The Web This Blog

Friday, January 8, 2021

স্টাইলিশ নায়ক জাফর ইকবাল


বাংলা
চলচ্চিত্রের প্রথম স্টাইলিশ নায়কদের অন্যতম জাফর ইকবাল । তিনি চিরসবুজ নায়ক হিসেবেই বেশী পরিচিত ছিলেন। আমার কাছে তার অভিনয়ের চেয়ে তার পোষাক পড়ার ধরন বা স্টাইল গুলোই বেশী ভাল লাগতো। ছোট হাতা টি-সার্ট ও জিন্স পন্টের সাথে ইন করার স্টাইল আমার এখনও মনে দাগ পড়ে আছে। আজ ৮ ই জানুয়ারী এই ক্ষণজন্মা নায়কের মৃত্যু দিবস, তাই তার সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করছি।

২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ সোমবার সালের ঢাকার গুলশানে জাফর ইকবালের জন্ম হয়। তার পিতার নাম এম ফজলুল হক ও মাতার নাম আসিয়া হক। তার গ্রামের বাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জ জেলায়। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ দেশের নামকরা সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এবং ছোট বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ একজন সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী। জাফর ইকবাল প্রথমে গায়ক হিসেবেই পরিচিতি পান, এরপর আসেন সিনেমায় নায়ক হিসেবে।

সংগীত পরিবারের ছেলে হিসাবে ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে রোলিং স্টোনব্যান্ড গড়েছিলেন। তিনি ছিলেন মার্কিন রক সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা Elvis Presley একজন অন্ধ ভক্ত।

সংগীত পরিচালক বড় ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে বদনামছবির হয় যদি বদনাম হোক আরওগানটি দিয়ে চলচ্চিত্র প্লেব্যাকে অভিষেক হয় তার। দেশের খ্যাতিমান সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সুরে অনেক গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরণী’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরওআশির দশকে কেন তুমি কাঁদালেশিরোনামে একটি অডিও অ্যালবামও প্রকাশ হয়েছিল তার। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর উদযাপন বিশেষ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছেগানটি।

খান আতাউর রহমান পরিচালিত আপন পরছবিটি ছিলো জাফর ইকবালের প্রথম ছবি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ক্ষণজন্মা এই তারকা। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। সূর্যসংগ্রামও এর সিকুয়েল সিনেমা সূর্যগ্রহণচলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে অভিনয় করেন। জাফর ইকবালের সাথে অভিনেত্রী ববিতা জুটি হয়ে প্রায় ৩০টির মত ছবি করেন।

১৯৭৫ সালে মাস্তানচলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় তাঁকে সে প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী একজন নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেন। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান নয়নের আলোসিনেমার মাধ্যমে। সর্বমোট ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জাফর ইকবাল। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল। তিনি প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। প্রেমিকসিনেমাটি তার প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা।

শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তার স্বাচ্ছদ্য বিচরণ। অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশকিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৮৪ সালে আনোয়ার পারভেজের সুরে রাজ্জাক অভিনীত বদনাম ছবিতে 'হয় যদি বদনাম হোক আরওতার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম। মূলত তিনি ছিলেন গিটারবাদক। ভালো গিটার বাজাতেন বলে সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে সেই সময় অনেক ছবির আবহসংগীত তৈরি করিয়েছেন। তার সেই ছবিগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি অবুঝ হৃদয়সেই সময় দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতা- দুই বোনের বিপরীতে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলেছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।

জাফর ইকবাল মানে কালজয়ী এক গায়ক আর অভিনেতার প্রিয় মুখ। তার গাওয়া গান ও অভিনীত চলচ্চিত্রের সুবাদে ভক্তদের হৃদয়ে এখনো ভালোবাসায় চির ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি। চিরকাল অম্লান থাকবেন ক্ষণজন্মা এই তারকা।

