The Web This Blog

Saturday, May 5, 2018

সব সমস্যার সমাধান / জানিস ইষ্ট প্রতিষ্ঠান

আজ আমি আলোচনা করবো পরম দয়ালের একটি বাণী “সব সমস্যার সমাধান / জানিস ইষ্ট প্রতিষ্ঠান।”

এখন সাধারন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কিভাবে ইষ্ট প্রতিষ্ঠা করলে আমার জীবনের সব সমস্যার সমাধান হতে পারে? আমরা বড় বড় ধর্মগ্রন্থ পড়ে সেই বই-এর মতই হয়ে গেছি। শ্রীশ্রীঠাকুর যেখানে বলছেন ধর্ম মানে বাঁচা বাড়ার বিজ্ঞান। যা মানুষকে কিভাবে বাঁচতে এবং বাড়তে শিখায় এক কথায় তাই ধর্ম। আমরা যদি ধর্মটাকে সাধারন ভাবে বুঝার চেষ্টা করি তাহলেই জীবনটা সুন্দর হবে বলে আমার বিশ্বাস।
 
আমার জীবনের একটা গল্প দিয়ে আমার আলোচনা শুরু করবো। আমার প্রথম বিদ্যালয় ছিল সিরাজুল ইসলাম একাডেমী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়, গেন্ডারিয়া, ঢাকা। বিদ্যালয়টি কে বানিয়েছেন তার নাম জানতাম কিন্তু কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। ১ম থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করা কালীন বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষককে দেখিছি ও পরে নিয়মানুসারে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। কয়েক জনের নাম এই মহূর্তে মনে পরছে যেমনঃ- মজিবুর স্যার, মোঃ শাহজাহান স্যার, মজুমদার স্যার ইত্যাদি। তার সাধারনত ক্লাস নিতেন না। শুধু বিদ্যালয়টি কিভাবে চলবে, কিভাবে ক্লাস নিতে হবে ইত্যাদি ঠিক করে দিতেন। ক্লাস নিতেন কয়েকজন শ্রেনী শিক্ষক বা শিক্ষিকা যেমনঃ- ছালমা ম্যাডাম, শাহজাহান স্যার, জাহাঙ্গীর স্যার ইত্যাদি। তারা যেভাবে পড়াতেন আমরা সেই ভাবে পরতাম এবং পরীক্ষা দিতাম, যোগ্যতা অনুসারে আমরা ছাত্র-ছাত্রীরা এক একজন ক্রমানুসারে পাশ বা ফেল করতাম। শিক্ষকের কাছ থেকে লেখা-পড়া বুঝে নেবার ক্ষমতা এক একজনের এক একরকম ছিল। যার ফলে একই পড়া আমরা এক একজন নানা ভাবে বুঝেছিলাম। কিন্তু শিক্ষক একই সাথে একই বিষয় একই ভাবে সবাইকে পড়াতেন বা বুঝাতেন। আমি তখন যেমন বুঝেছিলাম তেমনই আমার জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রাইমারী ছাত্র জীবনের একদিনের একটি ঘটনা মাঝে মাঝে মনে পড়ে খুব। সম্ভবত ৪র্থ বা ৫ম শ্রেনীর একদিন অংক শিক্ষক ছিলেন না। আমাদের ক্লাসের পাশের কক্ষটি ছিল প্রধান শিক্ষকের রুম। শিক্ষক না থাকাই সেদিন স্বভাবতই আমাদের কাছে চাঁদ রাতের আনন্দ। No Class Do Furti. তাই প্রধান শিক্ষক ক্লাসে এসে বললেন তোমরা চুপচাপ কয়েকটি অংক দিয়ে বললেন অংক গুলা করতে থাকো আমি পরে এসে দেখবো। আর শিক্ষকের চেয়ারের উপর একটা বেত রেখে গেলেন ভয় দেখানোর জন্য যে যে দুষ্টামি করবে তাদের পেটানো হবো। যথারিতি ছাত্র অবস্থায় যেহেতু প্রথম বেঞ্চে বসার অভ্যাস সেই দিনও বসে ছিলাম। অংক শেষ করে শুরু করলাম সবাই হই-হুল্লোড়। সেই মুহুর্তে শিক্ষক এসে আমাকে সামনে পেল আর পিটালো, তারপরে আর কয়েকজন বন্ধুও তার ভাগিদার হয়েছিল। শ্রেনী শিক্ষক না থাকলে যা হয় আরকি।

আমি যখন খুব শান্ত অবস্থায় ধর্ম নিয়ে ভাবতে থাকি তখন জীবনের এই ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কে বানিয়েছেন তার নাম যাই হোক না কেন তাকে আমি বা আমরা দেখিনি। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ন্ত্রন করার জন্য যুগে যুগে যুগ-অবতাররা নানা সময়, নানা স্থানে, নানান রুপে আবির্ভুত হন মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। যাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য, বলা একই। তাদের বার্তা সঠিক ভাবে পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে পৌছে দেবার জন্য কিছু ধর্ম প্রচারকে তিনি নিয়োজিত করেন। ধর্ম প্রচারকেরা তাদের মতন করে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন স্থানে শুরু করেন ধর্ম প্রচার। আমরা যারা ছাত্র রুপি সাধারন মানুষ তাদের বুঝার কারনে আজ ধর্মে ধর্মে এত বিভেদ, এত পার্থক্য। যখনই আমরা যুগ-অবতারদের নির্দেশিত পথ থেকে কিছুটা বিচ্যুত হই তখনই আমাদের জীবনে নেমে নানা রকম দুর্যোগ। 
 
