The Web This Blog

Sunday, May 30, 2021

রামাচরন বাগচি ও তার প্রিয় বাছুর (শেষ অংশ)

২০১৬ সালের দিকে মামার কথার অবাধ্য হয়ে রামাচরন চাকরি ছেড়ে দেয়। এতে মামা এতাটাই দুঃখ পায় যে এখন তার সাথে ঠিক ভাবে কথাও বলে না যোগাযোগও করে না। ২০১৬ সালে রামাচরনের সাথে এক রাজহাসের খামার মালিকের সাথে পরিচয় হয়। খামার মালিক তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তাকে কয়কটি রাজহাসের ডিম দেওয়া হবে এবং সেটা লালন পালন করে ডিম ফুটে বাচ্চা হলে সেটা বিক্রি করে যা লাভ হবে তার তিন ভাগের এক ভাগ রামাচরন পাবে। রামাচরন রাজি হয় কারন তার কোন অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে না। এবং উল্লেখ থাকে যে খামারে যদি আর্থিক ক্ষতিও হয় তার কোন প্রভাব রামাচরনের উপর পরবে না। কারন খামারের মালিকানা ছিল সেই মালিকের একক নামে।

ছেলেটি দীর্ঘ বছর চাকরি করলেও রাজহাস লালন পালন সম্পর্কে কোন ধারনা বা অভিজ্ঞতা ছিল না। চাকরি ছেড়ে যখন পুরোপুরি খামারের দায়িত্ব রামাচরন পায় তখন দেখে ডিমগুলো রাজহাসের নয় পাতি হাসের। ছেলেটি হতাস হয়। কিন্তু কিছু করার নেই রামাচরন পূজনীয় একজনকে কথা দেয় তার চাকরি করার আর ইচ্ছা নেই। কারন তার গুরুদেব চাকরি করাকে কিছুটা অপছন্দ করতেন। রামাচরন দোটানায় পরে এখন হাবুডুবু খায় হায় হতাশ হয়। চাকরি করবেনা যেমন ঠিক আবার যদি রাজহাসের খামার থেকে চলে যায় তাহলে কর্মচারীদের কি হবে এই ভেবে থেকে যায় রামাচরন।


বাকি অংশ …......

 

রামাচরন বাগচি ও তার প্রিয় বাছুর (প্রথম অংশ)

 

Friday, May 14, 2021

রামাচরন বাগচি ও তার প্রিয় বাছুর (প্রথম অংশ)

ঈদের বন্ধ, ভাবলাম ঘরে বসে বসে কি করা যায়? তাই একটি রুপক গল্প লিখতে বসলাম। আমার কাছে রুপক গল্প লিখতেই বেশি ভাল লাগে কারন এই গল্পগুলো পাঠক নিজের মত পড়ে ও ভাবতে পারেন। অনেক বছর যাবত ব্লোগে লিখে আসছি এমন কিছু রুপক গল্প। দেশ, সমাজ, সমসাময়িক ঘটনা ইত্যাদি বিষয় থাকে আমার সেই গল্পগুলোতে। Indian Daily Soap Opera  গুলো দেখলে বুঝা যায় যার সাথে বাস্তবের মিল আছে ২০% বাকী পুরটাই রুপক বা কল্পনানির্ভর। কিন্তু সাধারন মানুষ এই নাটকগুলোকে এতটাই জীবনের সাথে আপন করে নেয় যে, সবাই সেই নাটকের কোন না কোন চরিত্রের সাথে নিজেকে খুজে পায়।

বাংলাদেশে রুপক গল্পকার হিসেবে আমার একজন ভালোলাগার লেখক হানিফ সংকেত, তিনি সমাজের অনেক ঘটনাকে তার মত করে রুপক আকারে উপস্থাপন করেন। তাই আজকের লেখাটি তাকে উৎসর্গ করলাম।

আজকের গল্পের নায়ক বা প্রধান চরিত্রটি পুরান ঢাকায় জন্ম ও বড় হয়ে উঠা এক কিশোরকে নিয়ে। রামারচরন বাগচি তার নাম, ছেলেটি স্বপ্ন দেখতে ও নতুন নতুন কিছূ আবিস্কার করতে ভালোবাসে। নব্বই দশকে কৈশোর বয়সে যখন টিভিতে সাঁওতালি সুন্দরী কোন মেয়ের নাচ দেখত তখন ভাবতো কোন সাঁওতালি মেয়ে বিয়ে করে পাহাড়ে গিয়ে বসবাস করবে। সুন্দর প্রকতি খাবে-দাবে পাহাড়ে পাহাড়ে বেড়ানো যাবে আর কাজ করবে। জীবনের বেশি কিছু চাওয়ার নাই। কিছুটা বড় হবার পর সেই স্বপ্নটা বাদ পরে গেল।

ঠাকুরমা-র আদরে বেড়ে উঠা ছেলেটি খেলাধুলায় খুব ভাল করতে থাকে, প্রিয় খেলা ফুটবল। প্রিয় খেলয়ার সেই সময়কার ইতালীর Roberto Baggio. স্বপ্ন দেখতে যে ছেলেটি ভালবাসে সময়ের সাথে সাথে এবং সংসারের আর্থিক অনটনের কারনে একে একে স্বপ্নগুলো হারিয়ে যেতে থাকে, কারন স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক তফাত।

