The Web This Blog

Saturday, May 5, 2018

সব সমস্যার সমাধান / জানিস ইষ্ট প্রতিষ্ঠান

আজ আমি আলোচনা করবো পরম দয়ালের একটি বাণী “সব সমস্যার সমাধান / জানিস ইষ্ট প্রতিষ্ঠান।”

এখন সাধারন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কিভাবে ইষ্ট প্রতিষ্ঠা করলে আমার জীবনের সব সমস্যার সমাধান হতে পারে? আমরা বড় বড় ধর্মগ্রন্থ পড়ে সেই বই-এর মতই হয়ে গেছি। শ্রীশ্রীঠাকুর যেখানে বলছেন ধর্ম মানে বাঁচা বাড়ার বিজ্ঞান। যা মানুষকে কিভাবে বাঁচতে এবং বাড়তে শিখায় এক কথায় তাই ধর্ম। আমরা যদি ধর্মটাকে সাধারন ভাবে বুঝার চেষ্টা করি তাহলেই জীবনটা সুন্দর হবে বলে আমার বিশ্বাস।
 
আমার জীবনের একটা গল্প দিয়ে আমার আলোচনা শুরু করবো। আমার প্রথম বিদ্যালয় ছিল সিরাজুল ইসলাম একাডেমী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়, গেন্ডারিয়া, ঢাকা। বিদ্যালয়টি কে বানিয়েছেন তার নাম জানতাম কিন্তু কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। ১ম থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করা কালীন বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষককে দেখিছি ও পরে নিয়মানুসারে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। কয়েক জনের নাম এই মহূর্তে মনে পরছে যেমনঃ- মজিবুর স্যার, মোঃ শাহজাহান স্যার, মজুমদার স্যার ইত্যাদি। তার সাধারনত ক্লাস নিতেন না। শুধু বিদ্যালয়টি কিভাবে চলবে, কিভাবে ক্লাস নিতে হবে ইত্যাদি ঠিক করে দিতেন। ক্লাস নিতেন কয়েকজন শ্রেনী শিক্ষক বা শিক্ষিকা যেমনঃ- ছালমা ম্যাডাম, শাহজাহান স্যার, জাহাঙ্গীর স্যার ইত্যাদি। তারা যেভাবে পড়াতেন আমরা সেই ভাবে পরতাম এবং পরীক্ষা দিতাম, যোগ্যতা অনুসারে আমরা ছাত্র-ছাত্রীরা এক একজন ক্রমানুসারে পাশ বা ফেল করতাম। শিক্ষকের কাছ থেকে লেখা-পড়া বুঝে নেবার ক্ষমতা এক একজনের এক একরকম ছিল। যার ফলে একই পড়া আমরা এক একজন নানা ভাবে বুঝেছিলাম। কিন্তু শিক্ষক একই সাথে একই বিষয় একই ভাবে সবাইকে পড়াতেন বা বুঝাতেন। আমি তখন যেমন বুঝেছিলাম তেমনই আমার জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রাইমারী ছাত্র জীবনের একদিনের একটি ঘটনা মাঝে মাঝে মনে পড়ে খুব। সম্ভবত ৪র্থ বা ৫ম শ্রেনীর একদিন অংক শিক্ষক ছিলেন না। আমাদের ক্লাসের পাশের কক্ষটি ছিল প্রধান শিক্ষকের রুম। শিক্ষক না থাকাই সেদিন স্বভাবতই আমাদের কাছে চাঁদ রাতের আনন্দ। No Class Do Furti. তাই প্রধান শিক্ষক ক্লাসে এসে বললেন তোমরা চুপচাপ কয়েকটি অংক দিয়ে বললেন অংক গুলা করতে থাকো আমি পরে এসে দেখবো। আর শিক্ষকের চেয়ারের উপর একটা বেত রেখে গেলেন ভয় দেখানোর জন্য যে যে দুষ্টামি করবে তাদের পেটানো হবো। যথারিতি ছাত্র অবস্থায় যেহেতু প্রথম বেঞ্চে বসার অভ্যাস সেই দিনও বসে ছিলাম। অংক শেষ করে শুরু করলাম সবাই হই-হুল্লোড়। সেই মুহুর্তে শিক্ষক এসে আমাকে সামনে পেল আর পিটালো, তারপরে আর কয়েকজন বন্ধুও তার ভাগিদার হয়েছিল। শ্রেনী শিক্ষক না থাকলে যা হয় আরকি।

