The Web This Blog

Saturday, April 27, 2024

দেওঘর ভ্রমন, একাদশ দিন, ~ ১৮-০৪-২০২৪ই, বৃহস্পতিবার

দশম দিন ...

খুব ভোরে উঠে আমরা রওনা হলাম। অনেকগুলো ব্যাগ ও ট্রলির কারনে বিধান কাকা ও দিপক একটি টেক্সি এবং আমি ও কল্যান দা একটি টেক্সি করে শিয়ালদা জংশন পৌছাই। ভোর ৫ টার ট্রেনে করে শিয়ালদা থেকে বনগাঁ রওনা হই। বনগাঁ যখন নামি তখন প্রায় সকাল ৭টা। 

আবারও দুইটি সিএনজি যোগে আমরা পেট্রাপোল বর্ডার পৌছাই। ঈদের ছুটি শেষ, তাই বেশ ভিড় উপেক্ষা করে সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা পর আমরা প্রিয় জন্মভূমির মাটি স্পর্শ করি। তখন ঘড়ির কাটায় প্রায় ১০ টার কিছু বেশি সময় হবে।

কল্যান দা, বিধান কাকা ও দিপক একটি টেক্সি করে সরাসরি পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মাঝ পথে কুষ্টিয়াতে বিধান কাকা নেমে যায়। কোন বাসের ভালো সিট পাচ্ছিলাম না, তখন আমি ১১.৩০ মিনিটে Golden Line পরিবহনে ঢাকার উদ্দেশ্য়ে রওনা হই। ঢাকার বাসায় পৌছাই প্রায় বিকাল ৪ টার দিকে। 

এই ভাবেই শেষ হলো আমার প্রথম দেওঘর ও কলকাতা ভ্রমন। প্রায় ১০ দিনের এই সফরে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে, যা এক সাথে চলতে গেলে হতেই পারে। কিছু কথা সময়ের কারনে ও কিছু কথা ইচ্ছাকৃত আর লেখা হলো না। লিখলে হয়তো অন্যের ভাল লাগলেও অনেকেই কষ্ট পেতে পারে। চাওয়া-পাওয়ার এই জীবনে অনেক কিছুই যেমন না-চাইতে পেয়েছি, আবার অনেক কিছুই এখনও পাওয়া হয়নি। নাপাওয়া গুলো পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে আজকের মত এখানেই শেষ করতে হচ্ছে।

অনেক বছর পর একটি দীর্ঘ লেখার চেষ্টা করলাম। যারা এতক্ষন এই লেখাটি পরলেন তাদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আপনাদের যেকোন মতামত ও পরামর্শ আমাকে পরবর্তী লেখার অনুপ্রেরনা যোগাবে। তাই মতামত ও পরামর্শ দিতে ভুল করবেন না।

~অনুকূলঃ সদা প্রভুঃ পদ্মনাভ মনোবিভুঃ~

~ জয়গুরু সকলকে ~

আবার যাত্রা শুরু ....


 

  


দশম দিন, ~ ১৭-০৪-২০২৪ই, বুধবার

নবম দিন ....

আজ আমার ভ্রমনের শেষ দিন। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট আমরা। কল্যান দা তার এক জজমানের বাড়িতে গিয়েছিলেন ফিরে আসেন প্রায় রাত ১০ টার দিকে। আমি আর বিধান কাকা বাগুইআটি মন্দিরে সময় কাটাচ্ছি ও এই কয়দিনের ভ্রমনের নানান বিষয় নিয়ে গল্প করছিলাম। এতইটা গরম ছিল যে বারইরে যাবার ইচ্ছা হলো না। বিকালদিকে কিছুটা গরম কমলে আমরা বাগুইআটি ও এর আশে পাশের এলাকায় ঘুরা ঘুরি করলাম। 

সন্ধায় মন্দিরে সমবেত প্রার্থনা শেষ করলাম। রেলপুকুরের বিপরিতে একটি নিরামিষ দোকান আছে এই কয়দিনের নাস্তার ভরসা ছিল এটাই। শেষবারের মত কিছু নাস্তা সেরে নিলাম বিধান কাকা, দিপক ও আমি। মন্দিরে ফিরে এসে ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে। ভোরে রওনা হওয়ার অপেক্ষা।

রাতের খাবার শেষ করতে করতে প্রায় রাত ১২ টা। ভোর তিনটার দিকে আমাদের উঠতে হবে। আমি আর বিধান কাকা ঘন্টা খানেক ঘুমালাম। কল্যান দার তার ব্যাগ গুছাতে গুছাতে আর ঘুমাতে পারলো না। 

শেষ দিন ....

