The Web This Blog

Wednesday, September 18, 2019

নারী থেকে মা (চতুর্থ পাতা)


~~ তৃতীয় পাতা ~~
~~ চতুর্থ পাতা ~~
সময় চলতে থাকে আপন গতিতে। দিন-মাস থেকে বছর চলে যায় কিন্তু রবী বাবুর ভাগ্যের আর পরিবর্তন হয় না। এমনি করে সবাই রিতা রানী কে পরবর্তী সন্তান নেয়ার জন্য মানসিক ভাবে চাপ দিতে থাকে এবং সন্তান যেন অবস্যই পুত্র হয়। কিন্তু কেহই রবী বাবুর আর্থিক বিষয়টি বিবেচনা করতে রাজি নয়। 
 
যাই হোক রিতা রানী গর্ভবতী হলেন, দেখতে দেখতে প্রায় সাত মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। মতি লাল বাবু আসলেন মেয়েকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে এবং সন্তান যেন সেই বাড়িতেই হয় এমন ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। 
 
মামা বাড়ীতেই বাংলা ১৩৮৯ সনের ১২ আশ্বিন বুধবার রাত ১২.৩০ মিনিটে জন্ম নিলো রাম কৃষ্ণ নামের রিতা রানীর পুত্র সন্তান, সরকার বংশের প্রথম পুত্র সন্তান তাই সবাই ভীষন খুশী। জন্মের কয়েক মাস পরে বুঝা গেল ছেলের ডান পায়ের পাতা সম্পূর্ন বাকা। চন্দ্র বা সূর্য গ্রহনের ফলে এমন হয়েছিল। কালী পদ বাবু খুবই চিন্তায় পরে গেলেন প্রথম নাতি তাও আবার শারীরিক প্রতিবন্ধী। কালী পদ বাবু সমাধান খুজতে থাকলেন। পংগু হাসপাতালে দেখানো হলো ডাক্তার বললো পায়ের পাতা কেটে আবার জোরা দিতে হবে, মিনতি রানীর মনটা সায় দিল না, নাতীর পায়ের পাতা কাটলে তো পরবর্তী জীবনে পায়ে তেমন জোড় পাবে না। 
 
তখন থেকেই কবিরাজী চিকিৎসা শুরু করলো তারা, যেকরেই হোক পা তো ঠিক করতেই হবে। একদিন কালী পদ বাবু অলৌকিক ভাবে এর সমাধান পেয়ে যান। কিছুটা মন খারপ অবস্থায় বসে ছিলেন তার দোকানে, এমন সময় এক লোক এসে তাকে মন খারাপ থাকার কারন যানতে চান। তিনি সব খুলে বলে আগন্তুকের কাছে সব কথা শুনো সেই আগন্তুক একটি গাছের শিকর দিলেন এবং কিছু নিয়ম কানুন বলে দিলেন কি ভাবে কি করতে হবে। কালী পদ বাবু শিকর টি দোকানের ভিতরে রাখতে যায় এসে আর ঐ লোকটি আর দোকানে ও এর আশেপাসে খুজে পাওয়া গেল না। 
 
সেই নিয়ম মাফিক চিকিৎসা চলতে থাকে পাঁচ-ছয় বছর, এখন রাম কৃষ্ণ স্বাভাবিক ভাবে হাটতে পারে। অভাব যেন রবী বাবুর জীবনে বন্ধুত্ত করে নিয়েছে, তাই কিছুতেই তা আর যাইতে যায় না। বছর দুই পর আরো একটি কন্যা সন্তানের মা হোন রিতা রানী বাংলা ১৩৯১ সালের ১৫ ভাদ্র শনিবার বিকাল ৫ টা য়। এটিও মতি লাল বাবুর বাড়ীতে জন্ম গ্রহন করে। 
 
~~ পঞ্চম পাতা ~~

Tuesday, September 17, 2019

নারী থেকে মা (তৃতীয় পাতা)


~~ দ্বিতীয় পাতা ~~
~~ তৃতীয় পাতা~~


রবীন্দ্রনাথ বাবু কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক নিজের ভাল ছাড়া আর কারও দিকে তাকানোরও সময় নাই তার, তিনি যা বুঝবেন তাই করবেন কারও সাথে কিছু বুঝতে চানও না এমনকি বুঝেও না। রবীন্দ্রনাথ তার বাবা মাকে বলে রিতা রানী যেহতু গর্ভবতী তাই তাকে তার বাবার বাড়ীতে রেখে আসা দরকার, কিন্তু কেও রাজী হয় না কারন এত তারাতারি কি দরকার। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ মনে মনে অন্য ফন্দি একেছেন, এমনকি রিতা রানী কেও তিনি কিছু জানায়নি। 
 
রবী বাবু ও রিতা রানী চলে আসে তার শ্বশুর বাড়ী ইছাপুরাতে। শ্বশুরকে জানায় তারা ভারতে চলে যাবে। শ্বশুর মহাশয় কিছুতেই রাজি হয় না, কারন তার মেয়ে গর্ভবতী তার উপরে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে সবাই কি বলবে। 
 
রবীন্দ্রনাথ এক রুখা মানুষ তিনি যা ভাববেন তাই করবেন, তাতে অন্যের কি ক্ষতি হলো দেখার দরকার নাই। তিনি স্ত্রী কে নিয়ে রওনা হলেন ভারতের উদ্দেশে, বলা বাহুল্য তারা কেহই এর পূর্বে ভারতে যাননি। রিতা রানী অনেক কান্না কাটি করছেন না যাওয়ার জন্য, কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারা পৌছায় মাগুরা জেলার কাজলী নামক গ্রামে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ বাবুর মামার বাড়ী। তারা সব খুলে বলে ভারত যাবার কথা। তখন পাসপোর্ট না থাকলেও অবধ্য ভাবে ভারত যাওয়া যেত সহজে। 
 
