The Web This Blog

Sunday, February 2, 2020

নারী থেকে মা (ষষ্ঠ পাতা)


~~ পঞ্চম পাতা ~~
~~ ষষ্ঠ পাতা ~~

সময় আর জীবন তার গতিতে চলতে থাকে। রীতা রানীর সন্তানরাও ধিরে ধিরে বড় হতে থাকে। একে একে অন্যান্ন দেবরদেরও বিয়ে হয়ে যায়। সংসার যত বড় হয় ততই ঝগড়া ঝাটি, পারিবারিক কলহ বারতে থাকে আর একে একে সবাই তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করে। থেকে যায় শুধু বিজয় কুমার নামে সবার ছোট দেবর ও তার বৌ। দুইটি কলস যেমন এক সাথে থাকলে ঠুকা ঠুকি লাগে, তেমনি পাঁচ ছেলের বৌ এক সাথে থাকলে তাদের মধ্যেও হয়। 
 
দোষ গুন নিয়েই তো জীবন কে ভাল কে মন্দ সেটা ঈশ্বরই যানেন। কিন্তু মানুষ যা দেখে তার উপর দেখেই সব বিচার করতে চায়। কিন্তু কখনো কালী পদ ও মিনতী রানীর ছেলেদের মধ্যে ঝগড়া করতে কেও দেখেনি। মিনতী রানী অনেক সংগ্রাম করে তার ছেলেদের মানুষ করেছেন। আজ সবাই যার যার মত ভাল আছেন তাদরে সংসার নিয়ে।

ইংরেজী ১৯৯৭ সাল রীতা রানীর বড় মেয়ে মাধবী এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করলো তাই সবার মন খারাপ। রবী বাবু সবসময় অতিরিক্ত আশাবাদি একজন লোক তাই হয়তো ঈশ্বর তার সকল আশাই এইভাবে নষ্ট করে দেয়। এরপর ছেলের পালা ১৯৯৮ সালে সে এসএসসি পরিক্ষা দিবে ছেলে যদি পাশ করে তাহলে রবী বাবুর কষ্ট কিছুটা কমবে। তিনি গর্ব করতে থাকে ছেলেকে, ছেলে তার বিজ্ঞান বিভাব নিয়ে পড়ে সে পাশ করবেই।

পাশ করলে সকলকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবে এবং মা কালীর পুজা দিবে এমন একটি মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন রবী বাবু। কিন্তু ভাগ্য বলে কথা, ছেলে খুব ভাল ভাবে পরীক্ষা শেষ করলো, শিক্ষকরাও আশাবাদী রাম কৃষ্ণ প্রথম বিভাগে পাশ করবে। সেখানোও বিধি বাম, মাত্র সাত নম্বরের জন্য সে জীববিজ্ঞানে ফেলকরে। সকলকে নিয়ে রবীবাবুর আর গ্রামে যাওয়া হলো না।

এদিকে কালী পদ বাবু ১৭ই জানুয়ারি ১৯৯৯ রবিবার দুপুর ২টা অনেকদিন শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা গেলেন। হাসপাতাল আর বাড়ী রীতা রানী ও অন্যান্ন ছেলের বৌরা, নাতি-নাতনীরা তাকে সেবা যত্ন করেছেন অনেক। কালীপদ বাবুর অনেক ইচ্ছা ছিল তিনি মারা গেলে যেন গ্রামের বাড়িতে দাহ করা হয়। সেই মোতাবেক তার চতুর্থ ছেলে কার্তিক চন্দ্রের চেষ্টায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের গ্রামের বাড়ী ও সেইখানেই তাকে ধর্মীয় আচার মেনে তাকে দাহ করা ও পরবর্তীতে শ্রাদ্ধের কাজ শেষ করা হয়। 
 
এইদিকে ১৯৯৯ সালে সরকার নিয়ম করে যারা এক বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষায় খারাপ করেছে তারা সেই বিষয়েই পরীক্ষা দিতে পারবে। রাম কৃষ্ণ এই সুজোগটাই মনে মনে চাচ্ছিল। জীববিজ্ঞানে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৯৯ সালে সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে। 
 
সংসারের খরচ দিন দিন বাড়তেই থাকে তাই রাম কৃষ্ণ পরীক্ষা শেষ করেই বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষকতা শুরু করে, এতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তার ঠাকুরমা মিনতী রানীর। তারই পরিচিত একজনের মেয়েকে পড়ানোর মাধ্যমে শুরু হয় রাম কৃষ্ণের নতুন কর্ম জীবন। 
 
দিন যেতে থাকে ছোট মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা দেবার পালা। বড় মেয়ে কলেজে ভর্তী হয়েছে আর রাম কৃষ্ণ কোন কলেজে ভর্তী হবে তা খুজছে। রীতা রানীর ছোট দেবর বিজয় কুমার তার ভাতিজা ও ভাতিজীদের অনেক আদর করতেন। সকলের লেখা পড়া করার পিছনে তার সবচেয়ে বেশী ভূমিকা ছিলো। 
 
বড় মেয়ে মাধবী রানী বিয়ে ঠিক তাদের পরিচিত পাশের গ্রামে ১৩ আগষ্ট ২০০২ মঙ্গলবার, বিয়ে হয়ে গেল মাধবী রানীর। কষ্ট যেন কমেই না তাদের জীবনে। সেই ঘরে এখন দুই ছেলে।

শিখা রানী আদরের ছোট মেয়ে বিয়ে হলো ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ বুধবার। এখন তাদের ঘরে দুই মেয়ে।
একমাত্র ছেলে রাম কৃষ্ণ বিয়ে হয় ১১ আগস্ট ২০১৩ রবিবার, সেখানে এক মেয়ে। এদিকে মিনতী রানী ০৮ জানুয়ারী ২০১৫ বৃহস্পতিবার মারা গেলেন। চলে গেলো এই পরিবারের সকল অভিবাবক।

