The Web This Blog

Monday, March 30, 2020

ভগবান কে, ঈশ্বর কে?


যদি ১০ জন হিন্দু ধর্মের মানুষকে প্রশ্ন করা হয় তোমার ভগবান কে..? তাদের থেকে নানান রকম উত্তর পাওয়া যাবে। কেউ বলবে শিব ভগবান, কেউ বলবে ব্রহ্মাই একমাত্র ভগবান, কেউ বলবে ভগবান শুধু রাম চন্দ্র, কেউবা বলবে কৃষ্ণই পরমপশ্বর ভগবান, কেউ বলবে কালি-দূর্গা ভগবান, আর কেউ বলবে গৌরঙ্গ মহাপ্রভূ ভগবান ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে কি সনাতন ধর্ম বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী..? নাকি সনাতন ধর্ম এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী? এর উ্ত্তর খুজে পাচ্ছি না, আপনি কি জানেন?

যতটুকু জানি অন্যান্ন ধর্ম মতের মতই সনাতন ধর্মে বহু ঈশ্বরের কোন স্থান নেই। আজকের প্রশ্ন দুটির উত্তর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের এই সম্পর্কিত দুইটি বাণী দিয়ে শুরু করলাম।

ভগবান তবে কে?
ভজন-দীপন জীবন-স্রোতা
কল্যান-কল যে।

ঈশ্বর তবে কে?
ধারন-পালন-সম্বেগ-সিদ্ধ
উৎস-স্রোত যে।

সনাতন ধর্ম মানব কে দুই ভাবে উপাসনা করার পথ দেখিয়েছে, এক সাকার উপাসনা এবং দুই নিরাকার
উপাসনা, যারা ভগবানে সিমাবদ্ধ তারা রুপের উপাসনা করে আর যারা ঈশ্বরের মাহাত্ত জানতে চায়
তারা ঈশ্বরের সাকার আর নিরাকারের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং ওই ভাবেই উপাসনার চেষ্টা করে।

পরাশর মুনি “ভগবান” বলতে বলেছেন-
ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নত্ ভগ ইতিঙ্গনা ॥

অর্থাৎ, যার মধ্যে ঐশ্বর্য্য, বীর্য্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান এবং বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বর্তমান, তিনি হচ্ছেন ভগবান সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সমস্ত বীর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শ্রী, সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত বৈরাগ্য। এই জগতে কেউ বড় ধনী হতে পারে, কিন্তু কেউ দাবী করতে পারেনা আমি সমস্ত ধনের মালিক। এই জগতে কেউ জ্ঞানী হতে পারে, কিন্তু সে দাবী করতে পারে না সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু ভগবান সমস্ত ধন, সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সৌন্দর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শক্তির অধিকারী, তাই তাকে বলা হয় ভগবান।

পরাশর মুনি “ভগবান” শব্দটি দুটি ভাগে ভাগ করেছেন । “ভগ” অর্থ ঐশ্বর্য্য ও “বান” অর্থ অধিকারী, যার আছে তিনিই মানুষের কাছে ভগবান। ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে - আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান, ঠিক তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাৎ সমস্ত ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলা যেতে পারে ভগবান।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ভাববাণীর একপ্ততিতম (৭২) দিবস, ২৪ জৈষ্ঠ, ১৩২৬ সনের প্রথম দুইটি বাণী,
না, তখন আলোর সৃষ্টি হয় নাই, অন্ধকার ছিল না, সৌরজগতের উদ্ভব হয় নাই। তিনি একা ছিলেন, ইচ্ছা হ'লো সৃষ্টি করতে-আর সব সৃষ্টি হ'লো। তিনি ছিলেন আর আমি ছিলাম।
আমিই তিনি, আমাই তিনি, আমিই তিনি।

সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ বেদ, সেখানে বলা হচ্ছে, যাহা প্রতিটি হিন্দুদের তেমনি অনুসরণীয় ও পালনীয়।