পরের দিন সকালে তার দিদিমা (মা এর মা) কে নিয়ে রওনা হলেন জীবননগর এর উদ্দেশে সেখান থেকে দালাল এর মাধ্যমে ভারত যাওয়া যায়। জীবননগর যেয়ে আত্নীয়ের মাধ্যমে এক দালাল ঠিক করা হয়, যিনি ভারত যাবার ব্যবস্থা করে দিবেন। গ্রামের মেঠ পথ, ডোবা নালা, ক্ষেতের আইল ধরে তার পৌছায় বর্ডারের কাছে। এখানে এসে তারা একটি ঘরে কিছুটা বিশ্রাম নেয়, দালাল বলে এর পরের জায়গাটা তাদের একাই যেতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় বর্ডার কিছুটা ফাকা থাকে। তখন তাদের পার হতে হবে নিজ দায়িত্বে।

এতটা পথ তারা চলে এসেছে এখন আর পিছনে ফিরে যাওয়া যাবে না। তারা কিছুটা ঝুকি নিয়েই পার হলেন ভারতের বর্ডার। ভারতে পৌঁছানোর পর তারা তার এক মামা বাড়ীতে কলকতার রানাঘাট নামক স্থানে। তিন জনকে দেখে মামি কিছুটা বিরক্ত হলেও মামা তেমন কিছু বলে না। সব কিছু শুনে মামা তার সেলুন দোকানে ভাগিনার জন্য একটি কাজ করার ব্যবস্থা করেন। একটি মাত্র রুম যেখানে কষ্ট করেই চার জনকে থাকতে হয়।

কিছু দিন যাবার পর মামি কিছুটা রাগ করেই মামাকে বলতে থাকে তোমার ভাগিনা-ভাগিনা বৌ যায় না কেন। এই কথা রবী বাবু শুনতে পায়। তারপর তারা দুই জনে ঠিক করে রিতা রানীর এক মাসি বাড়ী আছে কাছেই। তারা সেখানেই থাকবে। সেখানে যাবার পর রিতা রানীর মাসি দেখেতো খুবই খুশি। তাদের একটি ঘর ছেরে দেয়া হলো থাকার জন্য এবং রবি বাবুকে এক দোকানে কাজ ঠিক করে দেয়া হলো। 
 
কিছুদিন পর বাংলা ১৩৮৭ সালের ৩ রা পৌষ, বৃহস্পতিবার রাত ১২ ঘটিকায় জন্ম নেয় তাদের প্রথম কন্যা সন্তান। বাবা আদর করে নাম রাখে মাধবী রানী।
 
এদিকে মিনতি রানী ও কালী পদ বাবু কবিরাজি বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তারা নানা ভাবে চেষ্টা চালাতে থাকে তাদের ছেলে, ছেলে বৌ ও প্রথম নাতনী দের কি ভাবে বাংলাদেশে আনা যায়। রবি বাবুর কাজ কর্ম ভালই হতে থাকা। তারা মনে মনে ঠিক করে ভারতেই স্থায়ী ভাবে থাকার। সেই মোতাবেক একটি জায়গা কেনার বিষয় চেষ্টা করতে থাকে। 
 
কিন্তু একদিন হটাৎ করেই মিনতী রানী হাজির হয়ে যান ভারতে যেখানে রবি বাবু ও রিতা রানী থাকতেন। মা কে দেখে কেমন যেন মানসিক পরির্বতন আসে রবি বাবুর। কিছুতেই আর ভাল লাগছেনা এখন ভারতে থাকতে। রিতা রানীর আপত্তি থাকা সত্তেও বাংলাদেশে চলে আসবে রবী বাবু। তখন মাধবী এর বয়স তিন-চার মাস হবে। আবার সবকিছু গুছিয়ে তারা চলে আসে বহু কষ্ট করে বাংলাদেশে। 
 
দেশে আসার পর আবার সংগ্রামের জীবন শুরু হয় তাদের। সেলুন করে খুব একটা সংসার চালানো যাচ্ছে না। এমনও দিন গেছে মেয়ের জন্য দুধ ও কিনে দিতে পারে না রবী বাবু। দুই রুমের একটি ফ্লাটে ১৩-১৪ জন সদস্যের বসবাস। 
 


~~ চতুর্থ পাতা ~~

Sunday, September 15, 2019

নারী থেকে মা (দ্বিতীয় পাতা)

~~ প্রথম পাতা ~~
~~ দ্বিতীয় পাতা~~

বাংলা ১৩৮৫ সনের ২২ অগ্রহায়ণ, ইংরেজী ১৯৭৮ সালের ৯ই ডিসেম্বর, শুক্রবার শুভ বিবাহের দিন ধার্য করা হলো। বিয়েতে মতি বাবু মেয়ে ও জামাই কে নগদ ২,০০০ টাকা ও আট আনা স্বর্ণ দিয়ে গহনা তৈরি করে মেয়ে বিয়ে দিলেন। কারো কারো সারাটা জীবন কষ্টের মধ্যেই কাটে। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে সুখে দিন কাটাবে এটাই সব মেয়ের আশা। কিন্তু মানুষের সব আশা কি পুরন হয়? যৌথ পরিবার মানে তখনকার অভিবাবকদের কাছে মেয়ের জন্য স্বর্গ। বিয়ের পর আন্না রানী শীল এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রিতা রানী সরকার। স্বামী আদর করে এই নাম রাখলেন। এটা তাদের পারিবারিক নিয়ম।

