The Web This Blog

Wednesday, April 14, 2021

ব্যয় বুঝে আয় করো

সাধারনত একটি কথা খুবই প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে “আয় বুঝে ব্যয় করো”, মানে তোমার যেমন আয় তেমনি ব্যায় করা উচিৎ। কিন্তু যুগ-পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, “ব্যয় বুঝে আয় করো”। আজ আমি আমার কিছু অনুভুতির কথা বললো, কথাগুলো কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

শ্রীশ্রীঠাকুর ও তার পূর্ববর্তী যত যুগ-পুরুষোত্তম / অবতার পুরুষ পৃথিবীতে এসেছেন তাদের একটি প্রধান উদেস্য ছিল মানুষকে তার যোগ্যতার চেও যোগ্যতম করে তোলা। শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনেও তেমনি দেখা যায় অনেক ভক্তের জীবনে। তুমি আজ যেখানে যে অবস্থায় আছো আগামীকাল তার চেয়ে কিভাবে ভালো থাকা যায় তার চেষ্টা করতে হবে।

সত্যানুসরণ-এ শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, 'টে যাওয়াটা বরং দুৰ্ব্বলতা নয়কো, কিন্তু চেষ্টা না করাই দুৰ্ব্বলতা। তুমি কোন-কিছু ক'রতে প্রাণপণে চেষ্টা করা সত্ত্বেও যদি বিফলমনোরথ হও, ক্ষতি নাই। তুমি ছেড়ো না, ঐ অম্লান চেষ্টাই তোমাকে মুক্তির দিকে নিয়ে যাবে।

২০১৬ সালের দিকে যখন ভাবলাম এই বাকী জীবনটা না হয় শ্রীশ্রীঠাকুর এর কাজ করে অতিবাহিত করা যাক, তপোবিধায়না (দিত্বীয় খন্ড), বানী নং-২২৬ এই বানীটি কেমন যেন আমার জীবনে একটা পরিবর্তন এনে দেয়। ইংরেজী ২০১৭ সাল ৩ রা মার্চ আমি পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্ত্তী দাদার মাধ্যমে স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহন করি। আমরা যারা ধর্মকে ধারন করে বাচতে চাই তারা কেওই ধর্মের ১০০% নিয়ম পালন করি কিনা আমার প্রশ্ন। আমার নীতির সাথে ধর্মের যে অংশটুকু মিলে ততটুকুই পালন করে বাকিগুলো হয় পাশকাটিয়ে যাই না হয় বাদ দিয়ে চলি। শাস্ত্রমতে কলিযুগে মানুষ ৪ আনা (২৫%) ধর্ম পালন করবে বাকিটা অভিনয়। আমিও তাই,

শ্রীশ্রীঠাকুর অনেক বানী দিয়েছেন আমার- আমার- আমার জন্য বা আমাদের জন্য কিন্তু কে কয়টা জীবনে ধারন ও পালন করেন সেটা তার ব্যক্তিগত। কেও পালন করে শ্রীশ্রীঠাকুরের ৭ টি বানী, কেও ৩৭ টি আবার কেওবা ৯৭ টি। আমি কয়েকটি ধারন-পালন করি। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার দ্বারা কারও যেন কোন ক্ষতি না হয়, হয়তো সামর্থ থাকলে সাহায্য করি।

আলোচনা প্রসঙ্গে-৭ম খণ্ড, ২৮/১২/৪৫ শুক্রবার বিকালে আশ্রম-প্রঙ্গনে ঠাকুর কিছু ভক্তদের নিয়ে কথা বলছিলেন এমন সময় …...................

রবিদা তাঁর এক ভাগ্নের তৈরী ভাল কয়েক রকম ফাউন্টেন পেনের কালি (লাল, কালো ইত্যাদি) শ্রীশ্রীঠাকুরকে উপহার দিলেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর মহাখুশী হয়ে বললেন - খুব ভাল। দেখতে হয় যেন কোন খুঁত না থাকে। একেবারে বাজারের সেরা কালি করে তোলা লাগে। তোমরা যেটা ধ'রবে সেইটাতে efficiency (দক্ষতা)-র চুড়ান্ত দেখিয়ে দেওয়া চাই। লক্ষ্য রাখতে হবে, কত সুবিধায় কত ভাল জিনিষ দিতে পার। সেবাবুদ্ধি প্রবল হ'লে মাথাও খেলে তেমনি। আর দাঁওমারার বুদ্ধি হ'লে মাথা ভোঁতা হ'য়ে যায়। আরম্ভ করেছ তো খুব ভাল ক'রে লাগাও। এক-এক জন এক-এক ব্যাপারে successful (কৃতকার্য্য) হলে, তার দেখাদেখি আর দশজন আর দশটা ব্যপারে লেগে যায়। কেউ বড় একটা চাকরী পেয়েছে শুনলে আমার মনে হয়, সে একটা বড় গোলাম হ’ল, সে ও তার ছেলেপেলেরা পর্য্যন্ত যেন একটা যাতাকলের মধ্যে পড়ে গেল, যা' থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া ভার। তাই মনে খুব স্ফূর্তি পাই না। কিন্তু independently (স্বাধীনভাবে) কেউ কিছু করতে চেষ্টা করছে, তাতে successful (কৃতকার্য্য) হচ্ছে—এমনতর খবর পেলেই মনে হয় যেন আমি লাভবান হলাম। কারণ, তার ঐ অভিজ্ঞতার এবং যোগ্যতার একটা স্থায়ী মূল্য আছে। 