  

  


Friday, April 26, 2024

নবম দিন, ~ ১৬-০৪-২০২৪ই, মঙ্গলবার

অষ্টম দিন ....

কলকাতা প্রচন্ড গরম ছিল গত কয়েকদিন। গত রাত্রে বিধান কাকা তার মাসি বাড়ি নেমে যায় ও প্রহলাদ দা বাংলাদেশের উদ্দেশ্য়ে রওনা হয়ে যায়। ভোরে কিছুটা ঘুম দিয়ে সকালে আমি ও কল্যান দা নাস্তা সেরে চলে যাই বাজারে। প্রয়জনীয় কিছু কেনাকাটা করে রান্না করা হলো। সকালের খাবার শেষ করে আমরা চলে আসি বড় বাজার যা যা কেনাকাটা বাকি ছিল তা শেষ করলাম। কিছুক্ষন পর বিধান কাকা তার মাসি বাড়ি থেকে বড় বাজার এসে মিলিত হলাম সবাই। 

কেনাকাটা শেষ করে মন্দির ফিরে এসে সবাই সকলের ব্যাগ-পত্র গুছাতে থাকলাম। বলরাম তার ছেলেকে নিয়ে রাতে মন্দির আসলো। সবাই একসাথে রাতের খাবার শেষ করলাম। বলরাম ভোরে বাংলাদেশ ফিরে আসবে, তাই রাতেই বিদায় নিয়ে সবাই যার যার মত ঘুমিয়ে গেলাম।

দশম দিন ....



 

 

 


অষ্টম দিন, ~ ১৫-০৪-২০২৪ই, সোমবার

সপ্তম দিন ....

গত কয়েকদিনের মত আজও আমরা সবাই নহবত দেখার জন্য ব্রাহ্মমুহূর্তের পূর্বেই স্নান ও ইষ্টভৃতি শেষ করে চলে আসি উৎসব অঙ্গনে। তারপর উষাকীর্তন দিয়ে নগর পরিক্রমা করলাম। আজ উৎসবের শেষ দিন। অনেক ভক্তই গতকাল ফিরে চলে গেছেন। যারা ছিলেন তাদের অনেক ভক্তবৃন্দ উৎসব অঙ্গনে এসে হাজির হতে থাকে। কিছুক্ষন পর পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন দাদা এসে উপস্থিৎ হন সমবেত প্রার্থনাতে। 

প্রাতঃ ৪.৪৫ মিনিটঃ- সমবেত প্রার্থনা ও বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ (বাংলা, হিন্দি, নেপালী, অসমীয় ও ওড়িয়া)।

সকাল ৭.৩০ মিনিটঃ- শ্রীশ্রীঠাকুর পুজা, ভোগ নিবেদন ও প্রসাদ বিতরন।

সকাল ১০ ঘটিকাঃ- “যুক্ত জীবনই সুপ্ত জীবনকে জাগাতে পারে” – একথার তাৎপর্য বিষয়ক বোধবীক্ষনী আলোচনা সভা হলো।

