The Web This Blog
Showing posts with label Flim. Show all posts
Showing posts with label Flim. Show all posts

Thursday, July 1, 2021

১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর

প্রতিদিনের মত সেইদিনও সকালে সূর্য্য উঠেছিল, কিন্তু সেইদিন চলচিত্রের একটি নক্ষত্র। দিনটি ছিল শুক্রবার বিবিসি বাংলা এর তথ্য অনুসারে যা যানা যায় তার কিছুটা বর্ননা দেয়া যাক। তখন আমি ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। ছোট বেলা থেকেই সিনেমা দেখা আমার একটা নেশার মত ছিল। তখন বেশ কয়েকটি সিনেমা দেখা হয়েছিল সালমান শাহ এর। সৃতি হাতরিয়ে যতটুকু মনে আছে এখন, ফুটবল খেলে মাঠ থেকে বিকালে বাসায় আসি। তখন খবরের শিরনামে একটিই খবর প্রিয়নায়ক সালমান শাহ আর নেই। অনেকের মত আমারও কিছুটা কষ্ট হয়েছিল খবরটি মেনে নিতে।

বিয়ের পর সালমান শাহ ইস্কাটনে থাকতেন তার স্ত্রী সামিয়াকে নিয়ে। সেদিন আনুমানিক সকাল সাতটার দিকে বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী সালমানের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ'র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না ।

নীলা চৌধুরীর (সালমানের মা) বর্ণনা ছিল এ রকম, "বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ'র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ'র স্ত্রী)"

সালমান শাহ'র বাবা সামিরাকে বললেন ইমনের সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের ফাইল সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী (সালমানের বাবা) প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।

বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ'বাসায় যান। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী। খাটের মধ্যে যেইদিকে মাথা দেবার কথা সেইদিকে পা। আর যেইদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছিল।

"আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী।

কিছুক্ষন পর ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।

সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।যদিও সালমানের বাবা-মার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।

পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ। সে সময় সারা দেশজুড়ে সালমানের অসংখ্য ভক্ত তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেন বলেও খবর আসে পত্রিকায়। সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের।

সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়না তদন্ত করা হয়। মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সে বোর্ডের প্রধান ছিলেন ডা. নার্গিস বাহার চৌধুরী।

ডা. নার্গিস বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "লাশটা আমি দেখেছি মরচুয়েরিতে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেন সদ্য সে মারা গেছে। এ রকম থাকলে তাঁর মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায়। আত্মহত্যার প্রত্যেকটা সাইন (চিহ্ন) সেখানে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ছিল। তাঁর শরীরে আঘাতের কোন নিশানা ছিল না।"

দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়। সালমান শাহ'র পারিবারিক বন্ধু চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলছিলেন, শেষের দিকে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।

সালমান শাহ'র মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রযোজকরা লোকসান কমিয়ে আনতে সালমান শাহ'র মতো দেখতে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে অসমাপ্ত সিনেমার কাজ সম্পন্ন করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন।

"পুরনো ঢাকার একটি ছেলেকে পেছন থেকে দেখতে সালমানের মতো মনে হয়। তার চুলের স্টাইল দেখতে পেছন দিকে থেকে সালমানের মতো। তখন তার ওপর পুরো ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব পড়ে গেল। সালমানের অসমাপ্ত ছবিগুলোতে লং শট, ব্যাক টু ক্যামেরা, ওভার-দ্যা-শোল্ডার শটের মাধ্যমে সে ছেলেটাকে ব্যবহার করা শুরু হলো," বিবিসি বাংলাকে বলেন শাহ আলম কিরণ।

সালমান শাহ'র মৃত্যুর সংবাদ দর্শকদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে এত বছর পরেও অনেকে তার প্রিয় নায়ককে ভুলতে পারেননি। সালমানের মৃত্যুর দুই দশকের বেশী পরেও তাকে নিয়ে দর্শকদের মাঝে আলোচনা থামেনি।

অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে, সালমান শাহ'র বিশেষত্ব কী ছিল? কেনই বা তিনি এতটা অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন?

চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এবং বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাকির হোসেন রাজু মনে করেন, সালমান শাহ যে সময়টিতে অভিনয়ে এসেছিলেন, তখন ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ছিল পালাবদলের সময়। ১৯৯২ সালে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ। জনপ্রিয় একটি হিন্দি সিনেমার অফিসিয়াল রিমেক ছিল 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'। এ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সালমান। পর্দায় তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়-দক্ষতা - সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের মনে স্থান করে নিতে সময় লাগেনি এ নায়কের। বাংলাদেশের সিনেমায় তিনি 'রোমান্টিক হিরো' হিসেবে পরিচিত পান।

পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলেন, "ও যাই করতো, সেটাই ভালো লেগে যেত। অল্প সময়ের মধ্যে এ ছেলেটা চলচ্চিত্রমোদীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।"

চলচ্চিত্র বিশ্লেষক জাকির হোসেন রাজু বলছিলেন, ১৯৭০-৮০'র দশকের নায়কদের পরে চলচ্চিত্রে সালমানের আবির্ভাব এক ধরণের তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল। তিনি ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতানায়ক রাজ্জাক, আলমগীর এবং ফারুকের পর সে সময় নতুন একদল তরুণ অভিনেতার আবির্ভাব হয়েছিল ঢাকার সিনেমা জগতে।

নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যত নায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল তাদের মধ্যে সালমান শাহ সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ছিলেন বলে উল্লেখ করেন জাকির হোসেন রাজু।

তাঁর বর্ণনায়, সালমান শাহ'র অভিনয়ের মধ্যে দর্শক একটা ভিন্নধারা খুঁজে পেয়েছিল। অনেকে আবার সালমান শাহ'র মধ্যে বলিউড নায়কদের ছায়াও খুঁজে পেয়েছিলেন।

সালমান শাহকে নিয়ে আলোচনা কখনোই থামেনি। মাত্র চার বছরের সিনেমা ক্যারিয়ারে সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অভিনয় জগতে নিজের এমন একটি স্থানটি করে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনো অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক - সবাই।

এখনো প্রতি বছর সালমান শাহ'র মৃত্যু দিবসে তাঁর অনেক ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে।

আর সালমানের অনেক ভক্তের কাছে তাঁর মৃত্যু এখনো একটি বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, সালমান শাহের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ হলো-

. চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তার অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা।

. স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ

. বেশি আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা।

. মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা, যা জটিল সম্পর্কের বেড়াজাল তৈরি করে অভিমানে রূপ নেয় এবং

. সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরে পিবিআই।


প্রথম পাতা


তথ্যসূত্রঃ- বিবিসি বাংলা

Sunday, April 18, 2021

সারাহ বেগম কবরী


 

কবরী, কবরী সারোয়ার, সারাহ বেগম কবরী, আমারা তাকে যে নামেই অভিভুত করিনা কেন বা ডাকিনা কেন তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের একজন নায়িকা যাকে বলা হতো ড্রিম গ্রাল, মিষ্টি মেয়ে, মিষ্টি হাসির নায়িকা। মৃত্যু সবারই হবে তিনিও চলে গেলেন। তারই স্বরনে আজকের এই লেখা।

পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল এর মেয়ে হিসাবে তিন জম্ম গ্রহন করেন ১৯ জুলাই ১৯৫০ বুধবার, বাবা আদর করে নাম রাখলেন “মিনা” মিনা পাল। পৈতিক নিবাস চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায়। জম্ম গ্রামের বাড়িতে হলেও তার শৈশব ও কৈশর কেটেছিল চট্টগ্রাম মহানগরীতে।

তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে কাজ শুরু করেন ১৯৬৩ সালে তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। ১৯৬৪ সালের দিকে পরিচালক সুভাষ দত্ত তার নতুন চলচ্চিত্রের জন্য একজন নতুন নায়িকা খুজছিলেন এমন সময় সুরকার সত্য সাহা সুভাষ দত্তকে মিনার খোঁজ দেন। মিনার ছবি দেখে সুভাষ দত্ত তাকে পছন্দ করেন এবং তাকে অডিশনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে বলেন। কণ্ঠ ও সংলাপ পরীক্ষার পর সুভাষ দত্ত তাকে তার পরিচালিত ও অভিনিত সুতরাং চলচ্চিত্রের “জরিনা” চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। সুতরাং সিনেমার লেখক সৈয়দ শামসুল হক মিনা নাম পরিবর্তন করে চলচ্চিত্রের জন্য তার নাম রাখেন “কবরী” যার অর্থ খোঁপা, চলচ্চিত্রের ভক্তরা পেল এক নতুন নায়িকা।

