The Web This Blog

Wednesday, April 21, 2021

জীবনকে যে-ভাবে বলি দেবে, নিশ্চয় তেমনতর জীবন লাভ ক'রবে


সত্যানুসরণ যতবার পড়ি ততবারই নতুন থেকে নতুনত্বর লাগে, মনে হয় এই কথাগুলোকি আগে পরেছিলাম? কয়কদিন আগে মন্দিরে আমাকে আলোচনা করতে বলাহয়েছিল “জীবনকে যে-ভাবে বলি দেবে, নিশ্চয় তেমনতর জীবন লাভ ক'রবে”। তাই ভাবলাম কথাগুলো লিখে রাখি যদি কারো কোন কাজে লাগে।

সত্যানুসরণ-এ শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন, একটা চাইতে গিয়ে দশটা চেয়ে ব'স না, একরেই যাতে চরম হয় তাই কর, সকলগুলিই পাবে। জীবনকে যে-ভাবে বলি দেবে, নিশ্চয় তেমনতর জীবন লাভ ক'রবে। যে-কেহ প্রেমের জন্য জীবন দান করে, সে প্রেমের জীবন লাভ করে। উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হও, আর প্রশান্তচিত্তে সমস্ত সহ্য কর, তবেই তোমার উদ্দেশ্য সফল হবে।

কথাগুলো একেকজনের কাছে একএকরকম লাগতে পারে। মূল আলোচনার আগে অন্যান্য অবতাররা কে কি বলেছিলেন এমন কিছু কথা সংগ্রহ করলাম।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যে কেবল নিজের দুঃখকে আপন করে জীবন কাটায় সে শক্তিহীন হয়ে পড়েকিন্তু যে ব্যাক্তি সমগ্র সমাজের দুঃখ আপন করে জীবন কাটায় সে শক্তিশালী হয়ে ওঠে

বাইবেল এর, ইউহোন্না ৩ এর ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

. যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পায়। কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।

মানুষের শক্তি রয়েছে নিজেকে দমন করার। তাই বুদ্ধ বলেছেন: ‘যো সহস্সং সহসসেন সঙ্গামে মানুষে জিনে/ একঞ্চ জেয়্যমত্তানং স বে সঙ্গামজুত্তমো।/’- যে ব্যক্তি যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষকে জয় করে, তার তুলনায় যিনি কেবল নিজেকে জয় করেন, তিনিই সর্বোত্তম সংগ্রাম জয়ী।

পৃথিবীতে মানুষ জম্মগ্রহনের পরথেকেই চাওয়ার শুরু হয়, নতুন সন্তানের বাবা চায় ছেলে-মেয়ে ডাক্তার হোক তো মা চায় সে ইঞ্জিনিয়ার হোক। বাবা চায় সরকারী বিদ্যালয় ভর্তি করি তো মা চায় ভালো বেসরকারী বিদ্যালয়। আমৃত্যু মানুষের চাওয়ার শেষ হয় না।

তুমি যদি একজন ডাক্তার হতে চাও তাহলে তোমাকে অবস্যই MBBS পাশ করতে হবে আবার যদি ইঞ্জিনিয়ার হতো চাও তোমাকে BUET এ ভর্তি হতে হবে। তুমি যদি একজন দক্ষ চোর হতে চাও তোমাকে একজন ওস্তাদের কাছের তার প্রশিক্ষন নিতে হবে। জীবন তোমার তুমি কোন দিকে নিয়ে যাবে সেটা তোমারই একন্ত ব্যাক্তিগত। তুমি ডাক্তারই হও কিংবা ইঞ্জিনিয়ার তুমি যাই হও যদি সফল হতে পারো তাহলেই তোমার যেমন ভাল দেশের ও ভাল।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন দশটা না চেয়ে যেকোন একটি চাইতে এবং সেটাই যেন চরম হয়। তাহলেই সব পাবে। এই সম্পর্কে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের একটি ঘটনা মনে পরছে,

পিতা গত হয়েছেন নরেনের বেশ কিছুদিন। শত করেও অভাবকে দূরে সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বাড়িতে মা-ভাই-বোনের কষ্ট মিটবে কীসে? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে গিয়ে পড়লে নরেন। ‘আপনার মাকে একবারটি বলুন’।

অবাক হয়ে তাকান ঠাকুর, ‘কি বলব রে?’

