The Web This Blog

Thursday, June 27, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা (শেষ দৃশ্য)


                                              ~~ শেষ দৃশ্য ~~

জীবন থেকে চলে যায় আর বেশ কয়েকটি বছর। প্রিয়ার আর লেখা পড়া হলো না। এদিকে উদয়ও পাঁচ-ছয় বছর হলো মামা বাড়ি যায় না। মাঝে দুই এক বার কিছু সময়ের জন্য গিয়েছিল, প্রিয়াকে দেখে মনে মনে কষ্ট হয়েছে বটে, তবে কেমন যেন একটা অপছন্দ জন্ম নিয়েছে তার কাছে যার জন্য প্রিয়ার সাথে কথাও বলে না উদয়। বাকি জীবনে তাদের আর তেমন কোন কথা বলতে দেখা যায়নি। প্রিয়া বেশ কয়েকবার উদয়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু উদয় সেই দিকে তেমন কোন ভাবেই কর্ণপাত করেনি। 
 
তার কিছুদিন পর প্রিয়ার বিয়ের জন্য তার বাবা তোর জোর শুরু করে। পরিবারের সদস্য হিসেবে উদয় বেশ কয়েক জায়গায় গিয়েছিল তার প্রিয়তমার জন্য বর খুজতে। উদয় তখন চাকরি করে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে। উদয়কে তার মামি একদিন ফোন করলো, সেই প্রথম তার মামি তাকে ফোন করেছিল বললো প্রিয়ার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, তুমি ছুটি নিয়ে আইসো। উদয়ের আর যাওয়া হয় নি, কারন নতুন চাকরি তার উপরে মনের দিক দিয়েও ইচ্ছা ছিল না। কিছুটা চুপিসারে প্রিয়ার পরিবার তার বিয়ে দিল একজন ব্যবসায়ীর সাথে। প্রিয়ার ঘরে এখন এক মেয়ে ও এক ছেলে। হয়তো ভালই আছে স্বামী সংসার নিয়ে। 
 
তার কয়েক বছর পর উদয়ের সাথে প্রিয়ার দেখা হয়, কিন্তু কেমন আছ? উত্তর ভাল শুধু এতটুকুই কথা হয় তখন। বেশ কয়েক বছর পর উদয়ও বিয়ে করে। তার ঘরে একটি মেয়ে হয় সেই মেয়ের নাম রাখে প্রিয়া, কারন এখনও সে মনে প্রানে প্রিয়াকেই ভালবাসে। এভাবেই জীবন চলতে থাকে তার আপন গতিতে। বাকি জীবনে প্রিয়া আর উদয়ের দেখা হয়েছিল কিনা যানা নেই। হয়ত দুইজনই ভাল আছে, না হয় দুইজনেই ভাল নেই তাই বলে কি জীবন তো আর থেমে থাকে না।


পাঠকের কাছে লেখক হিসাবে আমি জানতে চাই, এটা কি ছিল ভালবাসা নাকি আবেগ নাকি অন্য কিছু?

~~ শেষ ~~


Wednesday, June 26, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( পঞ্চম দৃশ্য)


                                                         ~~ পঞ্চম দৃশ্য ~~


সময় কেমন করে যেন সব পরিবর্তন হয়ে যায়, প্রিয়া ঢাকার একটি নামী দামী কলেজে ভর্তি হয়ে থেকে যার কলেজের কাছেই একটি ছাত্রী হোস্টেলে। এদিকে নতুন চাকরি পায় উদয়, কিছুটা ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটতে থাকে তার। মাঝে মাঝে তাদের মধ্য ফোনে কথা হয়। দেখা করতে চায় উদয় কিন্তু কোন এক অজনা কারনে প্রিয়া দেখা করতে চায় না। কিছুই যেন ভাল লাগছে না উদয়ের। 
 