আমি যখন খুব শান্ত অবস্থায় ধর্ম নিয়ে ভাবতে থাকি তখন জীবনের এই ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কে বানিয়েছেন তার নাম যাই হোক না কেন তাকে আমি বা আমরা দেখিনি। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ন্ত্রন করার জন্য যুগে যুগে যুগ-অবতাররা নানা সময়, নানা স্থানে, নানান রুপে আবির্ভুত হন মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। যাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য, বলা একই। তাদের বার্তা সঠিক ভাবে পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে পৌছে দেবার জন্য কিছু ধর্ম প্রচারকে তিনি নিয়োজিত করেন। ধর্ম প্রচারকেরা তাদের মতন করে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন স্থানে শুরু করেন ধর্ম প্রচার। আমরা যারা ছাত্র রুপি সাধারন মানুষ তাদের বুঝার কারনে আজ ধর্মে ধর্মে এত বিভেদ, এত পার্থক্য। যখনই আমরা যুগ-অবতারদের নির্দেশিত পথ থেকে কিছুটা বিচ্যুত হই তখনই আমাদের জীবনে নেমে নানা রকম দুর্যোগ। 
 
ব্যক্তিগত আলোচনা তো অনেক হলো এখন আসা যাক আসল কথায়। কি করে ইষ্ট প্রতিষ্ঠা করলে আমার সব সমস্যার সমাধান হবে। ফকির লালন শাহ্ একটি অমর গান-
যদি ভোগ দিলে ভগবান মিলতো
আল্লাহ মিলতো সিরনিতে।
বড় করে ভোগ সাজাইয়া
রাজা পারতো কিনিতে। 
 
এখন প্রশ্ন হতেই পারে আমার বাড়ির ছাদে ঠাকুরের সুন্দর একটা মন্দির করেছি, সেখানে সকাল-সন্ধা বাড়ির বৌ-ঝিরা পূজা প্রার্থনা সব করে। আমি ব্যবসার কারনে খুব একটা সময় পাই না, আরে দাদা টাকা আয় করতে হবে তো নাকি? এটা কি ইষ্ট প্রতিষ্ঠা হলো না? তাহলে আমার জীবনে এত সমস্যা কেন দাদা?

পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সবচাইতে বেশী বলতেন কিভাবে মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করা যায়। নিজের জীবনকে ভালবাসেন না এমন কি কেও আছেন।
সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গী বলতে যা বুঝিঃ-
সৎসঙ্গ:- Etymological meaning or root meaning of Satsang
সৎসঙ্গী:- সৎ’ বা (sat) সৎ- এসেছে ‘অস্’ ধাতু থেকে। অস্ – বাঁচা, থাকা, বৰ্দ্ধন।
অৰ্থাৎ যে যে আচরণ করলে সকলের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়া তথা জীবন-বৃদ্ধি অক্ষুন্ন থাকে তাহাই ‘সৎ’।
সৎ এ সংযুক্তির সহিত তৎ-গতি সম্পন্ন যারা তারাই ‘সৎসঙ্গী ’। আর তাদের মিলন ক্ষেত্রই হল ‘সৎসঙ্গ’
আপনি যদি সৎসঙ্গী হন তার মানে You are the companion of every one’s life and growth” (তুমি প্রতি প্রত্যেকের জীবন বৃদ্ধির সঙ্গী)