নরেন ক্লিষ্টকণ্ঠে বলে ওঠে, ‘মা-ভাই-বোনের কষ্ট আর দেখতে পারি না। মায়ের কাছে বলুন আপনি যদি একটা চাকরি বাকরি হয় আমার...’

রামকৃষ্ণ শান্তভাবে চান নরেনের চোখে, ‘আমার মা, তোর কে?’

কালী মানে না নরেন। তার কাছে মা প্রস্তরপুত্তলিকা! মাথা হেঁট করে থাকে নরেন, ‘আমার কে তাতে কি আসে যায়? আপনার তো সব। বলুন না যাতে একটু টাকাকড়ির মুখ দেখি।’

ওরে ও সব বিষয়ের কথা আমি কইতে পারব না। ও আমার কাছে বিষ। তুই বল। একবার মা বলে ডাক’।

নরেন বলে, ‘আমার ডাক আসে না’। ‘তাই তো তোর এত কষ্ট। ওরে একবার তাঁর কাছে গিয়ে বল। মা তো মা জগজ্জননী। তিনি মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন? আজ মঙ্গলবার। রাত্তিরে কালীঘরে গিয়ে প্রণাম করে মার কাছে যা চাইবি তিনি তাই দেবেন’।

সত্যি?’

দ্যাখ না, সত্যি কি না!’

নরেন কালীঘরে প্রবেশ করল। রাত্রি একপ্রহর কেটে গেছে। মন্দিরে কেউ নেই। শুধু নরেন আর মা ভবতারিণী। মা আনন্দময়ীর ত্রিলোকমোহিনী মূর্তি। এখানে কোথাও কোন দুঃখ নেই, শোক নেই, অভাব-অভিযোগ নেই। কেবল এক অপার শান্তি বিরাজমান। এই মায়ের সামনে কি চাইবে নরেন? সে প্রণাম করে বলে উঠল, ‘মা, জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও, বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও’।

ফিরে এল নরেন ঠাকুরের কাছে। ‘কি রে কি চাইলি? টাকাকড়ি চাইলি?’

নাঃ, সব ভুল হয়ে গেল, চাইতে পারলাম না।’

ঠাকুর বললেন, ‘যা যা আবার যা। প্রার্থনা করে বল মা আমায় চাকরি দাও, টাকাকড়ি দাও...’

নরেন আবার এসে দাঁড়াল মায়ের সম্মুখে। কিন্তু আবার এ কি হল তার? কি চাইলে সে মায়ের কাছে? তুচ্ছ টাকাকড়ি? না না, তা সে কেমন করে চায়? ‘মা আমাকে জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য দাও’।

ফিরে এল নরেন ঠাকুরের কাছে।

কি রে চাইলি?’

নাঃ এবারেও পারলুম না। মাকে দেখামাত্র কেমন আবেশ হয়, কিছুই মনে করতে পারি না’।

দূর বোকা, আর একবার যা। মনকে বশে রেখে মায়ের কাছে যা চাইবার চেয়ে নে’।

নরেনকে মন্দিরের ভেতরে ঠেলে পাঠালেন ঠাকুর।

নরেন দেখলে শুদ্ধা চৈতন্যময়ী মা রয়েছেন চরাচর ব্যাপ্ত করে। সেখানে নিরানন্দের কোনও স্থান নেই। সবেতেই আনন্দের প্রকাশ। হীনবুদ্ধির মতো সে চৈতন্যময়ীর কাছে টাকাপয়সা চাইব? ‘মাগো, আর কিছু চাই না, কেবল জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য দাও’। বারে বারে প্রণাম করতে লাগল নরেন।

কি রে কি চাইলি’? জিজ্ঞেস করলেন ঠাকুর।

চাইতে লজ্জা করল।’

ঠাকুর হাসলেন। আনন্দে হাত বুলিয়ে দিলেন নরেনের মাথায়। ‘মা বলে দিয়েছেন মোটা ভাত কাপড়ের অভাব তোদের কোনওদিন হবে না’।