নোপাস্যমন্যদ্ ব্রহ্মণো ব্রহ্মৈকমেবাদ্বিতীয়ম্।
তথাগতাস্তদ্বার্ত্তিকা অভেদাঃ।
তথাগতাগ্রোহি বর্ত্তমানঃ পুরুষোত্তমঃ পূর্ব্বেযামাপূরয়িতা বিশিষ্ট-বিশেষবিগ্রহঃ।

অর্থাৎ, ব্রহ্ম ভিন্ন আর কেহ উপাস্য নহে- ব্রহ্ম এক অদ্বিতীয়।
তাঁহার বার্ত্তাবহনকারী তথাগতগণ অভিন্ন।
বর্ত্তমান পুরুষোত্তম তথাগতগণের অগ্রণী এবং তিনি পূর্ব্ব-পূর্ব্ব তথাগতগণের আপূরণকারী বিশেষ বিশিষ্ট নরবিগ্রহ। 
 
শ্রীভগবদগীতা দশম অধ্যায়ের অষ্টমতম শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধোঁয়াশাটা অনেকটাই পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
অহং সর্বস্য প্রভবঃ মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে
ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধাঃ ভাবসমম্বিতাঃ ॥

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ননা করেছেন, আমি জড় ও চেতন সমস্ত কিছুর উৎস ও সবকিছু আমার কাছ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। সেই তত্ত্ব অবগত হয়ে যারা শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন তারাই যথার্থ তত্ত জ্ঞানী। অর্থাভগবান হচ্ছেন সবকিছুর স্রষ্টা, সবকিছুর পালন করেন এবং তিনি সবকিছু সংহার করতে পারেন। এভাবে ভগবানের সর্বশক্তিমত্ত্বা সর্ম্পকে শাস্ত্রে বর্ননা করা হয়েছে। ভগবানকে কেউ কেউ ঈশ্বর বলে সম্বোধন করে থাকেন। তাই ঈশ্বর শব্দটির অর্থ আমাদের জেনে রাখা দরকার

বিভিন্ন শাস্ত্র শব্দ কোষ অনুসারে ঈশ্বর শব্দের অর্থ হচ্ছে - নিয়ন্ত্রণ বা নিয়ন্ত্রণ কর্তা অর্থা যিনি সকলকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এই জগতের প্রতিটি জীবের সীমিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে, তাই তারা নিজেকে ঈশ্বর বলে মনে করতে পারে বা দেবতাদেরকে ঈশ্বর বলে গ্রহন করা যেতে পারে। যেহেতু তারা এই ব্রহ্মান্ডের কোনও না কোন কার্যের নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। কিন্তু ঈশ্বরকে যিনি নিয়ন্ত্রন করেন সেই পরমেশ্বরকে জানাই হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য। পরমব্রহ্ম বা পরম ঈশ্বরকে নিয়ন্ত্রন করে থাকেন, তিনিই ভগবান।
শ্রীশ্রীঠাকুর সত্যানুসরণ গ্রন্থে বলেছেন, ভগবানকে জানা মানেই সমস্তটাকে বুঝা বা জানা। যাঁর কোন মূর্ত্ত আদর্শে কর্মময় অটুট আসক্তি-সময় বা সীমাকে ছাপিয়ে তাঁকে সহজভাবে ভগবান করে তুলছে- যার কাব্য, দর্শন ও বিজ্ঞান মনের ভাল-মন্দ বিছিন্ন সংস্কারগুলিকে ভেদ ক'রে ঐ আদর্শেই সার্থক হ'য়ে উঠেছে-তিনিই সদগুরু।


লেখাটি সম্পূর্ন আমার নিজির মত ভাবা ও লেখা, কারও ধর্মীয় বিশ্বাস বা ভক্তিতে আঘাত করার জন্য নয়। তাই কেও এই লেখাটি পড়ে ভুল বুঝে থাকেন তাহলে সেটা আকান্ত তার ব্যক্তিগত।