সকালে বাজারে হাটা হাটা করার সময় দেখা হয়ে গেল ‘স্মৃতির মালা’ গ্রন্থের লেখক শ্রীমনিলাল চক্রবর্ত্তী দাদার সাথে। তার সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করে। স্বর্গীয় কেদারনাথ ভট্টাচার্য দাদার পুত্র, স্বর্গীয় কুমার কৃষ্ণ ভট্টচার্য (শ্রীশ্রীঠাকুর বিষয়ক বহু গ্রন্থের রচয়িতা) দাদার বাড়ি তে যাই কল্যান দা, প্রহলাদ দা ও আমি। সাথে ছিল স্বর্গীয় শ্রীনাথ দার পুত্র শ্রীউমা নাথ দা তিনিই আমাদের কুমার কৃষ্ণ ভট্টচার্য দাদার বাড়ীতে নিয়ে যান। “কেদারনাথ ভবনে” কিছুক্ষনপর আমাদের সাথে যুক্ত হলো স্নেহের কৌশিক চক্রবর্ত্তী (সহ-প্রতি ঋত্বিক) ও অর্কপ্রভ চ্যাটার্জী। সেখানে তার পুত্র বধুর আতিথিয়তায় আমরা সবাই মুদ্ধ। শ্রদ্ধয়া মা কুমার কৃষ্ণ ভট্টচার্য দাদার লেখা কয়েকটি বই এবং নিজ গাছের একটি করে লেবু আমাদের সকলকে উপহার দেন।

মধ্যাহ্নে আনন্দ বাজার বড় বাড়িতে সেরে কিছু সময় ভাত ঘুম দিলাম। আজও উৎসব অঙ্গনে অপরাহ্ন ৩ টায় ভক্তিগীতি চলছিল। আমার খুবই কাঙ্ক্ষিত একটি শ্রীশ্রীঠাকুর বিগ্রহ ক্রয় করি পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন দাদার কাছ থেকে। আজ “যাজন পথে” বইটি ক্রয় করে পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন দাদার কাছ থেকে স্মৃতি সাক্ষর সংগ্রহ করি। আজ রাতের ট্রেনে আমাদের কলকাতা ফিরে আসতে হবে তাই যাদের সাথে দেখা হচ্ছে তাদের কাছ থেকেই বিদায় নিয়ে নিলাম।

সন্ধা ৬.০৬ মিনিটেঃ- সন্ধা সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ ও ভক্তিগীতি হলো।

সন্ধা ৭.০০ মিনিটঃ- “শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবাদর্শে শিক্ষাব্যবস্থা”- এই বিষয়ক বিভিন্ন ভাষায় আলোচনা ও অধিবেশন চললো।

রাত ১০ টার দিকে আমরা কুম্ভূ ইক্সপ্রেস ট্রেনে করে কলকাতা ফিরে আসবো তাই কিছুটা আগেই আনন্দ বাজার শেষ করলাম সবাই। পূজনীয় সকল দাদাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত রাজেন্দ্র দাদার সিএনজি করে জাশিডিই জংশনে পৌছাই। সেখানে স্লিপিং কোচে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চেপে এক ঘুমেই চলে আসলাম হাওড়া জংশনে। তখন প্রায় মধ্য রাত, ৩.৩০ মিনিট। একটি টেক্সি করে আমি ও কল্যান দা চলে আসলাম বাগুইআটি মন্দির। শিয়ালদা জংশনে নামিয়ে দেয়া হলে প্রহলাদ দা, বিধান কাকা ও দিপক কে। 

 
 
 
   

Thursday, April 25, 2024

সপ্তম দিন, ~ ১৪-০৪-২০২৪ই, রবিবার

ষষ্ঠ দিন..... 

আজ ১ লা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা, ব্রাহ্মমুহূর্তে জাগরনী ও নহবতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। আজও আমরা সবাই নহবত দেখার জন্য ব্রাহ্মমুহূর্তের পূর্বেই স্নান ও ইষ্টভৃতি শেষ করে চলে আসি উৎসব অঙ্গনে। তারপর উষাকীর্তন দিয়ে নগর পরিক্রমা হলো। ধিরে ধিরে আরো ভক্তবৃন্দ উৎসব অঙ্গনে এসে হাজির হতে থাকে। কিছুক্ষন পর পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন চক্রবর্ত্তী দাদা এসে উপস্থিৎ হন।