 

স্বস্ত্যয়নী ব্রত-মন্ত্র, সংস্কৃত

শ্রীবিগ্রহস্ত্বং পুরুষোত্তমো মে বন্দে ত্বাং সদনুকূলচন্দ্রম্।

ত্বং হীষ্টস্তমেব পূজ্যঃ প্রতিষ্ঠায়ৈ তে নিযুনক্তুবৃত্তিঃ।।

তবানুকূলং যদি সত্যকামং মুহুঃ কৃপয়া কুরু কৰ্ম্মনিষ্ঠম্।

সন্ধিৎসয়া, সেবয়া, যাজনেন সর্ব্বাংস্তএবানুরঞ্জয়ানি।।

রোগ-শোক-গ্রহদোষ-বুদ্ধিবিপৰ্য্যয়াচ্চ মে।

দারিদ্র্যাদি-সৰ্ব্বদৈন্যাৎ মুঞ্চ মে ত্বয়ি নিষ্ঠয়া।।

শান্তিং স্বস্তিং শুভং দেহি দেহি কর্ম্মসুকৌশলম্।

দেহি মে জীবনবৃদ্ধি নিয়তং স্মৃতিচিদ্যুতে।।


স্বস্ত্যয়নী ব্রত-মন্ত্র, বাংলা

শ্রীবিগ্রহ তুমি, পুরুষোত্তম তুমি, তোমার বন্দনা করি।

অস্তিবৃদ্ধির সদা অনুকূল তুমি, নিত্য তোমারে স্মরি।

তুমিই ইষ্ট, তুমিই পূজ্য, তুমিই সকল সার।

বৃত্তি আমার দাস তব প্রভু তোমারই প্রতিষ্ঠার।।

তব অনুকূল সত্য কামনায় এই কৃপা মোরে কর।

তোমারই কর্মে নিষ্ঠায় রাখ তোমাতেই রাখ দৃঢ়।।

সন্ধিৎসা-সেবা-যাজন-সাধনে তোমারই জীবনে প্রভু।

রঞ্জিত করি সবারে সদাই বিচ্যুতি না আসে কভু।।

রোগ-শোক আর গ্রহদোষ যত বুদ্ধিবিপর্যয়ের বাধা।

দারিদ্র-দীনতা মুক্ত কর হে নিষ্ঠা আমার তোমাতেই সাধা।

শান্তি স্বস্তি শুভ দাও মোরে দাও হে কর্মের যত কৌশল।

দাও প্রভু আরও জীবনবৃদ্ধি স্মৃতি-চেতনায় সদা প্রোজ্জ্বল।


এখানোও দেখা যায় ঠাকুর প্রতিদিন নতুন নতুন কর্ম কৌশল এর কথা বলছেন যাতে নিজের যগোত্যাকে বাড়ানো যায়। এই মন্ত্রটি যারা স্বস্ত্যয়নী ব্রত পালন করেন তাদের নিত্য পালনীয়।

যখন জানলাম শ্রীশ্রীঠাকুর চাকরি করা কে অপছন্দ করতেন তখন থেকেই নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তৈরি কারার চেষ্টা শুরু করি, কিন্তু কয়েকটি উদ্যেগ নিয়েও বেশ কয়েকবার ব্যবসায়ীক ভাবে আর্থিক ক্ষতি হবার পর এখন হতাশ। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে। কার কাছ থেকে দান বা অনুগ্রহ নিয়ে বাচতে নারাজ এতে আমার যোগ্যতাকে অপমান করা হয় বলে আমার মনে হয়। তাই অনেকদিন যাবত ভাবছিলাম কি ভাবে আয় বাড়ানো যায় কারন খরচ তো দিন দিন বাড়ছেই। চাকরি তো নির্দিষ্ট কিছু বেতন ও সুজোগ-সুবিধার মধ্যে সিমাবদ্ধ।

বেশ কিছু দিন খুজতে থাকলাম আমার কি কি যোগ্যতা আছে যা কাজে লাগিয়ে কিছু বারতি আয় করা যায়। সময়ের প্রয়োজনে আমাকে আবার চাকরির পাশাপাশি খুলতে হলো বারতি কিছু আয়ের পথ, যদি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিছুটা ভাল থাকা যায়। প্রায় ১৬ বছরের চাকরি জীবনে বেশ কয়েকজন ভালো ও উচ্চ মনের মানুষের সাথে পরিচয় হয় তেমনি একজন অফিস বস বলেছিলেন একটি গল্প সেটা দিয়েই লেখাটি শেষ করবো.....

তুমি যদি কর্মজীবনে ভালো থাকতে চাও কখনো কর্মজীবনের সাথে অন্য জীবনের অন্য কোন অংশের আচর যাতে না পরে। তুমি পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সবগুলো আলাদা আলাদা ঢাকনাযুক্ত ক্যমিকাল জারের মধ্যে রাখবে, যাতে একটির গন্ধ আরেটির মধ্যে না পরে মিক্স হলেই দেখবে কিছু না কিছু বিষক্রিয়া হবেই। বিশেষ করে কর্মজীবনের কোন অসুবিধার কথা কখনোই তোমার পরিবারের কারো সাথে আলোচনা করবেনা যদিনা তারা তোমার সহ-কর্মী হয়। আবার তোমার পরিবারের কোন সমস্যার কথা তোমার সহ-কর্মীদের সাথে আলোচনা করবে না। এতে করে তুমি দুই জায়গাতেই সম্যান নষ্ট করবে।



No comments:

Post a Comment