The Web This Blog

Friday, July 30, 2021

আমার জীবনে Mentor এর ভুমিকা (শেষ অংশ)

{ প্রথম অংশ }

২০০৪ সাল থেকে আমার কর্মজীবন শুরু। জীবনের একটি দীর্ঘ সময় কেটেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। যখন যেই প্রতিষ্ঠানে ছিলাম সেখান থেকে চেষ্টা করেছি নতুন নতুন কিছু শিখতে ও নিজের মেধা ও জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে।

১। মাহে আলম খানঃ- MAK ভাই এর সাথে আমার পরিচয় ২০০৪ সাল থেকে। তিনি ছিলেন আমার Computer Hardware শিক্ষক। আমার কাছে অন্য সকল শিক্ষক ও Boss রা হলো জীবন গ্রন্থের একেকটি অধ্যায়। আর মাহে ভাই আমার জীবনের একটি অসমাপ্ত কাব্য। ২০০৪ থেকে এখন পর্যন্ত তিনি ছিলেন শিক্ষক, গুরু, Boss, বড় ভাই, কর্মজীবনের অভিভাবক ........... ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত আমার জীবনের যত সাফল্য তার সাথে কোন না কোন ভাবে মাহে ভাইয়ের অবদান রয়েছে। আমার bLog এ তাকে নিয়ে অনেক লেখা আছে।

২। এ এইচ রবিন ও সামিম স্যারঃ- আমার কর্মজীবন শুরু করি ২০০৪ সালে INFOBASE থেকে। যার কর্নধার ছিলেন এই দুই বন্ধু। আমার সৌভাগ্য এমন দুইজন মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। এই মূহর্তে রবিন স্যারের একটি কথা মনে পরছে, “কর্মজীবনে মনে রাখবে তোমার Senior রা কেও তোমাকে নিজ থেকে কিছু শিখাবে না, তোমাকেই তাদের কাছ থেকে তোমার বুদ্ধি দিয়ে শিখে নিতে হবে।”

সামিম স্যার একদিন তার গাড়িতে করে আমাকে বাসায় নিয়ে যায় তার কম্পিউটার ঠিক করতে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “অফিস চলাকালিন তুমি মনে রাখবে কাজ শেষ বলে কোন কথা নাই, তোমার কাজ না থাকলে অন্যেরা কি কাজ কিভাবে করছে শিখার চেষ্টা করবা। জীবনের কোন সময় কোন শিক্ষাটা কাজে আসবে তুমি জাননা। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখার চেষ্টা করবা।”

৩। তপন সাহাঃ- সাল ২০০৬, P.N. COMPOSITE এর শুরুর দিকে চাকরি তে যোগদান করি। তপন স্যার ছিলেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। একদিন রাত্রে আমার শিফট চলছিল। তেমন কোন কাজ ছিলনা স্যার এসে আমাদের Color Lab এ বসলেন ও অন্য সবার খোজ খবর নিচ্ছিলেন। আমার পরিচয়, লেখা-পড়া ইত্যাদি জানার পর তিনি কিছুটা অবাক হন আমার ছোট মামার নাম শুনে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস ও টেস্টটাইল সেক্টরে তার ব্যপক পরিচিতি। তিনি বলেছিলেন তুমিতো তাহলে বেশিদিন এখানে চাকরি করবে না। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আগামী দশ বছর পর তুমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাও। আমি অনেকটা সাহস নিয়েই বলেছিলাম স্যার নিজেকে একজন ব্যবসায়ি হিসেবে দেখতে চাই। আমার প্রতিষ্ঠানে তারাই কাজ করবে যাদের আমার মত মেধা আছে কিন্তু লেখা পড়ার সুযোগ বেশি পায়নি। স্যার শুনে কিছুটা হাসলেন।