দশ সদস্যের পরিবারে নতুন সদস্যা যুক্ত হলো সকলেরই থাকার রুম একটা। নতুন বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী হিসাবে তাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা নাই। এক ঘরের মধ্যেই পর্দা দিয়ে আলাদা ঘরের মত করে দেয়া হলো নব দম্পতিকে। এই পরিবারে আসার পর রিতা রানী পরিবারের সকল কাজের দায়িত্ব তুলে লিনেন নিজ হাতে। প্রচলিত একটি কথা আছে পরিবারের বড় ছেলেরা বোকা হয়। তেমনি কিছুটা সরল মনের মানুষ রবীন্দ্রনাথ সরকার। স্বামীর দিকে তাকিয়ে সব কিছু মেনে নিলেন রিতা রানী। একদিন হয়তো ঈশ্বর তাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবে। 
 
দেবর ও ননদের সাথে বড় বৌদি অল্পদিনেই বন্ধুত্ব জমে উঠলো। বৌদি হিসাবে তিনিও সকলকে ছোট ভাই বোনের মতই দেখেন। বৌদি যখন তার বাবার বাড়ী যায় বেরাতে তখন সকল দেবর-ননদরাও বায়না ধরে বৌদির সাথে তাদের গ্রামে বেরাতে যাবে। তখন ঢাকার ডেমরা থেকে লঞ্চে করে তাদের বাড়ীতে যেত হত। এভাবেই দিন কাটতে থাকে। 
 
কালী পদ সরকার ও মিনতী রানী সরকার বড় ছেলে বিয়ে দিয়েছেন প্রায় বছর হয়ে আসলো। এখন তো নাতি-নাতনি দেখার সময়। বড় বৌকে তারা তাদের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করে। রবীন্দ্রনাথ বাবু তখন একটি সেলুন দিয়েছেন। সেখানে যা কাজ হয় তা দিয়ে সংসার কোন ভাবে দিন কাটে তাদের। এর মধ্যে সংসারে আরো একজন কি ভাবে আনা যায়। এমনিভাবে কিছুদিন যাবার পর গর্ভে এক কন্যা সন্তান আসে। গর্ভধারণের তিন-চার মাস হবার পর রবীন্দ্রনাথ এর ইচ্ছা হলো ভারতে যাবে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস করবে। 
 
~~ তৃতীয় পাতা ~~

Saturday, September 14, 2019

নারী থেকে মা (প্রথম পাতা)


~~ সূচনা ~~
~~ প্রথম পাতা~~ 
 
এখন আসা যাক গল্পের প্রধান চরিত্রের দিকে। মতি লাল শীল এর পঞ্চম সন্তান আন্না রানী শীল, জন্ম আনুমানিক ০৩ মে ১৯৬৮ ইং, শুক্রবার। গ্রাম্য পরিবেশে বড় হতে থাকে আন্না রানী। ৬-৭ বছর বয়সে তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় বাড়ির পাশেই একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সামাজিক কারন ও পারিবারিক কারনে লেখাপড়া বেশি আর করা হল না। সেই সময়ে নারীদের লেখাপড়া অবহেলার চোখই দেখা হত।

আন্না রানী ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করতে থাকে। এরই মধ্যে তার বড় দাদা দিদিদের বিয়ে হয়ে যায়। এখন তার বিয়ের কথা আসতে থাকে নানান জায়গা থেকে। বাবা মা ও কিছুটা চিন্তিত মেয়ের বিয়ে নিয়ে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসলেও মতি লাল শীলের কাউকেই যেন মেয়ের স্বামী হিসেবে পচ্ছন্দ হচ্ছিল না। 
 
এমনি করে কয়েক বছর কেটে যায়। একদিন হঠাৎ করে এক আত্নীয় আসে তাদের বাড়িতে, সাথে একজন অপরিচিত ছেলে। আত্নীয়টি মতি লাল বাবুকে ঐ অপরিচিত ছেলের পক্ষ হয়ে তার ছোট কন্যা আন্না রানীর স্বামী হিসাবে প্রস্তাব করে। ছেলেটিকে দেখে মতি লাল আগ্রহ করে সব জিজ্ঞাসা করে, কি করো? কোথায় থাকো? পরিবারে কে কে আছে? ইত্যাদি। 
 
ছেলেটি তখন একটি সেলুনে কাজ করত। তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলাধীন বোয়ালমারী উপজেলার কেওয়াগ্রাম নামক এক সাধারন গ্রামে। তারা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। ভাই দের মধ্যে সবার বড় এবং তার এক বড় বোন আছে, যার পাশের গ্রামে বিয়ে হয়েছে এবং একটি মেয়ে আছে। বাবা চাকরি করতেন এখন তেমন কিছু করে না। ঢাকায় মা ও দুই ভাই থাকে বাকিরা গ্রামে বাবার সাথে থাকে।

সব কথা শুনে মতি লাল বাবু তার অভিবাবকদের আসার কথা বলে। ছেলেটি ঢাকায় চলে আসে এবং সব কথা তার মার কাছে বলে। তার মা তখন গ্রামে তার স্বামীর কাছে খবর পাঠায় ঢাকায় আসার জন্য। কালি পদ সরকার ও মিনতি রানী সরকার এর আট সন্তান। এই পরিবারটিও আলিমনঃ গোত্রের কায়স্ত শীল। যথাক্রমে আরতী রানী, রবীন্দ্র নাথ, বীরেন্দ্র নাথ, সান্তনা রানী, অসিম কুমার, কার্তিক চন্দ্র, চায়না রানী ও বিজয় কুমার। কালি পদ বাবুর দ্বিতীয় সন্তান রবীন্দ্র নাথের সাথেই মতি লাল বাবুর মেয়ে আন্না রানীর সাথে বিয়ের কথা চলছে।

ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় কালি পদ সরকার এর দৈবিক কোন এক অজানা কারনে তাদের পুরুষ সদস্যরা বেশী দিন বাঁচতো না। তাদের বংশের কোন ছেলে বিবাহযোগ্য হলেই তাদের বাবা মারা যেত। কালি পদ বাবু ছিলেন একজন মা কালী সাধক, কবিরাজ ও যাত্রা শিল্পী। তিনি অনেক সাধন ভোজন করে তাদের বংশের এই অকাল মৃত্যু রোধের পথ খুজতে থাকে। 
 
কালি পদ বাবুর এক কাকাতো ভাই ছিলেন অমর চন্দ্র শীল যিনি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পবিত্র পাঞ্জা ধারী সহ-প্রতি ঋত্বিক ছিলেন। তিনি তার পরিবারের সকলকে সৎ মন্ত্রে দীক্ষা দান করে। যার কারনে তাদের পরিবারের কাহারো আর অকাল মৃত্যু হয়নি।

শ্রীশ্রীঠাকুরের একটি বানী আছে,
সদদীক্ষা তুই এক্ষুণি নে
ইষ্টেতে রাখ সম্প্রীতি
মরণ তাড়ন এ নাম জপে
কাটেই অকাল যমভীতি।
 
কালি পদ বাবু গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে ছেলের জন্য বৌ দেখতে। কালি পদ বাবু ও তার অন্য চার জন ছেলেকে নিয়ে গেলেন কন্যা দেখতে। ঢাকা থেকে যেতে যেতে সেই দিন রাত হয়ে গেল কারন তখন লঞ্চে যেতে হত ডেমরা ঘাট থেকে। পরদিন সকালে তারা কন্যা দেখার পর্ব শেষ করলো এবং দুই অভিবাবকদের সম্মতিক্রমে বিবাহের দিন ধার্য করা হলো। 
 
মতি বাবু তার মেয়ে আন্না রানী কে বুঝায় বড় পরিবার সবাই তোকে খুব ভালবাসবে। সবাইকে ছোট ভাই বনের মতো ভালবাসতে। আন্না রানী সেই ভাবেই বাকি জীবন চলার চেষ্টা করেছে। ননদ-দেবরা ও তাকে বড় বৌদি হিসাবে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে।

~~ দ্বিতীয় পাতা ~~

নারী থেকে মা

এই লেখাটি আমার প্রিয় লেখক আনিসুল হক কে উৎসর্গ করলাম। গল্পের চরিত্রগুলো আমার পরিবারের লোকদের নিয়ে লেখা, তাই অন্য কারও জীবনের সাথে মিলে গেলে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ও কাকতালীয়।


~~ সূচনা ~~

গল্পের প্রধান চরিত্র, যাকে নিয়ে এই লেখা তিনি একজন সাধারন হিন্দু নারী। তাঁর পরিবারের বসবাস ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা ও ডাকঘর ইছাপুরা এর ছনি নামক ছোট্ট একটি গ্রামে। তাঁর ঠাকুর দাদা (বাবার বাবা) ছিলেন একজন সাধারন গৃহস্থ ও নরসুন্দর (নাপিত)। তাঁর নাম ছিল স্বর্গীয় গঙ্গাচরন শীল। তিনি খুব সাধারন জীবনযাপন করতেন। গঙ্গাচরন শীল এর বড় কন্যা ও তাঁর একমাত্র পুত্র ছিলেন স্বর্গীয় মতি লাল শীল। তিনিও তার বাবার পেশা বা বংশগত পেশাই করতেন।

মতি লাল শীল যখন বিবাহ উপযুক্ত হলেন তখন বাগাইর (জাজিরা), কেরানীগঞ্জ জেলার স্বর্গীয় নিবারন চন্দ্র শীল এর কন্যা স্বর্গীয়া সুরবালা শীল এর সহিত বিবাহ হয়। নিবারন চন্দ্র শীল এর এক পুত্র পাঁচ কন্যা ছিল, সুরবালা ছিল পঞ্চম সন্তান। ৯০ টাকা পন দিয়ে মতি লাল শীল তাকে বিবাহ করেন। বাংলায় তখন বৃটিশ রাজত্বকাল, তখনকার মানুষরা খুবই সাধারন জীবনযাপন করতেই বেশী ভালবাসতেন। এই ঘরেই জন্ম নেন আমার গল্পের নায়িকা বা প্রধান চরিত্র।
ছনি নামক গ্রামটি খুবই সাধারন অন্যান্ন গ্রামগুলোর মতই। যেখানে পাখি ডাকে, চারিদিকে ফসলি জমি, খেলার মাঠ যেখানে বিকাল হলেই সকল বয়সের পুরুষরা তাদের পছন্দ মত খেলা করে, পাশদিয়ে নদী বয়ে গেছে, নদীর পাশে বিশাল একটি বট গাছ, বিশাল হাট যেটা সপ্তাহে দুই দিন বসত। 
 