একদিন উদয় ঠিকানা মতো হাজির হয় প্রিয়ার কলেজের সামনে। অপেক্ষা করতে থাকে প্রিয়া কখন আসবে আর তার সেই মন ভুলান হাসি হাসবে। প্রিয়া কলেজ থেক বের হয়েই তার হোস্টেলের দিকে হাটতে থাকে, উদয় পিছন থেকে ডাক দেয় প্রিয়া বলে। প্রিয়া কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে তাকায় উদয়ের দিকে, কিন্তু উদয় যেই হাসিটা দেখার জন্য এত কষ্ট করে অপেক্ষা করছিল সেটা আর দেখা হল না। প্রিয়া জিজ্ঞাস করলো কি ব্যাপার এখানে, কি ভাবে আসলা? উদয় তার এই প্রশ্নে কেমন যেন ভালবাসার ঘাটতি অনুভব করলো। কয়েকটি কথা বলে বিদায় নিল দুইজনেই। 
 
উদয় তার মা-কে তার খুব ভালবাসে, মা যা বলবে উদয়ের জীবনে সেটাই মানতে হবে। উদয়ের মা কিছুটা বুঝতে পারলো ছেলের জীবনে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। সে বুঝায় প্রিয়া ধনী ঘরের মেয়ে, বাবা বিদেশ ফেরত, সে কখনোই এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তাই সময় নষ্ট না করে লেখাপড়ায় মনযোগ দাও। সময় সব ঠিক করে দিবে। উদয় তার মন কে শক্ত করে প্রিয়াকে যেমন করেই হোক ভুলতে হবে। 
 
সময়ের নিয়মে উদয় চাকরি নিয়ে চলে যায় ঢাকার বাইরে। তার কিছু দিন পর খবর আসে প্রিয়া কলেজের পাশের এক ছেলের প্রেমে পরেছে। ছেলেটি ধনী, বাড়ী ও গাড়ি দুইটাই আছে তার। উদয় প্রিয়ার জন্য আশির্বাদ করে যেন সে ভাল থাকে। কিন্তু না ছেলেটি প্রিয়ার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, সিনেমার কাহিনীর মত একদিন প্রিয়াকে একটি হেটেলে নিয়ে যায় সেই ছেলেটি। তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে এবং তা ছবি তুলে রাখে। তারপর প্রিয়ার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে সেই ছেলেটি, না হলে প্রিয়ার বাবা-মার কাছে সেই ছবি তুলে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখায়। প্রিয়া কিছুদিন বিভিন্ন আত্বীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা এনে সেই ছেলেকে দিতে থাকে। যখন আর কিছুতেই পারছিল না তখন বাধ্য হয়েই প্রিয়া তার বাবা মার কাছে সব খুলে বলে। প্রিয়ার বাবা তাকে ঢাকা থেকে অনেক দুরে এক আত্বীয়র কাছে রেখে আসে।

~~ শেষ দৃশ্য ~~

Tuesday, June 25, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( চতুর্থ দৃশ্য)


                                                          ~~ চতুর্থ দৃশ্য ~~


সময় বইতে থাকে, উদয় এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করেছে। এদিকে প্রিয়াও এস এস সি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় এসেছে কলেজে ভর্তির কোচিং করতে। উদয় লক্ষ করলো প্রিয়ার ব্যবহার কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রিয়া কি সব ভুলে গেছে তাদের সেই রাতের ঘটনা। পরে বুঝল না এটা উদয়কে পরীক্ষা করার জন্য করছে। যাতে উদয়ের পরিবারের কেও কিছু বুঝতে না পারে। 
 
একদিন প্রিয়া কেচিং এ যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, এমন সময় উদয় সেই ঘরে ঢুকল। প্রিয়া তাকে জিজ্ঞাসা করলো বলতো, ছেলেরা মেয়েদের পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে চায় কেন? আর জরিয়ে ধরেই নাভিতে বা তল পেটে হাত দেয় কেন? উদয় যেন আকাশ থেকে পরলো। এমন প্রশ্ন কোন মেয়ে করতে পারে সে জানতো না। সে কোন উত্তর দিতে পারলো না। প্রিয়া হাসতে হাসতে চুল ঠিক করতে থাকে। 
 
তখন ছিল চিঠির যুগ, একে ওপরকে অনেক চিঠি লিখত। প্রিয়াই বেশি লিখত। উদয়ের কাছে অনেকদিন সেই চিঠিগুলো সংগ্রহ করা ছিল। একে অপরকে অনেক উপহার দিত। ঢাকায় থাকার সুবাদে এবং প্রিয়ার কোচিং আছে বলে তারা দুইজনই একসাথে অনেক জায়গার বেড়ানোর সুযোগ পেল। ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, খাওয়া দাওয়াও হয় মনের আনন্দে।

