আমি
বাংলাদেশের একজন অতি সাধারন
ছাত্র। এখন একজন ছাত্রীর বাবা।
শিক্ষা জীবন শুরু করি সিরাজুল
ইসলাম একাডেমী সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়,
গেন্ডারিয়া,
ঢাকা
থেকে। ১৯৮৮ ইং সনের ১লা জানুয়ারি
(সম্ভাব্য)
ভর্তি
হই প্রথম শ্রেনী তে রোল নং ৪১,
শাখা
ক-তে।
শ্রেনী শিক্ষিকা ছিলেন ছাবিহা
খাতুন ম্যাডাম। যতটুকু প্রথম
দিনের ঘটনা মনে পরে আমার ছোট
কাকা বিজয় কুমার সরকার আমাকে
নিয়ে যায় বিদ্যালয়ে,
একটি
বা দুইটি ক্লাস করার পর কান্না
কাটি শুরু করি তারপর বাড়ি চলে
আসা। আমাদের দ্বিতীয় শ্রেনী
পর্যন্ত পাঠ্য বিষয় ছিল চারটি
বাংলা,
গণিত,
পরিবেশ
পরিচিতি সমাজ,
ধর্ম।
আমাদের সময় বিদ্যালয়টি ছিল
L
সেপ
এক তলা,
এখন
তিন তলা বিশিষ্ট বিশাল ভবন।
কয়েকজন
ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল বিল্লাল,
আনিস,
ইকবাল
উল্লেখযোগ্য যারা সমসময় এক
সাথে চলা ফেরা শুরু করি। খুব
মজার একটি ঘটনা মাঝে মাঝে মনে
পরে এখনও। চতুর্থ ও পঞ্চম
শ্রেনীতে পড়া কালীন আমরা ছিলাম
বিদ্যালয়য়ের সবচেয়ে দুষ্ট
কিন্তু মেধাবী ছাত্রের দল।
আনিস ছাড়া আর কেও আমাদের ছবি
আঁকতে পারতো না। তাই চারু কলা
পরিক্ষার খাতায় আমাদের সকল
ছবি আনিস ই আঁকত আর আমরা চুপ
চুপ বসে থাকতাম। তখন আমরা
আরেকটি কাজ করতাম এই তিন চার
জন মিলে নাস্তা কিনে আনতাম
ড্যানিস,
বন
রুটু,
বাটার
বান ইত্যাদি যা পরীক্ষা শেষ
হলে খাওয়া দাওয়া করে পরীক্ষা
হল থেকে বেরা হতাম।
১৯৯৩
সালের জানুয়ারি মাসে ৬ষ্ঠ
শ্রেনীতে ভর্তি হই,
পুরাতন
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়
গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয়টি ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত।
এই বিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৮ সালে
বিজ্ঞান শাখা থেকে এস এস সি
পরিক্ষায় অংশগ্রহন করি এবং
১৯৯৯ সালে ৬১২ নাম্বার নিয়ে
১ম বিভাগে উর্ত্তীণ হই। অনেক
আশা ছিল ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার
হবো যদিও যোগ্যতা ও সামর্থ
কোনটাই ছিল না।
এস
এস সি পরিক্ষার পর থেকেই শুরু
করি শিক্ষকতা পেশা,
ভালই
নাম ডাক হচ্ছিল
আমার রাম
স্যার হিসাবে। তারপর সলিমুল্লাহ
ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হই একাদশ
শ্রেনীতে এবং ২০০১ সালে পাস
করি এইচ এস সি বানিজ্য বিভাগ
থেকে দ্বিতীয় শ্রেনীতে। ২০০৪
সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
এর অধিনে সরকারি
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
থেকে
বি বি এস পাস করি। তারপর যদিও
কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভর্তি
হই সেখান থেকে আর্থিক অনটনের