প্রাতঃ ৪.৪৫ মিনিটঃ- সমবেত প্রার্থনা ও শ্রীশ্রীঠাকুরের আশীষবানী পাঠ হলো।

সকাল ৭.৩০ মিনিটঃ- শ্রীশ্রীঠাকুর পুজা, ভোগ নিবেদন ও প্রসাদ বিতরন।

সকাল ৯ টায়ঃ- পরিবারের ভাঙ্গন রোধে “নারীর নীতি” বিষয়ক মাতৃ সম্মেলন।

সকাল ১০ ঘটিকাঃ- ঋত্বিক ভবনে পূজ্যপাদ দাদার উপস্থিতিতে শুরু হয় ৯৮ তম, প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র চর্য্যাশ্রমের সর্ব্বভারতীয় ঋত্বিক সম্মেলন, সেখানে উপস্থিৎ ছিলাম আমরা।

মধ্যাহ্নে আনন্দ বাজার গ্রহন করে কিছু সময় ভাত ঘুম। উৎসব অঙ্গনে তখন অপরাহ্ন ৩ টায় ভক্তিগীতি চলছিল।

সন্ধা ৬.০৬ মিনিটেঃ- সন্ধা সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ ও ভক্তিগীতি।

পূর্বঘোষিত পূজ্যপাদ অধক্ষ্য শ্রীবিদ্যুৎরঞ্জন চক্রবর্ত্তী দাদাকে ভক্তদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হলো। অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই চমকপ্রদ ও সুন্দর একটি উপস্থাপনা। পূজ্যেপাদ দাদার সংক্ষিপ্ত জীবনি ও কিছু কর্মযোগ্য দেখানো হলো প্রজেক্টরে।

সন্ধা ৭.০০ মিনিটঃ- “নির্দ্বন্দ্ব আপূরয়মাণ আচার্য্যই জীবনবৃদ্ধির পথ”- এই বিষয়ক বিভিন্ন ভাষায় আলোচনা ও অধিবেশন চললো।

সেইদিন পরিকল্পনা করে সবাই বড় বাড়ীতে রাতের আনন্দ বাজার করলাম। সেখানে খেলার মাঠে কিছু সময় কাটিয়ে সেইদিনের কার্যক্রম শেষ হলো আমাদের।

অষ্টম দিন .....


    
 




ষষ্ঠ দিন, ~ ১৩-০৪-২০২৪ই, শনিবার

পশ্চম দিন.....

আজ ৩০ শে চৈত্র, প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র চর্য্যাশ্রম কর্তৃক আয়োজিত “নববর্ষ পুরুষোত্তম স্বস্তি-তীর্থ মহাযজ্ঞ” এর প্রথম দিন। ব্রাহ্মমুহূর্তে জাগরনী ও নহবতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। নহবত অর্থ “কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে প্রহরে প্রহরে সানাই প্রভৃতির বৃন্দবাদন।“ আমরা সবাই নহবত দেখার জন্য ব্রাহ্মমুহূর্তের পূর্বেই স্নান ও ইষ্টভৃতি শেষ করে চলে আসি উৎসব অঙ্গনে। তারপর উষাকীর্তন দিয়ে নগর পরিক্রমা হলো। ধিরে ধিরে আরো ভক্তবৃন্দ উৎসব অঙ্গনে এসে হাজির হতে থাকে। কিছুক্ষন পর পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন চক্রবর্ত্তী দাদা এসে উপস্থিৎ হন।

প্রাতঃ ৪.৪৫ মিনিটঃ- সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ (বাংলা, হিন্দি, নেপালী, অসমীয় ও ওড়িয়া) ।

সকাল ৭ টাঃ- আর্য্যকৃষ্টি পতাকা উত্তোলন এবং নববর্ষ পুরুষোত্তম স্বস্তি-তীর্থ মহাযজ্ঞ এর শুভ উদ্বোধন।

