The Web This Blog

Monday, March 19, 2018

প্রার্থনাতে কইলি কত / করলি নাকো কাজে, / ফুটলো ওটা কল্পনাতে / ফলটি পেলি বাজে।

অনেক দিন বলবোনা, দিন-মাস-বছর গুনতে গেলে প্রায় চার বৎসর পার হয়ে গেছে কিছু লেখা হয় না আমার। কিছু লেখার বা মানুষকে জানাতে ভালা লাগা থেকেই আমার ব্লগে লেখা লেখি শুরু। আমার নিজস্ব মতামত, অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা গুলই মূলত আমি লিখে থাকি।

যতটুকু মনে পরে ১৯৯১-৯২ সালের কোন এক পবিত্র দিনে আমার সৎনামে (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রদত্ত) দীক্ষা হয়। কুষ্টিয়া নিবাসী সহ প্রতি ঋত্বিক স্বর্গীয় শ্রীঅমর চন্দ্র শীল, ছিলেন সম্পর্কে আমার ঠাকুর দাদা (ঠাকুর দাদার ছোট ভাই), তার মাধ্যমেই আমাদের পরিবারের বেশীরভাগ সদস্যের সৎদীক্ষা লাভ হয়। দীক্ষা গ্রহনের দিন আমাকে দিয়ে শপথ করানো হয়েছিল আজ থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা করাই আমার জীবনে একমাত্র ব্রত হোক। এই শপথের কথা জানতে বা বুঝতে পারলাম অনেক অনেক পরে।

১৯৯৯ সালের তাল নবমী তিথি তে আমার প্রথম পূণ্যতীর্থ পাবনা যাওয়া সাথে ছিল আমার স্নেহের কাকাত ভাই বলরাম সরকার, যেহেতু এটাই ছিল আমার প্রথম পাবনা যাওয়া তাই আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন পাবনা নিবাসী এক কাকা (মানিক কাকা, খান কেচিঁর মালিক)। রাতে গাড়িতে উঠে পৌছাতে যেহেতু ভোর হয়ে গিয়েছিল কাকার বাসায় স্নান, খাওয়া দাওয়া করে মানিক কাকা, তার দুই ছেলে-মেয়ে, ভাই ও আমি রওনা হলাম পরম দয়ালের জন্মস্থান দেখার জন্য। পূর্বে থেকেই ঠাকুর দাদা আমাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন বর্তমান নাট মন্দিরেই।

দেখতে দেখতে জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করার পর স্বস্ত্যয়নী ব্রত পালন করবো বা পালন করা উচিৎ বিবেচনা করে গত ০৩ মার্চ ২০১৭ ইং, (রোজ শুক্রবার) তারিখে পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্তী (শ্রীশ্রীঠাকুর পৌত্র) দাদার মাধ্যমে স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহন করি।

নানান সময় নানা রকম ধর্মীয় বই পড়ার সুবাদে বুঝার চেষ্টা করছি শ্রীশ্রীঠাকুর এই বিষয়ে কি বলতে চেয়েছেন বা কেন বলেছেন। বিশেষ করে শ্রীশ্রীঠাকুর তার বাণীগুলোর মাধ্যমে কি বুঝাতে চেয়েছিলেন। তার বাণীগুলোর উপর ভিত্তি করে বাস্তবে এটার কতটুকু মিল আছে এই সময়ে তা জানার চেষ্টা করছি এখন। করাণ তাকে আমরা যুগ-পুরুষোত্তম হিসাবে বিশ্বাস করে থাকি। তার সঙ্গ করার সুজোগ যেহেতু আমার হয়নি। তার নামের মাধ্যমেই তাকে এখন শুধু উপলব্ধি করা যায়।