কারনে আর মাস্টার্স পরীক্ষা
দেওয়া হলো না।
এই
হচ্ছে আমার জীবনের লেখা পড়ার
ইতিহাস। আজকে এই লেখার উদ্দেশ্য
হচ্ছে আমাদের এই ছোট দেশটিতে
সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে
যেমন নিয়ম নীতি পরিবর্তন হয়
তেমন শিক্ষা ব্যবস্থারও ব্যপক
পরিবর্তন হয়।
একটি
দেশের শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড
এটা নানা ভাবে আমরা জেনেছি,
তাহলে
কেন বার বার বাংলাদেশের এই
মেরুদন্ড ভাংগা হচ্ছে,
কি
তার সার্থ,
কার
ই বা লাভ। ছোট বেলায় আমার ঠাকুর
দাদা বা নানা রা বলতেন আমদের
সময় এমন লেখা পড়া ছিল তোরা তো
কিছুই দেখস নাই পারস ও না।
আমরা যারা ২০ বছর আগে এস এস সি
পরিক্ষায় পাশ করেছি এখনকার
ছেলে মেয়ে দের বলতে ইচ্ছা করে
তোমরা তো কিছুই পার না। আমাদের
সময় যেই কঠিন পরীক্ষা হত। ১৯৯৮
সালে এস এস সি পরীক্ষায় পাস
করেছিল ৪৭.৯৬%
এখন
২০১৮ সালে পাশ করে প্রায় ৯০%
এর
মত। তাহলে শিক্ষার মান তো ভাল
হয়েছে বলা যায় না কি?
সবচেয়ে
দূঃখ লাগে যখন দেখি প্রাইমারী
পাস করে মাধ্যমিক,
উচ্চ
মাধ্যমিক তারপর বিশ্ববিদ্যায়
তারপর কর্ম জীবন লেখা পড়ার
কোন স্তরের সাথে উপরের কোন
স্তরে নাই কোন মিল তাই কর্মজীবনে
আমারা পরি নানান সমস্যায়।
এখন দেখা যায় প্রতিটি বাচ্চাদের
বিদ্যালয়ের সামনে অভিবাবক
মায়েদের বিশাল লাইন দেখে মনে
হতে পারে তারও সন্তানরে সাথে
পড়া লেখা করতে এসেছে। যেই
ক্লাস শেষ সন্তান নিয়ে মা টি
ছুটলেন নাচ,
গান
অথবা চিত্রাংকন শিখতে। সেইটা
শেষ করে বাসায় যেতে যেতে রাত
৭-৮
টা বাজে তারপর পরবর্তী দিনের
ক্লাসের জন্য তৈরি হওয়া।
এভাবেই চলছে আমাদের ছোট
সোনামণিদের জীবন। পরিক্ষায়
হয়তো ফলাফল ভাল হচ্ছে কিন্তু
মানষিকতার বিকাশ কি হচ্ছে
তাদের?
আমাদের
অভিবাবকরা তার সন্তানকে একটি
নামী দামী বিদ্যালয় থেকে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে
পারলে যে কি খুশি হয় তার ইতিহাস
আমরা দেখেছি। এত এত টাকা খরচ
করে আমাদের সন্তানরা কি শিখছে
তার দিকে কি আমরা লক্ষ করছি?
সেদিন
একটি খবর শুনে খুবই খারাপ
লাগলো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড
ক্ষ্যত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এখন আর বিশ্বের একশত বিশ্ববিদ্যালয়ের
তালিকায় নাই। তাহলে আমাদের
জাতীর কি হবে?
তাহলে
কি আমরা আর ভাল মানের সঠিক
শিক্ষা আমাদের সন্তানদের
দিতে পারবো না। ভাববার সময়
এসেছে যারা এই বিষয়ে কাজ করছেন।
Wednesday, May 15, 2019
Tuesday, May 14, 2019
সড়ক দূর্ঘটনা
পুরাতন একটি গল্প দিয়েই যাত্রা শুরু করি, একটি বাস দূর্ঘটনা ঘটার পর, ড্রাইভারকে হাসপাতালে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ:-
পুলিশ:- কি ভাবে দূর্ঘটনা ঘটলো?