বিটিভি তে কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান দেখে তার সখ হলো লেখা পড়া শেষ করে একটি আধুনিক কৃষি খামার দেবার। এস এস সি পরিক্ষা শেষ, ঠাকুরমা বললো কি করা যায়। বসে থেকে তো লাভ নাই রে ভাই। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে একটি মাত্র গাধা দিয়ে শুরু হলো তার গাধাকে মানুষে পরিনিত করার প্রকল্প। অল্পদিনের মধ্যে তার খামারে বেশ কিছু গাধা-গাধি আসতে থাকে। কয়েক বন্ধু মিলে ভাবতে থাকে একটি বড় গাধাদের খামার দিলে কেমন হয়। কিন্তু আর হয়ে উঠেনি। বেশ কয়কটি গাধা এখন মানুষে পরিনিত হয়েছে এবং দেশের জন্য কাজ করছে।

এইচ এস সি পরিক্ষার পর ভাবতে থাকে কি করা যায়, লেখা-পড়ার পাশাপাশি স্থায়ি কিছু আয় করা যায় কিনা। চাকরি খুজতে খাকে কিন্তু পায় না। ২০০৪ সালের দিকে এক বান্ধবী বললো তোমাকে একটি মুরগীর খামারে নিয়ে যাই। আমি সেখানে মুরগী লালল পালন শিখছি। কারন এখন সারা পৃথিবীতে মুরগীর ব্যপক চাহিদা। ছেলেটি গিয়ে ভর্তি হলো মুরগীর চিকৎসা কিভাবে করা যায় তার প্রশিক্ষন নিতে।

প্রশিক্ষন চলাকালীন তার সাথে অল্প সময়ের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সবার সাথে সক্ষতা বারতে থাকে। কোর্স শেষ হলে কিছুদিন ইন্টার্নী করে ছেলেটি। তখনই সৌভাগ্যক্রমে সেই প্রতিষ্ঠানের মুরগীর ডাক্তারটি চাকরি ছেড়ে দেয়। কোর্স ফলাফল ভাল থাকায় এবং প্রশিক্ষকের সুদৃষ্টি থাকার ফলে চাকরি পেয়ে যায় ছেলেটি। তখনই প্রশিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে খুবই গভির ভাতৃতের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।

সময়ের ব্যবধানে আর বেশকিছু খামারে চাকরি করে ছেলেটি। ছেলেটির জীবনে বড় হয়ে উঠার ক্ষেত্রে সেই মুরগীর খামারের প্রশিক্ষক এর ভূমিকা অপরিহার্য। ২০০৭ সালে সেই প্রশিক্ষকের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক মানের একটি বাঘের খামারে ছেলেটির চাকরি হয়। বাঘের খামারটি ছেলেটির জীবনকে ব্যপক পরিবর্তন করে দেয়। জীবনকে সে নতুন ভাবে চিনতে শুরু করে। চার বছর সেই খামারে সুনামারে সাথে চাকরি করে ছেলেটি। সেখানে প্রিয় এক বড় ভাইয়ের সাথে তার পরিচয় ও সক্ষতা হয়। জীবন ও তার উদ্দেশ্য ঠিক করতে থাকে ছেলেটি, আর চাকরি নয়, এখন ব্যবসা করতে হবে। হাতে প্রচুর টাকা। সেই প্রিয় ভাইটি বলেছিল চাকরি ছেড়না তুমি, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে থাকো ও শিখতে থাকো। চাকরি নিজের জন্য আর ব্যবসা করবে অপরকে ভাল রাখার জন্য।

শ্রধেয় মুরগীর খামারের সেই প্রশিক্ষকের সাথে কিছুটা অভিমান করে চাকরি ছেড়ে শুরু করলো ব্যবসা, কিন্তু কোনটাই আর লাভের মুখ দেখলো না। একে একে সব ব্যবসা ও জামানো টাকা যখন শেষ। সংসারের কারনে আবার সে একটি কুমিরের চামড়া রপ্তানীর খামারে চাকরি করে। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে সুনাম অর্জন করে। তার মামা বলেছিল আমি কিছুদিন পর ছোট একটি কুমিরের চামড়া রপ্তানীর খামার দিবো। ভালভাবে কাজ করতে খাকো। কিন্তু সেখানে কিছুতেই ছেলেটির মন বসে না। কারন ছেলেটি একটি ধর্মীয় আদর্শে মানুষ, যেখানে শুধু নিজে ভাল থাকলে চলবে না তোমার সমাজ ও দেশের জন্য কিছু একটা করতে হবে যাতে অন্যকেও ভাল রাখা যায়।

২০১৩ সাল রামাচরন বিয়ে করে মানিকগঞ্জ জেলার কবিতা বালা নামের এক শিক্ষিত মেয়েকে। সেও কিছুদিন যাবত চাকরি করে বেশ টাকা সঞ্চয় করেছে বিয়ের পর নিজে কিছু করার জন্য। কবিতা বালা একদিন বলে, “আমি চাইনা আমার সন্তানরা বড় হয়ে চাকরি করুক।” কিন্তু কি ব্যবসা করবে তাও তারা ঠিক করতে পারছে না। রামাচরন ভাবে তারা একটি নিজের নামে কৃষি খামার দিবে। কারন এই বিষয়েই রামাচরনের বিশেষ জ্ঞান আছে। যেখানে হাস, মুরগি, গরু, হরিন, বাঘ, কুমির সবই পাওয়া যাবে একই খামারে। কবিতা বালা রামাচরনের অনুপ্রেরনায় ঘরে বসে অনলাইনে প্রশিক্ষন নিতে থাকে। কিছুতেই কিছু হয়ে উঠছিলনা কারন যতবার খামার চালু করবে ভাবে ততবারই কোন না কোন সমস্যা রামাচরনকে পিছে ফেলে দেয়।


কি করবে ভাবতে ভাবতে ই চলে যায় জীবনের আরো কয়েকটি বছর …....................


রামাচরন বাগচি ও তার প্রিয় বাছুর (শেষ অংশ)