কিছুদিন পর প্রিয়া তার গ্রামের বাড়ি চলে যায়। উদয়কে বলে এবারের আমার জন্মদিনে তোমাকে আমার পাশে চাই। উদয় দিন গুনতে থাকে ২০০২ সালের ২২ শে জুন শনিবার তারিখটি কবে আসবে। সে দিনটিই ছিল প্রিয়ার জন্মদিন।

উদয় সুন্দর একটি পিরামিড মোমবাতি কিনল আড়ং থেকে জন্মদিনের উপহার হিসাবে। ২০ তারিখই চলে আসে সে তার মামা বাড়ি তার প্রিয়তমাকে দেখার জন্য। সৌভাগ্যক্রমে প্রিয়ার মা ঢাকায় আসে ২১ তারিখে ডাক্তার দেখাতে। উদয় প্রিয়াকে বলে আজকে রাত্রে তুমি একটি শাড়ী পরো, প্রিয়া রাজি হয় কিন্তু বলে তুমি যদি আমাকে মাথায় খোপা করে দিতে পার তাহলে আমি শাড়ী পরতে পারি। 
 
সন্ধার পর প্রিয়া উদয়ের পচ্ছন্দের নীল রঙ্গের একটি শাড়ী পরে। উদয় বিকালেই একটি লাল গোলাপ বাগান থেকে জোগার করে রাখে প্রিয়ার খোপায় পরাবে বলে। প্রিয়া তার মার শাড়ী টি পরে এসে উদয়কে বলে কেমন লাগছে আমাকে। উদয় খুশি হয়, বলে আস খোপা করে দেই। উদয় কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় চুলের খোপা করতে। প্রিয়া নিজেই তার চুলের খোপা করে তাতে উদয় গোলাপ ফুলটি গুজে দেয় সুন্দর করে। পিরামিড মোমবাতিটি হাতে দিয়ে বলে কখনো ব্যবহার কর না। তাহলে মোমবাতির সাথে সাথে ভালবাসাও শেষ হয়ে যাবে।

সেই রাতে তাদের এক সাথে থাকার সুযোগ হয়। উদয় সারা রাত প্রিয়ার কোলে মাথা রেখে গল্প করতে থাকে। প্রিয়া উদয়য়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে আর চলতে থাকে নানান রকম কথা, গল্প ও ভালবাসার আদর। যেন সারা রাতেই যেন তাদের কথা আর শেষ হয় না। কিভাবে যে রাত শেষ হয়ে গেল কেও বুঝল না।

~~ পঞ্চম দৃশ্য ~~

Monday, June 24, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( তৃতীয় দৃশ্য)


                                                          ~~ তৃতীয় দৃশ্য ~~


পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধা, প্রিয়া তখন তার পড়ার ঘরে বই পরছিল। প্রিয়াকে দেখে উদয় যেন দেহে প্রান ফিরে পেল। এতক্ষণ সে ততটাই কষ্টে ছিল যতটা কষ্ট একটি জীবিত মাছের ডাঙ্গায় থাকলে হয়। প্রিয়া তার ভুবন ভোলান হাসি দিয়া জিজ্ঞাসা করলো কখন আসলা, এত তারা তারি বেড়ান শেষ? উদয় বললো তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না। সেই দিনের কষ্ট এবং কি ভাবে একা মামা বাড়ি আসে সেটা প্রিয়াকেও কখনো বলা হয়নি উদয়ের। 
 
সেদিন উদয়ের কষ্টের ফল স্বরুপ ঈশ্বর তাকে একটি ফল দিয়েছিল। তার মামি মানে প্রিয়ার মা সেদিন ঢাকা গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে। বাসা ফাকা, প্রিয়ার ঠাকুর মা উদয় কে বললো তুই আর প্রিয়া এক ঘরে ঘুমা, না হলে প্রিয়া ভয় পেতে পারে রাত্রে। উদয় যেন মনে মনে এটাই চাচ্ছিল, প্রিয়া ও কিছু বলতে চায় উদয়কে এটাই তাদের উপযুক্ত রাত একে ওপরকে সব খুলে বলার। 
 