ড্রাইভার:- স্যার আমার কোন দোষ নাই। আমি নতুন গাড়ি চালাই, আমার ওস্তাদ কইছে রাস্তায় কোন কিছু দেখলে তাকে সাইড দিয়ে গাড়ি চালাবি।
পুলিশ:- ভাল তো, তাহলে খালে পরলি কি ভাবে?
ড্রাইভার:- গাড়ি চালু করার পর কিছুদূর যাবার পর দেখি একটি মুরগি, হর্ন দিলাম সরে না, মুরগি কে সাইড দিলাম। তার কিছুদূর পর দেখি একটি গরু মাজা দুলিয়ে দুলিয়ে যাচ্ছে, তাকে হর্ন দিলাম গরু আমাকে সাইড দিল। আমি চলতে থাকি। তারপর দেখি একটি বুড়া লোক লাঠি ভর দিয়ে যাচ্ছে আমি আস্তে হর্ন দিলাম, লোকটি সরে গেল আমি তাকে সাইড কেটে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
পুলিশ:- ভাল তো চালাচ্ছিলি, তাহলে খালে পরলি কি ভাবে?
ড্রাইভার:- স্যার আমার কোন দোষ নাই। আবার গাড়ি চালানো শুরু করলাম, কিছুদূর যেতে না যেতেই দেখি একটি বট গাছ ও একটি ব্রিজ পাশাপাশি এখন কাকে সাইড দিবো বুঝতে না বুঝতে আমি দুইটাকেই সাইড দিতে গিয়ে খালে গিয়ে পরলাম, তারপর আমার কিছু মনে নাই স্যার।
দুঃখের মাঝে হাসি পায় এই হচ্ছে আমাদের দেশের ড্রাইভার কাকে সাইড দিবে আর কাকে দিবে না তা বুঝতে বুঝতেই দূর্ঘটনায় জীবন চলে যায়।
নিটোল টাটা কম্পানির স্লোগান, “একটি দূর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না”। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেবের প্রথম স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর রোজ শুক্রবার ইলিয়াস ভাইয়ের শুটিং দেখতে যাবার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। সেই বছরেই ১ লা ডিসেম্বর তিনি নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ জীবন শ্লোগানে নিরাপদ সড়ক চান আন্দোলনে নামেন।
এমনও হয়ে থাকে একজন ব্যাক্তির মৃত্যুতে পুরো পরিবারটাই নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। একটি সড়ক দূর্ঘটনা কি শুধু একজন চালকের কারনেই হয় নাকি পথচারির ও দোষ আছে। গত তিন বছর যাবত নিয়মিত ভাবে অফিসে সাইকেল চালিয়ে আসা যাওয়া করিছি। আমি খুবই শান্ত ভাবেই সাইকেল চালাই, মাঝে মাঝে এতটাই বিরক্ত হই যে ঘন্টা বাজাই তারপরও লোকজন সাইড দিতে চায় না।
বাংলাদেশে যেন এখন একটা নিয়ম হয়ে গেছে একটি দূর্ঘটনা ঘটবে তা নিয়ে কিছুদিন টকশো, পত্রিকায় বিশাল লেখা লেখি তারপর কিছুদিন গেলে সব শেষ। যদি টিভি বা পত্রিকায় দুর্ঘটনার ছবি ছাপা হয় তাহলে হয়তো কিছু টাকা পয়সা পাওয়া যেতে পারে তা না হলে সবটাই বাদ।
কারন যাই থাকুক, দেশের নিয়ম বা যাই থাকুক না কেন। যতদিন চালক ও জনগন সচেতন না হচ্ছে ততদিন দূর্ঘটনা কমার কোন সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
Subscribe to:
Posts (Atom)