শ্রীশ্রীঠাকুর প্রদত্ত প্রার্থনার পুরুষোত্তম-বন্দনাতে আছে ....... ব্যক্তি-দম্পতি-গৃহ-সমাজ-রাষ্ট্রোদ্বারণে / যজন-যাজনেষ্টভৃতি-স্বস্ত্যয়নী-প্রবর্ত্তকম্....... যার অর্থঃ- ব্যক্তি-দম্পতি-গৃহ-সমাজ-রাষ্ট্রের হবে উন্নয়ন / যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি-স্বস্ত্যয়নীর তাই কর প্রবর্ত্তন।
শ্রীশ্রীঠাকুর তার বাণীতে বলছেন প্রার্থনাতে কইলি কত / করলি নাকো কাজে, / ফুটলো ওটা কল্পনাতে / ফলটি পেলি বাজে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরম দয়াল এই কথাটি তার প্রার্থনায় কেন রাখলেন? নিচের ব্যখ্যাটি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে বলা। কারও বিশ্বাস বা ভক্তিতে আঘাত লাগলে সেটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।

আমরা যারা ভাবি আমি পরম দয়ালের সবচেয়ে বড় ভক্ত বা কর্মী কারন আমি জন্মের আগের থেকেই নিরামিষ খাই, আমি ২৫-৩০ বৎছর যাবত ঠাকুরের কাজ করছি, আমি কত-শত বই পরলাম, প্রার্থনার দাড়ি কমা পর্যন্ত সব মুখস্থ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন আমি প্রার্থনার এই বানীটি কতটুকু বুঝে পালন করছি সেটা বলা যাক। যেহেতু আমি ভক্ত হনুমানের চেয়েও বড় ভক্ত বলে মনে করি। :P:P:P

ব্যক্তিঃ- আমি যজন করি আরকি দুই-একটা বই পড়ি মাঝে মধ্যে। আর যারা ঠাকুর সম্পর্কে আমার চেয়ে ভাল জানে বা বুঝে তাদের সঙ্গে শুক্রবারে কিছু সময় কাটাই ব্যক্তিগত কাজ না থাকলে। যাজন সেটা কিভাবে কার সাথে করবো এই ভাবতে ভাবতেই সময় করে উঠতে পারি না। আর ইষ্টভৃতি এটা আর বলতে হয়, সেটাতো আমি দীক্ষার প্রথম দিন থেকেই ০.৫০ পয়সা দিয়ে করতাম। কয়েকদিন আগে থেকে দুই টাকা দেই ঠাকুরকে, কেন দাদা কম হয়ে গেল নাকি!!!! এখন তো আবার আমি নিরামিষ খাই তিন বেলা, এতে কি স্বস্ত্যয়নী হবে না??? আর কিছু করতে হয় নাকি?? এই হচ্ছে আমার অবস্থারে দাদা।

দম্পতিঃ- বিয়ের পরের দিনই তো আমি আমার স্ত্রীকে কিছু বুঝার আগেই দীক্ষা দিয়ে দিলাম। কারন সবাই বলতো অদীক্ষিত স্ত্রীকে ছুতে নেই। এখন দেখি স্ত্রী, আমি আর কি জানি সে ঠাকুরের চেও বেশী জানে। বাবার পছন্দ ছেলে বৌ শিক্ষিত হতে হবে, সে তো এম এ পাশ, যাই তাই কথা নাকি। তাকে আর আমি কি বুঝাব। আছি খুব বিপদে বেশী কিছু বললে আবার রাতে ঘুম নষ্ট। কি দরকার আমি একাই স্বর্গে যাই তুমি থাক। না কি বলেন দাদা??

গৃহঃ- ঘরে স্ত্রী ছাড়া পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা। পিতা-মাতা এরা আমার পরম গুরু তারাতো অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বেশী জানেন। নিয়মিত গীতা পাঠ, কৃত্তন, বৈশ্বব সেবা নানা মন্দিরে ঘুরা ঘুরি করে, প্রসাদ বাসায় নিয়ে আসেন তাদের কে আমি আর কি শিখাব। কিছু বললে বলে আমরা কি কম বুঝি। তোমার ঠাকুর এটা ঠিক বলেন নাই ওটা ঠিক করেন নাই। কোথায় যাই বলেনতো। পুত্র ছোট মানুষ লেখা-পড়া, খেলাধুলা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। এত অল্প বয়সে ধর্মীয় কাজ কি ভাবে করবে। আরেকটু বড় হোক, তারপর দীক্ষা দিয়ে দিবো। আর মেয়ের বেলায় অন্য কথা, মেয়ে মানুষ কোথায় না কোথায় বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই স্বামী-স্ত্রী একসাথে যেখানে খুশী দীক্ষা নিক এতে আর আমার কি। তাই তো নাকি বলেন দাদা।

বাকী থাকল সমাজ আর রাষ্ট্র, এটাকে আমি ঠিক করবোই করবো। কারন ঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নাই। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়েই সমাজ গড়া। আমিতো নিজের, স্ত্রী ও পরিবারের কাছ থেকে একপ্রকার বিতারিত বলা যায়। গুরুভাইরা তো আর জানেন না আমার পরিবারের কথা। এখন শ্রীশ্রীঠাকুর কে ভালবাসলেও আমি তার বংশধরকে শ্রদ্ধা করি না, কারন তারাতো আর ঠাকুর নয়, না কি??  পরম দয়াল কোন বাণীতে নাকি বলেছেন বংশধররা আমাদের কাছে পূজনীয়। তা হয়তো বলেছেন কিন্তু সেটা তো আমাকে আর বলেননি। সেটা হতে পারে যারা ঠাকুরকে কম জানে তাদের জন্য। তাদের আচার্য না মানলেও হবে একজন ধনী লোক দেখে কাওকে সংঘের প্রধান করে রাখলে কি আর ক্ষতি হবে। সহ প্রতি ঋত্বিক তাদের কথা আর কি বলবো, আরে দাদা আমি যেই সব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম এর চেয়ে কত ভাল ভাল জানা লোকের সঙ্গে সঙ্গ করেছি কি আর বলল। বয়স কি কম হইছে আমার। আমারকি কোন সহ প্রতি ঋত্বিক কথায় হারাতে পারবে যে তার কথা মত চলবো।

চাকরি, ব্যবসা সব করে টাকা পয়সাতো ভালই কামাইলাম। এখন আমাকে এলাকার গুরুভাইরা সবাই কত ভালবাসে। এলাকার সব গুরুভাইরা আমাকে এক সপ্তাহে মন্দিরে না দেখলে খোজ খবর নেয়। ভালই লাগে ভাবতে, আর আমার মত এমন একজনকে নাকি স্টেজে উঠে ঠাকুর সম্পর্কে কথা বলতে দিবে না। থাকবোনা আর আপনাদের দলে। আমি একাই একটা সংগঠন তৈরি করবো দেইখেন, সেখানে আমিই একাই সব। দেখিয়ে দিব সমাজ আর রাষ্ট্রোকে কিভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের অবিকৃত ভাবধারায় প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

এই হচ্ছে আমার বা আমাদের অবস্থা। সংগঠিত মানুষ না থাকলে যেমন সংগঠন করা যায় না। তেমনি সমাজে ধার্মীক লোক না থাকলেও ধর্মকে রক্ষা করা যায় না। বর্তমানে আমার মত এমন ভক্ত বা কর্মী দিয়ে সৎসঙ্গ ভরে যাচ্ছে। কষ্ট হয় খুব। হৃদয়ে রক্তক্ষরণের ব্যথা কাওকে দেখাতে বা বলতে পারছি না তাই চুপিশারে আমার মত করে লিখে রাখলাম।

যেখানে আমি আমাকেই ঠিক করতে পরি নাই। সেখানে সমাজের বিষয় গুলো কিভাবে ঠিক করবো। আগে নিজে ঠিক হলে ধাপে ধাপে সব ঠিক হবে, এটাই আমার বিশ্বাস। পরমপিতা সবার মঙ্গল করুক।

জয় গুরু।

        


      
  

2 comments:

  1. akdom thik dada.... ami o akmot apnar sathe....amader dristyvongi thik korte hobe age nijike thik hote hobe...

    ReplyDelete
  2. akdom thik dada.... ami o akmot apnar sathe....amader dristyvongi thik korte hobe age nijike thik hote hobe...

    ReplyDelete