The Web This Blog

Monday, June 24, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( তৃতীয় দৃশ্য)


                                                          ~~ তৃতীয় দৃশ্য ~~


পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধা, প্রিয়া তখন তার পড়ার ঘরে বই পরছিল। প্রিয়াকে দেখে উদয় যেন দেহে প্রান ফিরে পেল। এতক্ষণ সে ততটাই কষ্টে ছিল যতটা কষ্ট একটি জীবিত মাছের ডাঙ্গায় থাকলে হয়। প্রিয়া তার ভুবন ভোলান হাসি দিয়া জিজ্ঞাসা করলো কখন আসলা, এত তারা তারি বেড়ান শেষ? উদয় বললো তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না। সেই দিনের কষ্ট এবং কি ভাবে একা মামা বাড়ি আসে সেটা প্রিয়াকেও কখনো বলা হয়নি উদয়ের। 
 
সেদিন উদয়ের কষ্টের ফল স্বরুপ ঈশ্বর তাকে একটি ফল দিয়েছিল। তার মামি মানে প্রিয়ার মা সেদিন ঢাকা গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে। বাসা ফাকা, প্রিয়ার ঠাকুর মা উদয় কে বললো তুই আর প্রিয়া এক ঘরে ঘুমা, না হলে প্রিয়া ভয় পেতে পারে রাত্রে। উদয় যেন মনে মনে এটাই চাচ্ছিল, প্রিয়া ও কিছু বলতে চায় উদয়কে এটাই তাদের উপযুক্ত রাত একে ওপরকে সব খুলে বলার। 
 
রাত্রির খাবার শেষ করে সবাই ঘুমাতে গেল। উদয় আর প্রিয়া তাদের ঘরে গেল, দিনটি ছিল পূর্ণিমার রাত। জালনা খুলে তার চাঁদ দেখছে আর দুইজন দুইজনার হাত ধরে কিছুক্ষন বসে রইল কেও কিছু বলতে পারলো না শুধু আকাশের দিকে চেয়ে রইল। প্রিয়া বলল কি ব্যপার ঘুমাবা না, কাল তো আমার স্কুল আছে। কিছু কি বলবে? উদয় বলে আমি আর কি বলবো এখন তো তোমার বলার কথা। আমি তো আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। প্রিয়া বলে এখনই এই সব ভাববার সময় নয়। সময় হোক সবই জানতে পারবে। উদয় প্রিয়ার গালে জীবনের দ্বিতীয় চুম্বন দিল, প্রিয়া কিছু বলল না। তাদের দুইজনই তাদের শরীরে একপ্রকার কম্পন অনুভব করল। 
 
জরিয়ে ধরলো একে অপরকে। প্রিয়া বললো আমাকে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধর, পৃথিবীর কোন শক্তিই যেন আমাদের আলাদা না করতে পারে। উদয়ও তার সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রিয়াকে তার বুকের মাঝে জরিয়ে রাখার চেষ্টা করলো। ভালবাসার প্রথম উপহার হিসেবে একে ওপরকে চুম্বন করতে থাকে, কপাল, গাল, চোখ, ঠোট, কাঁধ। এ যেন এক ভালবাসার পরীক্ষা চলছে, কে কাকে কত চুম্বন করতে পারে আর বলতে পারে আমি তোমাকে বেশি ভালবাসি। 
 
সেই রাতে একে ওপরকে জরিয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পরলো। সেই যুগের ছেলে মেয়েদের কাছে ভালবাসার প্রতীক হিসাবে একটি চুম্বন-ই যথেষ্ঠ। তখন সবার হাতে ছিল না মোবাইল বা ইন্টারনেট তাই যৌনতা বা দৈহিক সম্পর্ক সমন্ধে কেও তেমন কিছুই জানতো না। সেই রাতটি ছিল ২২ জুলাই ২০০১ রবিবার, উদয়ের জীবনের এমনই একটি রাত সে চাইতো সে বিয়ে করলে এই তারিখেই করবে। আরো কয়েকদিন মামা বাড়ী বেড়িয়ে উদয় ঢাকা চলে আসে। 
 
কিছুতেই উদয় পড়ালেখায় মন দিতে পারছিল না। তখনো মোবাইলে কথা বলা এত সহজ ছিল না। কলরেট ছিল প্রতি মিনিট প্রায় ৬-৭ টাকা। উদয় লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি শুরু করেছে কয়েকটি। প্রিয়া কেমন আছে জানতে চায় উদয়। সৌভাগ্যক্রমে প্রিয়ার বাবা একটি মোবাইল ফোন পাঠায় বিদেশ থেকে প্রিয়ার মার সাথে কথা বলার জন্য। তার কিছু দিন পর উদয় প্রিয়ার এক আত্মীয়র কাছ থেকে মোবাইল নাম্বারটি সংগ্রহ করে। 
 
উদয়ের এক বন্ধু মোবাইলে কথা বলার দোকান ছিল। একদিন উদয় বিকালে তার বন্ধুর দোকানে যায়, ফোন করল সেই নাম্বারে ফোনটি ধরলো প্রিয়ার মা। সাথে সাথেই ফোনটি কেটে দিল উদয়, কিছুটা ভয় পেল। কিছুক্ষন পর আবার করলো, এবার প্রিয়া ফোনটি ধরলো। কথা বলতে বলতে প্রায় এক ঘন্টা কখন পার হয়ে গেল কেও বুঝতে পারলো না। তখনই তারা ঠিক করে তারা চিঠি লিখবে প্রিয়া চিঠি লিখবে উদয়ের বাসার ঠিকানায়, কিন্তু উদয় চিঠি লিখবে প্রিয়ার বান্ধবীর ঠিকানায় যেন প্রিয়ার বাসার কেও বুঝতে না পারে।

No comments:

Post a Comment