Monday, March 16, 2020

তপোবিধায়না (দিত্বীয় খন্ড), বানী নং-২২৬

বাণী নং- ২২৬
তপোবিধায়না (দ্বিতীয় খন্ড)

) ইষ্টনিষ্ঠ হও,
ইষ্টার্থ যা'-কিছুর অনুচৰ্য্যাই
তোমার জীবনে সক্রিয়ভাবে
প্রথম ও প্রধান ক'রতে চেষ্টা কর;

) এর সঙ্গে সঙ্গে
যাজন-যাজনার সহিত
লোক-অনুচর্য্যার
যা'-কিছু পার-
'রতে ত্রুটি ক'রো না,
আর, তপজপ ইত্যাদি
তাঁ’র অনুমোদিত যা'-কিছু,
তা’ ক'রতে বিরত থেকো না-
বিশেষ কারণ-ব্যতিরেকে;
চলার ফাঁকে-ফাঁকে
কিংবা বিশ্রামের সময়
তা'কে চিন্তা করো এবং
তা'র বাণীগুলিকে স্মরণে এণে
তা’র কিছু-না-কিছু অনুশীলন ক'রবেই-
রোজই নানা রকমে;

) নিয়মিতভাৰে ইষ্টভৃতি
'রবেই কি ক'রবে;

) তা' ছাড়া, সাধু চেষ্টায়
প্রত্যহ কিছু-না-কিছু
অর্থাৎ, প্রীতিপ্রদ ব্যবহারোপযোগী
জীবনীয় কিছু সগ্রহ ক'রে
তাঁ'কে বস্তবে উপহার দেবে-
তোমার শক্তিতে যতখানি কুলায়;
ইষ্ট-সানিধ্যে যদি না থাক,
আর, তঁৎসকাশে পাঠাবার
সুবিধা যদি নাই হয়,
তাহ'লে ইষ্টার্থে
কোন শ্রেয়জনকে দিও;
যা'দের ভরণ-পোষণ
ইষ্টের উপরই নির্ভর করে-
তা'ৱা যদি দৈনন্দিন অবশ্য অবশ্যই
এমনতরভাবে সংগ্রহ ক'রে
ঐ তাঁ’রই সেবানূচৰ্য্যার
অর্ঘ্য-স্বরূপ নিবেদন করে,
তা'রও অনেক বিকৃতির হাত হ'তে
রেহাই পেতে পারবে এতে;
তবে এটা কর্ত্তব্য-নিবন্ধন হ'লে হয় না,
অন্তর-আগ্রহ-নিবেন্ধন হওয়া চাই;

) ইষ্টের স্বরণ ও প্রীত্যর্থে-
তুমি ভালবাস
এমনতর কোন জিনিষ
উৎসর্গ ক'রো
তোমার স্বাস্থ্য যা’তে অক্ষুন্ন থাকে
তা’র প্রতি লক্ষ্য রেখে;
জীবনে সেটিকে
নিজের তৃপ্তির জন্য
আর ব্যবহার ক'রো না;

) ইষ্টার্থ-শুভ করণীয় যা'-কিছু
তা' 'রতে
পারতপক্ষে অবহেলা ক'রো না,
আর, অন্যেরও শুভ-সম্বর্দ্ধনায়
পারতপক্ষে বিরত থেকো না;

