সত্যনুসরণ
(The
Pursuit of Truth) ~~
শ্রীশ্রীঠাকুরের
অন্যতম প্রিয় ভক্ত ছিলেন শ্রী
অতুল চন্দ্র ভট্টাচার্য,
বাংলা
১৩১৬ সালে (ইংরেজী
১৯১০ সাল) কোন
এক সময়ে তার কর্ম-জীবনে
তাকে পাবনা থেকে অন্যত্র যেত
হয়। প্রভুর কাছ থেকে দুরে
থাকতে হবে এই বিরহ-বিচ্ছেদে
কাতর হয়ে তিনি পরমপিতার কাছে
প্রার্থনা রাখলেন তিনি যেন
তাকে তার আশিষবাণী স্বরুপ
কিছু লিখে দেন। পরমপিতা তখন
মাত্র দ্বাবিংশ বর্ষের (২২
বছর) একজন
যুবক, তিনি
ভক্তের মনোবাঞ্ছা রাখতে
শ্রীহস্তেই এক রাত্রে লিখে
দিলেন তাঁর অমৃত নির্দেশ।
এরই মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষ
পেল যুগ-পুরুষোত্তম
প্রদত্ত জীবন চলার সঠিক নির্দেশ।
এরপর ইংরেজী ভাষায় The
Pursuit of Truth নামে
অনুবাদিত হয় বাংলা ১৩২৪ সালে
(ইংরেজী
১৯১৮ সাল)।
পৃথিবীর বুকে যেন এই মন্দাকিনীর
পূন্য ধারা যুগ যুগ ধরে সঞ্জীবিত
থাকে তাই বাংলা ১৩২৫ সালে
(ইংরেজী
১৯১৯ সাল) তা
বাংলায় বই আকার মুদ্রিত হয়।
যাহা প্রতিটি সৎসঙ্গীর কাছে
নিত্য পাঠ্য ও পালনীয়।
আজ
আমি আলোচনা করব সত্যানুসরণের
প্রথম কথা। পরমপিতা লিখেছেন
“সর্ব্বপ্রথম আমাদের দুর্ব্বলতার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক'রতে
হবে। সাহসী হতে হবে,
বীর
হ'তে
হবে। পাপের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি
ঐ দুর্ব্বলতা।”
এখন
ভাববার বিষয় পরমপিতা এই কথাটাই
কেন আমাদের প্রথমে বললেন।
পৃথিবীতে যত অবতার পুরুষ মানব
দেহ ধারন করে পৃথিবীতে এসেছেন
তাদের প্রত্যেকের বলা একই,
ঠাকুরের
ভাষায় বর্তমান পুরুষোত্তম
হল পূর্বতনের নব কলেবর। যদি
আমরা দ্বাপর যুগে কুরুক্ষেত্র
যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
ও অর্জুনের কথোপকথনের দিকে
তাকাই। সেখানেও অর্জুন-বিষাদযোগে,
অর্জুন
যখন যুদ্ধ করবেন না বলে প্রভুকে
বলছেন মানে তিনি তার দ্বায়িত্ব
কাজ করতে পারবেন না তখন ভগবান
তাকেও এই মানসিক দুর্বলতা
ত্যাগ করে তার সঠিক দ্বায়িত্ব-কর্তব্য
করতে বলেছিলেন। যার ফলে পৃথিবীতে
শান্তি বিরাজ করতে পার।
সনাতন
ধর্ম মতে মানব জন্মের সার্থকতা
হলো মৃতুর পর সৃষ্টিকর্তার
সাথে বিলীন হয়ে যাওয়া।
সৃষ্টিকর্তার সাথে বিলীন
হওয়ার যে সঠিক পথ নির্দেশ তা
পাই আমরা যুগ-পুরষোত্তমের
কাছ থেকে। বর্তমান যুগের জন্য
আমাদের কাছে যুগ-পুরষোত্তমের
ভগবান হলেন প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর
অনুকূলচন্দ্র, তার
নির্দেশ পালন করাই মানব জীবনের
পরম সার্থকতা।
এখন
মূল আলোচনায় আসা যাক,
প্রথমে
জানতে হবে দুর্বলতা কাকে বলে,
কতপ্রকার
ও কি কি। দুর্বলতা (Weakness)
বলতে
সাধারন ভাবে যেটা বুঝি সেটা
হল শারিরীক দুর্বলতা। এটা
মানুষের নানা রকম হতে পারে,
যেমন-
কারো
উচ্চতা কম, কারো
ওজন কম, কারো
হাত-পা
বিকলাঙ্গ ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ধরনের সমস্যার হয়তো Horlicks,
Compain, Vitamin বা
নানা রকম ঔষুধ ইত্যাদি খেলে
বা Exercise করলে
সমাধান সম্ভব। কিন্তু আমি
যদি মানসিক ভাবে দুর্বল থাকি
তার কি সমাধান? আমার
মতে মানুষে মানসিক দুর্বলতা
শারিরীক দুর্বলতার চেয়ে অনেক
বেশী কঠিন যার সমাধান কেবল
মাত্র যুগ-পুরষোত্তমরাই
দিতে পারেন।
পরমপিতা
আমাদের সর্ব-প্রথমেই
দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করতে বলছেন,
সেটা
কি শারিরীক নাকি মানসিক
দুর্বলতা?
