শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন নামটি খুব একটা পরিচিত নয় মানুষের কাছে, কিন্তু আজ তার প্রয়াণ দিবসে লেখাটি শুরু করলাম। এই ছেলেটির জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর রবিবার, সিলেট শহরের দাড়িয়া পাড়াস্থ তার নানা বাড়ি আব এ হায়াত ভবনে, যা বর্তমানে সালমান শাহ্ ভবন নামে পরিচিত। তার পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি ছিলেন পিতামাতার বড় ছেলে।
এতক্ষনে আপনারা অবশ্যই বুঝে গেছেন আমি কার কথা লিখতে চাচ্ছি। আজ তাকে নিয়ে আমার জীবনের কিছু ঘটনা ও অনুভুতির কথা বলবো।
সালমান পড়াশুনা করেছিলেন খুলনা জেলার বয়রা মডেল হাই স্কুলে। সৌভাগ্যক্রমে একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে এস,এস,সি পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচ, এস, সি ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ) থেকে বি,কম, পাস করেন।
সালমান প্রথমে মডেলিং দিয়ে তার মিডিয়া জগৎ শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে বিটিভির “আকাশ ছোঁয়া” নামক নাটক দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে দেয়াল (১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফিরে (১৯৮৫), সৈকতে সারস (১৯৮৮), নয়ন (১৯৯৫), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬) নাটকে অভিনয় করেন। নয়ন নাটকটি সে বছর শ্রেষ্ঠ একক নাটক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেছিল। এছাড়াও তিনি ১৯৯০ সালে মঈনুল আহসান সাবের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত পাথর সময় ও ১৯৯৪ সালে ইতিকথা ধারাবাহিক নাটকেও অভিনয় করেছিলো।
সালমান ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন। যিনি ছিলেন একজন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের ২টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র হচ্ছে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। প্রত্যেকেই পরবর্তী জীবনে যার যার কর্মক্ষেত্রে হয়ে উঠে সফল।
পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরেই সালমান শাহ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা সেই সময় তিনটি হিন্দি ছবি “সনম বেওয়াফা” “দিল” ও “কেয়ামত সে কেয়ামত তক” এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোন একটির বাংলা পুনঃনির্মাণ করার জন্য কিন্তু তিনি উক্ত ছবিগুলোর জন্য উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথমে নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচিত করলেও নায়ক খুঁজে পাচ্ছিলেন না সোহানুর রহমান সোহান।
একদিন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর “ইমন” নামের একটি ছেলের সন্ধান দেন। প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং সনম বেওয়াফা ছবির জন্য প্রস্তাব দেন, কিন্তু যখন ইমন “কেয়ামত সে কেয়ামত তক” ছবির কথা জানতে পারেন তখন তিনি উক্ত ছবিতে অভিনেয়র জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। সালমানের কাছে কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবি এতই প্রিয় ছিলো যে তিনি মোট ২৬ বার ছবিটি দেখেছেন বলে পরিচালক কে জানান। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাকে নিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।
নায়ক হিসেবে সালমান নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো বেশিরভাগ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সবকয়টিই ছিল সেই সময়ের ব্যবসাসফল সিনেমা।
পরবর্তীতে নায়িকা মৌসুমীর বিপরীতে সালমান আরও তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলো। “অন্তরে অন্তরে” (১৯৯৪), “স্নেহ” (১৯৯৪) ও “দেনমোহর” (১৯৯৫)। “স্নেহ” পরিচালনা করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, পরিচালক শিবলী সাদিক পরিচালিত অন্তরে অন্তরে হিন্দি চলচ্চিত্র আও পেয়ার করের ও শফি বিক্রমপুরী পরিচালিত দেনমোহর হিন্দি চলচ্চিত্র সনম বেওয়াফার সিনেমা দুইটি ছিল আনুষ্ঠানিক পুনঃনির্মাণ।
তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জহিরুল হক ও তমিজউদ্দিন রিজভী পরিচালিত "তুমি আমার" চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয়। পরিচালক জহিরুল হক চলচ্চিত্রটির কিছু অংশ নির্মাণ করার পর মারা যান। পরে তমিজউদ্দিন রিজভী বাকি কাজ শেষ করেন। এই চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মত তার বিপরীতে অভিনয় করেন নায়িকা শাবনূর। পরে শাবনূরের সাথে জুটি বেধে একে একে ১৯৯৪ সালে সুজন সখি, বিক্ষোভ, স্বপ্নের ঠিকানা। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় মহামিলন, ১৯৯৬ সালে বিচার হবে, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, জীবন সংসার, চাওয়া থেকে পাওয়া। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিলো প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভিতর আগুন সহ মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
সালমান শাহ মৃত্যুর আগে মন মানে না ছবির ৫০% কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন, তার মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক রিয়াজ কে দিয়ে ছবিটি করানো হয়। এছাড়াও কে অপরাধী, তুমি শুধু তুমি, প্রেমের বাজি সহ একাধিক মুভি সালমান শাহ অর্ধেক শুটিং করে মারা যান। পরবর্তীতে প্রেমের বাজি ব্যতীত বাকি সিনেমাগুলি অন্য নায়কদের দিয়ে নতুন করে শুটিং করা হয়। সালমানের অসমাপ্ত সিনেমার মধ্যে একমাত্র প্রেমের বাজি সিনেমার কাজ পরে আর শেষ হয়নি।
| 
			 বছর  | 
		