) ইষ্ট-নীতি-বিধিগুলিকে
যথাসম্ভব পরিপালন ক'রে চলো-
হাতেকলমে,
কথায়-কাজে;
অন্তর-আগ্রহ নিয়ে
কিছুদিন ক'রেই দেখ না কী হয়!
এমনি ক'রতে ক'রতে এগুতে থাক,
তোমার ছোট্ট জীবনে
এই অনুষ্ঠানগুলি
যত বস্তেবে অভ্যস্ত হ'য়ে উঠবে,-
ভেবেচিন্তে না দেখলে
বুঝতেই পারবে না-
তুমি কতখানি বেড়ে উঠেছ অজান্তে;
আমার কথা কি শুনবে?
তা’ কি তুমি ক'রবে?
'রলে দেখতে পাবে-
স্বস্তিও ধীর পায়ে
এগিয়ে আসছে তোমার জীবনে।

~~ শ্রীশ্রীঠাকুর

Saturday, March 14, 2020

আমি থেকে যাজক (শেষ)


~ শেষ পাতা ~


ইংরেজী ২০০৩ সাল ঢাকার গেন্ডারিয়াতে আসে শ্রীশ্রীঠাকুরের এক ভক্ত প্রহল্লাদ পোদ্দার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বয়সে কিছুটা ছোট হলেও গুরু ভাই হিসাবে তার কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে। আমরা কয়জন আমি, চন্দন, প্রহল্লাদ, মিলন দেব, বলরাম ও বিধান কাকা প্রায় সময় একসাথে চলাফেরা ও শ্রীশ্রীঠাকুরের কাজ করতাম। শাখারী বাজার মন্দিরে নিয়মিত যাতায়াত, উৎসব গুলোতে অংশগ্রহন বিভিন্ন পারিবারিক অধিবেশনে যাতায়াত এভাবেই দিন কাটতে থাকে। এভাই গেন্ডারিয়ার অনেক গুরুভাইয়ের পরিবারের সাথেও পরিচয় এবং সংক্ষতা হতে থাকে। গেন্ডারিয়া ও এর আশেপাশের এলাকায় কিভাবে পারিবারিক অধিবেশন করা যায় এই চিন্তা করতে করতে প্রহল্লাদার উদ্যগেই আমারা গেন্ডারিয়াতে পারিবারিক অধিবেশন শুরু করি। তারপর ধিরে ধিরে সেটা শ্রীশ্রীযমুনা মাঈ আশ্রমে নিয়মিত শুক্রবার সন্ধায় করা হয়ে আসছে।

ইংরেজী ২০০৬ সালে আমার গাজিপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি হয়। এক বছর অনেকটাই সময় দিতে পারতাম না ঠাকুরের কাজে। তখন প্রহল্লাদার উদ্যগেই আমরা শুরু করলাম নিয়মিত প্রার্থনা করার উদ্যোগ আমরা যেখানেই থাকিনা কেন আমরা একটা প্রার্থনার সময় তালিকা করেছিলাম। ভোরে ও সন্ধায় আমরা সঠিক নিয়মে প্রার্থনা করছি কিনা এবং কত সময় ধ্যান করতাম তা লিখে রাখতাম। এবং ভোরে উঠে আমরা একে ওপরকে মিসড কল দিতাম কে কখন উঠলো তা যানানোর জন্য। 
 
শ্রীশ্রীঠাকুর সত্যানুসরণের বলেছেন, “একটা চাইতে গিয়ে দশটা চেয়ে ব'স না, একেরই যাতে চরম হয় তাই কর, সকলগুলিই পাবে।” আমরা তার কাছে চাইতেই যানি না, কি চাইতে হয়। তাই জীবনে বার বার ভুলপথে চলে যাই। আমি মনে মনে পরমপিতার কাছে চাইতাম ঠাকুর আমাকে ঢাকায় একটা চকরির ব্যবস্থা করে দাও, ঠাকুর আমার প্রার্থনা গ্রহন করলেন। ২০০৭ সালে আমার ঢাকার মগবাজারে বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়। আমার চাওতে হয়তো পরমদয়ালের কাজ করবো এমন প্রার্থনা ছিল না, যার কারনে সেখানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ছিল শনিবার ও রবিবার। যার কারনে শুক্রবার গুলোতে মন্দির ও প্রার্থনা থেকে আবারও বনশ্চিত হলাম।

