The Web This Blog

Monday, April 22, 2024

আমার প্রথম দেওঘর ভ্রমন

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সবসময় একজন ভালো মানুষ তৈরি কারার জন্য কাজ করেছেন সবসময়। সকল অবতার পুরুষের মতই মানুষকে কি ভাবে ভালো রাখা যায় তার জন্যই সৎসঙ্গের পাঁচটি মূলনীতি “যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি, স্বস্ত্যয়নী এবং সদাচার” নিয়ে কার করছে সৎসঙ্গ। 'সৎসঙ্গ' এর নীতিবাক্য হচ্ছেঃ- "দদাতু জীবনবৃদ্ধি নিরন্তরং স্মৃতি চিদযুতে"; যার বাংলা অর্থ হলোঃ "আমাকে প্রতিনিয়ত চেতনাবাহী স্মৃতিযুক্ত জীবন দান করো"। এই নীতি বাক্য ও মূলনীতি নিয়েই প্রতিটি সৎসঙ্গী চলার চেষ্টা করছে। সহ-প্রতি ঋত্বিকদের হাতে একটি দন্ড দেখতে পাবেন তাতে এই বানী টি লেখা আছে। 

মূল লেখা শুরু করার পূর্বে আসুন দেওঘর সম্পর্কে বাংলা উকিপিডিয়া থেকে কিছু তথ্য যেনে নেয়া যাক, দেওঘর (হিন্দি: देवघर, প্রতিবর্ণীকৃত: দেৱ্‌ঘর্) ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পঞ্চম বৃহত্তম একটি শহর। এটি সাঁওতাল পরগনা বিভাগ এর দেওঘর জেলার সদর শহর। এটি হিন্দু ধর্মের একটি পবিত্র স্থান হিসবেই বেশি বিবেচিত। এখানে হিন্দু ধর্মের ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি (বৈদ্যনাথ মন্দির) অবস্থিত। শহরের পবিত্র মন্দিরসমূহ তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের কাছে শহরটিকে একটি পবিত্র গন্তব্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এছাড়াও, শহরের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরত্বও রয়েছে। দেওঘর একটি হিন্দি শব্দ এবং “দেওঘর” এর আভিধানিক অর্থ হল দেব-দেবীদের (দেব) বাসস্থান (ঘর)। দেওঘর “বৈদ্যনাথ ধাম”, “বাবা ধাম” নামেও পরিচিত। 

দেওঘর, বৈদ্যনাথ ধামের উৎপত্তি প্রাচীনকালেই হারিয়ে গেছে। সংস্কৃত গ্রন্থে একে হরিতকিবন বা কেতকিবন নামে উল্লেখ করা হয়েছিল। দেওঘর নামটি সাম্প্রতিক উৎপত্তি বলে মনে হয় এবং সম্ভবত ভগবান বৈদ্যনাথের মহান মন্দির নির্মাণের সময় থেকেই এসেছে। যদিও মন্দিরের নির্মাতার নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি এখনো। তবে মন্দিরের সামনের অংশের কিছু অংশ ১৫৯৬ সালে গিদ্দৌরের মহারাজার পূর্বপুরুষ পুরাণ মল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয় তবে সনাতন ধর্মের দ্বারা বিশ্বাস করা হয় যে এটি ভগবান বিশ্বকর্মা দ্বারা নির্মিত। দেওঘর হল ভগবান শিবের উপাসনালয়, শ্রাবণ মাসে অনেক ভক্ত পূজার জন্য সুলতানগঞ্জ থেকে দেওঘরে গঙ্গাজল নিয়ে যান এবং তারা তাদের জীবনের কাঙ্খিত বাসনা পাওয়ার আশায়।