সকাল ৭.৩০ মিনিটঃ- শ্রীশ্রীঠাকুর পুজা, ভোগ নিবেদন ও প্রসাদ বিতরন।

এই সময়ে আমরা সবাই শ্রীশ্রীঠাকুর বাড়ি যাই প্রিয়পরমকে প্রনাম করতে। সেখানে পূজনীয় শ্রীঅর্কদূতি চক্রবর্ত্তী ওরফে বাবাই দাদার আলোচনা চলছিল। কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করে চলে আসলাম।

সকাল ১০ ঘটিকায়ঃ- “নিরামিষ আহারই স্বাস্থ্যপ্রদ ও জীবনীয়” বিষয়ক বোধবীক্ষনী আলোচনা সভা হলো। 

আজ আমদের সাথে যুক্ত হলো কুষ্টিয়া থেকে দিপক নামে বিধান কাকার এক গ্রাম্য ভাই। মধ্যাহ্নে আনন্দ বাজার শেষ করে সবাই কিছুটা ভাত ঘুম দিলাম। ইতি মধ্যে উৎপল কাকা, বলরাম ও তার ছেলে বিক্রমজিত বিদায় নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। 

অপরাহ্ন ৩ টায়ঃ- গীতি-আলেখ্য ও কীর্ত্তন চলছিল।

সন্ধা ৬.০৬ মিনিটেঃ- সন্ধা সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ ও ভক্তিগীতি।

সন্ধা ৭.০০ মিনিটঃ- “স্বস্ত্যয়নী মুক্তি আনে রাষ্টসহ প্রতি জনে”- কেন ও কিভাবে এই বিষয়ক বিভিন্ন ভাষায় আলোচনা ও অধিবেশন চললো।

বলতেই হয় শ্রদ্ধেয় গোপাল তেওয়ারী (সহ-প্রতি ঋত্বিক) দাদার সুন্দর সঞ্চালায় মুগ্ধ আমি। 

রাতে যথা সময়ে আনন্দ বাজার গ্রহন করে, শ্রীশ্রীঠাকুর বাড়ীর আশে পাশে ঘুরা ঘুরি করে সেই দিনের কর্যক্রম শেষ করলাম আমরা।



   

 




Wednesday, April 24, 2024

পশ্চম দিন, ~ ১২-০৪-২০২৪ই, শুক্রবার

চতুর্থ দিন.... 

গতকাল রাত্রে আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম সবাই মিলে আনন্দ বাজার উপলক্ষে কিছু অর্থ দিয়ে অংশগ্রহন করবো। সেই মোতাবেক ৩,০০০ রুপি একত্রিত করে রমেশ দা কে দেয়া হলো বাজার করতে। রমেশ দা বিবেক-বিতান এর আনন্দ বাজারের দায়িত্ব পালন করেন। সকালের নাস্তা সেরেই আমরা খুব সকালে চলে গেলাম ঘুরতে। শুধু প্রহলাদ দা রয়ে গেলেন ডাক্তার দেখাবেন বলে, যদিও তিনি ডাক্তার দেখাতে না পেরে বিবেক-বিতানে ফিরে আসে। 

প্রথমেই আমরা গেলাম “ত্রিকুট পাহাড়”। সেখানে বানরের বিচরন ছিল অনেক। ত্রিকূট পাহাড় ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেওঘর শহর থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরত্বে দুমকা জেলায় যাওয়ার পথে অবস্থিত একটি পাহাড়। এটির মোট তিনটি শৃঙ্গ আছে, যা থেকে ত্রিকূট নামটি এসেছে। পাহাড়ের উপরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে ত্রিকূটাচল মহাদেবের একটি মন্দির অবস্থিত। সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪৭০ ফিট ও মাটি থেকে ১৫০০ ফিট উঁচু। তিনটির মধ্যে দুটিতে ট্রেকিং করা গেলেও এখন সাময়িক বন্ধ আছে। বাংলাদেশে বেশ কিছএ মাটির পাহাড় দেখলেও এটি ছিল আমার দেখা প্রথম পাথরের পাহাড়। ত্রিকূট পাহাড়ের তিনটি চূড়া রয়েছে যা তিন হিন্দু দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনটির মধ্যে মাত্র একটি চূড়া সকল পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।