মতি লাল শীল ও সুরবালা শীল একে অপরে যতটা না ভালবাসত তার চেয়ে বেশী একজন আরেকজনকে শ্রদ্ধা করতো। তিনি ছিলেন আলিমনঃ গোত্রের কায়স্ত শীল। আমৃত্যু তাদের মাঝে কখন কোন বিষয় ঝগড়া হয়েছে এমন খুব একটা দেখা যায়নি। বিবাহের কয়েক বছর পর সুরবালা শীল একজন অপূর্ব সুন্দরী এক কন্যা সন্তান জন্ম দিলেন। নাম রাখা হলো পারুল বালা। তার এক বছর পর সুরবালা শীল একজন পুত্র সন্তান জন্ম দিলেন তার নাম রাখা হলো সেবক চন্দ্র শীল। একে একে আরো তিন কন্যা ও দুই পুত্রের জন্ম দেন। তাদের নাম যথাক্রমে শান্তি বালা, কানন বালা, আন্না রানী শীল, দিলিপ চন্দ শীল, তারক চন্দ্র শীল। 
 
সেই সময় সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের লেখা-পড়া করানোর ইচ্ছা তেমন কারই ছিল না। তাই মেয়েদের লেখা পড়া করাবার ইচ্ছা মতি লাল শীলের ও ছিলো না। সাত সন্তানের পিতার কাছে লেখাপড়া একটি অতিরিক্ত খরচের মধ্যেই পরে। বড় ছেলের (সেবক চন্দ্র) যখন ৯-১০ বছর তখন তাকে তার মামা নিয়ে তার কাছে যে ভাগিনাকে লেখাপড়া করাবে পাশাপাশি হাতের কাজ (কামারের কাজ) শিখাবে। 
 
মেজো ছেলে কোন রকম লেখা পড়া শেষ করে পরবর্তীতে গ্রাম ডাক্তারি পাশ করে গ্রামেই ডাক্তারি পেশা শুরু করে। বেশ কয়েক বছর ইতালিতে বসবাস করে এসে এখন ঢাকাতে ব্যবসা করছে। ছোট ছেলে অত্যান্ত মেধাবী ও ভদ্র। Mechanical Engineer হিসাবে BSC পাশ করে এখন স্বনামধন্য একটি গার্মেন্টস এর জিএম হিসাবে কর্মরত আছেন। 
 
অপর দিকে কন্যারা নিজ নিজ স্বামী-সংসার নিয়ে ভালই আছে। পুত্র গুলো তাদের চাকরি ব্যবসা সংসার নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।



~~ প্রথম পাতা ~~

Thursday, June 27, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা (শেষ দৃশ্য)


                                              ~~ শেষ দৃশ্য ~~

জীবন থেকে চলে যায় আর বেশ কয়েকটি বছর। প্রিয়ার আর লেখা পড়া হলো না। এদিকে উদয়ও পাঁচ-ছয় বছর হলো মামা বাড়ি যায় না। মাঝে দুই এক বার কিছু সময়ের জন্য গিয়েছিল, প্রিয়াকে দেখে মনে মনে কষ্ট হয়েছে বটে, তবে কেমন যেন একটা অপছন্দ জন্ম নিয়েছে তার কাছে যার জন্য প্রিয়ার সাথে কথাও বলে না উদয়। বাকি জীবনে তাদের আর তেমন কোন কথা বলতে দেখা যায়নি। প্রিয়া বেশ কয়েকবার উদয়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু উদয় সেই দিকে তেমন কোন ভাবেই কর্ণপাত করেনি। 
 
তার কিছুদিন পর প্রিয়ার বিয়ের জন্য তার বাবা তোর জোর শুরু করে। পরিবারের সদস্য হিসেবে উদয় বেশ কয়েক জায়গায় গিয়েছিল তার প্রিয়তমার জন্য বর খুজতে। উদয় তখন চাকরি করে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে। উদয়কে তার মামি একদিন ফোন করলো, সেই প্রথম তার মামি তাকে ফোন করেছিল বললো প্রিয়ার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, তুমি ছুটি নিয়ে আইসো। উদয়ের আর যাওয়া হয় নি, কারন নতুন চাকরি তার উপরে মনের দিক দিয়েও ইচ্ছা ছিল না। কিছুটা চুপিসারে প্রিয়ার পরিবার তার বিয়ে দিল একজন ব্যবসায়ীর সাথে। প্রিয়ার ঘরে এখন এক মেয়ে ও এক ছেলে। হয়তো ভালই আছে স্বামী সংসার নিয়ে। 
 
তার কয়েক বছর পর উদয়ের সাথে প্রিয়ার দেখা হয়, কিন্তু কেমন আছ? উত্তর ভাল শুধু এতটুকুই কথা হয় তখন। বেশ কয়েক বছর পর উদয়ও বিয়ে করে। তার ঘরে একটি মেয়ে হয় সেই মেয়ের নাম রাখে প্রিয়া, কারন এখনও সে মনে প্রানে প্রিয়াকেই ভালবাসে। এভাবেই জীবন চলতে থাকে তার আপন গতিতে। বাকি জীবনে প্রিয়া আর উদয়ের দেখা হয়েছিল কিনা যানা নেই। হয়ত দুইজনই ভাল আছে, না হয় দুইজনেই ভাল নেই তাই বলে কি জীবন তো আর থেমে থাকে না।


পাঠকের কাছে লেখক হিসাবে আমি জানতে চাই, এটা কি ছিল ভালবাসা নাকি আবেগ নাকি অন্য কিছু?