শারিরীক
দুর্বলতা নানারকম সাত্ত্বিক
খাবার ও কিছু সঠিক নিয়ম কানন
পালন করলে তার সমাধান হবে।
কিন্তু মানসিক দুর্বলতা কিভাবে
সমাধান করবেন,
তার
জন্য চাই সৎ-গুরুর
স্বরণ লওয়া বা সঠিক ধর্মনীতি
পালন করা। কারন পরম পিতাই
বলছেন এতটুকু দুর্বলতা থাকলেও
আমরা ধর্ম রাজ্যে ঠুকতে পারবো
না।
পরমপিতাই
এই প্রশ্নের উত্তর সুন্দর
একটি উদাহরণের মাধ্যমে দিয়ে
দিলেন। তিনি বলছেন “দুর্ব্বল
হৃদয়ে প্রেমভক্তির স্থান
নেই। পরের দুর্দ্দশা দেখে,
পরের
ব্যথা দেখে,
পরের
মৃত্যু দেখে নিজের দুর্দ্দশা,
ব্যথা
বা মৃত্যুর আশঙ্কা ক'রে
ভেঙ্গে পড়া,
এলিয়ে
পড়া বা কেঁদে আকুল হওয়া-ও-সব
দুর্ব্বলতা” ভগবান বুদ্ধদেব
যখন মানুষের নানান রকম দুঃখ,
কষ্ট,
রোগ,
শোক,
মৃত্যু
দেখলেন তিনি তার সমাধান খুজতে
থাকলেন। যখন তিনি তা জানতে
পারলেন কেন এই গুলো মানুষের
জীবনে আসে তখন তার সেই জ্ঞান
সকলে মাঝে বিতরন করলেন। তাই
প্রভু বুদ্ধদেব ত্রিশরন
মন্ত্রে বলছেন “বুদ্ধং
শরণং গচ্ছামি -
আমি
বুদ্ধের শরণ নিলাম। /
ধম্মং
শরণং গচ্ছামি -
আমি
ধর্মের শরণ নিলাম। /
সংঘং
শরণং গচ্ছামি -
আমি
সংঘের শরণ নিলাম।”
পরমপিতা
বলছেন “হ'টে
যাওয়াটা বরং দুর্ব্বলতা নয়কো,
কিন্তু
চেষ্টা না করাই দুর্ব্বলতা।”
পরম পিতার এই কথাটাই আমি সঠিক
ভাবে পালন করতে পারছি না,
তাহলে
কি আমার ধর্ম করার অধিকার নাই?
কারন
আমরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যাই,
এমন
অনেক কাজ আছে যা শুরু করার
আগেই পারবোনা ভেবে বাদ দিয়ে
দেই। এখনও নিয়মানুসারে আমি
অতি প্রত্যুষে উঠে ইষ্টভৃতি,
প্রার্থনা
করতে পারছি না। ঘুম থেকে উঠে
প্রার্থনা করলে বৌ বলে কি শুরু
করলা,
সারা
দিন এত কাজ করে রাত্রে একটু
শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না।
মিনসের সাথে বিয়ে হয়ে সোনার
জীবনটা আমার কয়লা হয়ে গেল।
তাহলে কি করা,
বনে
চলে যাবো নাকি দাদা কি বলেন??
এখন
পরীক্ষা দিতে হবে কাকে বেশি
ভালবাসি। মানসিক ভাবে ঠাকুরকে
বেশি হলেও শারীরিক ভাবে স্ত্রী
কে। ঠাকুরের ভাষায় মন-মুখ
এক না হলে সেখানে গলদ জমবে এবং
পাপ গিয়ে তার ভিতর বাসা বাঁধে।
প্রতিটি সৎসঙ্গ পরিবারই
স্বর্গের সুখ বিরাজ করবে যদি
আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রদত্ত
নির্দেশাবলী সঠিক ভাবে পালন
করতে পারি।
পরমপিতা
সবসময় ভাবতে বলছেন “স্বরণ কর
তুমি সাহসী,
স্বরণ
কর শক্তির তনয়,
স্বরণ
কর তুমি পরমপিতার সন্তান।
আগে সাহসী হও,
অকপট
হও,
তবে
জানা যাবে তোমার ধর্ম্মরাজ্যে
ঢোকবার অধিকার জন্মেছে।”
বিভিন্ন মেডিটেশন প্রতিষ্ঠানে
মেডিটেশন করার সময় তারাও
নিজেকে একজন অনন্য মানুষ,
সাহসী
মানুষ ইত্যাদি বলে মানসিক
শক্তি সঞ্চয় করে। পরিচিত এক
(Psychologist)
মানসিক
পরামর্শকারী বলেছিলেন,
আপনি
যখন মানসিক ভাবে খুব খারাপ
অবস্থায় থাকবেন তখন খোলা কোন
জায়গায় যেয়ে জোরে জোরে বলবেন
আমি গত দিনের চেয়ে আজ অনেক
অনেক ভাল আছি। এতে নাকি কিছুটা
হলেও মানসিক শান্তি লাভ হবে।
আমি
যখন মনে মনে ভাবি ঈশ্বর আমাকে
আগের চেয়ে অনেক ভাল রেখেছেন,
কারন
তিনি আমার পিতা,
তিনি
অবশ্যই ভাল জানেন কিসে আমার
মঙ্গল হবে,
তখন
এই বাণীটি মনে পরে “ভাবছ বসে
চলবে কিসে /
ভাববার
তুমি কে?
/ ভাববার
যিনি ভাবছেন তিনি /
তুমি
ভাব তাকে।”
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাটি দিয়েই আমার লেখা শেষ করছি -----
বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা--
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়॥
সহায় মোর না যদি জুটে নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ এ নহে মোর প্রার্থনা--
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।
নম্রশিরে সুখের দিনে তোমারি মুখ লইব চিনে--
দুখের রাতে নিখিল ধরা যেদিন করে বঞ্চনা
তোমারে যেন না করি সংশয়।
পরমপিতা সবার মঙ্গল করুন।
জয় গুরু।
No comments:
Post a Comment