রাত্রির খাবার শেষ করে সবাই ঘুমাতে গেল। উদয় আর প্রিয়া তাদের ঘরে গেল, দিনটি ছিল পূর্ণিমার রাত। জালনা খুলে তার চাঁদ দেখছে আর দুইজন দুইজনার হাত ধরে কিছুক্ষন বসে রইল কেও কিছু বলতে পারলো না শুধু আকাশের দিকে চেয়ে রইল। প্রিয়া বলল কি ব্যপার ঘুমাবা না, কাল তো আমার স্কুল আছে। কিছু কি বলবে? উদয় বলে আমি আর কি বলবো এখন তো তোমার বলার কথা। আমি তো আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। প্রিয়া বলে এখনই এই সব ভাববার সময় নয়। সময় হোক সবই জানতে পারবে। উদয় প্রিয়ার গালে জীবনের দ্বিতীয় চুম্বন দিল, প্রিয়া কিছু বলল না। তাদের দুইজনই তাদের শরীরে একপ্রকার কম্পন অনুভব করল। 
 
জরিয়ে ধরলো একে অপরকে। প্রিয়া বললো আমাকে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধর, পৃথিবীর কোন শক্তিই যেন আমাদের আলাদা না করতে পারে। উদয়ও তার সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রিয়াকে তার বুকের মাঝে জরিয়ে রাখার চেষ্টা করলো। ভালবাসার প্রথম উপহার হিসেবে একে ওপরকে চুম্বন করতে থাকে, কপাল, গাল, চোখ, ঠোট, কাঁধ। এ যেন এক ভালবাসার পরীক্ষা চলছে, কে কাকে কত চুম্বন করতে পারে আর বলতে পারে আমি তোমাকে বেশি ভালবাসি। 
 
সেই রাতে একে ওপরকে জরিয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পরলো। সেই যুগের ছেলে মেয়েদের কাছে ভালবাসার প্রতীক হিসাবে একটি চুম্বন-ই যথেষ্ঠ। তখন সবার হাতে ছিল না মোবাইল বা ইন্টারনেট তাই যৌনতা বা দৈহিক সম্পর্ক সমন্ধে কেও তেমন কিছুই জানতো না। সেই রাতটি ছিল ২২ জুলাই ২০০১ রবিবার, উদয়ের জীবনের এমনই একটি রাত সে চাইতো সে বিয়ে করলে এই তারিখেই করবে। আরো কয়েকদিন মামা বাড়ী বেড়িয়ে উদয় ঢাকা চলে আসে। 
 
কিছুতেই উদয় পড়ালেখায় মন দিতে পারছিল না। তখনো মোবাইলে কথা বলা এত সহজ ছিল না। কলরেট ছিল প্রতি মিনিট প্রায় ৬-৭ টাকা। উদয় লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি শুরু করেছে কয়েকটি। প্রিয়া কেমন আছে জানতে চায় উদয়। সৌভাগ্যক্রমে প্রিয়ার বাবা একটি মোবাইল ফোন পাঠায় বিদেশ থেকে প্রিয়ার মার সাথে কথা বলার জন্য। তার কিছু দিন পর উদয় প্রিয়ার এক আত্মীয়র কাছ থেকে মোবাইল নাম্বারটি সংগ্রহ করে। 
 
উদয়ের এক বন্ধু মোবাইলে কথা বলার দোকান ছিল। একদিন উদয় বিকালে তার বন্ধুর দোকানে যায়, ফোন করল সেই নাম্বারে ফোনটি ধরলো প্রিয়ার মা। সাথে সাথেই ফোনটি কেটে দিল উদয়, কিছুটা ভয় পেল। কিছুক্ষন পর আবার করলো, এবার প্রিয়া ফোনটি ধরলো। কথা বলতে বলতে প্রায় এক ঘন্টা কখন পার হয়ে গেল কেও বুঝতে পারলো না। তখনই তারা ঠিক করে তারা চিঠি লিখবে প্রিয়া চিঠি লিখবে উদয়ের বাসার ঠিকানায়, কিন্তু উদয় চিঠি লিখবে প্রিয়ার বান্ধবীর ঠিকানায় যেন প্রিয়ার বাসার কেও বুঝতে না পারে।