পরবর্তী জীবন কি হয়েছিলেন সেই বিষয় আমরা সবাই জানি।

জীবনকে যে-ভাবে বলি দেবে, এখানে বলি মানে কি কিছু হত্যা করে ভগবান বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করা কে বুছিয়েছেন ঠাকুর? বলি শব্দের অর্থ বাংলা অভিদান থেকে পাই

* যজ্ঞাদিতে নিবেদ্য বস্তু।

* যজ্ঞাদি উপলক্ষ্যে প্রাণীহত্যা বা হন্তব্য প্রাণী (বলির পাঁঠা)

* উত্সর্গ, বিসর্জন (নিজের স্বার্থ বলি দেওয়া)

* উপহার।

* জীবগণকে খাদ্যদান বা প্রদত্ত খাদ্য (গৃহবলিভুক)

* ভূতবলিরূপ যজ্ঞ।

* রাজস্ব।

* বামন অবতারে বিষ্ণুর দ্বারা পরাজিত দৈত্যরাজ। [সং. √ বল্ + ]

ইত্যাদি।

শ্রীশ্রীঠাকুর প্রভু রামচন্দ্র এর ভক্ত হনুমান কে শ্রেষ্ঠ ভক্ত বলেছেন, হনুমান প্রথমে প্রভু রামচন্দ্রের কাছে এসেছিলেন যদি মন্ত্রী হওয়া যায় সেই আশায়। কিন্তু প্রভুকে এতটাই ভালবাসলেন যে তার সব চাওয়া একতে মিলে গেল মানে প্রভুকে কিভাবে খুসি রাখা যায়।

হনুমানের লংকা যাত্রাটি যদি একটু সংক্ষেপে বর্ননা করা যায়, তাহলে দেখা যায়। তিনি প্রভুর জন্য কি না করতে পারেন। জাম্মুবান যখন হনুমানকে আদেশ করলেন তুমিই একমাত্র যেকিনা লংকা যেতে পার। হনুমান বললেন আপনারা যদি আদেশ করেন করেন আর প্রভুর ইচ্ছা যদি হয় তাহলে পারবো।

হনুমান ভারতের মহেন্দ্র নামক পর্বতের চূড়া থেকে থেকে আকাশপথে অগ্রসর হওয়ার জন্য লাফ দিলেন। কিছুদুর যাওয়ার পর তার পথ আগলে দাড়াল “মৈনাক” পর্বত। যিনি দেবী পার্বতী ও দেবী গঙ্গার ভ্রাতা এবং দেবরাজ ইদ্রের কারনে সমূদ্রে আত্মগোপন করে ছিলেন। মৈনাক পর্বত কিছুটা সময় বিশ্রাম করতে বলেন হনুমানকে। কিন্তু তিনি বিনয়ের সাথে বলে এখন সময় নেই পরে একসময় তার কথা রাখবেন। কারন প্রভুর কাজ শেষ না করা পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম নিতে নারাজ।

সেখান থেকে বিদয় নিয়ে আবার তিনি লাফ দিলেন। স্বর্গের সমস্ত দেবতা হনুমানজীর প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং শক্তি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন, কিছুদূর যাবর পর আবার বাধা হয়ে দাড়ালেন তারা সর্প মাতা সুরসা”কে প্রেরণ করেছিলেন। সুরসা দৈত্যাকার রাক্ষসীর রুপ ধারন করে হনুমানের পথ আটকে দেন এবং বলেন এই পথ দিয়ে যেতে গেলে তার মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে তবেই যাওয়া যাবে। এই কথা শুনে হনুমান নিজের শরীরের আকৃতি বিশালাকার করে তোলেন। হনুমানের বিশালাকৃতি দেখে সুরসাও নিজের মুখের আকৃতি বিশালাকার করে তোলে। এইবার হনুমান হঠাৎ করে নিজেকে তার ক্ষুদ্র রুপ ধারণ করেন এবং তাঁর মুখের মধ্যে প্রবেশ করেন এবং নাক থেকে বেরিয়ে আসেন।

