The Web This Blog

Wednesday, April 24, 2024

পশ্চম দিন, ~ ১২-০৪-২০২৪ই, শুক্রবার

চতুর্থ দিন.... 

গতকাল রাত্রে আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম সবাই মিলে আনন্দ বাজার উপলক্ষে কিছু অর্থ দিয়ে অংশগ্রহন করবো। সেই মোতাবেক ৩,০০০ রুপি একত্রিত করে রমেশ দা কে দেয়া হলো বাজার করতে। রমেশ দা বিবেক-বিতান এর আনন্দ বাজারের দায়িত্ব পালন করেন। সকালের নাস্তা সেরেই আমরা খুব সকালে চলে গেলাম ঘুরতে। শুধু প্রহলাদ দা রয়ে গেলেন ডাক্তার দেখাবেন বলে, যদিও তিনি ডাক্তার দেখাতে না পেরে বিবেক-বিতানে ফিরে আসে। 

প্রথমেই আমরা গেলাম “ত্রিকুট পাহাড়”। সেখানে বানরের বিচরন ছিল অনেক। ত্রিকূট পাহাড় ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেওঘর শহর থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরত্বে দুমকা জেলায় যাওয়ার পথে অবস্থিত একটি পাহাড়। এটির মোট তিনটি শৃঙ্গ আছে, যা থেকে ত্রিকূট নামটি এসেছে। পাহাড়ের উপরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে ত্রিকূটাচল মহাদেবের একটি মন্দির অবস্থিত। সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪৭০ ফিট ও মাটি থেকে ১৫০০ ফিট উঁচু। তিনটির মধ্যে দুটিতে ট্রেকিং করা গেলেও এখন সাময়িক বন্ধ আছে। বাংলাদেশে বেশ কিছএ মাটির পাহাড় দেখলেও এটি ছিল আমার দেখা প্রথম পাথরের পাহাড়। ত্রিকূট পাহাড়ের তিনটি চূড়া রয়েছে যা তিন হিন্দু দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনটির মধ্যে মাত্র একটি চূড়া সকল পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।

সেখান থেকে আমরা যাই “তপোবন পাহাড়”। তপোবন শব্দটি সংস্কৃত দুটি শব্দ ‘তপস’যার অর্থ 'তপস্যা' এবং বর্ধিতভাবে 'ধর্মীয় ক্ষোভ' এবং 'সাধনা', এবং আরও সাধারণভাবে 'আধ্যাত্মিক অনুশীলন', এবং ভান, যার অর্থ 'বন' বা 'ঘটিত'। তপোবন তখন 'তপস্যা বা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের বন' হিসাবে অনুবাদ করে থাকে। যদিও হিন্দিতে একই উচ্চারণ করা হয়, তপোবন কেতপোবন বা তপোভত এর সাথে বিভ্রান্ত করা উচিত নয়, যার অর্থ তপস্যায় নিয়োজিত ব্যক্তি। ভারতের সুপরিচিত তপোবন হল গঙ্গোত্রী হিমবাহের উপরে অবস্থিত গঙ্গার প্রাথমিক উৎসগুলির মধ্যে একটি। শিবলিং চূড়ার পাদদেশে প্রায় ৪,৪৬৩ মিটার উচ্চতায় একটি অনুর্বর এলাকা, গুহা, কুঁড়ে ঘর, ইত্যাদিতে বসবাসকারী অনেক সাধুর একটি মৌসুমী আবাসস্থল এটি। অতিরিক্ত গরমের কারনে সেখানি কিছু সময় অতিবাহিত করে পাহাড় থেকে নেমে যাই সবাই।

সেখান থেকে আমরা যাই নতুন নির্মিত নবলক্ষ (গোলাপ মন্দির) হয়ে পরে “বৌদ্যনাথ মন্দির”। বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির বা বৈদ্যনাথ ধাম হল হিন্দু দেবতা শিবের ১২টি পবিত্রতম জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের (গুজরাতের সোমনাথ, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর, মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর, হিমালয়ের কেদারনাথ, মহারাষ্ট্রের ভীমশংকর, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বিশ্বনাথ, মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর, ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ, গুজরাতের দ্বারকায় নাগেশ্বর, তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের রামেশ্বর এবং মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের ঘৃষ্ণেরশ্বর) অন্যতম একটি। বৈদ্যনাথ মন্দির চত্বরে মূল বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির ছাড়াও আরো প্রায় ২১টি বিভিন্ন মন্দির আছে। হিন্দু পুরান অনুসারে, লংকারাজ রাবণ ছিলেন শিবের পরম ভক্তের মধ্যে একজন। একদিন রাবনের অনুরোধে শিবের কৃপায় কৈলাশ পর্বত থেকে রাবণ শিবকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছিল লিঙ্গ রুপে। কিন্তু শিব-পার্বতী পুত্র গণেশের ছলনাতে রাবণ আর শিবলিঙ্গ নিয়ে যেতে পারেনি সেই শিবলিঙ্গ থেকেই বৈদ্যনাথ নামে আর্বিভাব হয়।

বৈদ্যনাথ মন্দিরটি ৫১টি শক্তিপীঠেরও অন্যতম মন্দির। পুরান অনুসারে এখানে সতীর হৃদয় পড়েছিল। সেই জন্য এটিকে হৃদয়পীঠও বলা হয়ে থাকে। সতী এখানে জয়দুর্গা নামে পূজিত হন এবং বৈদ্যনাথ তার ভৈরব। দেবীভাগবত পুরাণ, কুব্জিকা তন্ত্র, কালিকারহস্য, মুণ্ডমালা তন্ত্র ও রুদ্রযামলে বৈদ্যনাথের শক্তিপীঠের উল্লেখ পাওয়া যায়। সকল গ্রন্থেই বৈদ্যনাথকে একটি জনপ্রিয় তন্ত্রসাধনাক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তান্ত্রিক গোপীনাথ কবিরাজও বৈদ্যনাথ ধামকে একটি তন্ত্রসাধনপীঠ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন। শিব পুরান ও অন্যান্ন অনেক গ্রন্থে বৈদ্যানথ ধাম সম্পর্কে অনেক ঘটনার বর্ননা আসে, সময় করে পড়ে নিবেন। 

সময়ের কারনে বৈদ্যনাথ ধাম থেকে আমি আর কল্যান দা অন্যদের রেখে চলে আসি। কাঠালের ইচরের তরকারি দিয়ে দুপুরের আনান্দ বাজার শেষ করে, কিছুক্ষন ভাত ঘুম দিলাম। সন্ধা প্রার্থনা করে আবার বিবেক-বিতান, বড়াল বাংলো, মেমোরিয়াল, ফিলানথ্রপি, আনন্দ বাজার, লাইব্রেরী, গাড়ী যাদুঘর ইত্যাদি ঘুরা ঘুরি করে অস্তিকায়ান ফিরে আসা। পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্ত্তী দাদার সাথে আলাপ আলোচনা। আলাপ আলোচনার এক ফাকে পূজনীয়া শ্রীমতি জোৎসা চক্রবর্ত্তী মা আমাদের নিজ হাতে সন্দেষ খাওয়ায়ে দিয়ে গেলেন। তারপর রাতের আনন্দ বাজার শেষ করে ……. ঘুম। 

ষষ্ঠ দিন ...

 

    


No comments:

Post a Comment