প্রথমে জানতে হবে ইষ্ট কে বা কি? সহজ কথায় গুরুভক্তি থেকেই মানুষ মঙ্গলের অধিকারী হয়। ঐ গুরুকেই ইষ্ট বলে। ইষ্ট মানে মঙ্গল, অর্থাৎ গুরুকেই অনুসরণ করলেই মানুষের মঙ্গল আসে। পরম দয়ালের কথা তো মিথ্যা হবার বিন্দু মাত্র অবকাশ নাই। তাহলে …............
তাঁর (ইষ্ট) সাথে যার নাই ভাব তারই হয় অভাব। পৃথিবীর কোন জীব বা প্রাণী সমস্যায় নাই এমন হতে পারে না। কারও সমস্যা পারিবারিক, কারও সামাজিক, কারও প্রাতিষ্ঠানিক বা কারও অন্য কিছু। যুগ-পুরুষোত্তমরা যখনই পৃথিবীতে এসেছেন তারা চাইতেন সবাই যাতে ভাল থাকেন। তাই তারা যুগপোযোগী কিছু বিধান বা নিয়ম কানুন দিয়ে গেছেন। যা সকল ধর্ম, মত, পথের জন্য পালনীয়। যারা বিশ্বাস করেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই এই যুগের জন্য এসেছিলেন তাঁর জীবন দশায় তিনি বলেননি এমন কোন বিষয় ছিল না। সব অবতার পুরুষরাই একই ভাবে সব কিছু বলেছেন।

আবারও ছাত্রজীবনের উদাহরন দিয়ে আমার লেখ শেষ করবো। ছাত্রজীবনে যারা শিক্ষকের লেখা-পড়া বিষয়ক প্রতিটি কথা যারা মনযোগ দিয়ে শুনেছে তারাই পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে। তেমনি যারা পরম দয়ালের প্রতিটি আদেশ নির্দেশ সঠিক ভাবে পালন করেছে তারাও কখনো বিফল হয়নি, হবেও না। তিনি ব্যক্তি থেকে সমাজ, রাষ্ট থেকে গোটা পৃথিবী কিভাবে চলবে তার প্রতিটি নির্দেশ দিয়েছেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাষায়। 
 
সহজ কথায় আমি বলতে পারি ইষ্ট প্রতিষ্ঠা মানে ইষ্টের নির্দেশগুলো নিজের জীবনে সঠিক ভাবে প্রতিফলিত করা। তাহলেই আমাদের সকল ধরনের সমস্যাগুলো ধারাবাহিক ভাবে সমাধান হবেই।

পরমপিতা সবার মঙ্গল করু

জয় গুরু।

Tuesday, March 27, 2018

সর্ব্বপ্রথম আমাদের দুর্ব্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক'রতে হবে। সাহসী হতে হবে, বীর হ'তে হবে। পাপের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি ঐ দুর্ব্বলতা।

সত্যনুসরণ (The Pursuit of Truth) ~~

শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্যতম প্রিয় ভক্ত ছিলেন শ্রী অতুল চন্দ্র ভট্টাচার্য, বাংলা ১৩১৬ সালে (ইংরেজী ১৯১০ সাল) কোন এক সময়ে তার কর্ম-জীবনে তাকে পাবনা থেকে অন্যত্র যেত হয়। প্রভুর কাছ থেকে দুরে থাকতে হবে এই বিরহ-বিচ্ছেদে কাতর হয়ে তিনি পরমপিতার কাছে প্রার্থনা রাখলেন তিনি যেন তাকে তার আশিষবাণী স্বরুপ কিছু লিখে দেন। পরমপিতা তখন মাত্র দ্বাবিংশ বর্ষের (২২ বছর) একজন যুবক, তিনি ভক্তের মনোবাঞ্ছা রাখতে শ্রীহস্তেই এক রাত্রে লিখে দিলেন তাঁর অমৃত নির্দেশ। এরই মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষ পেল যুগ-পুরুষোত্তম প্রদত্ত জীবন চলার সঠিক নির্দেশ। এরপর ইংরেজী ভাষায় The Pursuit of Truth নামে অনুবাদিত হয় বাংলা ১৩২৪ সালে (ইংরেজী ১৯১৮ সাল)। পৃথিবীর বুকে যেন এই মন্দাকিনীর পূন্য ধারা যুগ যুগ ধরে সঞ্জীবিত থাকে তাই বাংলা ১৩২৫ সালে (ইংরেজী ১৯১৯ সাল) তা বাংলায় বই আকার মুদ্রিত হয়। যাহা প্রতিটি সৎসঙ্গীর কাছে নিত্য পাঠ্য ও পালনীয়।