ইংরেজী ১৯৪৬ সালে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ৬৭ তম জন্মজয়ন্তি উৎসব হওয়ার পরে শ্রীশ্রীঠাকুর হঠাৎ ঘোষণা দিলেন তিনি পশ্চিমে যাবেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বানানো হিমায়েতপুর, পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রম ছেড়ে শ্রীশ্রীঠাকুর যাত্রা করলেন দেওঘরের উদ্দেশ্যে। ৩০শে আগস্ট, ১৯৪৬ ইংরেজি সালে শ্রীশ্রীঠাকুর বৈদ্যনাথধাম পর্যন্ত রেলগাড়ির বগি রিজার্ভ করার জন্য মার্কিন ভক্ত নরম্যান ডি ফেন, ভোলানাথ সরকার ও রাজেন্দ্রনাথ মজুমদারকে ব্যবস্থা করতে বলেন। সেই সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর সুশীলচন্দ্র বসু ও বীরেন্দ্রলাল মিত্রকে দেওঘরের মধ্যে একটি খুব বড় বাড়ি ভাড়া করতে বললেন। তখন রোহিনী রোডস্থিত বড়াল-বাংলো নামে সুবৃহৎ বাড়িটি ঠিক করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট ১৯৪৬ এর ১লা সেপ্টেম্বর শ্রীশ্রীঠাকুর পরিবার ও কতিপয় ভক্তসহ রওনা হন দেওঘর অভিমুখে। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২রা সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় মায়াতীতের মত নিজ জন্মভূমি ও দীর্ঘ ৫৮ বছরের লীলাভূমি পেছনে ফেলে শ্রীশ্রীঠাকুর উপনীত হলেন দেওঘরের বড়াল-বাংলোতে।

এখন ভারত ও বহির্ভারতের সৎসঙ্গ সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডের প্রধান নির্দেশনাগুলো মূলত এই আশ্রম / সংগঠনগুলো থেকেই আসে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাঁর নরলীলার ৫৯ বছর বয়সে এখানে এসেছিলেন এবং বাকি ২৩ বৎসর এই আশ্রমেই কাটিয়েছিলেন। “দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রম” ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত বৈদ্যনাথ পীঠস্থানের সংলগ্ন দেওঘরে অবস্থিত। জসিডি রেলস্টেশনের পর শাখা স্টেশন বৈদ্যনাথ ধাম। সেখান থেকে মাইল কয়েক এগিয়ে গেলেই দেওঘর আর সেখানেই অবস্থিত দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রম। যেখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও অনুরাগীরা আসেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নিলা ভূমি দেখার জন্য়।

দেওঘর যাবার প্রস্তুতি বেশ কয়েকমাস পূর্বেই শুরু করেছিলাম আমরা, প্রহলাদ পোদ্দার (সহ-প্রতি ঋত্বিক), বিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক) ও আমি। পাসপোর্ট, ভিসা ও অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পন্ন করে ১ লা বৈশাখ ১৪৩১ এর ৯৮ তম সর্ব-ভারতী ঋত্বিক সম্মেলন এ যোগদানের জন্য মানসিক ও আর্থিক ভাবে আমরা প্রস্তুত। একপর্যায় জানতে কল্যাণাংশু নাহা (সহ-প্রতি ঋত্বিক) দাদাও আমদের সাথে যাবেন, খুবই খুশি হলাম যেহেতু তিনি বেশ অনেকবার ভারত ও দেওঘর যাওয়া-আসা করেছেন তার অভিজ্ঞতা আছে। আমার এটাই প্রথম বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমন, তাই অন্যরকম অনুভূতি, ভয়, উদ্বেগ কাজ করছিল বারবার।

২০০০ বা ২০০১ সালে আমি প্রথম প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর এর পূণ্য জন্মভূমি হেমায়েতপুর, পাবনাতে যাই। সাথে ছিল পাবানার বিখ্যাত কেচি ব্যবসায়ী মানিক কাকা, আমার স্নেহের কাকাত ভাই বলরাম সরকার ও আমি। সেটা ছিল এক রোমাঞ্চকর অনুভুতি প্রথম ও নতুন তৈরি বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে পার হওয়া। সময়ের ব্যবধানে প্রায় ২ যুগ পর ২০২৪ আমার দেওঘর সফরে সঙ্গিও বলরাম সরকার ও তার ছেলে বিক্রমজিৎ সরকার। যেহেতু আমার বাংলাদেশের বাইরে কখনো যাবার অভিজ্ঞতা নেই তাই, অনেকের সাথেই আলোচনা করতে থাকি বেনাপোল বর্ডার, কলকাতার ট্রেন, আবহাওয়া, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে। 

কোথায় কি কি দেখতে যাবো, ডলার / টাকা কি ভাবে কত কি নিতে পারবো, পরিবারের জন্য কি কি কিনতে হবে, দেওঘর কি কি করবো, ভারতে ট্রেনের টিকিট কি ভাবে কাটবো, পরিবহন কোনটা ভাল হবে, কয়দিন থাকবো, অফিসের কাজগুলো কিভাবে গুছিয়ে যাবো, কি কি কাগজ-পত্র নিতে হবে ইত্যাদি ভাবতে ভবতেই আরো কয়েকদিন পার কারলাম। ঈদুল-ফিতর ও বাংলা নবর্ষের কারনে প্রায় ৭-৮ দিনের একটা লম্বা ছুটি পাওয়া গেল, সাথে আরো দুই দিন বারিয়ে নিয়ে আমার ভ্রমন তারিখ ঠিক করলাম ০৮ই এপ্রিল ২০২৪ সোমবার থেকে প্রায় ১৮ই এপ্রিল ২০২৪ বৃহস্পতিবার। তারপর ঠিক করা হলো কে কবে কিভাবে কলকাতা পৌছাবে, তারপর সবাই একসাথে হয়ে দেওঘরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু।

ঠিক হলো প্রহলাদ দা ৬ই এপ্রিল ভারতে তার মামা বাড়ি যাবে, সেখান থেকে ১০ই এপ্রিল আমরা এক সাথে হবো। ৮ই এপ্রিল কল্যান দা পাবনা থেকে ও বিধান কাকা কুষ্টিয়া থেকে বেনাপোল যাবে আর আমি ঢাকা থেকে সকালে রওনা হয়ে বেনাপোল পৌছাবো, তারপর একসাথে তিনজন বর্ডার পার করবো। বলরাম ও বিক্রমজিৎ ১০ই এপ্রিল বিমানে কলকাতা পৌছাবে। আমি সোহাগ পরিবহনের টিকিট ঢাকার সায়দাবাদ থেকে ৭.৪৫ মিনিটে ঠিক করে রাখি, কিন্তু ঈদে পরিবহন চাপের কারনে প্রায় ৩০ মিনিট লেট করে যাত্রা শুরু করি ও বেনাপোল পৌছায় প্রায় দুপুর ২ টা বাজে। 

কল্য়ান দা ও বিধান কাকা প্রায় ১২ টার দিকেই পৌছে যায় এবং জি এম পরিবহন কাউন্টারে শুধু আমার জন্য় অপেক্ষা। আমি যেহেতু প্রথম বার যাচ্ছি কোথায় কি করতে হবে তার কারনে তাদের অপেক্ষা। বিধান কাকা আমাকে সঠিক ভাবে কাউন্টারের ঠিকানা বলতে না পারায় প্রায় এক ঘন্টা আমি ভ্যানে ঘুরাঘুরি করে জি এম পরিবহন কাউন্টারে পৌছাই। সেখানে কিছু ব্যাক্তিগত কাজ শেষ করে দুপুর প্রায় ৩ টার দিকে বর্ডারের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু। বর্ডারের কাজ শেষ করে সবাই একসাথপ পার হই ও পেট্রাপোল বর্ডার থেকে একটি ভারতীও মোবাইল AirTel SIM সংগ্রহ করে আমাদের ভারতের মাটিতে পদার্পন শুরু করি।

চলবে……….






1 comment:

  1. জয়গুরু 🙏 দাদা, ভূমিকা ও ভ্রমণ বৃত্তান্ত পড়ে ভালো লাগলো। বাকিটুকু শোনার আগ্রহ রইলো।

    ReplyDelete