~~ শেষ ~~


Wednesday, June 26, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( পঞ্চম দৃশ্য)


                                                         ~~ পঞ্চম দৃশ্য ~~


সময় কেমন করে যেন সব পরিবর্তন হয়ে যায়, প্রিয়া ঢাকার একটি নামী দামী কলেজে ভর্তি হয়ে থেকে যার কলেজের কাছেই একটি ছাত্রী হোস্টেলে। এদিকে নতুন চাকরি পায় উদয়, কিছুটা ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটতে থাকে তার। মাঝে মাঝে তাদের মধ্য ফোনে কথা হয়। দেখা করতে চায় উদয় কিন্তু কোন এক অজনা কারনে প্রিয়া দেখা করতে চায় না। কিছুই যেন ভাল লাগছে না উদয়ের। 
 
একদিন উদয় ঠিকানা মতো হাজির হয় প্রিয়ার কলেজের সামনে। অপেক্ষা করতে থাকে প্রিয়া কখন আসবে আর তার সেই মন ভুলান হাসি হাসবে। প্রিয়া কলেজ থেক বের হয়েই তার হোস্টেলের দিকে হাটতে থাকে, উদয় পিছন থেকে ডাক দেয় প্রিয়া বলে। প্রিয়া কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে তাকায় উদয়ের দিকে, কিন্তু উদয় যেই হাসিটা দেখার জন্য এত কষ্ট করে অপেক্ষা করছিল সেটা আর দেখা হল না। প্রিয়া জিজ্ঞাস করলো কি ব্যাপার এখানে, কি ভাবে আসলা? উদয় তার এই প্রশ্নে কেমন যেন ভালবাসার ঘাটতি অনুভব করলো। কয়েকটি কথা বলে বিদায় নিল দুইজনেই। 
 
উদয় তার মা-কে তার খুব ভালবাসে, মা যা বলবে উদয়ের জীবনে সেটাই মানতে হবে। উদয়ের মা কিছুটা বুঝতে পারলো ছেলের জীবনে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। সে বুঝায় প্রিয়া ধনী ঘরের মেয়ে, বাবা বিদেশ ফেরত, সে কখনোই এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তাই সময় নষ্ট না করে লেখাপড়ায় মনযোগ দাও। সময় সব ঠিক করে দিবে। উদয় তার মন কে শক্ত করে প্রিয়াকে যেমন করেই হোক ভুলতে হবে। 
 
সময়ের নিয়মে উদয় চাকরি নিয়ে চলে যায় ঢাকার বাইরে। তার কিছু দিন পর খবর আসে প্রিয়া কলেজের পাশের এক ছেলের প্রেমে পরেছে। ছেলেটি ধনী, বাড়ী ও গাড়ি দুইটাই আছে তার। উদয় প্রিয়ার জন্য আশির্বাদ করে যেন সে ভাল থাকে। কিন্তু না ছেলেটি প্রিয়ার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, সিনেমার কাহিনীর মত একদিন প্রিয়াকে একটি হেটেলে নিয়ে যায় সেই ছেলেটি। তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে এবং তা ছবি তুলে রাখে। তারপর প্রিয়ার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে সেই ছেলেটি, না হলে প্রিয়ার বাবা-মার কাছে সেই ছবি তুলে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখায়। প্রিয়া কিছুদিন বিভিন্ন আত্বীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা এনে সেই ছেলেকে দিতে থাকে। যখন আর কিছুতেই পারছিল না তখন বাধ্য হয়েই প্রিয়া তার বাবা মার কাছে সব খুলে বলে। প্রিয়ার বাবা তাকে ঢাকা থেকে অনেক দুরে এক আত্বীয়র কাছে রেখে আসে।

~~ শেষ দৃশ্য ~~

Tuesday, June 25, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( চতুর্থ দৃশ্য)


                                                          ~~ চতুর্থ দৃশ্য ~~


সময় বইতে থাকে, উদয় এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করেছে। এদিকে প্রিয়াও এস এস সি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় এসেছে কলেজে ভর্তির কোচিং করতে। উদয় লক্ষ করলো প্রিয়ার ব্যবহার কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রিয়া কি সব ভুলে গেছে তাদের সেই রাতের ঘটনা। পরে বুঝল না এটা উদয়কে পরীক্ষা করার জন্য করছে। যাতে উদয়ের পরিবারের কেও কিছু বুঝতে না পারে। 
 
একদিন প্রিয়া কেচিং এ যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, এমন সময় উদয় সেই ঘরে ঢুকল। প্রিয়া তাকে জিজ্ঞাসা করলো বলতো, ছেলেরা মেয়েদের পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে চায় কেন? আর জরিয়ে ধরেই নাভিতে বা তল পেটে হাত দেয় কেন? উদয় যেন আকাশ থেকে পরলো। এমন প্রশ্ন কোন মেয়ে করতে পারে সে জানতো না। সে কোন উত্তর দিতে পারলো না। প্রিয়া হাসতে হাসতে চুল ঠিক করতে থাকে। 
 
তখন ছিল চিঠির যুগ, একে ওপরকে অনেক চিঠি লিখত। প্রিয়াই বেশি লিখত। উদয়ের কাছে অনেকদিন সেই চিঠিগুলো সংগ্রহ করা ছিল। একে অপরকে অনেক উপহার দিত। ঢাকায় থাকার সুবাদে এবং প্রিয়ার কোচিং আছে বলে তারা দুইজনই একসাথে অনেক জায়গার বেড়ানোর সুযোগ পেল। ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, খাওয়া দাওয়াও হয় মনের আনন্দে।

কিছুদিন পর প্রিয়া তার গ্রামের বাড়ি চলে যায়। উদয়কে বলে এবারের আমার জন্মদিনে তোমাকে আমার পাশে চাই। উদয় দিন গুনতে থাকে ২০০২ সালের ২২ শে জুন শনিবার তারিখটি কবে আসবে। সে দিনটিই ছিল প্রিয়ার জন্মদিন।