আজ আমি আলোচনা করব সত্যানুসরণের প্রথম কথা। পরমপিতা লিখেছেন “সর্ব্বপ্রথম আমাদের দুর্ব্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক'রতে হবে। সাহসী হতে হবে, বীর হ'তে হবে। পাপের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি ঐ দুর্ব্বলতা।”


এখন ভাববার বিষয় পরমপিতা এই কথাটাই কেন আমাদের প্রথমে বললেন। পৃথিবীতে যত অবতার পুরুষ মানব দেহ ধারন করে পৃথিবীতে এসেছেন তাদের প্রত্যেকের বলা একই, ঠাকুরের ভাষায় বর্তমান পুরুষোত্তম হল পূর্বতনের নব কলেবর। যদি আমরা দ্বাপর যুগে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথনের দিকে তাকাই। সেখানেও অর্জুন-বিষাদযোগে, অর্জুন যখন যুদ্ধ করবেন না বলে প্রভুকে বলছেন মানে তিনি তার দ্বায়িত্ব কাজ করতে পারবেন না তখন ভগবান তাকেও এই মানসিক দুর্বলতা ত্যাগ করে তার সঠিক দ্বায়িত্ব-কর্তব্য করতে বলেছিলেন। যার ফলে পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করতে পার।


সনাতন ধর্ম মতে মানব জন্মের সার্থকতা হলো মৃতুর পর সৃষ্টিকর্তার সাথে বিলীন হয়ে যাওয়া। সৃষ্টিকর্তার সাথে বিলীন হওয়ার যে সঠিক পথ নির্দেশ তা পাই আমরা যুগ-পুরষোত্তমের কাছ থেকে। বর্তমান যুগের জন্য আমাদের কাছে যুগ-পুরষোত্তমের ভগবান হলেন প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, তার নির্দেশ পালন করাই মানব জীবনের পরম সার্থকতা।


এখন মূল আলোচনায় আসা যাক, প্রথমে জানতে হবে দুর্বলতা কাকে বলে, কতপ্রকার ও কি কি। দুর্বলতা (Weakness) বলতে সাধারন ভাবে যেটা বুঝি সেটা হল শারিরীক দুর্বলতা। এটা মানুষের নানা রকম হতে পারে, যেমন- কারো উচ্চতা কম, কারো ওজন কম, কারো হাত-পা বিকলাঙ্গ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরনের সমস্যার হয়তো Horlicks, Compain, Vitamin বা নানা রকম ঔষুধ ইত্যাদি খেলে বা Exercise করলে সমাধান সম্ভব। কিন্তু আমি যদি মানসিক ভাবে দুর্বল থাকি তার কি সমাধান? আমার মতে মানুষে মানসিক দুর্বলতা শারিরীক দুর্বলতার চেয়ে অনেক বেশী কঠিন যার সমাধান কেবল মাত্র যুগ-পুরষোত্তমরাই দিতে পারেন।


পরমপিতা আমাদের সর্ব-প্রথমেই দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলছেন, সেটা কি শারিরীক নাকি মানসিক দুর্বলতা? শারিরীক দুর্বলতা নানারকম সাত্ত্বিক খাবার ও কিছু সঠিক নিয়ম কানন পালন করলে তার সমাধান হবে। কিন্তু মানসিক দুর্বলতা কিভাবে সমাধান করবেন, তার জন্য চাই সৎ-গুরুর স্বরণ লওয়া বা সঠিক ধর্মনীতি পালন করা। কারন পরম পিতাই বলছেন এতটুকু দুর্বলতা থাকলেও আমরা ধর্ম রাজ্যে ঠুকতে পারবো না। 
 