সেখান থেকে বিদয় নিয়ে আবার তিনি লাফ দিলেন। আকাশ ও সাগরের দুটি বাধার সম্মুখীন হওয়ার পরে হনুমান তাঁর তৃতীয় বাধা দানবী “সিংহিকা” নামক এক দানবীর বাধায় পড়েছিলেন। এই সিংহিকা দানবী তার ক্ষমতা বলে হনুমানজীর ছায়া ধরে তাকে গিলে ফেলেছিল। হনুমানজী দানবীর শরীরের ভেতরে গিয়ে তার ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্ট করে তাকে হত্যা করে। এইভাবে হনুমানজী তার তৃতীয় বাধাও বীরত্বের সঙ্গে দূর করেন।

সেখান থেকে বিদয় নিয়ে আবার তিনি লাফ দিলেন। এরপর লঙ্কায় পৌছে দেখেন প্রবেশ দ্বারে সমুদ্র তটে হনুমানকে বাধা দেন লঙ্কার পাহারাদার “লঙ্কিনী”। হনুমানজী রাতে সবার অলক্ষে লঙ্কায় প্রবেশ করার পরিকল্পনা করলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হনুমানজী রাতে যখন লঙ্কায় প্রবেশ করতে যাবেন তখনই তিনি লঙ্কার অতন্দ্র প্রহরী রাক্ষসী লঙ্কিনীর সম্মুখীন হন। তিনি হনুমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি একজন অনুপ্রবেশকারী তখন তিনি তাকে আক্রমণ করেন এবং সেই লড়াইয়ে লঙ্কিনী পরাস্ত হন।

লঙ্কিনী ছিলেন ব্রহ্মার বাসস্থানের একজন প্রহরী। ব্রহ্মার অভিশাপে তাকে রাক্ষস কুলের বাসভবনের প্রহরী হতে হয়েছিল। ব্রহ্মা তাকে বলেছিলেন যে, সে তখনই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবেন যখন কোনও বানর তাকে যুদ্ধে পরাজিত করবে এবং এভাবেই তার অভিশাপের অবসান ঘটবে।কিছুক্ষণ পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে এই বানরটি কোনও সাধারণ বানর নয়। তিনি ব্রহ্মার অনুগ্রহের কথা স্মরণ করেন। তত্ক্ষণাত লঙ্কিনী হনুমানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং তিনি বুঝতে পারেন যে ব্রহ্মার ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হতে চলেছে।

প্রভুর প্রতি যদি ভালবাসা গভীর না হতো তাহলে হয়তো হনুমান কখনোই লঙ্কায় গিয়ে মাতা সীতা দেবীর খবর আনতে পারতেন না। এই হচ্ছে প্রভুর প্রতি ভালবাসা।

আজ সারা বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা স্বামী বিবেকানন্দ ও ভক্ত হনুমানকে পূজার আসনে বসিয়ে পূজা দেয়। এই হচ্ছে প্রাপ্তি। তাদের উভয়ের একটাই চাওয়া ছিল কিভাবে তাদের প্রভু যুগপুরুষোত্তমকে খুশি করা যায়। এবং নিত্য নতুন ভাবে তাদের প্রচার করা।


Sunday, April 18, 2021

সারাহ বেগম কবরী


 

কবরী, কবরী সারোয়ার, সারাহ বেগম কবরী, আমারা তাকে যে নামেই অভিভুত করিনা কেন বা ডাকিনা কেন তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের একজন নায়িকা যাকে বলা হতো ড্রিম গ্রাল, মিষ্টি মেয়ে, মিষ্টি হাসির নায়িকা। মৃত্যু সবারই হবে তিনিও চলে গেলেন। তারই স্বরনে আজকের এই লেখা।

পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল এর মেয়ে হিসাবে তিন জম্ম গ্রহন করেন ১৯ জুলাই ১৯৫০ বুধবার, বাবা আদর করে নাম রাখলেন “মিনা” মিনা পাল। পৈতিক নিবাস চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায়। জম্ম গ্রামের বাড়িতে হলেও তার শৈশব ও কৈশর কেটেছিল চট্টগ্রাম মহানগরীতে।

তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে কাজ শুরু করেন ১৯৬৩ সালে তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। ১৯৬৪ সালের দিকে পরিচালক সুভাষ দত্ত তার নতুন চলচ্চিত্রের জন্য একজন নতুন নায়িকা খুজছিলেন এমন সময় সুরকার সত্য সাহা সুভাষ দত্তকে মিনার খোঁজ দেন। মিনার ছবি দেখে সুভাষ দত্ত তাকে পছন্দ করেন এবং তাকে অডিশনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে বলেন। কণ্ঠ ও সংলাপ পরীক্ষার পর সুভাষ দত্ত তাকে তার পরিচালিত ও অভিনিত সুতরাং চলচ্চিত্রের “জরিনা” চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। সুতরাং সিনেমার লেখক সৈয়দ শামসুল হক মিনা নাম পরিবর্তন করে চলচ্চিত্রের জন্য তার নাম রাখেন “কবরী” যার অর্থ খোঁপা, চলচ্চিত্রের ভক্তরা পেল এক নতুন নায়িকা।

১৯৬৫ সাল পরিচালক জহির রায়হান তৈরি করলেন তার উর্দু ভাষার সিনেমা “বাহানা”।

১৯৬৮ সাল পরিচালক খান আতাউর রহমানের “সোয়ে নদীয়া জাগে পানি” ঐ বছরই পরিচালক দীলিপ সোম তৈরি করলেন “সাত ভাই চম্পা”, পরিচালক সুভাষ দত্ত একই বছর তৈরি করলেন “আবির্ভাব” চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই রাজ্জাক-কবরী জুটি শুরু হয়। এই বছর তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্র হল “বাঁশরী, “অরুণ বরুণ কিরণমালা”, “শীত বসন্ত” ও “চোরাবলী”।

১৯৬৯ সাল “পারুলের সংসার” পরিচালক কাজী জহির পরিচালিত “ময়না মতি”, পরিচালক নারায়ন ঘোষ মিতা পরিচালিত “নীল আকাশের নীচে” ব্যপক জনপ্রিয়তা ও ব্যবসায় সফল হয়।

জনপ্রিয়তার এই ধারাবাহিকতা অনুসারেই ১৯৭০ সালে রাজ্জাক-কবরী জুটি “যে আগুনে পুড়ি”, “ক খ গ ঘ ঙ”, “দর্প চূর্ণ”, “কাঁচ কাটা হীরে” ও “দীপ নেভে নাইচলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করেছিলেন। সে বছরই তিনি সুভাষ দত্তের “বিনিময়” চলচ্চিত্রে বাকপ্রতিবন্ধী এক তরুণী চরিত্রে অভিনয় করে প্রচুর প্রসংশা পান। একই বছর কাজী জহিরের পরিচালনায় “মীনা” নামের একটি উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র “স্মৃতিটুকু থাক”।

১৯৭২ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “জয় বাংলা” ও “লালন ফকির” লালন ফকির চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭৩ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “রংবাজ”। এই চলচ্চিত্রে তিনি পর্দায় লাস্যময়ী নায়িকা রূপে আবির্ভূত হন এবং তার চটুল অভিব্যক্তি দর্শকের নজর কাড়ে। চলচ্চিত্রটি তখন ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। একই বছর তিনি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত “তিতাস একটি নদীর নাম” -এর রাজার ঝি চরিত্রটি তার অন্যতম সমাদৃত কাজের একটি। তখন এটি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্র তালিকায় শীর্ষ স্থান লাভ করে।

১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় পরিচালক প্রমোদ করের চলচ্চিত্র “সুজন সখী। নায়ক ফারুকের সাথে জুটি করে এটি সেই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে দ্বিতীয় বার বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের “সারেং বউ” উপন্যাস অবলম্বনে ও পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্মিত “সারেং বউ” চলচ্চিত্রে নবিতুন চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। এবং একই সালে আবদুল্লাহ আল মামুনের “দুই জীবন” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আরেকটি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

কবরী প্রথমে চিত্ত চৌধুরীকে এক ব্যবসায়িকে বিয়ে করেন। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি সফিউদ্দীন সরোয়ারকে বিয়ে করেন। তখন তার নাম হয় কবরী সারোয়ার। ২০০৮ সালে তাঁদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী বিবাহিত জীবনে পাঁচ সন্তানের মা ছিলেন।