উদয় সুন্দর একটি পিরামিড মোমবাতি কিনল আড়ং থেকে জন্মদিনের উপহার হিসাবে। ২০ তারিখই চলে আসে সে তার মামা বাড়ি তার প্রিয়তমাকে দেখার জন্য। সৌভাগ্যক্রমে প্রিয়ার মা ঢাকায় আসে ২১ তারিখে ডাক্তার দেখাতে। উদয় প্রিয়াকে বলে আজকে রাত্রে তুমি একটি শাড়ী পরো, প্রিয়া রাজি হয় কিন্তু বলে তুমি যদি আমাকে মাথায় খোপা করে দিতে পার তাহলে আমি শাড়ী পরতে পারি। 
 
সন্ধার পর প্রিয়া উদয়ের পচ্ছন্দের নীল রঙ্গের একটি শাড়ী পরে। উদয় বিকালেই একটি লাল গোলাপ বাগান থেকে জোগার করে রাখে প্রিয়ার খোপায় পরাবে বলে। প্রিয়া তার মার শাড়ী টি পরে এসে উদয়কে বলে কেমন লাগছে আমাকে। উদয় খুশি হয়, বলে আস খোপা করে দেই। উদয় কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় চুলের খোপা করতে। প্রিয়া নিজেই তার চুলের খোপা করে তাতে উদয় গোলাপ ফুলটি গুজে দেয় সুন্দর করে। পিরামিড মোমবাতিটি হাতে দিয়ে বলে কখনো ব্যবহার কর না। তাহলে মোমবাতির সাথে সাথে ভালবাসাও শেষ হয়ে যাবে।

সেই রাতে তাদের এক সাথে থাকার সুযোগ হয়। উদয় সারা রাত প্রিয়ার কোলে মাথা রেখে গল্প করতে থাকে। প্রিয়া উদয়য়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে আর চলতে থাকে নানান রকম কথা, গল্প ও ভালবাসার আদর। যেন সারা রাতেই যেন তাদের কথা আর শেষ হয় না। কিভাবে যে রাত শেষ হয়ে গেল কেও বুঝল না।

~~ পঞ্চম দৃশ্য ~~

Monday, June 24, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( তৃতীয় দৃশ্য)


                                                          ~~ তৃতীয় দৃশ্য ~~


পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধা, প্রিয়া তখন তার পড়ার ঘরে বই পরছিল। প্রিয়াকে দেখে উদয় যেন দেহে প্রান ফিরে পেল। এতক্ষণ সে ততটাই কষ্টে ছিল যতটা কষ্ট একটি জীবিত মাছের ডাঙ্গায় থাকলে হয়। প্রিয়া তার ভুবন ভোলান হাসি দিয়া জিজ্ঞাসা করলো কখন আসলা, এত তারা তারি বেড়ান শেষ? উদয় বললো তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না। সেই দিনের কষ্ট এবং কি ভাবে একা মামা বাড়ি আসে সেটা প্রিয়াকেও কখনো বলা হয়নি উদয়ের। 
 
সেদিন উদয়ের কষ্টের ফল স্বরুপ ঈশ্বর তাকে একটি ফল দিয়েছিল। তার মামি মানে প্রিয়ার মা সেদিন ঢাকা গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে। বাসা ফাকা, প্রিয়ার ঠাকুর মা উদয় কে বললো তুই আর প্রিয়া এক ঘরে ঘুমা, না হলে প্রিয়া ভয় পেতে পারে রাত্রে। উদয় যেন মনে মনে এটাই চাচ্ছিল, প্রিয়া ও কিছু বলতে চায় উদয়কে এটাই তাদের উপযুক্ত রাত একে ওপরকে সব খুলে বলার। 
 
রাত্রির খাবার শেষ করে সবাই ঘুমাতে গেল। উদয় আর প্রিয়া তাদের ঘরে গেল, দিনটি ছিল পূর্ণিমার রাত। জালনা খুলে তার চাঁদ দেখছে আর দুইজন দুইজনার হাত ধরে কিছুক্ষন বসে রইল কেও কিছু বলতে পারলো না শুধু আকাশের দিকে চেয়ে রইল। প্রিয়া বলল কি ব্যপার ঘুমাবা না, কাল তো আমার স্কুল আছে। কিছু কি বলবে? উদয় বলে আমি আর কি বলবো এখন তো তোমার বলার কথা। আমি তো আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। প্রিয়া বলে এখনই এই সব ভাববার সময় নয়। সময় হোক সবই জানতে পারবে। উদয় প্রিয়ার গালে জীবনের দ্বিতীয় চুম্বন দিল, প্রিয়া কিছু বলল না। তাদের দুইজনই তাদের শরীরে একপ্রকার কম্পন অনুভব করল। 
 
জরিয়ে ধরলো একে অপরকে। প্রিয়া বললো আমাকে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধর, পৃথিবীর কোন শক্তিই যেন আমাদের আলাদা না করতে পারে। উদয়ও তার সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রিয়াকে তার বুকের মাঝে জরিয়ে রাখার চেষ্টা করলো। ভালবাসার প্রথম উপহার হিসেবে একে ওপরকে চুম্বন করতে থাকে, কপাল, গাল, চোখ, ঠোট, কাঁধ। এ যেন এক ভালবাসার পরীক্ষা চলছে, কে কাকে কত চুম্বন করতে পারে আর বলতে পারে আমি তোমাকে বেশি ভালবাসি। 
 