পরমপিতাই এই প্রশ্নের উত্তর সুন্দর একটি উদাহরণের মাধ্যমে দিয়ে দিলেন। তিনি বলছেন “দুর্ব্বল হৃদয়ে প্রেমভক্তির স্থান নেই। পরের দুর্দ্দশা দেখে, পরের ব্যথা দেখে, পরের মৃত্যু দেখে নিজের দুর্দ্দশা, ব্যথা বা মৃত্যুর আশঙ্কা ক'রে ভেঙ্গে পড়া, এলিয়ে পড়া বা কেঁদে আকুল হওয়া--সব দুর্ব্বলতা” ভগবান বুদ্ধদেব যখন মানুষের নানান রকম দুঃখ, কষ্ট, রোগ, শোক, মৃত্যু দেখলেন তিনি তার সমাধান খুজতে থাকলেন। যখন তিনি তা জানতে পারলেন কেন এই গুলো মানুষের জীবনে আসে তখন তার সেই জ্ঞান সকলে মাঝে বিতরন করলেন। তাই প্রভু বুদ্ধদেব ত্রিশরন মন্ত্রে বলছেন “বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি - আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম। / ধম্মং শরণং গচ্ছামি - আমি ধর্মের শরণ নিলাম। / সংঘং শরণং গচ্ছামি - আমি সংঘের শরণ নিলাম।


পরমপিতা বলছেন “হ'টে যাওয়াটা বরং দুর্ব্বলতা নয়কো, কিন্তু চেষ্টা না করাই দুর্ব্বলতা।” পরম পিতার এই কথাটাই আমি সঠিক ভাবে পালন করতে পারছি না, তাহলে কি আমার ধর্ম করার অধিকার নাই? কারন আমরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যাই, এমন অনেক কাজ আছে যা শুরু করার আগেই পারবোনা ভেবে বাদ দিয়ে দেই। এখনও নিয়মানুসারে আমি অতি প্রত্যুষে উঠে ইষ্টভৃতি, প্রার্থনা করতে পারছি না। ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা করলে বৌ বলে কি শুরু করলা, সারা দিন এত কাজ করে রাত্রে একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না। মিনসের সাথে বিয়ে হয়ে সোনার জীবনটা আমার কয়লা হয়ে গেল। তাহলে কি করা, বনে চলে যাবো নাকি দাদা কি বলেন?? এখন পরীক্ষা দিতে হবে কাকে বেশি ভালবাসি। মানসিক ভাবে ঠাকুরকে বেশি হলেও শারীরিক ভাবে স্ত্রী কে। ঠাকুরের ভাষায় মন-মুখ এক না হলে সেখানে গলদ জমবে এবং পাপ গিয়ে তার ভিতর বাসা বাঁধে। প্রতিটি সৎসঙ্গ পরিবারই স্বর্গের সুখ বিরাজ করবে যদি আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রদত্ত নির্দেশাবলী সঠিক ভাবে পালন করতে পারি।


পরমপিতা সবসময় ভাবতে বলছেন “স্বরণ কর তুমি সাহসী, স্বরণ কর শক্তির তনয়, স্বরণ কর তুমি পরমপিতার সন্তান। আগে সাহসী হও, অকপট হও, তবে জানা যাবে তোমার ধর্ম্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার জন্মেছে।” বিভিন্ন মেডিটেশন প্রতিষ্ঠানে মেডিটেশন করার সময় তারাও নিজেকে একজন অনন্য মানুষ, সাহসী মানুষ ইত্যাদি বলে মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে। পরিচিত এক (Psychologist) মানসিক পরামর্শকারী বলেছিলেন, আপনি যখন মানসিক ভাবে খুব খারাপ অবস্থায় থাকবেন তখন খোলা কোন জায়গায় যেয়ে জোরে জোরে বলবেন আমি গত দিনের চেয়ে আজ অনেক অনেক ভাল আছি। এতে নাকি কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি লাভ হবে।


আমি যখন মনে মনে ভাবি ঈশ্বর আমাকে আগের চেয়ে অনেক ভাল রেখেছেন, কারন তিনি আমার পিতা, তিনি অবশ্যই ভাল জানেন কিসে আমার মঙ্গল হবে, তখন এই বাণীটি মনে পরে “ভাবছ বসে চলবে কিসে / ভাববার তুমি কে? / ভাববার যিনি ভাবছেন তিনি / তুমি ভাব তাকে।” 
 
