The Web This Blog

Thursday, March 25, 2021

কর্ম ও তার কর্মফল ভোগ

সনাতন ধর্ম মতে সকলকেই তার কর্মফল ভোগ করতে হবে। পূর্ব জন্ম যেমন কর্ম করেছিলাম তখন যে কর্মফল ভোগ করা হয়নি সেই মোতাবেক আবার এই জন্মে সেইখান থেকে শুরু করতে হয়েছে।

মানুষ যে কর্ম করে তার ফল ভোগ তাকেই করতে হয়। প্রতিটি কর্মেরই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে যদি স্থান-কাল-পাত্র অপরিবর্তিত থাকে। স্থান-কাল-পাত্রের পরিবর্তনের ফলে প্রতিক্রিয়ার ধরণ ও মাত্রায় পরিবর্তন এসে থাকে। মানুষ ভাল বা মন্দ যে ধরণের কর্মই করুক না কেন -- তার ফলে তার মনের মধ্যে এক ধরণের বিকৃতি বা প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। মন সব সময় এই বিকৃতি সরিয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে চায়। যে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মন তার পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তাকে বলে কর্মফল ভোগ। এই কর্মফল ভোগ সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে আবার নাও হতে পারে। যে ক্ষেত্রে কর্ম করা হয়েছে কিন্তু ফল ভোগ করা হয়নি সেই অভুক্ত কর্মফলকে বলে সংস্কার। প্রতি মুহুর্তে কর্মের মাধ্যমে আমাদের মনে নতুন নতুন সংস্কার তৈরী হয়।


এই সংস্কার ভোগ ২ , ৪ দিনে হতে পারে ৫ , ১০ বা ২০ বৎসরে হতে পারে। আবার এ জন্মে না হয়ে পরবর্তী জন্মেও হতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের মনে জন্ম-জন্মান্তরের সংস্কার পুঞ্জীভুত হয়ে রয়েছে। এই সংস্কার ভোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ মুক্তি বা মোক্ষ পেতে পারে না। কর্মে আপনার অধিকার আছে , কিন্তু কর্মফল আপনার হাতে নেই। আপনি যেমন ইচ্ছা কর্ম করতে পারেন কিন্তু তার ফল প্রকৃতির হাতে। প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে কর্মের প্রতিফল আপনাকে ভোগ করতেই হবে। আমরা যে কর্ম করি তা দুই ধরণের- প্রত্যয়মূলক কর্ম ও সংস্কারমূলক কর্ম। কেউ যখন স্বাধীন ভাবে স্ব-ইচ্ছায় কোন কর্ম করে তাকে বলে প্রত্যয়মূলক কর্ম। কিন্তু যেখানে তার কোন স্বাধীনতা নেই , অবস্থার চাপে পড়ে তাকে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয় তাকে বলে সংস্কারমূলক কর্ম।


যেমন ধরা যাক, কোন একজন চুরি করলো। চুরি করার সময় ওই লোকটির স্বাধীন ইচ্ছা কাজ করেছিল, তাই এটা তার প্রত্যয়মূলক কর্ম। এই কর্মের ফল ভোগ তাকে ভোগ করতেই হবে। যতক্ষণ না সেই কর্মফল ভোগ শেষ হচ্ছে ততক্ষণ সেই অভুক্ত কর্মফল তার মনের সংস্কাররূপে থেকে যাবে। এখন এই সংস্কার কাল পরিপক্ক হয়ে অনুকূল পরিবেশ পাওয়া মাত্রই সে হয় পুলিশের হাতে ধরা পড়বে অথবা অন্য কোন প্রকারে শাস্তি পাবে। এই ভাবে সে অবস্থার চাপে পড়ে তার পূর্বকৃত কর্মের ফল ভোগ করবে। এখানে তার স্বাধীন ইচ্ছা কাজ করে না। তাই এটা তার সংস্কারমূলক কর্ম।


মানুষের ক্ষেত্রে এই সংস্কার তিন ধরণের হয়ে থাকে :--

) জন্মগত সংস্কার :- এক বা একাধিক পূর্বজন্মের অর্জিত বা সৃষ্ট সংস্কারকে এই জন্মের জন্মগত সংস্কার বলে।

) অর্জিত সংস্কার :- এই জন্মের প্রত্যয়মূলক কর্মের দ্বারা সৃষ্ট সংস্কারকে অর্জিত সংস্কার বলে।

) আরোপিত সংস্কার :- যে দেশ, জাতি , সমাজ বা পরিবেশে মানুষ জন্ম নেয়, লালিত-পালিত হয় বা যে পরিবেশে মানুষ থাকে সেই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত বা সৃষ্ট সংস্কারকে বলে আরোপিত সংস্কার।


যেমন :- কোন ছেলে বস্তিতে জন্ম নিয়েছে আর তার বাবা মা খুব ঝগড়াটে। তাহলে ওই ছেলেও একটু বড় হয়ে ঝগড়া বা গালাগালি করতে শিখবে। এটা তার বাবা-মায়ের পরিবেশ দ্বারা আরোপিত সংস্কার।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলে উত্তম হইতে পারবে না, কিন্তু যে উত্তম হয়, সে সবসময় শ্রেষ্ঠ; তাকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না। সেই জন্য তুমি শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা না করে উত্তম হও অর্জুন