সেই রাতে একে ওপরকে জরিয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পরলো। সেই যুগের ছেলে মেয়েদের কাছে ভালবাসার প্রতীক হিসাবে একটি চুম্বন-ই যথেষ্ঠ। তখন সবার হাতে ছিল না মোবাইল বা ইন্টারনেট তাই যৌনতা বা দৈহিক সম্পর্ক সমন্ধে কেও তেমন কিছুই জানতো না। সেই রাতটি ছিল ২২ জুলাই ২০০১ রবিবার, উদয়ের জীবনের এমনই একটি রাত সে চাইতো সে বিয়ে করলে এই তারিখেই করবে। আরো কয়েকদিন মামা বাড়ী বেড়িয়ে উদয় ঢাকা চলে আসে। 
 
কিছুতেই উদয় পড়ালেখায় মন দিতে পারছিল না। তখনো মোবাইলে কথা বলা এত সহজ ছিল না। কলরেট ছিল প্রতি মিনিট প্রায় ৬-৭ টাকা। উদয় লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি শুরু করেছে কয়েকটি। প্রিয়া কেমন আছে জানতে চায় উদয়। সৌভাগ্যক্রমে প্রিয়ার বাবা একটি মোবাইল ফোন পাঠায় বিদেশ থেকে প্রিয়ার মার সাথে কথা বলার জন্য। তার কিছু দিন পর উদয় প্রিয়ার এক আত্মীয়র কাছ থেকে মোবাইল নাম্বারটি সংগ্রহ করে। 
 
উদয়ের এক বন্ধু মোবাইলে কথা বলার দোকান ছিল। একদিন উদয় বিকালে তার বন্ধুর দোকানে যায়, ফোন করল সেই নাম্বারে ফোনটি ধরলো প্রিয়ার মা। সাথে সাথেই ফোনটি কেটে দিল উদয়, কিছুটা ভয় পেল। কিছুক্ষন পর আবার করলো, এবার প্রিয়া ফোনটি ধরলো। কথা বলতে বলতে প্রায় এক ঘন্টা কখন পার হয়ে গেল কেও বুঝতে পারলো না। তখনই তারা ঠিক করে তারা চিঠি লিখবে প্রিয়া চিঠি লিখবে উদয়ের বাসার ঠিকানায়, কিন্তু উদয় চিঠি লিখবে প্রিয়ার বান্ধবীর ঠিকানায় যেন প্রিয়ার বাসার কেও বুঝতে না পারে।

Sunday, June 23, 2019

প্রথম প্রেম ও প্রথম কবিতা ( দ্বিতীয় দৃশ্য)


                                                         ~~ দ্বিতীয় দৃশ্য ~~


সকালে কিছুটা দেরিতে ঘুম ভাঙ্গে উদয়ের, এই ফাকে প্রিয়া স্কুলে চলে গেছে। উদয় বুঝতে পারে কিছু একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে সকালের মধ্যেই। মামির ব্যবহারে রাতের ঘটনা মামি কিছুটা বুঝতে পেরেছে বলে উদয়ের মনে হলো। সে কিছুটা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো।

উদয়ের মাসি বাড়ি ছিল পাসের গ্রামেই, উদয় সেদিন তার মাসিকে নিয়ে তার মাসি বাড়ি গেল কয়েকদিন থাকবে বলে। একদিন যেতেই তার মনে হলে সে বোধ হয় কোন জেলখানায় আছে। কোন কিছুই যেন তার আর ভাল লাগছে না। কি যেন একটা পরিবর্তন মনে হচ্ছে তার কাছে, সবকিছু বিরক্তিকর। প্রথম প্রেমে পরলে যা হয় আর কি। প্রেম রোগ বলে কথা, যার একটাই ঔষধ মনের মানুষের সাথে সময় কাটানো। 
 
এখানে বসেই সে একটি গান শুনতে পেল ব্যান্ড মাইলস এর জনপ্রিয় একটি গান, যেটা তার জীবনের সেরা দশটি গানের মধ্যে একটি। সেই গানটিকে উদয়ের মত করে লিখে প্রিয়াকে উপহার দিল, যেহেতু প্রেমে পরলে মিথ্যা বলতে হয়। উদয়ও মিথ্যার আশ্রয় নিল। এই গানটিকে কবিতার আকারে লিখে প্রিয়াকে বললো তোমার জন্য একটি কবিতা লিখেছি। জীবনের প্রথম কবিতা।


প্রথম প্রেমের মত, প্রথম কবিতা এসে বলে
আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দূরের দেশে

কত পথ প্রান্তর ঘুরে ফিরেছি
পাইনিতো আজো তোমায় গো, 
সেই পথ চলা শেষ হলে
কাছে এসে যেও বলে
এই তো আমি, এই তো আমি

প্রথম প্রেমের মত, প্রথম কবিতা এসে বলে
আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দূরের দেশে।
 
তোমারই আশায় বসে থেকেছিনাম ধরে ডাক দিলে কে গো তুমি,
ফিরে এলে আজ কাছে
ভালোবাসা যত আছে
দিলাম তুলে, দিলাম তুলে
 
প্রথম প্রেমের মত, প্রথম কবিতা এসে বলে
আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দূরের দেশে


উদয় সারাদিন ভাবতে থাকে কি ভাবে মামা বাড়ি যাওয়া যায় কারন সমস্যা হলো সে কি ভাবে যেতে হবে তা জানে না। এটাই ছিল তার প্রথম মাসি বাড়ি আসা। রাস্তা ঘাট সবই তার অচেনা। যত কষ্টই হোক যেতে হবে তাকে তার প্রিয়ার কাছে। সে কাউকে কিছু না বলেই রওনা হলো তার প্রিয়ার সাথে দেখা করতে। নদী পথ লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে নৌকা, পায়ে হেটে ঠিকই পৌছে যায় তার গন্তব্যে।