২০০৬ সালে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘আয়না’ মুক্তি পায়।

তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থ ‘স্মৃতিটুকু থাক’ প্রকাশিত হয়। যেখানে তার না জানা অনেক কথা তিনি লিখে গেছেন।

গত ৫ এপ্রিল ২০২১ সালে পরীক্ষায় কবরীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন রাতেই তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় পরে তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১৬ই এপ্রিল শুক্রবার রাত ১২ টা ২০ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত কবরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৭ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে বাসায় নেওয়া হয় সারাহ বেগম কবরীকে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখা হয় এবং পরে বাদ জোহর তার মরদেহ নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানেই গার্ড অব অনার প্রদানের পর তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা। এরপর সমাহিত করা হয় দেশের চলচ্চিত্রের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে।

এক নজরে তার অর্জিত কিছু পুরস্কার এর তালিকাঃ-

বছর

পুরস্কার

বিভাগ

চলচ্চিত্রের নাম

১৯৭৩

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

লালন ফকির

১৯৭৫

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

সুজন সখী

১৯৭৮

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

সারেং বৌ

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

১৯৮৮

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

দুই জীবন

২০০৮

বাচসাস পুরস্কার

সম্মাননা পুরস্কার


২০০৯

বাচসাস পুরস্কার

আজীবন সম্মাননা


২০১৩

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

আজীবন সম্মাননা


 

যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন হে প্রিয় নায়িকা …..........

তথ্যসূত্রঃ- কবরী 

Saturday, April 17, 2021

তাক দেবী ভিক্ষাং দেহী

সারা বিশ্বেরমত বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিও ভয়াবহ। রোজ মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। আমার বেশকিছু প্রিয় মানুষ চলে গেছেন ওপারে। এই অবস্থায় আসুন আমারা যারা মৃতুবরন করি নাই এখনও ঘরে থাকি, কঠোর লকডাউন কঠোরভাবেই মানি। তাতে কোভিড রোগীর সংখ্যা কিছুটা হলেও কমবে। এখন অনেক হাসপাতালেই জায়গা নেই, এত রোগীর চাপ হাসপাতালগুলো নিতে পারছে না, কোভিড রোগীর সংখ্যা কমলে হয়ত পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে। আর কী করবেন? হাসতে হবে মন ভরে, পেট ভরে। হাসলে পরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি নাকি কিছুটা বাড়ে।

আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, প্যানডেমিকের সময় হাসতে হবে। অনেকদিন আগে ভেবেছিলাম এই বিদ্রুপ রচনা বা ব্যঙ্গাত্মক গল্পটি লিখবো, কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না। বর্তমানে লকডাউন এর বর্ষপূর্তি চলছে। ঘরে বসে বসে কাজ নাই। তাই লিখতে বসলাম।

প্রতিটি মানুষ জম্মগ্রহন করে কিছু বৈশিষ্ট নিয়ে যা চাইলেও সহজে পরিপর্তন করতে বা বাদ দিতে পারে না। যদি বলা হয় প্রতিটি মানুষ Deoxyribonucleic Acid নিয়ে জম্মগ্রহন করেন অনেকেই অবাক হবেন এই শব্দটি শুনে এইটা আবার কি। বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা বলি DNA বা জম্মগত বৈশিষ্ট। ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলেন একজন মা সন্তান ধারন করার সময় যে মনোভাব নিয়ে স্বামীতে আনত হয় তার মনোভাব অনুসারে সন্তানের জম্ম বৈশষ্ট নির্ভর করে। আবার আমার মতো অল্প শিক্ষিত মানুষ তাকে বলে পূর্বপুরুষের রক্তের ধারা।

আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত কথা অনেক শুনা যায়, কয়লার ময়লা যতই পরিষ্কার করো তার কালো ময়লা সহজে যায় না। এখন আসা যাক গল্পের নামকরনের সার্থকতায়।