যুগ-পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ভক্তদের বলতেন মা-র কাছে চাইতে হয় একবারে, বলতে হয় মা আমি যেন সব সময় নাতি-পুতি নিয়ে সোনার থালায় ভাত খেতে পারি। মানে এক চাওতেই সব বলতে হবে। মগবাজার চাকরি করাকালীন সময় জীবনে অর্থ ও সম্মান এসেছিল কিন্তু ঠাকুরের কাজ করে জীবনকে ধন্য করা থেকে অনেকটাই বনশ্চিত হয়েছিলাম।

ইংরেজী ২০১১-২০১২ সাল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ, হেমায়েতপুর, পাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সাংগঠনিক কারনে পূজনীয় অধ্যক্ষকে নিয়ে তৈরি হল নতুন একটি সংগঠন প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশন। অনেকে বুঝে, অনেকে কিছু স্বার্থ নিয়ে, অনেকে শ্রীশ্রীঠাকুর পরিবারকে ভালবেসে নতুন ভাবে চলা শুরু করলো। এই দুর্যোগকালীল সময়ে পরিচয় আমার খুব ভাললাগা একজন মানুষ সুমন বিকাশ দাস দাদার সাথে। ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল প্রর্যন্ত সৎসঙ্গ গেন্ডারিয়ার শাখার আমি দপ্তর সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। কমিটি বিলুপ্ত হবার পর ২০১২ সাল থেকে এখন প্রর্যন্ত কোষাদক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছি। 
 
ইংরেজী ২০১২ সালে প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশন, ঢাকা এর উদ্যগে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১২৪ তম শুভ আবির্ভাব-বর্ষ-স্বরণ মহোৎসব পালন করা হয় ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, গেন্ডারিয়া-তে। তখন আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় গেন্ডারিয়ার গুরুভাইদের কাছ থেকে ইষ্টভৃতি সংগ্রহ করার। ঐ উৎসব থেকেই ইষ্টভৃতি সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে আমার পরিবার ও অন্যান্ন কাকাদের কাছ থেকে তারপর ফরিদাবাদ, গেন্ডারিয়া ও সুত্রাপুরের কিছু গুরুভাইরা এগিয়ে এসেছিল এই মহান কাজে আমাকে সাহায্য করতে। অনেকেই স্বইচ্ছায় ইষ্টভৃতি জমা দিতে থাকে আমাদের ফাউন্ডেশেনে।

ইংরেজী ২০১৬ সালের প্রথম দিক থেকে শুরু হয় bKash ও মানি ওর্ডারের মাধ্যমে ইষ্টভৃতি জমা দেওয়ার নিয়ম। তখন bKash এর দায়িত্ত্বটি আমার উপর পরে এখন পর্যন্ত সেটা পালন করছি। ২০১৩ সালের দিকে শ্রদ্ধেয় সহ-প্রতি ঋত্বিক এক অধিবেশনে নকুল কিশোর দাস দা বলে ছিলেন, “রাম (আমি) যেহেতু স্বস্ত্যয়নী নেয়নি তাই যারা স্বস্ত্যয়নী, যাজক বা অধ্বর্য্যূ তাদের রামের কাছে ইষ্টভৃতি জমা না দেওয়াই ভাল হয়।” তখন মনে মনে কিছুটা কষ্ট লেগেছিল। bKash এর দায়িত্ত্ব পালন কালে অনেকে আমাকে প্রশ্ন করতো আমি কি স্বস্ত্যয়নী কিনা, তখন থেকেই মনে মনে ভাবতে লাগলাম জীবনতো একটাই কত বৎসর তো পার কারলাম এখন স্বস্ত্যয়নী নেয়া উচিৎ। 
 