সেখান থেকে আমরা যাই “তপোবন পাহাড়”। তপোবন শব্দটি সংস্কৃত দুটি শব্দ ‘তপস’যার অর্থ 'তপস্যা' এবং বর্ধিতভাবে 'ধর্মীয় ক্ষোভ' এবং 'সাধনা', এবং আরও সাধারণভাবে 'আধ্যাত্মিক অনুশীলন', এবং ভান, যার অর্থ 'বন' বা 'ঘটিত'। তপোবন তখন 'তপস্যা বা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের বন' হিসাবে অনুবাদ করে থাকে। যদিও হিন্দিতে একই উচ্চারণ করা হয়, তপোবন কেতপোবন বা তপোভত এর সাথে বিভ্রান্ত করা উচিত নয়, যার অর্থ তপস্যায় নিয়োজিত ব্যক্তি। ভারতের সুপরিচিত তপোবন হল গঙ্গোত্রী হিমবাহের উপরে অবস্থিত গঙ্গার প্রাথমিক উৎসগুলির মধ্যে একটি। শিবলিং চূড়ার পাদদেশে প্রায় ৪,৪৬৩ মিটার উচ্চতায় একটি অনুর্বর এলাকা, গুহা, কুঁড়ে ঘর, ইত্যাদিতে বসবাসকারী অনেক সাধুর একটি মৌসুমী আবাসস্থল এটি। অতিরিক্ত গরমের কারনে সেখানি কিছু সময় অতিবাহিত করে পাহাড় থেকে নেমে যাই সবাই।

সেখান থেকে আমরা যাই নতুন নির্মিত নবলক্ষ (গোলাপ মন্দির) হয়ে পরে “বৌদ্যনাথ মন্দির”। বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির বা বৈদ্যনাথ ধাম হল হিন্দু দেবতা শিবের ১২টি পবিত্রতম জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের (গুজরাতের সোমনাথ, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর, মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর, হিমালয়ের কেদারনাথ, মহারাষ্ট্রের ভীমশংকর, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বিশ্বনাথ, মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর, ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ, গুজরাতের দ্বারকায় নাগেশ্বর, তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের রামেশ্বর এবং মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের ঘৃষ্ণেরশ্বর) অন্যতম একটি। বৈদ্যনাথ মন্দির চত্বরে মূল বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির ছাড়াও আরো প্রায় ২১টি বিভিন্ন মন্দির আছে। হিন্দু পুরান অনুসারে, লংকারাজ রাবণ ছিলেন শিবের পরম ভক্তের মধ্যে একজন। একদিন রাবনের অনুরোধে শিবের কৃপায় কৈলাশ পর্বত থেকে রাবণ শিবকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছিল লিঙ্গ রুপে। কিন্তু শিব-পার্বতী পুত্র গণেশের ছলনাতে রাবণ আর শিবলিঙ্গ নিয়ে যেতে পারেনি সেই শিবলিঙ্গ থেকেই বৈদ্যনাথ নামে আর্বিভাব হয়।

বৈদ্যনাথ মন্দিরটি ৫১টি শক্তিপীঠেরও অন্যতম মন্দির। পুরান অনুসারে এখানে সতীর হৃদয় পড়েছিল। সেই জন্য এটিকে হৃদয়পীঠও বলা হয়ে থাকে। সতী এখানে জয়দুর্গা নামে পূজিত হন এবং বৈদ্যনাথ তার ভৈরব। দেবীভাগবত পুরাণ, কুব্জিকা তন্ত্র, কালিকারহস্য, মুণ্ডমালা তন্ত্র ও রুদ্রযামলে বৈদ্যনাথের শক্তিপীঠের উল্লেখ পাওয়া যায়। সকল গ্রন্থেই বৈদ্যনাথকে একটি জনপ্রিয় তন্ত্রসাধনাক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তান্ত্রিক গোপীনাথ কবিরাজও বৈদ্যনাথ ধামকে একটি তন্ত্রসাধনপীঠ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন। শিব পুরান ও অন্যান্ন অনেক গ্রন্থে বৈদ্যানথ ধাম সম্পর্কে অনেক ঘটনার বর্ননা আসে, সময় করে পড়ে নিবেন। 