অনেক কাল আগে এক দেশে এক রাজা ছিল, কিছুদিন আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। তার মন ভালো নেই, রাজ সভার কাজ কর্মে মন নেই। সবাই চিন্তায় পরে গেল কি করা যায়। সবাই ঠিক করলো একজন সুন্দরী রাজকন্যা দেখে রাজার সাথে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কোথাও তেমন রাজকন্যা পাওয়া যাচ্ছিল না। রাজ মন্ত্রী একজন ঘটক ঠিক করলো, এবং বলা হলো যদি ভালো কন্যা এনে দিতে পার তোমাকে অনেক পুরষ্কার দেয়া হবে।

ঘটক পুরস্কারের লোভে তার পরিচিত এক মেয়েকে রাজকন্যা সাজিয়ে রাজার সাথে বিয়ে দিলো। বিয়ের কিছুদিন পর দেখলো নতুন রানী ভীষন মন খারাপ করে বসে থাকে। রাজা তাকে জীজ্ঞাস করে কি কারনে মন খারপ। নতুন রানী বলে আমি ও আমার মা একদিন বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষা করছিলাম এমন সময় ঘটক এসে আমার মা-কে বললো তোমার মেয়েটা অনেক সুন্দর ওকে যদি রাজার সাথে বিয়ে দেও তাহলে তোমাকে আর ভিক্ষা করতে হবে না। তারপর আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়।

কিন্তু এত দাস-দাসী আমার সেবা করে কিন্তু আমার তো কিছুই ভালো লাগে না। রাজা পরলো মহা বিপদে কি করা যায়। রানী এখন ভিক্ষা করতে যাবে?? রাজা রানীকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বললো। রাজা একটি “তাক দেবী” নামক রাজপ্রাসাদ যেখানে ছোট ছোট অনেকগুলো কামড়া এবং প্রতিটি কামড়ায় রয়ছে একটি তাক (পাটাতন) ও চাল ভর্তী বড় একটি করে পাত্র। প্রতিদিন বিকালে রাজা আর রানী শুধু ওই রাজপ্রাসাদে যায় এবং সবাইকে বলে এখানে যাতে অন্য কেও প্রবেশ না করে।

রানী সেই রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে একটি করে কামরার তাকের কাছে যায় আর বলে “তাক দেবী ভিক্ষাং দেহী” রাজা সেই চালের পাত্র থেকে কিছু চাল বের করে রানীর আচলে দেয়। আবার পাসের কামরায় যায় সেখানে গিয়ে রানী আবার বলে “তাক দেবী ভিক্ষাং দেহী” রাজা আবার পাত্র থেকে কিছু চাল বের করে রানীর আচলে দেয়। এভাবে চলে তাদের খেলা। এতেই রানী খুশি, রানী মাহা খুশী মানে রাজাও মহা খুশী, রাজা মহা খুসি মানে রাজ্যের সবাই মহা খুসি।

সুখে খাকাটাই বড় জিনিস, যার যা আছে তা নিয়েই আমাদের সুখে থাকতে হবেরে ভাই।


 একটি কৌতুক দিয়ে লেখাটি শেষ করবো …........

গ্রামের এক চোর চুরি করা ছেড়ে দিয়ে কৃষিকাজ আরম্ভ করল।

গ্রামের সবাই বলল, বাহ্‌, তোমার স্বভাবের এত উন্নতি! কেমনে হলো? চোর বা নতুন চাষা বলল, শখে ছাড়ি নাই ভাই। বাধ্য হয়ে ছেড়েছি।

আগে কোন বাড়িতে যদি বিশ হাজার টাকার মালামাল চুরি করতাম, গৃহস্থ থানায় গিয়ে জিডি করে বলত, আমার বিশ হাজার টাকার মাল চুরি গেছে। পুলিশ কে ঘুষ দিতাম চুরির টাকার ৫০%। বাকি ৫০% আমার লাভ থাকত।

এখন, সব গৃহস্থ বিশ হাজার টাকার জিনিস চুরি গেলে জিডিতে লেখে ১ লাখ টাকা। ঘুষ তখন দিতে হয় ৫০%। এখন বিশ হাজার টাকার জিনিস চুরি করে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ দিলে কি ব্যবসায় পোষায়, বলেন?


ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন সবাই।