জীবনের অনেকটা সময় চলে যাওয়ার পর যখন বুঝলাম এই জীবনটা কিভাবে ঠাকুরের কাজে লাগানো যায় তার পথ খুজতে থাকলাম। তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের একটি বানী খুব মনে ধরলো “সব সমস্যার সমাধান / জানিষ ইষ্টপ্রতিষ্ঠান।” 
 
মনে মনে ঠাকুরের কাছে আবারো প্রার্থনা যানাই ঠাকুর আমাকে এমন একটা পথ বলে দাও যেখানে আমার জীবন নির্বাহের জন্য যতটুকু প্রয়োজন তেমন একটা আয়ের ব্যবস্থা হয় এবং আমি যেন তোমার কাজ সঠিক ভাবে করতে পারি। তাই আমার একটা ব্যবসা করতে হবে কিন্তু টাকা নাই। আমার স্নেহের ছোট ভাই বলরাম এগিয়ে আসলো আমার এই বিপদ থেকে পরিত্রান করতে। শুরু করলাম আমাদের ব্যবসা ও চললো আবার নতুন করে ঠাকুরের কাজ করার অপার সময় ও সুজোগ।

ইংরেজী ২০১৭ সাল ৩ রা মার্চ আমি শুধু মায়ের অনুমতি নিয়ে পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্ত্তী দাদার মাধ্যমে স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহন করি। স্বস্ত্যয়নী ব্রত মানে জীবনকে সুন্দর করতে পাঁচটি বিধান সঠিক ভাবে মানতে হবে। তারপর বেশ কয়টি বছর চলে গলে এভাবেই কাজ করতে করতে। একদিন সহ-প্রতি ঋত্বিক পার্থ সারথী চক্রবর্ত্তী দাদা বাসায় যাওয়ার পর তিনি তপোবিধায়ন, দ্বিতীয় খন্ড গ্রন্থের বানী নং ২২৬ টি পড়ে শুনালেন, সেই বানীর একটি জায়গায় ছিলঃ-

........ ইষ্টের স্বরণ ও প্রীত্যর্থে-
তুমি ভালবাস
এমনতর কোন জিনিষ
উৎসর্গ ক'রো-
তোমার স্বাস্থ্য যা'তে অক্ষুণ্ণ থাকে
তা'র প্রতি লক্ষ্য রেখে,
জীবনে সেটিকে
নিজের তৃপ্তির জন্য
আর ব্যবহার ক'রো না
 
সম্পূর্ন বানীটিই খুব সুন্দর, এই অংশটুকু শুনে আমিও মনে মনে সিন্ধান্ত নেই আমার প্রিয় ফল তরমুজ আমি পরমপিতে উৎসর্গ করবো। তার কিছুদিন পর আমি তরমুজ উৎসর্গ করলাম। 
 
২০২০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৫ তম ঋত্বিক সম্মেলন। সাংগঠনিক নিয়ম মেনেই পূজনীয় অধ্যক্ষ শ্রীবিদ্যুৎরঞ্জন চক্রবর্ত্তী দাদা আমাকে যাজকের আশির্বাদ প্রদান করেন। তিনি কিছু নিয়ম বলে দিলেন সামনের দিনগুলোতে কিভাবে পরমপিতার কাজ করতে হবে। কারন এখন থেকে পরমদয়ালকেই আর নিখুত ভাবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার মহান দ্বায়িত্ব আমাকে দেওয়া হলো। 
 
১৯৯২ সালে দিক্ষা গ্রহনের সময় অনকেটা না বুঝেই সংকল্প করেছিলাম “মানুষের জীবন ও বৃদ্ধির পরম উদ্ধাতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে প্রতিষ্ঠা করাই এইক্ষণ হইতেই আমার জীবনরে যজ্ঞ হউক।” এই সংকল্পটি বাস্তবায়ন করার এইতো সুজোগ। পরমপিতার কাছে প্রার্থনা যেন আমি তার কাজ সঠিক ভাবে করতে পারি।

জয় গুরু!