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাটি দিয়েই আমার লেখা শেষ করছি -----


বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা--
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়॥
সহায় মোর না যদি জুটে নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ এ নহে মোর প্রার্থনা--
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।
নম্রশিরে সুখের দিনে তোমারি মুখ লইব চিনে--
দুখের রাতে নিখিল ধরা যেদিন করে বঞ্চনা
তোমারে যেন না করি সংশয়।



পরমপিতা সবার মঙ্গল করু



জয় গুরু।

Monday, March 19, 2018

প্রার্থনাতে কইলি কত / করলি নাকো কাজে, / ফুটলো ওটা কল্পনাতে / ফলটি পেলি বাজে।

অনেক দিন বলবোনা, দিন-মাস-বছর গুনতে গেলে প্রায় চার বৎসর পার হয়ে গেছে কিছু লেখা হয় না আমার। কিছু লেখার বা মানুষকে জানাতে ভালা লাগা থেকেই আমার ব্লগে লেখা লেখি শুরু। আমার নিজস্ব মতামত, অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা গুলই মূলত আমি লিখে থাকি।

যতটুকু মনে পরে ১৯৯১-৯২ সালের কোন এক পবিত্র দিনে আমার সৎনামে (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রদত্ত) দীক্ষা হয়। কুষ্টিয়া নিবাসী সহ প্রতি ঋত্বিক স্বর্গীয় শ্রীঅমর চন্দ্র শীল, ছিলেন সম্পর্কে আমার ঠাকুর দাদা (ঠাকুর দাদার ছোট ভাই), তার মাধ্যমেই আমাদের পরিবারের বেশীরভাগ সদস্যের সৎদীক্ষা লাভ হয়। দীক্ষা গ্রহনের দিন আমাকে দিয়ে শপথ করানো হয়েছিল আজ থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা করাই আমার জীবনে একমাত্র ব্রত হোক। এই শপথের কথা জানতে বা বুঝতে পারলাম অনেক অনেক পরে।

১৯৯৯ সালের তাল নবমী তিথি তে আমার প্রথম পূণ্যতীর্থ পাবনা যাওয়া সাথে ছিল আমার স্নেহের কাকাত ভাই বলরাম সরকার, যেহেতু এটাই ছিল আমার প্রথম পাবনা যাওয়া তাই আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন পাবনা নিবাসী এক কাকা (মানিক কাকা, খান কেচিঁর মালিক)। রাতে গাড়িতে উঠে পৌছাতে যেহেতু ভোর হয়ে গিয়েছিল কাকার বাসায় স্নান, খাওয়া দাওয়া করে মানিক কাকা, তার দুই ছেলে-মেয়ে, ভাই ও আমি রওনা হলাম পরম দয়ালের জন্মস্থান দেখার জন্য। পূর্বে থেকেই ঠাকুর দাদা আমাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন বর্তমান নাট মন্দিরেই।

দেখতে দেখতে জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করার পর স্বস্ত্যয়নী ব্রত পালন করবো বা পালন করা উচিৎ বিবেচনা করে গত ০৩ মার্চ ২০১৭ ইং, (রোজ শুক্রবার) তারিখে পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্তী (শ্রীশ্রীঠাকুর পৌত্র) দাদার মাধ্যমে স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহন করি।

নানান সময় নানা রকম ধর্মীয় বই পড়ার সুবাদে বুঝার চেষ্টা করছি শ্রীশ্রীঠাকুর এই বিষয়ে কি বলতে চেয়েছেন বা কেন বলেছেন। বিশেষ করে শ্রীশ্রীঠাকুর তার বাণীগুলোর মাধ্যমে কি বুঝাতে চেয়েছিলেন। তার বাণীগুলোর উপর ভিত্তি করে বাস্তবে এটার কতটুকু মিল আছে এই সময়ে তা জানার চেষ্টা করছি এখন। করাণ তাকে আমরা যুগ-পুরুষোত্তম হিসাবে বিশ্বাস করে থাকি। তার সঙ্গ করার সুজোগ যেহেতু আমার হয়নি। তার নামের মাধ্যমেই তাকে এখন শুধু উপলব্ধি করা যায়।