ব্যক্তিগত আলোচনা তো অনেক হলো এখন আসা যাক আসল কথায়। কি করে ইষ্ট প্রতিষ্ঠা করলে আমার সব সমস্যার সমাধান হবে। ফকির লালন শাহ্ একটি অমর গান-
যদি ভোগ দিলে ভগবান মিলতো
আল্লাহ মিলতো সিরনিতে।
বড় করে ভোগ সাজাইয়া
রাজা পারতো কিনিতে। 
 
এখন প্রশ্ন হতেই পারে আমার বাড়ির ছাদে ঠাকুরের সুন্দর একটা মন্দির করেছি, সেখানে সকাল-সন্ধা বাড়ির বৌ-ঝিরা পূজা প্রার্থনা সব করে। আমি ব্যবসার কারনে খুব একটা সময় পাই না, আরে দাদা টাকা আয় করতে হবে তো নাকি? এটা কি ইষ্ট প্রতিষ্ঠা হলো না? তাহলে আমার জীবনে এত সমস্যা কেন দাদা?

পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সবচাইতে বেশী বলতেন কিভাবে মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করা যায়। নিজের জীবনকে ভালবাসেন না এমন কি কেও আছেন।
সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গী বলতে যা বুঝিঃ-
সৎসঙ্গ:- Etymological meaning or root meaning of Satsang
সৎসঙ্গী:- সৎ’ বা (sat) সৎ- এসেছে ‘অস্’ ধাতু থেকে। অস্ – বাঁচা, থাকা, বৰ্দ্ধন।
অৰ্থাৎ যে যে আচরণ করলে সকলের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়া তথা জীবন-বৃদ্ধি অক্ষুন্ন থাকে তাহাই ‘সৎ’।
সৎ এ সংযুক্তির সহিত তৎ-গতি সম্পন্ন যারা তারাই ‘সৎসঙ্গী ’। আর তাদের মিলন ক্ষেত্রই হল ‘সৎসঙ্গ’
আপনি যদি সৎসঙ্গী হন তার মানে You are the companion of every one’s life and growth” (তুমি প্রতি প্রত্যেকের জীবন বৃদ্ধির সঙ্গী)

প্রথমে জানতে হবে ইষ্ট কে বা কি? সহজ কথায় গুরুভক্তি থেকেই মানুষ মঙ্গলের অধিকারী হয়। ঐ গুরুকেই ইষ্ট বলে। ইষ্ট মানে মঙ্গল, অর্থাৎ গুরুকেই অনুসরণ করলেই মানুষের মঙ্গল আসে। পরম দয়ালের কথা তো মিথ্যা হবার বিন্দু মাত্র অবকাশ নাই। তাহলে …............
তাঁর (ইষ্ট) সাথে যার নাই ভাব তারই হয় অভাব। পৃথিবীর কোন জীব বা প্রাণী সমস্যায় নাই এমন হতে পারে না। কারও সমস্যা পারিবারিক, কারও সামাজিক, কারও প্রাতিষ্ঠানিক বা কারও অন্য কিছু। যুগ-পুরুষোত্তমরা যখনই পৃথিবীতে এসেছেন তারা চাইতেন সবাই যাতে ভাল থাকেন। তাই তারা যুগপোযোগী কিছু বিধান বা নিয়ম কানুন দিয়ে গেছেন। যা সকল ধর্ম, মত, পথের জন্য পালনীয়। যারা বিশ্বাস করেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই এই যুগের জন্য এসেছিলেন তাঁর জীবন দশায় তিনি বলেননি এমন কোন বিষয় ছিল না। সব অবতার পুরুষরাই একই ভাবে সব কিছু বলেছেন।

আবারও ছাত্রজীবনের উদাহরন দিয়ে আমার লেখ শেষ করবো। ছাত্রজীবনে যারা শিক্ষকের লেখা-পড়া বিষয়ক প্রতিটি কথা যারা মনযোগ দিয়ে শুনেছে তারাই পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে। তেমনি যারা পরম দয়ালের প্রতিটি আদেশ নির্দেশ সঠিক ভাবে পালন করেছে তারাও কখনো বিফল হয়নি, হবেও না। তিনি ব্যক্তি থেকে সমাজ, রাষ্ট থেকে গোটা পৃথিবী কিভাবে চলবে তার প্রতিটি নির্দেশ দিয়েছেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাষায়। 
 
সহজ কথায় আমি বলতে পারি ইষ্ট প্রতিষ্ঠা মানে ইষ্টের নির্দেশগুলো নিজের জীবনে সঠিক ভাবে প্রতিফলিত করা। তাহলেই আমাদের সকল ধরনের সমস্যাগুলো ধারাবাহিক ভাবে সমাধান হবেই।

পরমপিতা সবার মঙ্গল করু

জয় গুরু।