তার স্ত্রীর নাম সোনিয়া। যার দুটি চোখ দেখেই প্রেমে পড়েছিলেন আমার এই প্রিয় নায়ক। সেই চোখ দুটিই যখন জাফর ইকবালকে অপছন্দ করতে শুরু করলো তখন আর বেচে থেকে কি লাভ।  তাদের দুই সন্তান ছিল। চিত্র জগতের এক জনপ্রিয় নায়িকাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু তাকে জীবনে না পেয়ে মানসিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। তার এই বিপর্যয়ের কারণে পারিবারিক জীবনেও শান্তি পাননি। অশান্তির কারণে জাফর ইকবাল মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েন। মদ পান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শুরু করেন। পরবর্তীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। 

১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি বুধবার মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয় নায়ক জাফর ইকবাল। ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সবাইকে কাঁদিয়ে অকালে চলে যাওয়া এই জীবন গল্পের নায়ক জাফর ইকবাল।

এক নজরে তার অভিনীত চলচিত্রের নাম ও বিস্তারিত।

 

বছর

চলচ্চিত্র

ভূমিকা

পরিচালক

টীকা

১৯৭০

আপন পর

 

বশীর হোসেন

প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র

সাধারণ মেয়ে

শাহেদ

আর খান

 

একই অঙ্গে এতরূপ

 

 

 

১৯৭৫

ফেরারি

 

 

 

মাস্তান

 

 

 

বাঁদী থেকে বেগম

 

মোহসীন

 

১৯৭৬

সূর্য সংগ্রাম

 

আব্দুস সামাদ

 

এক মুঠো ভাত

জুম্মন

ইবনে মিজান

 

দিনের পর দিন

 

 

 

বেদ্বীন

 

 

 

অংশীদার

 

 

 

মেঘ বিজলী বাদল

 

 

 

আশীর্বাদ

 

 

 

মর্যাদা

 

 

 

১৯৭৮

ফকির মজনু শাহ

 

দারাশিকো

 

১৯৮৪

নয়নের আলো

জীবন

বেলাল আহমেদ

 

১৯৮৫

মিস লংকা

 

 

 

প্রেমিক

 

মঈনুল হোসেন

 

১৯৮৭

সন্ধি

ইমরান চৌধুরী

 

 

অপেক্ষা

 

দিলীপ বিশ্বাস

 

 

ফুলের মালা

 

 

 

১৯৮৮

যোগাযোগ

জাফর চৌধুরী

মঈনুল হোসেন

 

১৯৮৯

অবুঝ হৃদয়

 

 

 

১৯৯০

ভাইবন্ধু

 

 

 

ছুটির ফাঁদে

বিমল

শহীদুল হক খান

 

দোষী

 

 

 

বদনাম

 

 

 

প্রতিরোধ

 

 

 

গর্জন

 

 

 

১৯৯১

সন্ত্রাস

জয়

শহীদুল ইসলাম খোকন

 

১৯৯২

 

চোরের বউ

 

জহিরুল হক

 

শঙ্খনীল কারাগার

ফরিদ

মোস্তাফিজুর রহমান

 

অবদান

রাজা




 

 

জাফর ইকবালের গাওয়া আমার প্রিয় একটি গান দিয়ে শেষ করবো তার প্রতি শ্রদ্ধা। যার গীতিকার ছিলেন মনিরুজ্জামান মনির ও সুরকার আলাউদ্দিন আলী।


সুখে থাকো
ও আমার নন্দিনী
হয়ে কারো ঘরণী,
জেনে রাখো
প্রাসাদেরও বন্দিনী
প্রেম কভু মরেনি

 

চলে গেছ
কিছুতো বলে যাওনি

পিছুতো ফিরে চাওনি,
আমিও পিছু ডাকিনি
বাধা হয়ে বাধিনি


সুখে থাকো
ও আমার নন্দিনী
হয়ে কারো ঘরণী,
জেনে রাখো
প্রাসাদেরও বন্দিনী
প্রেম কভু মরেনি

 

তথ্যসূত্রঃ- জাফর ইকবাল

 

No comments:

Post a Comment