সময়ের কারনে বৈদ্যনাথ ধাম থেকে আমি আর কল্যান দা অন্যদের রেখে চলে আসি। কাঠালের ইচরের তরকারি দিয়ে দুপুরের আনান্দ বাজার শেষ করে, কিছুক্ষন ভাত ঘুম দিলাম। সন্ধা প্রার্থনা করে আবার বিবেক-বিতান, বড়াল বাংলো, মেমোরিয়াল, ফিলানথ্রপি, আনন্দ বাজার, লাইব্রেরী, গাড়ী যাদুঘর ইত্যাদি ঘুরা ঘুরি করে অস্তিকায়ান ফিরে আসা। পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্ত্তী দাদার সাথে আলাপ আলোচনা। আলাপ আলোচনার এক ফাকে পূজনীয়া শ্রীমতি জোৎসা চক্রবর্ত্তী মা আমাদের নিজ হাতে সন্দেষ খাওয়ায়ে দিয়ে গেলেন। তারপর রাতের আনন্দ বাজার শেষ করে ……. ঘুম। 

ষষ্ঠ দিন ...

 

    


চতুর্থ দিন, ~ ১১-০৪-২০২৪ই, বৃহস্পতিবার

তৃতীয় দিন....

সকালে যেহেতু বাইরেই খেতে হয় তাই সবাই বাইরে চলে গেলাম কিছু খাবার গ্রহনের জন্য। সবাই যে যার পছন্দ মত চপ, সিংগারা, টক দই, ঘুমনি, ভেলপুরি খেয়ে সকালের নাস্তা শেষ করলাম। ১লা বৈশাখ নতুন জামা পরতে হয় তাই আমরা ধুতি, ফতুয়া কিনে নিলাম সবাই নিজেদের প্রয়োজন মত। সেখান থেকে আমরা শ্রীশ্রীঠাকুর বাড়ী গেলাম। শ্রীশ্রীঠাকুর এই মাটিতে বসতেন, ঘুরে বেড়াতেন, ভক্তদের সাথে কথা বলতেন ভাবতে ভালো লাগছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পুরাতান অনেক স্মৃতিই এখন খুজে পাওয়া কষ্টকর। কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করে শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীবড় মা-র সমাধি প্রনাম করতে গেলাম আমরা। পূজনীয় কাজল দা-র বাড়ি ও উৎসব অঙ্গনে ঘুরাঘুরি করে রুমে ফিরে আসলাম সবাই। দিনের তাপমাত্র অনেকটাই অসহনীয় ছিল অনেকের জন্য়, তাই বেশিক্ষন বাইরে না ঘুরাঘুরিই ভাল।

দুপুরের আনন্দ বাজার শেষ করলাম। কিছুটা ভাত-ঘুম দিয়ে আমরা বেড়িয়ে পরলাম দ্বারকা নদ দেখতে। আমি ভেবেছিলাম বিশাল নদি, জল, ঢেউ থাকবে কিন্তু সেখানে গিয়ে আমার ভুল ভাঙ্গলো। ভাগীরথী নদীর একটি উপনদী হলো দ্বারকা নদ। অনেকে একে বাবলা নদও বলে থাকেন। যেহেতু পাহাড়ী নদ তাই এক সময় প্রচুর খরস্রোতা থাকলেও এখন শুধুই পাথর আর তার সৃতি। দ্বারবাসসিনী ও তারাপীঠ এই দুটি শক্তি মন্দির এই নদের তীরেই অবস্থিত। 