শ্রীশ্রীঠাকুর প্রদত্ত প্রার্থনার পুরুষোত্তম-বন্দনাতে আছে ....... ব্যক্তি-দম্পতি-গৃহ-সমাজ-রাষ্ট্রোদ্বারণে / যজন-যাজনেষ্টভৃতি-স্বস্ত্যয়নী-প্রবর্ত্তকম্....... যার অর্থঃ- ব্যক্তি-দম্পতি-গৃহ-সমাজ-রাষ্ট্রের হবে উন্নয়ন / যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি-স্বস্ত্যয়নীর তাই কর প্রবর্ত্তন।
শ্রীশ্রীঠাকুর তার বাণীতে বলছেন প্রার্থনাতে কইলি কত / করলি নাকো কাজে, / ফুটলো ওটা কল্পনাতে / ফলটি পেলি বাজে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরম দয়াল এই কথাটি তার প্রার্থনায় কেন রাখলেন? নিচের ব্যখ্যাটি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে বলা। কারও বিশ্বাস বা ভক্তিতে আঘাত লাগলে সেটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।

আমরা যারা ভাবি আমি পরম দয়ালের সবচেয়ে বড় ভক্ত বা কর্মী কারন আমি জন্মের আগের থেকেই নিরামিষ খাই, আমি ২৫-৩০ বৎছর যাবত ঠাকুরের কাজ করছি, আমি কত-শত বই পরলাম, প্রার্থনার দাড়ি কমা পর্যন্ত সব মুখস্থ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন আমি প্রার্থনার এই বানীটি কতটুকু বুঝে পালন করছি সেটা বলা যাক। যেহেতু আমি ভক্ত হনুমানের চেয়েও বড় ভক্ত বলে মনে করি। :P:P:P

ব্যক্তিঃ- আমি যজন করি আরকি দুই-একটা বই পড়ি মাঝে মধ্যে। আর যারা ঠাকুর সম্পর্কে আমার চেয়ে ভাল জানে বা বুঝে তাদের সঙ্গে শুক্রবারে কিছু সময় কাটাই ব্যক্তিগত কাজ না থাকলে। যাজন সেটা কিভাবে কার সাথে করবো এই ভাবতে ভাবতেই সময় করে উঠতে পারি না। আর ইষ্টভৃতি এটা আর বলতে হয়, সেটাতো আমি দীক্ষার প্রথম দিন থেকেই ০.৫০ পয়সা দিয়ে করতাম। কয়েকদিন আগে থেকে দুই টাকা দেই ঠাকুরকে, কেন দাদা কম হয়ে গেল নাকি!!!! এখন তো আবার আমি নিরামিষ খাই তিন বেলা, এতে কি স্বস্ত্যয়নী হবে না??? আর কিছু করতে হয় নাকি?? এই হচ্ছে আমার অবস্থারে দাদা।

দম্পতিঃ- বিয়ের পরের দিনই তো আমি আমার স্ত্রীকে কিছু বুঝার আগেই দীক্ষা দিয়ে দিলাম। কারন সবাই বলতো অদীক্ষিত স্ত্রীকে ছুতে নেই। এখন দেখি স্ত্রী, আমি আর কি জানি সে ঠাকুরের চেও বেশী জানে। বাবার পছন্দ ছেলে বৌ শিক্ষিত হতে হবে, সে তো এম এ পাশ, যাই তাই কথা নাকি। তাকে আর আমি কি বুঝাব। আছি খুব বিপদে বেশী কিছু বললে আবার রাতে ঘুম নষ্ট। কি দরকার আমি একাই স্বর্গে যাই তুমি থাক। না কি বলেন দাদা??

