The Web This Blog

Sunday, April 18, 2021

সারাহ বেগম কবরী


 

কবরী, কবরী সারোয়ার, সারাহ বেগম কবরী, আমারা তাকে যে নামেই অভিভুত করিনা কেন বা ডাকিনা কেন তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের একজন নায়িকা যাকে বলা হতো ড্রিম গ্রাল, মিষ্টি মেয়ে, মিষ্টি হাসির নায়িকা। মৃত্যু সবারই হবে তিনিও চলে গেলেন। তারই স্বরনে আজকের এই লেখা।

পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল এর মেয়ে হিসাবে তিন জম্ম গ্রহন করেন ১৯ জুলাই ১৯৫০ বুধবার, বাবা আদর করে নাম রাখলেন “মিনা” মিনা পাল। পৈতিক নিবাস চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায়। জম্ম গ্রামের বাড়িতে হলেও তার শৈশব ও কৈশর কেটেছিল চট্টগ্রাম মহানগরীতে।

তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে কাজ শুরু করেন ১৯৬৩ সালে তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। ১৯৬৪ সালের দিকে পরিচালক সুভাষ দত্ত তার নতুন চলচ্চিত্রের জন্য একজন নতুন নায়িকা খুজছিলেন এমন সময় সুরকার সত্য সাহা সুভাষ দত্তকে মিনার খোঁজ দেন। মিনার ছবি দেখে সুভাষ দত্ত তাকে পছন্দ করেন এবং তাকে অডিশনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে বলেন। কণ্ঠ ও সংলাপ পরীক্ষার পর সুভাষ দত্ত তাকে তার পরিচালিত ও অভিনিত সুতরাং চলচ্চিত্রের “জরিনা” চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। সুতরাং সিনেমার লেখক সৈয়দ শামসুল হক মিনা নাম পরিবর্তন করে চলচ্চিত্রের জন্য তার নাম রাখেন “কবরী” যার অর্থ খোঁপা, চলচ্চিত্রের ভক্তরা পেল এক নতুন নায়িকা।

১৯৬৫ সাল পরিচালক জহির রায়হান তৈরি করলেন তার উর্দু ভাষার সিনেমা “বাহানা”।

১৯৬৮ সাল পরিচালক খান আতাউর রহমানের “সোয়ে নদীয়া জাগে পানি” ঐ বছরই পরিচালক দীলিপ সোম তৈরি করলেন “সাত ভাই চম্পা”, পরিচালক সুভাষ দত্ত একই বছর তৈরি করলেন “আবির্ভাব” চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই রাজ্জাক-কবরী জুটি শুরু হয়। এই বছর তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্র হল “বাঁশরী, “অরুণ বরুণ কিরণমালা”, “শীত বসন্ত” ও “চোরাবলী”।

১৯৬৯ সাল “পারুলের সংসার” পরিচালক কাজী জহির পরিচালিত “ময়না মতি”, পরিচালক নারায়ন ঘোষ মিতা পরিচালিত “নীল আকাশের নীচে” ব্যপক জনপ্রিয়তা ও ব্যবসায় সফল হয়।

জনপ্রিয়তার এই ধারাবাহিকতা অনুসারেই ১৯৭০ সালে রাজ্জাক-কবরী জুটি “যে আগুনে পুড়ি”, “ক খ গ ঘ ঙ”, “দর্প চূর্ণ”, “কাঁচ কাটা হীরে” ও “দীপ নেভে নাইচলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করেছিলেন। সে বছরই তিনি সুভাষ দত্তের “বিনিময়” চলচ্চিত্রে বাকপ্রতিবন্ধী এক তরুণী চরিত্রে অভিনয় করে প্রচুর প্রসংশা পান। একই বছর কাজী জহিরের পরিচালনায় “মীনা” নামের একটি উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র “স্মৃতিটুকু থাক”।

১৯৭২ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “জয় বাংলা” ও “লালন ফকির” লালন ফকির চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭৩ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “রংবাজ”। এই চলচ্চিত্রে তিনি পর্দায় লাস্যময়ী নায়িকা রূপে আবির্ভূত হন এবং তার চটুল অভিব্যক্তি দর্শকের নজর কাড়ে। চলচ্চিত্রটি তখন ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। একই বছর তিনি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত “তিতাস একটি নদীর নাম” -এর রাজার ঝি চরিত্রটি তার অন্যতম সমাদৃত কাজের একটি। তখন এটি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্র তালিকায় শীর্ষ স্থান লাভ করে।

১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় পরিচালক প্রমোদ করের চলচ্চিত্র “সুজন সখী। নায়ক ফারুকের সাথে জুটি করে এটি সেই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে দ্বিতীয় বার বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের “সারেং বউ” উপন্যাস অবলম্বনে ও পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্মিত “সারেং বউ” চলচ্চিত্রে নবিতুন চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। এবং একই সালে আবদুল্লাহ আল মামুনের “দুই জীবন” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আরেকটি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

কবরী প্রথমে চিত্ত চৌধুরীকে এক ব্যবসায়িকে বিয়ে করেন। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি সফিউদ্দীন সরোয়ারকে বিয়ে করেন। তখন তার নাম হয় কবরী সারোয়ার। ২০০৮ সালে তাঁদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী বিবাহিত জীবনে পাঁচ সন্তানের মা ছিলেন।

২০০৬ সালে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘আয়না’ মুক্তি পায়।

তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থ ‘স্মৃতিটুকু থাক’ প্রকাশিত হয়। যেখানে তার না জানা অনেক কথা তিনি লিখে গেছেন।

গত ৫ এপ্রিল ২০২১ সালে পরীক্ষায় কবরীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন রাতেই তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় পরে তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১৬ই এপ্রিল শুক্রবার রাত ১২ টা ২০ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত কবরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৭ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে বাসায় নেওয়া হয় সারাহ বেগম কবরীকে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখা হয় এবং পরে বাদ জোহর তার মরদেহ নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানেই গার্ড অব অনার প্রদানের পর তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা। এরপর সমাহিত করা হয় দেশের চলচ্চিত্রের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে।

এক নজরে তার অর্জিত কিছু পুরস্কার এর তালিকাঃ-

বছর

পুরস্কার

বিভাগ

চলচ্চিত্রের নাম

১৯৭৩

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

লালন ফকির

১৯৭৫

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

সুজন সখী

১৯৭৮

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

সারেং বৌ

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

১৯৮৮

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী

দুই জীবন

২০০৮

বাচসাস পুরস্কার

সম্মাননা পুরস্কার


২০০৯

বাচসাস পুরস্কার

আজীবন সম্মাননা


২০১৩

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

আজীবন সম্মাননা


 

যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন হে প্রিয় নায়িকা …..........

তথ্যসূত্রঃ- কবরী 

No comments:

Post a Comment