সন্ধা প্রার্থনার আগেই আমরা সেখান থেকে ফিরে আসি, যেকয়দিন আমি বিবেক-বিতান ছিলাম তার বেশির ভাগ সময়ই ধুতি ফতুয়া পরে ঘুরতাম। তখন নিজের কাছে একটি পবিত্র ভাব থাকতো। দেওঘরের আবহাওয়া ও খাবার জলের কিছু একটি বিশেষত্ব ছিল। যার কারনেও হয়তো শ্রীশ্রীঠাকুর এখানেই এসে ছিলেন তার নিলা করার জন্য। বিবেক-বিতানের দ্বিতীয় তলার মন্দিরে সমবেত প্রার্থনা করলাম। সেখানে উপস্থিৎ ছিলেন পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন চক্রবর্ত্তী দাদা। প্রার্থনা শেষে পূজনীয় দাদা সকলের খোজ খবর নিলেন। 

লাইব্রেরী থেকে “শ্রুতিবানী” বইটি ক্রয় করলাম এবং পূজ্য়পাদ দাদাকে অনুরোধ করি প্রথম ভ্রমনের সৃতি স্বরুপ তার স্বাক্ষর করে দিতে। আমাদের মত একে একে অনেক ভক্ত আসলো পূজ্য়পাদ দাদাকে প্রনাম করতে। কথা প্রসঙ্গে কথা হলো শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন তো অনেককেই তাঁর আশির্বাদ স্বরুপ একটি বিশেষ দন্ড দিতেন। এখন সাধারনত সহ-প্রতি ঋত্বিক দাদারা তা গ্রহন করে থাকেন ও যাজনে নিয়ে যান। বিধান কাকর আগে থেকেই এই দন্ড গ্রহন করার ইচ্ছা ছিল। যখন জানতে পারলাম এই বিশেষ দন্ডটি গ্রহন করতে হলে তাকে পূজনীয় অধ্যক্ষের কাছে আগে চাইতে হবে। তিনি তখন তার আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করেন। আমি অধ্বর্য্যু, যখন জানলাম আমিও চাইলে তা গ্রহন করতে পারি। তখন কিছুটা আনন্দিত হলাম ও  এই লোভটি বাস্তবে পরিনিত করলাম। 

ধারাবাহিক ভাবে কল্যাণাংশু নাহা (সহ-প্রতি ঋত্বিক), বিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক) ও প্রহলাদ পোদ্দার (সহ-প্রতি ঋত্বিক) দাদারা একে একে তাদের আশির্বাদ দন্ডটি গ্রহন করলেন। শেষে আমি রামকৃষ্ণ সরকার (অধ্বর্য্যু) হিসবে পূজ্যপাদ দাদার কাছ থেকে আশির্বাদ দন্ডটি গ্রহন করি। আমার বিশেষ প্রাপ্তি হলো অধ্বর্য্যু হিসেবে এই দন্ডটি সাধারনত কেও নেয় না, হয়তো আমিই ব্য়তিক্রম একজন। তারপর সবাই আশির্বাদ দন্ড সহিত পূজ্যপাদ দাদা কে প্রনাম করলাম, পূজ্যপাদ দাদা আমাদের দন্ড বিষয়ক কিছু নিয়ম-কানন বলে দিলেন। অনেক ঘুরাঘরি করে বাজার থেকে দন্ডের জন্য দুইটি করে কাপড়ের কভার কিনে সবাই কক্ষে ফিরে আসলাম। বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেছিল আমার হয়তো আশির্বাদ দন্ডের সাথে সাথে সহ-প্রতি ঋত্বিক এর পবিত্র পাঞ্জা হয়েছিল কিন্তু তা সঠিক নয়।  

রাত্রে আনন্দ বাজার শেষ করে কক্ষে এসে আগামীকালের জন্য কি করা যায় তার আলোচনা হলো। কিভাবে দন্ডটি পবিত্র রাখা যায় ও এর প্রনাম মন্ত্রটি শেখার চেষ্টা করলাম আমরা। যেহেতু মূল উৎসবের আরো একদিন বাকি আছে তাই আগামীকালই সব ঘুরাঘরি শেষ করতে হবে। সেই মোতাবেক গাড়ী ঠিক করে রাখা হলো। একবেলার আনন্দ বাজারে সবার কত টাকা দেওয়া যায় তার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা।

পশ্চম দিন ...