিনি বলেছেন “ইষ্ট-স্বার্থপ্রতিষ্ঠা যার / পরিণয়ের মূলে, তারই বিয়ে সার্থক হয় / বংশ ওঠে দুলে”।
আলোচনা প্রসঙ্গে এই দশ বিধ সংস্কার যাতে ঠিক ভাবে পালন
করা যায় সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে বলেছেন।
সূত্রঃ লোকনাথ ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা