The Web This Blog

Monday, March 30, 2020

ভগবান কে, ঈশ্বর কে?


যদি ১০ জন হিন্দু ধর্মের মানুষকে প্রশ্ন করা হয় তোমার ভগবান কে..? তাদের থেকে নানান রকম উত্তর পাওয়া যাবে। কেউ বলবে শিব ভগবান, কেউ বলবে ব্রহ্মাই একমাত্র ভগবান, কেউ বলবে ভগবান শুধু রাম চন্দ্র, কেউবা বলবে কৃষ্ণই পরমপশ্বর ভগবান, কেউ বলবে কালি-দূর্গা ভগবান, আর কেউ বলবে গৌরঙ্গ মহাপ্রভূ ভগবান ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে কি সনাতন ধর্ম বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী..? নাকি সনাতন ধর্ম এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী? এর উ্ত্তর খুজে পাচ্ছি না, আপনি কি জানেন?

যতটুকু জানি অন্যান্ন ধর্ম মতের মতই সনাতন ধর্মে বহু ঈশ্বরের কোন স্থান নেই। আজকের প্রশ্ন দুটির উত্তর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের এই সম্পর্কিত দুইটি বাণী দিয়ে শুরু করলাম।

ভগবান তবে কে?
ভজন-দীপন জীবন-স্রোতা
কল্যান-কল যে।

ঈশ্বর তবে কে?
ধারন-পালন-সম্বেগ-সিদ্ধ
উৎস-স্রোত যে।

সনাতন ধর্ম মানব কে দুই ভাবে উপাসনা করার পথ দেখিয়েছে, এক সাকার উপাসনা এবং দুই নিরাকার
উপাসনা, যারা ভগবানে সিমাবদ্ধ তারা রুপের উপাসনা করে আর যারা ঈশ্বরের মাহাত্ত জানতে চায়
তারা ঈশ্বরের সাকার আর নিরাকারের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং ওই ভাবেই উপাসনার চেষ্টা করে।

পরাশর মুনি “ভগবান” বলতে বলেছেন-
ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নত্ ভগ ইতিঙ্গনা ॥

অর্থাৎ, যার মধ্যে ঐশ্বর্য্য, বীর্য্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান এবং বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বর্তমান, তিনি হচ্ছেন ভগবান সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সমস্ত বীর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শ্রী, সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত বৈরাগ্য। এই জগতে কেউ বড় ধনী হতে পারে, কিন্তু কেউ দাবী করতে পারেনা আমি সমস্ত ধনের মালিক। এই জগতে কেউ জ্ঞানী হতে পারে, কিন্তু সে দাবী করতে পারে না সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু ভগবান সমস্ত ধন, সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সৌন্দর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শক্তির অধিকারী, তাই তাকে বলা হয় ভগবান।

পরাশর মুনি “ভগবান” শব্দটি দুটি ভাগে ভাগ করেছেন । “ভগ” অর্থ ঐশ্বর্য্য ও “বান” অর্থ অধিকারী, যার আছে তিনিই মানুষের কাছে ভগবান। ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে - আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান, ঠিক তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাৎ সমস্ত ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলা যেতে পারে ভগবান।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ভাববাণীর একপ্ততিতম (৭২) দিবস, ২৪ জৈষ্ঠ, ১৩২৬ সনের প্রথম দুইটি বাণী,
না, তখন আলোর সৃষ্টি হয় নাই, অন্ধকার ছিল না, সৌরজগতের উদ্ভব হয় নাই। তিনি একা ছিলেন, ইচ্ছা হ'লো সৃষ্টি করতে-আর সব সৃষ্টি হ'লো। তিনি ছিলেন আর আমি ছিলাম।
আমিই তিনি, আমাই তিনি, আমিই তিনি।

সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ বেদ, সেখানে বলা হচ্ছে, যাহা প্রতিটি হিন্দুদের তেমনি অনুসরণীয় ও পালনীয়।

নোপাস্যমন্যদ্ ব্রহ্মণো ব্রহ্মৈকমেবাদ্বিতীয়ম্।
তথাগতাস্তদ্বার্ত্তিকা অভেদাঃ।
তথাগতাগ্রোহি বর্ত্তমানঃ পুরুষোত্তমঃ পূর্ব্বেযামাপূরয়িতা বিশিষ্ট-বিশেষবিগ্রহঃ।

অর্থাৎ, ব্রহ্ম ভিন্ন আর কেহ উপাস্য নহে- ব্রহ্ম এক অদ্বিতীয়।
তাঁহার বার্ত্তাবহনকারী তথাগতগণ অভিন্ন।
বর্ত্তমান পুরুষোত্তম তথাগতগণের অগ্রণী এবং তিনি পূর্ব্ব-পূর্ব্ব তথাগতগণের আপূরণকারী বিশেষ বিশিষ্ট নরবিগ্রহ। 
 
শ্রীভগবদগীতা দশম অধ্যায়ের অষ্টমতম শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধোঁয়াশাটা অনেকটাই পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
অহং সর্বস্য প্রভবঃ মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে
ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধাঃ ভাবসমম্বিতাঃ ॥

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ননা করেছেন, আমি জড় ও চেতন সমস্ত কিছুর উৎস ও সবকিছু আমার কাছ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। সেই তত্ত্ব অবগত হয়ে যারা শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন তারাই যথার্থ তত্ত জ্ঞানী। অর্থাভগবান হচ্ছেন সবকিছুর স্রষ্টা, সবকিছুর পালন করেন এবং তিনি সবকিছু সংহার করতে পারেন। এভাবে ভগবানের সর্বশক্তিমত্ত্বা সর্ম্পকে শাস্ত্রে বর্ননা করা হয়েছে। ভগবানকে কেউ কেউ ঈশ্বর বলে সম্বোধন করে থাকেন। তাই ঈশ্বর শব্দটির অর্থ আমাদের জেনে রাখা দরকার

বিভিন্ন শাস্ত্র শব্দ কোষ অনুসারে ঈশ্বর শব্দের অর্থ হচ্ছে - নিয়ন্ত্রণ বা নিয়ন্ত্রণ কর্তা অর্থা যিনি সকলকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এই জগতের প্রতিটি জীবের সীমিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে, তাই তারা নিজেকে ঈশ্বর বলে মনে করতে পারে বা দেবতাদেরকে ঈশ্বর বলে গ্রহন করা যেতে পারে। যেহেতু তারা এই ব্রহ্মান্ডের কোনও না কোন কার্যের নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। কিন্তু ঈশ্বরকে যিনি নিয়ন্ত্রন করেন সেই পরমেশ্বরকে জানাই হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য। পরমব্রহ্ম বা পরম ঈশ্বরকে নিয়ন্ত্রন করে থাকেন, তিনিই ভগবান।
শ্রীশ্রীঠাকুর সত্যানুসরণ গ্রন্থে বলেছেন, ভগবানকে জানা মানেই সমস্তটাকে বুঝা বা জানা। যাঁর কোন মূর্ত্ত আদর্শে কর্মময় অটুট আসক্তি-সময় বা সীমাকে ছাপিয়ে তাঁকে সহজভাবে ভগবান করে তুলছে- যার কাব্য, দর্শন ও বিজ্ঞান মনের ভাল-মন্দ বিছিন্ন সংস্কারগুলিকে ভেদ ক'রে ঐ আদর্শেই সার্থক হ'য়ে উঠেছে-তিনিই সদগুরু।


লেখাটি সম্পূর্ন আমার নিজির মত ভাবা ও লেখা, কারও ধর্মীয় বিশ্বাস বা ভক্তিতে আঘাত করার জন্য নয়। তাই কেও এই লেখাটি পড়ে ভুল বুঝে থাকেন তাহলে সেটা আকান্ত তার ব্যক্তিগত।

No comments:

Post a Comment