১৯৬৫ সাল পরিচালক জহির রায়হান তৈরি করলেন তার উর্দু ভাষার সিনেমা “বাহানা”।

১৯৬৮ সাল পরিচালক খান আতাউর রহমানের “সোয়ে নদীয়া জাগে পানি” ঐ বছরই পরিচালক দীলিপ সোম তৈরি করলেন “সাত ভাই চম্পা”, পরিচালক সুভাষ দত্ত একই বছর তৈরি করলেন “আবির্ভাব” চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই রাজ্জাক-কবরী জুটি শুরু হয়। এই বছর তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্র হল “বাঁশরী, “অরুণ বরুণ কিরণমালা”, “শীত বসন্ত” ও “চোরাবলী”।

১৯৬৯ সাল “পারুলের সংসার” পরিচালক কাজী জহির পরিচালিত “ময়না মতি”, পরিচালক নারায়ন ঘোষ মিতা পরিচালিত “নীল আকাশের নীচে” ব্যপক জনপ্রিয়তা ও ব্যবসায় সফল হয়।

জনপ্রিয়তার এই ধারাবাহিকতা অনুসারেই ১৯৭০ সালে রাজ্জাক-কবরী জুটি “যে আগুনে পুড়ি”, “ক খ গ ঘ ঙ”, “দর্প চূর্ণ”, “কাঁচ কাটা হীরে” ও “দীপ নেভে নাইচলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করেছিলেন। সে বছরই তিনি সুভাষ দত্তের “বিনিময়” চলচ্চিত্রে বাকপ্রতিবন্ধী এক তরুণী চরিত্রে অভিনয় করে প্রচুর প্রসংশা পান। একই বছর কাজী জহিরের পরিচালনায় “মীনা” নামের একটি উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র “স্মৃতিটুকু থাক”।

১৯৭২ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “জয় বাংলা” ও “লালন ফকির” লালন ফকির চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭৩ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “রংবাজ”। এই চলচ্চিত্রে তিনি পর্দায় লাস্যময়ী নায়িকা রূপে আবির্ভূত হন এবং তার চটুল অভিব্যক্তি দর্শকের নজর কাড়ে। চলচ্চিত্রটি তখন ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। একই বছর তিনি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত “তিতাস একটি নদীর নাম” -এর রাজার ঝি চরিত্রটি তার অন্যতম সমাদৃত কাজের একটি। তখন এটি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্র তালিকায় শীর্ষ স্থান লাভ করে।

১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় পরিচালক প্রমোদ করের চলচ্চিত্র “সুজন সখী। নায়ক ফারুকের সাথে জুটি করে এটি সেই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে দ্বিতীয় বার বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের “সারেং বউ” উপন্যাস অবলম্বনে ও পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্মিত “সারেং বউ” চলচ্চিত্রে নবিতুন চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। এবং একই সালে আবদুল্লাহ আল মামুনের “দুই জীবন” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আরেকটি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

কবরী প্রথমে চিত্ত চৌধুরীকে এক ব্যবসায়িকে বিয়ে করেন। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি সফিউদ্দীন সরোয়ারকে বিয়ে করেন। তখন তার নাম হয় কবরী সারোয়ার। ২০০৮ সালে তাঁদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী বিবাহিত জীবনে পাঁচ সন্তানের মা ছিলেন।

২০০৬ সালে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘আয়না’ মুক্তি পায়।

তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থ ‘স্মৃতিটুকু থাক’ প্রকাশিত হয়। যেখানে তার না জানা অনেক কথা তিনি লিখে গেছেন।

গত ৫ এপ্রিল ২০২১ সালে পরীক্ষায় কবরীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন রাতেই তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় পরে তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১৬ই এপ্রিল শুক্রবার রাত ১২ টা ২০ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত কবরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৭ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে বাসায় নেওয়া হয় সারাহ বেগম কবরীকে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখা হয় এবং পরে বাদ জোহর তার মরদেহ নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানেই গার্ড অব অনার প্রদানের পর তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা। এরপর সমাহিত করা হয় দেশের চলচ্চিত্রের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে।