Sunday, June 23, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( দ্বিতীয় দৃশ্য)


                                                         ~~ দ্বিতীয় দৃশ্য ~~


সকালে কিছুটা দেরিতে ঘুম ভাঙ্গে উদয়ের, এই ফাকে প্রিয়া স্কুলে চলে গেছে। উদয় বুঝতে পারে কিছু একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে সকালের মধ্যেই। মামির ব্যবহারে রাতের ঘটনা মামি কিছুটা বুঝতে পেরেছে বলে উদয়ের মনে হলো। সে কিছুটা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো।

উদয়ের মাসি বাড়ি ছিল পাসের গ্রামেই, উদয় সেদিন তার মাসিকে নিয়ে তার মাসি বাড়ি গেল কয়েকদিন থাকবে বলে। একদিন যেতেই তার মনে হলে সে বোধ হয় কোন জেলখানায় আছে। কোন কিছুই যেন তার আর ভাল লাগছে না। কি যেন একটা পরিবর্তন মনে হচ্ছে তার কাছে, সবকিছু বিরক্তিকর। প্রথম প্রেমে পরলে যা হয় আর কি। প্রেম রোগ বলে কথা, যার একটাই ঔষধ মনের মানুষের সাথে সময় কাটানো। 
 
এখানে বসেই সে একটি গান শুনতে পেল ব্যান্ড মাইলস এর জনপ্রিয় একটি গান, যেটা তার জীবনের সেরা দশটি গানের মধ্যে একটি। সেই গানটিকে উদয়ের মত করে লিখে প্রিয়াকে উপহার দিল, যেহেতু প্রেমে পরলে মিথ্যা বলতে হয়। উদয়ও মিথ্যার আশ্রয় নিল। এই গানটিকে কবিতার আকারে লিখে প্রিয়াকে বললো তোমার জন্য একটি কবিতা লিখেছি। জীবনের প্রথম কবিতা।


প্রথম প্রেমের মত, প্রথম কবিতা এসে বলে
আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দূরের দেশে

কত পথ প্রান্তর ঘুরে ফিরেছি
পাইনিতো আজো তোমায় গো, 
সেই পথ চলা শেষ হলে
কাছে এসে যেও বলে
এই তো আমি, এই তো আমি

প্রথম প্রেমের মত, প্রথম কবিতা এসে বলে
আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দূরের দেশে।
 
তোমারই আশায় বসে থেকেছিনাম ধরে ডাক দিলে কে গো তুমি,
ফিরে এলে আজ কাছে
ভালোবাসা যত আছে
দিলাম তুলে, দিলাম তুলে
 
প্রথম প্রেমের মত, প্রথম কবিতা এসে বলে
আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দূরের দেশে


উদয় সারাদিন ভাবতে থাকে কি ভাবে মামা বাড়ি যাওয়া যায় কারন সমস্যা হলো সে কি ভাবে যেতে হবে তা জানে না। এটাই ছিল তার প্রথম মাসি বাড়ি আসা। রাস্তা ঘাট সবই তার অচেনা। যত কষ্টই হোক যেতে হবে তাকে তার প্রিয়ার কাছে। সে কাউকে কিছু না বলেই রওনা হলো তার প্রিয়ার সাথে দেখা করতে। নদী পথ লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে নৌকা, পায়ে হেটে ঠিকই পৌছে যায় তার গন্তব্যে।

Saturday, June 22, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( প্রথম দৃশ্য)


                                                        ~~ প্রথম দৃশ্য ~~


একদিন দুপুরে উদয় প্রিয়ার পড়ার ঘরে বসে ছিল, প্রিয়া স্নান শেষ করে আসলেই তাকে বলতে হবে। প্রিয়ার মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত রান্নার কাজে। এটাই সঠিক সময় প্রিয়াকে মনের সকল কথা বলার জন্য। উদয় অপেক্ষা করতে থাকে কিভাবে ভালবাসার কথাটি প্রিয়াকে বলা যায়, মনে একটা ভয়ও কাজ করতে থাকে প্রিয়া তা সঠিক ভাবে গ্রহন করবে নাকি মামি কে বলে দেবে। 
 