গৃহঃ- ঘরে স্ত্রী ছাড়া পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা। পিতা-মাতা এরা আমার পরম গুরু তারাতো অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বেশী জানেন। নিয়মিত গীতা পাঠ, কৃত্তন, বৈশ্বব সেবা নানা মন্দিরে ঘুরা ঘুরি করে, প্রসাদ বাসায় নিয়ে আসেন তাদের কে আমি আর কি শিখাব। কিছু বললে বলে আমরা কি কম বুঝি। তোমার ঠাকুর এটা ঠিক বলেন নাই ওটা ঠিক করেন নাই। কোথায় যাই বলেনতো। পুত্র ছোট মানুষ লেখা-পড়া, খেলাধুলা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। এত অল্প বয়সে ধর্মীয় কাজ কি ভাবে করবে। আরেকটু বড় হোক, তারপর দীক্ষা দিয়ে দিবো। আর মেয়ের বেলায় অন্য কথা, মেয়ে মানুষ কোথায় না কোথায় বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই স্বামী-স্ত্রী একসাথে যেখানে খুশী দীক্ষা নিক এতে আর আমার কি। তাই তো নাকি বলেন দাদা।

বাকী থাকল সমাজ আর রাষ্ট্র, এটাকে আমি ঠিক করবোই করবো। কারন ঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নাই। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়েই সমাজ গড়া। আমিতো নিজের, স্ত্রী ও পরিবারের কাছ থেকে একপ্রকার বিতারিত বলা যায়। গুরুভাইরা তো আর জানেন না আমার পরিবারের কথা। এখন শ্রীশ্রীঠাকুর কে ভালবাসলেও আমি তার বংশধরকে শ্রদ্ধা করি না, কারন তারাতো আর ঠাকুর নয়, না কি??  পরম দয়াল কোন বাণীতে নাকি বলেছেন বংশধররা আমাদের কাছে পূজনীয়। তা হয়তো বলেছেন কিন্তু সেটা তো আমাকে আর বলেননি। সেটা হতে পারে যারা ঠাকুরকে কম জানে তাদের জন্য। তাদের আচার্য না মানলেও হবে একজন ধনী লোক দেখে কাওকে সংঘের প্রধান করে রাখলে কি আর ক্ষতি হবে। সহ প্রতি ঋত্বিক তাদের কথা আর কি বলবো, আরে দাদা আমি যেই সব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম এর চেয়ে কত ভাল ভাল জানা লোকের সঙ্গে সঙ্গ করেছি কি আর বলল। বয়স কি কম হইছে আমার। আমারকি কোন সহ প্রতি ঋত্বিক কথায় হারাতে পারবে যে তার কথা মত চলবো।

চাকরি, ব্যবসা সব করে টাকা পয়সাতো ভালই কামাইলাম। এখন আমাকে এলাকার গুরুভাইরা সবাই কত ভালবাসে। এলাকার সব গুরুভাইরা আমাকে এক সপ্তাহে মন্দিরে না দেখলে খোজ খবর নেয়। ভালই লাগে ভাবতে, আর আমার মত এমন একজনকে নাকি স্টেজে উঠে ঠাকুর সম্পর্কে কথা বলতে দিবে না। থাকবোনা আর আপনাদের দলে। আমি একাই একটা সংগঠন তৈরি করবো দেইখেন, সেখানে আমিই একাই সব। দেখিয়ে দিব সমাজ আর রাষ্ট্রোকে কিভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের অবিকৃত ভাবধারায় প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

এই হচ্ছে আমার বা আমাদের অবস্থা। সংগঠিত মানুষ না থাকলে যেমন সংগঠন করা যায় না। তেমনি সমাজে ধার্মীক লোক না থাকলেও ধর্মকে রক্ষা করা যায় না। বর্তমানে আমার মত এমন ভক্ত বা কর্মী দিয়ে সৎসঙ্গ ভরে যাচ্ছে। কষ্ট হয় খুব। হৃদয়ে রক্তক্ষরণের ব্যথা কাওকে দেখাতে বা বলতে পারছি না তাই চুপিশারে আমার মত করে লিখে রাখলাম।

যেখানে আমি আমাকেই ঠিক করতে পরি নাই। সেখানে সমাজের বিষয় গুলো কিভাবে ঠিক করবো। আগে নিজে ঠিক হলে ধাপে ধাপে সব ঠিক হবে, এটাই আমার বিশ্বাস। পরমপিতা সবার মঙ্গল করুক।

জয় গুরু।