এক নজরে তার অর্জিত কিছু পুরস্কার এর তালিকাঃ-

বছর

পুরস্কার

বিভাগ

চলচ্চিত্রের নাম

১৯৭৩

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

লালন ফকির

১৯৭৫

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

সুজন সখী

১৯৭৮

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

সারেং বৌ

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

১৯৮৮

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

দুই জীবন

২০০৮

বাচসাস পুরস্কার

সম্মাননা পুরস্কার


২০০৯

বাচসাস পুরস্কার

আজীবন সম্মাননা


২০১৩

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

আজীবন সম্মাননা


 

যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন হে প্রিয় নায়িকা …..........

তথ্যসূত্রঃ- কবরী 

Friday, January 8, 2021

স্টাইলিশ নায়ক জাফর ইকবাল


বাংলা
চলচ্চিত্রের প্রথম স্টাইলিশ নায়কদের অন্যতম জাফর ইকবাল । তিনি চিরসবুজ নায়ক হিসেবেই বেশী পরিচিত ছিলেন। আমার কাছে তার অভিনয়ের চেয়ে তার পোষাক পড়ার ধরন বা স্টাইল গুলোই বেশী ভাল লাগতো। ছোট হাতা টি-সার্ট ও জিন্স পন্টের সাথে ইন করার স্টাইল আমার এখনও মনে দাগ পড়ে আছে। আজ ৮ ই জানুয়ারী এই ক্ষণজন্মা নায়কের মৃত্যু দিবস, তাই তার সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করছি।

২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ সোমবার সালের ঢাকার গুলশানে জাফর ইকবালের জন্ম হয়। তার পিতার নাম এম ফজলুল হক ও মাতার নাম আসিয়া হক। তার গ্রামের বাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জ জেলায়। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ দেশের নামকরা সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এবং ছোট বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ একজন সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী। জাফর ইকবাল প্রথমে গায়ক হিসেবেই পরিচিতি পান, এরপর আসেন সিনেমায় নায়ক হিসেবে।

সংগীত পরিবারের ছেলে হিসাবে ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে রোলিং স্টোনব্যান্ড গড়েছিলেন। তিনি ছিলেন মার্কিন রক সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা Elvis Presley একজন অন্ধ ভক্ত।

সংগীত পরিচালক বড় ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে বদনামছবির হয় যদি বদনাম হোক আরওগানটি দিয়ে চলচ্চিত্র প্লেব্যাকে অভিষেক হয় তার। দেশের খ্যাতিমান সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সুরে অনেক গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরণী’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরওআশির দশকে কেন তুমি কাঁদালেশিরোনামে একটি অডিও অ্যালবামও প্রকাশ হয়েছিল তার। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর উদযাপন বিশেষ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছেগানটি।

খান আতাউর রহমান পরিচালিত আপন পরছবিটি ছিলো জাফর ইকবালের প্রথম ছবি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ক্ষণজন্মা এই তারকা। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। সূর্যসংগ্রামও এর সিকুয়েল সিনেমা সূর্যগ্রহণচলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে অভিনয় করেন। জাফর ইকবালের সাথে অভিনেত্রী ববিতা জুটি হয়ে প্রায় ৩০টির মত ছবি করেন।

১৯৭৫ সালে মাস্তানচলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় তাঁকে সে প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী একজন নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেন। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান নয়নের আলোসিনেমার মাধ্যমে। সর্বমোট ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জাফর ইকবাল। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল। তিনি প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। প্রেমিকসিনেমাটি তার প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা।

শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তার স্বাচ্ছদ্য বিচরণ। অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশকিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৮৪ সালে আনোয়ার পারভেজের সুরে রাজ্জাক অভিনীত বদনাম ছবিতে 'হয় যদি বদনাম হোক আরওতার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম। মূলত তিনি ছিলেন গিটারবাদক। ভালো গিটার বাজাতেন বলে সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে সেই সময় অনেক ছবির আবহসংগীত তৈরি করিয়েছেন। তার সেই ছবিগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি অবুঝ হৃদয়সেই সময় দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতা- দুই বোনের বিপরীতে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলেছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।