এমন সময়ই প্রিয়া এসে হাজির হলো ঘরে, ভেজা চুল ও ভেজা শরীরে জলের দাগ দেখা যাচ্ছে। শরীরে কোন ওড়না না থাকায় প্রিয়াকে শিশির ভেজা লাল গোলাপ ফুল মনে হচ্ছে উদয়ের কাছে। উদয় প্রিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে এবং কানে কানে বলে তার জীবনে সব থেকে কঠিন কথাটি “আমি তোমাকে ভালবাসি”। বলার সাথে সাথেই মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজটি আজ উদয় করে ফেলেছে।
 
প্রিয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে, তারপর তার সেই পাগল করা হাসি, যে হাসি দিয়েই সে পৃথিবী জয় করতে পারে। সত্যিই কি আমাকে ভালবাস, নাকি আবেগে বলছো? উদয় কিছুই বলতে পারে না, আমি কিছু জানি না, শুধু জানি আমি তোমাকে ভালবাসি। বেশি পাগলামি করোনা তাহলে আমার মা কে বলে দিবো। উদয় বলে যদি আমাকে ভাল না বাস তাহলে তুমি বলে দিয়। প্রিয়া বলে এখন যাও আমি জামা পরিবর্তন করবো, মা চলে আসতে পারে, তোমার সাথে পরে কথা বলবো। 
 
সেদিন সারাদিন প্রিয়া ও উদয় একে ওপরের সাথে আর কথা বলে না। উদয় মনে মনে তার পজেটিভ উত্তর আসার অপেক্ষায় থাকে। রাতে খাবার সময় সবাই এক সাথে বসে খাবার খেতে। উদয়, প্রিয়া, প্রিয়ার মা, ঠাকুর দাদা ও ঠাকুর মা। উদয় কোন কথা বলছে না দেখে মামী জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে তোর। প্রিয়ার সাথে ঝগরা করেছি কিনা। প্রিয়া সাথে সাথে বলে না না আমি ঝগরা করি নাই, তোমার ভাগিনা বড় হয়ে গেছে, এখন বিয়া দিয়া দেও। প্রিয়ার ঠাকুর মা বলে সময় হলে ঠিকই করাবো। কেন তুই বিয়া বসবি নাকি আমার নাতির সাথে। বলতো দিয়া দিই। উদয় ভয় পায় তাহলে কি প্রিয়া সবাইকে বলে দিয়েছে দুপুরের কথা। 
 
খাওয়া শেষে সবাই ঘুমাতে যায়। প্রিয়া ও তার মা এক রুমে। উদয় তার দাদু-দিদিমার সাথে ঘুমায় পাসের ঘরে। কিছুতেই যেন উদয়ের ঘুম আসে না। শুধু লক্ষ করছে কখন পাসের ঘরে মামি কখন ঘুমায় তাহলে প্রিয়াকে কিছু বলতে পারবে। মাঝ রাতে প্রিয়ার ঘুম কিছুটা ভেঙ্গে যায়, উদয় বুঝতে পেরে আস্তে আস্তে প্রিয়ার কাছে যেতে চায়। মনে ভয় ও সংকজ কাজ করছে যদি কেও দেখে ফেলে তাহলে দুই জনেরই বদনাম হবে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে বুকে সাহস নিয়ে প্রিয়ার কাছে যায়, প্রিয়ার মাথার কাছে চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষন। উদয় বুঝতে পারল প্রিয়াও চায় কিছু বলতে সেও ও ঘুমায়নি। উদয় প্রিয়ার কানের কাছে তার মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলল I LOVE U । প্রিয়া কিছুটা মুচকি হাসল। উদয় প্রিয়ার গালে আলতো করে একটা চুমু দিল এবং আবার আস্তে আস্তে বলল I LOVE U । তারপর চলে গেল ঘুমাতে।

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা

আমার এই লেখাটি প্রয়াত জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যার কে উৎসর্গ করলাম। কারন তার লেখা পড়েই আমার লেখার অনুপ্রেরণা। গল্পের চরিত্রগুলো কাল্পনিক তাই কারও জীবনের সাথে মিলে গেলে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ও কাকতালীয়।