আর কত কষ্ট বা সংগ্রাম করলে একজন নারী মা হতে পারেন? পারিবারিক কারনেই আমাকে দ্রুত লেখাটা শেষ করতে হলো। অনেক না বলা কথাই রয়ে গেল মনের গভীরে। মাকে নিয়ে তার জীবনের অনেক কথাই অসমাপ্ত রয়ে গেল হয়তো অন্যকোন দিন অন্যকোন ভাবে আমাকে লেখাটা শেষ করতে হবে।



শ্রীশ্রীঠাকুরের একটি বানী দিয়ে লেখাটা শেষ করতে ইচ্ছা করছে,
কাউকে আপন করতে হ'লেই
আপন আপন ভাববি তায়
সপক্ষে তার করবি কইবি
দেখবি দোষ তার উপেক্ষায়।



~~ সূচনা ~~
~~ প্রথম পাতা ~~
~~ দ্বিতীয় পাতা ~~
~~ তৃতীয় পাতা ~~
~~ চতুর্থ পাতা ~~
~~ পঞ্চম পাতা ~~
~~ ষষ্ঠ পাতা ~~

চলবে ….....................

Saturday, February 1, 2020

নারী থেকে মা (পঞ্চম পাতা)


~~ চতুর্থ পাতা ~~
~~ পঞ্চম পাতা ~~

এবার রবী বাবুর সংসারে পাঁচ জন সদস্য-সদস্যা, সাথে বাবা মা ও অন্যান্ন ভাই বোন। কি করে সংসার পরিচালনা করবেন এই চিন্তাতে সে কুষ্টিয়া চলে যায় কেচি সানের কাজ শিখার জন্য। কুষ্টিয়াতে রবী বাবুর কাকা অমর চন্দ্র শীল থাকেন এবং সানের কাজ করে খুব ভাল আছেন। তার কাছেই জীবনের মধ্যে বয়সে এসে দুই-তিন বছর থেকে কাজ শিখে ঢাকায় চলে আসে রবী বাবু। 
 
তার ছোট ভাই বীরেন্দ্র নাথের সাথে ঢাকার নয়াবাজারে একটি সান দোকান শুরু করেন রবী বাবু। এদিকে রিতা রানীর জীবনে যের আর কষ্ট শুরু হয়ে গেল। এদিকে বীরেন বাবু ভাল টাকা আয় করে নতুন বিয়ে করেছে তার জন্য একটি থাকার রুমতো দরকার। তাই রিতা রানী ও রবী বাবুর রাতে থাকার জায়গা হয় রান্না ঘরে। প্রতিদিন ভোর চারটা-পাঁচটা উঠে প্রায় বার থেকে পনের জনের রান্না করতে হয়। রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে একটা বাজে রিতা রানীর। 
 
সকল কষ্ট মুখ বুজে শিকার করে নেয় রিতা রানী ভাবে ছেলে একদিন বড় হবে তখন তার সকল কষ্ট দুর হবে। কিন্তু দুঃখ-কষ্ট যেন তার নিত্য সঙ্গী। বাবার বাড়ী থাকা কালীন বোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের ছোট, বড় দিদিদের বিয়ের পর মায়ের সাথে সংসারের সকল কাজ করতে হয় তাকে। আর বিয়ের পর রান্না ঘর আর সংসার যেন এক সাথে মিলে মিশে একাকার। এই রান্না করতে করতে সন্তানদের ভাল ভাবে কখনো যত্নও করতে পারেননি রিতা রানী।

এদিকে ছেলে মেয়ে বড় হতে থাকে সাথে অন্যান্ন দেয়রের সন্তানদের সাথে। লেখা-পড়া ও খেলাধুলায় রিতা রানীর ছেলে মেয়েরা অন্য ভাই-বোনদের চেয়ে সব সময় এগিয়ে থাকতো তাতেও রিতার রানী কথা শুনতে হয় দেবরের বৌদের কাছ থেকে।

কালী পদ বাবু সংসারের খরচ দুই ভাগ কেরে দিলেন খাবার খরচ চালাবে রবী বাবু আর ঘর ভাড়া দিবে বীরেন বাবু। রান্না তিন দিন করবে রীতা রানী বাকি তিন দিন করবে বীরেন বাবুর স্ত্রী। শুক্রবারের টা করবে দুই জনে ভাগ করে। এই মোতাবেক চলতে থাকে কিছুদিন। কিন্তু মাসখানেক পর থেকে শুরু হয় চালাকি। বীরেন বাবুর স্ত্রীর যখন রান্নার দিন থাকতো তখন সে অসুস্থ না হয় বাবার বাড়ী ইত্যাদি করে কাজ করতে চাইতো না। 
 
এমনি করে চলতে চলতে একদিন দুই বৌর মধ্যে বিশাল ঝগড়ার সৃ্ষ্টি হয়, যার ফলাফল দড়ায় সংসার ভিন্ন করা। এখনো মনেপড়ে যেদিন বীরেন বাবু তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে অন্য বাসায় চলে যায় সেদিন কালী পদ বাবু ও মনতী রানী অনেক কান্না কাটি করেছিল এমকনি মনতী রানী কয়েকদিন ভাত না খেয়ে দিন কাটায়। সময়ের সাথে সবাই সবকিছু ভুলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। একে একে পরবর্তিতে তিন ছেলেই বৌ নিয়ে আালাদা হয়ে যায় কিন্তু কালী পদ বাবু আমৃত্যু অন্য কোন ছেলে ও বৌর বাসায় জাননি। 

 
~~ ষষ্ঠ পাতা ~~