জাফর ইকবাল মানে কালজয়ী এক গায়ক আর অভিনেতার প্রিয় মুখ। তার গাওয়া গান ও অভিনীত চলচ্চিত্রের সুবাদে ভক্তদের হৃদয়ে এখনো ভালোবাসায় চির ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি। চিরকাল অম্লান থাকবেন ক্ষণজন্মা এই তারকা।

তার স্ত্রীর নাম সোনিয়া। যার দুটি চোখ দেখেই প্রেমে পড়েছিলেন আমার এই প্রিয় নায়ক। সেই চোখ দুটিই যখন জাফর ইকবালকে অপছন্দ করতে শুরু করলো তখন আর বেচে থেকে কি লাভ।  তাদের দুই সন্তান ছিল। চিত্র জগতের এক জনপ্রিয় নায়িকাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু তাকে জীবনে না পেয়ে মানসিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। তার এই বিপর্যয়ের কারণে পারিবারিক জীবনেও শান্তি পাননি। অশান্তির কারণে জাফর ইকবাল মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েন। মদ পান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শুরু করেন। পরবর্তীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। 

১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি বুধবার মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয় নায়ক জাফর ইকবাল। ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সবাইকে কাঁদিয়ে অকালে চলে যাওয়া এই জীবন গল্পের নায়ক জাফর ইকবাল।

এক নজরে তার অভিনীত চলচিত্রের নাম ও বিস্তারিত।

 

বছর

চলচ্চিত্র

ভূমিকা

পরিচালক

টীকা

১৯৭০

আপন পর

 

বশীর হোসেন

প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র

সাধারণ মেয়ে

শাহেদ

আর খান

 

একই অঙ্গে এতরূপ

 

 

 

১৯৭৫

ফেরারি

 

 

 

মাস্তান

 

 

 

বাঁদী থেকে বেগম

 

মোহসীন

 

১৯৭৬

সূর্য সংগ্রাম

 

আব্দুস সামাদ

 

এক মুঠো ভাত

জুম্মন

ইবনে মিজান

 

দিনের পর দিন

 

 

 

বেদ্বীন

 

 

 

অংশীদার

 

 

 

মেঘ বিজলী বাদল

 

 

 

আশীর্বাদ

 

 

 

মর্যাদা

 

 

 

১৯৭৮

ফকির মজনু শাহ

 

দারাশিকো

 

১৯৮৪

নয়নের আলো

জীবন

বেলাল আহমেদ

 

১৯৮৫

মিস লংকা

 

 

 

প্রেমিক

 

মঈনুল হোসেন

 

১৯৮৭

সন্ধি

ইমরান চৌধুরী

 

 

অপেক্ষা

 

দিলীপ বিশ্বাস

 

 

ফুলের মালা

 

 

 

১৯৮৮

যোগাযোগ

জাফর চৌধুরী

মঈনুল হোসেন

 

১৯৮৯

অবুঝ হৃদয়

 

 

 

১৯৯০

ভাইবন্ধু

 

 

 

ছুটির ফাঁদে

বিমল

শহীদুল হক খান

 

দোষী

 

 

 

বদনাম

 

 

 

প্রতিরোধ

 

 

 

গর্জন

 

 

 

১৯৯১

সন্ত্রাস

জয়

শহীদুল ইসলাম খোকন

 

১৯৯২

 

চোরের বউ

 

জহিরুল হক

 

শঙ্খনীল কারাগার

ফরিদ

মোস্তাফিজুর রহমান

 

অবদান

রাজা




 

 

জাফর ইকবালের গাওয়া আমার প্রিয় একটি গান দিয়ে শেষ করবো তার প্রতি শ্রদ্ধা। যার গীতিকার ছিলেন মনিরুজ্জামান মনির ও সুরকার আলাউদ্দিন আলী।


সুখে থাকো
ও আমার নন্দিনী
হয়ে কারো ঘরণী,
জেনে রাখো
প্রাসাদেরও বন্দিনী
প্রেম কভু মরেনি

 

চলে গেছ
কিছুতো বলে যাওনি

পিছুতো ফিরে চাওনি,
আমিও পিছু ডাকিনি
বাধা হয়ে বাধিনি


সুখে থাকো
ও আমার নন্দিনী
হয়ে কারো ঘরণী,
জেনে রাখো
প্রাসাদেরও বন্দিনী
প্রেম কভু মরেনি

 

তথ্যসূত্রঃ- জাফর ইকবাল