			 নাটক  | 
		
			 চরিত্র  | 
	
| 
			 ১৯৮৫  | 
		
			 আকাশ ছোঁয়া  | 
		
			 
  | 
	
| 
			 ১৯৮৮  | 
		
			 সৈকতে সারস  | 
		
			 রাব্বি  | 
	
| 
			 ১৯৯০  | 
		
			 পাথর সময়  | 
		
			 
  | 
	
| 
			 ১৯৯৪  | 
		
			 ইতিকথা  | 
		
			 ইউসুফ  | 
	
| 
			 ১৯৯৪  | 
		
			 দোয়েল  | 
		
			 
  | 
	
| 
			 ১৯৯৫  | 
		
			 সব পাখি ঘরে ফেরে  | 
		
			 
  | 
	
| 
			 ১৯৯৫  | 
		
			 নয়ন  | 
		
			 সুলতান  | 
	
| 
			 ১৯৯৬  | 
		
			 স্বপ্নের পৃথিবী  | 
		
			 শুভ  | 
	
| 
			 বছর  | 
		
			 চলচ্চিত্র  | 
		
			 চরিত্র  | 
		
			 পরিচালক  | 
		
			 টীকা  | 
	
| 
			 ১৯৯৩  | 
		
			 কেয়ামত থেকে কেয়ামত  | 
		
			 রাজ  | 
		
			 সোহানুর রহমান সোহান  | 
		
			 চলচ্চিত্রে অভিষেক  | 
	
| 
			 ১৯৯৪  | 
		
			 তুমি আমার  | 
		
			 আকাশ  | 
		
			 জহিরুল হক ও তমিজ উদ্দিন রিজভী  | 
		
			 
  | 
	
| 
			 অন্তরে অন্তরে  | 
		
			 শান  | 
		
			 শিবলী সাদিক  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 সুজন সখি  | 
		
			 সুজন  | 
		
			 শাহ আলম কিরণ  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 বিক্ষোভ  | 
		
			 অনিক  | 
		
			 মহম্মদ হান্নান  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 স্নেহ  | 
		
			 ইমন  | 
		
			 গাজী মাজহারুল আনোয়ার  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 প্রেমযুদ্ধ  | 
		
			 রাজা  | 
		
			 জীবন রহমান  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 ১৯৯৫  | 
		
			 দেনমোহর  | 
		
			 সরোয়ার  | 
		
			 শফি বিক্রমপুরী  | 
		
			 
  | 
	
| 
			 কন্যাদান  | 
		
			 শ্রাবন  | 
		
			 দেলোয়ার জাহান ঝন্টু  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 স্বপ্নের ঠিকানা  | 
		
			 সুমন  | 
		
			 এম. এ. খালেক  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 আঞ্জুমান  | 
		
			 সালমান  | 
		
			 হাফিজউদ্দিন  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 মহামিলন  | 
		
			 শান্ত  | 
		
			 দিলীপ সোম  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 আশা ভালবাসা  | 
		
			 আকাশ  | 
		
			 তমিজ উদ্দিন রিজভী  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 ১৯৯৬  | 
		
			 বিচার হবে  | 
		
			 সুজন  | 
		
			 শাহ আলম কিরণ  | 
		
			 
  | 
	
| 
			 এই ঘর এই সংসার  | 
		
			 মিন্টু  | 
		
			 মালেক আফসারী  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 প্রিয়জন  | 
		
			 নয়ন / জীবন  | 
		
			 রানা নাসের  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 তোমাকে চাই  | 
		
			 সাগর  | 
		
			 মতিন রহমান  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 স্বপ্নের পৃথিবী  | 
		
			 মাসুম  | 
		
			 বাদল খন্দকার  | 
		
			 
  | 
	|
| 
			 সত্যের মৃত্যু নাই  | 
		
			 জয়  | 
		
			 ছটকু আহমেদ  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত /১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬  | 
	|
| 
			 জীবন সংসার  | 
		
			 সবুজ  | 
		
			 জাকির হোসেন রাজু  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত / ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৬  | 
	|
| 
			 মায়ের অধিকার  | 
		
			 রবিন  | 
		
			 শিবলী সাদিক  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত / ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৬  | 
	|
| 
			 চাওয়া থেকে পাওয়া  | 
		
			 সাগর  | 
		
			 এম এম সরকার  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত / ২০ ডিসেম্বর, ১৯৯৬  | 
	|
| 
			 ১৯৯৭  | 
		
			 প্রেম পিয়াসী  | 
		
			 হৃদয় / জীবন চৌধুরী  | 
		
			 রেজা হাসমত  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত / ১৮ এপ্রিল, ১৯৯৭  | 
	
| 
			 স্বপ্নের নায়ক  | 
		
			 রাজু / রাসেল  | 
		
			 নাসির খান  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত / ৪ জুলাই, ১৯৯৭  | 
	|
| 
			 শুধু তুমি  | 
		
			 আকাশ  | 
		
			 কাজী মোরশেদ  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত / ১৮ জুলাই, ১৯৯৭  | 
	|
| 
			 আনন্দ অশ্রু  | 
		
			 খসরু  | 
		
			 শিবলী সাদিক  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত / ১ আগস্ট, ১৯৯৭  | 
	|
| 
			 বুকের ভিতর আগুন  | 
		
			 আগুন  | 
		
			 ছটকু আহমেদ  | 
		
			 মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি / ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭  | 
	
সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। ঢাকার ইস্কাটনে তার নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃত্ দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনও অমীমাংসিত । অনেকেই সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী সামিরার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন, এমনকি পরবর্তীকালে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরো কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় কিন্তু পরে এই মামলার আর কোন অগ্রগতি হয়নি ফলে সালমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আর উদঘাটিত হয়নি। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের তদন্ত বিভাগ জানায় যে সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন।
পরের পাতাঃ- ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্রঃ- সালমান_শাহ

No comments:
Post a Comment