তখন আমি পুরান ঢাকা থেকে প্রতিদিন বাসে কোনাবাড়ী, গাজিপুর অফিস করতাম। তিনিই আমাকে প্রথম বুদ্ধি ও সুযোগ করে দিয়েছিলেন চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে। তখন আমি ঢাকা থেকে কিছু কিছু Garments Accessories নিয়ে ফ্যাক্টরিতে Supply দেওয়া শুরু করি। ব্যবসার হাতেখড়ি সেই থেকে শুরু .......।

৪। জামিল আহমেদঃ- ২০০৪ বা ২০০৫ সালের দিকে জামিল ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় একটি কম্পিউটার মেলাতে। তখন আমি ও ম্যাক ভাইয়ের কয়েকজন ছাত্র OpenSource নিয়ে কাজ করছিলাম।

কর্মক্ষেত্রে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ দেয়ার অবদান জামিল ভাইয়ের। TigerIT তে আমি ২০০৭ সালে যোগদান করি। তখন অফিস ছিল মগবাজারে। কাজ যে বিনোদনের মাধ্যমেও করা যায় TigerIT তে যোগদান না করলে জানাও হতো না আমার। যখন কাজ তখন দিন রাত শুধুই কাজ, আবার যখন বিনোদন তখন শুধুই বিনোদন। অফিসের যেকোন কঠিন কাজ কিভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে করা যায় জামিল ভাইয়ের সাথে পরিচয় না হলে হয়তো শেখাই হতো না। ব্লগটি লিখতে বসে TigerIT এর সবারই মুখটি খুব মনে পরছে। আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর ও সর্নালী সময়টুকু পার করেছি এখানেই।  

ম্যাক ভাই ও জামিল ভাইয়ের হাত ধরেই Ankur ICT Development Foundation এ যোগদান করি। কাজের কারনেই তখন দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে যাওয়ার একটি সুযোগ হয় আমার। তখন আমার মাথায় দেশ ও দেশের সুবিধাবন্চিত মানুষের জন্য কিছু একটি করার চিন্তা মাথায় ঠোকে। সেই চিন্তাটি এখনো আছে শুধু সুযোগের অপেক্ষা। জামিল ভাইয়ের হাসিটি খুবই সুন্দর মাঝে মাঝে খুব মনে পরে তার সেই হাসির কথা।

৫। হরিপদ ব্যানার্জীঃ- ২০১৩ সালে Purchase Officer হিসাবে য‌োগদান করি Metro Knitting & Dyeing Mils এ। হরিপদ স্যার কে দেখে অবাক হতাম প্রায় ৬০ উর্ধ বয়স সেই বয়সেই তার যে কর্মদক্ষতা তা আমাদের অনেকেরই হার মানায়। তিনি মনে করতেন যে কাজে যে দক্ষ তাকে দিয়েই সেই কাজটি করানো উচিৎ, তাতে কাজটি সুন্দর হয়। তিনি সকলকে তার পুত্রসম ভালবাসতেন।  

৬। বলরাম সরকারঃ- জীবনের দীর্ঘ সময় চাকরি করার পর যখন ভাবলাম এখন স্থায়ী ব্যবসায় করা দরকার, কিন্তু অভিজ্ঞতা থাকলেও টাকা নেই। কারন চাকরির পাশা পাশি কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মক্ষিন হই অনেক। ২০১৬ সালে আমার কাকাত ছোট ভাই আমার প্রতি বিশ্বাস রেখে BS Trading নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। যার কাছে আমি কৃতজ্ঞ কারন এখানে না আসলে হয়তো ব্যবসার মূল জিনিসগুলো জানাই হতো না। বলরাম এর ধর্মীয় অনুভুতি, মানুষকে ভালবাসার ক্ষমতা, নতুন নতুন ব্যবসার উদ্ভাবনী শক্তি অসাধরন। এখনও অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করছি তার কাছ থেকে।     

প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-এর আরেকটি বানী দিয়ে লেখা শেষ করবো,

 

শিখলি যে তুই কত-শত

বোধ তো কিছুই ফুটল না!

স্মৃতির বলদ্ হ’লি শুধু

একমুঠো ভাত জুটল না?

No comments:

Post a Comment