                                                    ~~ সূচনা ~~

গল্পের পটভূমি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের কোন এক বিকাল থেকে শুরু। গল্পের দুই প্রধান চরিত্র নায়ক উদয় আর নায়িকা প্রিয়া, তাদের দুইজনকে ঘিরেই গল্পের সকল কিছু। 
 
পরিচিতি:- নায়ক উদয় একজন নরম মনের সহজ সরল ছেলে। শহরের সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে বড় হয়ে উঠা। কোন মেয়ে কিছুটা হাসি মুখে কথা বললেই মনে হয় কিছু কি একটা হয়ে গেল নাকি!! সবেমাত্র এস এস সি পরীক্ষা শেষ করেছে তাই ভবিষ্যত জীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার মনে। জীবনে অনেক মেয়েকে ভাল লেগেছে কিন্তু ভালবেসেছে একজনকেই। বসবাস ঢাকার এর লালবাগ এলাকায়।

অপরদিকে, নায়িকা প্রিয়া একজন চঞ্চলা, ধনী কিন্তু ভাল মনের মেয়ে। সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে ও মানুষ ও তাকে খুব ভালবাসে। মফস্বল শহরে বড় হয়ে উঠা, বাবা সিঙ্গাপুর থাকে। এক বাপের এক মেয়ে বিধায় খুবই আদরের। বসবাস নারায়নগঞ্জ এর সোনারগাঁও গ্রামে। 
 
দুই জন সম্পর্কে পিসতুতো-মামাতো ভাই বোন। উদয় ও প্রিয়ার বয়সের পার্থক্য প্রায় দুই বছরের মত।ছেলেটি প্রতি বছরই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে তার মামা বাড়ীতে বেড়াতে যেত। যেহেতু অনেক দিন পর পর যায় তাই মামা-মামি, দাদু-দিদিমা ও অন্যরা খুবই আদর করে। ভাই-বোন হিসাবে এক সাথে খেলাধুলা দুষ্টামি সবকিছু হয় তবে কেও তেমন কোন বাধা দেয় না ছোট মানুষ মনে করে। 
 
গত দুই-তিন বছর মামা বাড়িতে যেতে পারেনি উদয় এস এস সি পরিক্ষার কারনে। সে সময় এস এস সি পরীক্ষাকে বেশ কঠিন ভাবেই দেখা হতো তার উপরে উদয় ছিল আবার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। এস এস সি পরীক্ষা শেষ করেই উদয়ের হাতে এখন অনেক সময় তাই মামা বাড়ি, মাসি বাড়ি বেড়াতে যাওয়া যেতেই পারে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, সে একদিন চলে গেল মামার বাড়ি। সবাই তখন ভিশন খুশি, সবাই খোজ খবর নিতে থাকে বাসার সবাই কেমন আছে, পরীক্ষা কেমন হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনও প্রিয়া দিবা নিদ্রায় ছিল। মামি তাকে ডেকে তুলে বলে দেখ কে এসেছে, প্রিয়া চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে উদয়কে দেখে একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে জিজ্ঞাস করলো কেমন আছো তুমি? কখন আসলে
 
প্রিয়া সবে মাত্র নবম শ্রেনীতে, বেশ কয়েক বছর পর প্রিয়াকে দেখা, শরীরে ও মনের দিক দিয়ে প্রিয়া এখন বেশ বড়। সেই হাসি ও সেই জিজ্ঞাসা উদয় বাকি জীবনেও ভুলতে পারেনি। সেদিন প্রিয়ার গায়ে পরা ছিল হালকা গোলাপি রংগের সুতি কামিজ ও হাফ প্যান্ট, গায়ে কোন ওড়না না থাকায় শুধু কামিজে প্রিয়া কে আরো অনেক বেশি আকর্ষনীয় মনে হয়ে ছিল। প্রথম দর্শনে ভালো লাগা বা প্রেমে পরা যাকে বলে। প্রিয়া তাকে ভালবাসে কিনা বুঝে উঠার আগেই উদয় তাকে ভালবাসার কথাটি বলতে চায় এবং সুযোগ খুজতে থাকে।