The Web This Blog

Monday, May 20, 2024

কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো – পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ ক’রে দেবেন।

আজকে আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ও উপলব্ধি থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্বহস্তে লিখিত সত্যানুসরণ গ্রন্থের ২৭ নং বাণীসমূহ একটি লাইন কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো-পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ করে দেবেন। নিয়ে আলোচনা করবো। লেখার উদ্দেশ্য কাউকে কষ্ট দেওয়া বা হেয় করার জন্য নয়, তবুও সম্পূর্ণ লেখা পড়ে ও বুঝে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত।

মূল লেখা শুরু করার পূর্বে আমরা অমৃত-নিষ্যন্দী স্বতঃ-উৎসারী ২৭ নং বাণীসমূহ সম্পূর্ণটি পড়ে নেই একবার…….

.......

ক্ষমা কর, কিন্তু অন্তরের সহিত; ভিতর গরম রেখে অপারগতাবশতঃ ক্ষমাশীল হতে যেও না।

বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপনহাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার উপর ন্যস্ত কর, ভাল হবে।
কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো-পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ করে দেবেন।
পিতার জন্য, সত্যের জন্য দুঃখ ভোগ করো, অনন্ত শান্তি পাবে।
তুমি সত্যে অবস্থান কর, অন্যায়কে সহ্য করতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ করো না, শীঘ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে।
.........

অনেক কঠিন কঠিন কথা ……..

ক্ষমা কর, কিন্তু অন্তরের সহিত; ভিতর গরম রেখে অপারগতাবশতঃ ক্ষমাশীল হতে যেও না। বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপনহাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার উপর ন্যস্ত কর, ভাল হবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যার ক্ষমতা আছে সে না হয় ভেতর গরম না রেখে ক্ষমা ক'রতে পারে। কিন্তু যার ক্ষমতা নেই, তার কি হবে? সে কি ক্ষমা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে বা কাউকে ক্ষমা করবে না? সহজ কথায় তোমার যদি কোন প্রকার অপারগতা থাকে, তুমি ক্ষমা করতে পারবে না। কেউ যদি কোনো দোষ করে আর তাকে যদি ক্ষমা করতেই হয়। তবে ভেতরে রাগ রেখে ক্ষমা করলে, এ ক্ষমা করার কোন অর্থ হবে না। অনেক কঠিন একটি ব্যপার, চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

আমার তো অনেক ক্ষমতা অর্থ, প্রতিপত্তি, লোকবল ইত্যাদি এখন আমার সাথে কেউ যদি অন্যায় করে তবে কি আমি শাস্তি দিতে পারবো না? আমি কেন পরমপিতা বা সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিবো, তিনি যা করেন তাই হোক? বর্তমান সমাজ তো তাহলে আমাকে কাপুরুষ বলবে। আমরা তো সামাজিক জীব।

এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শেষ সাতটি বাণীগুলোর মধ্যে প্রথমটি খুব মনে পরছে আমার……

ভগবান যীশুর ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় এই প্রথম উক্তিটিকে প্রথাগতভাবে "ক্ষমার বাক্য" বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই বাক্যটি ছিল যে, তখনকার রোমান সৈন্যগণ যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল এবং অন্য আরও যারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধকরণের সঙ্গে জড়িত ছিল তাঁদের ক্ষমার জন্য প্রভু যীশুর পরমপিতার কাছে প্রার্থনা।

পিতা, এদের ক্ষমা করো; কারণ, এরা জানে না এরা কী করছে।

কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো-পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ করে দেবেন।

এটা কেমন কথা হলো! মনে করেন আমি এলাকার একজন ক্ষমতাধর ব্যাক্তি বা বিচারপতি, এখন আমার সাথে বা দেশে একজন মানুষ যে কোন অন্যায়-অপরাধ করলো আমি তাকে সমাজসৃষ্ট সংবিধান অনুসারে শাস্তি দিলাম, সেখানে আমাকে কেন সৃষ্টিকর্তা শাস্তি দিবেন? সাধারন দৃষ্টিতে দেখলে বা শুনলে কেমন যেন অযৌক্তিক মনে হয় কথাটি! তাহলে তো সমাজ-রাষ্ট্রে অপরাধ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।

সনাতন ধর্ম-মতের বিশ্বাসী মানুষসহ অনেকেই মনেকরে পূর্বজন্ম কর্মফল অনুসারে মানুষ বর্তমান জীবন ভোগ করে থাকে। পৃথিবীতে যারাই মানব শরীর নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন সে, ভগবান-অবতার-মহাপুরুষ-যোগী-ধ্যানি-সাধরণ মানুষ সকলকেই কর্মফল ভোগ করতে হবে। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,- কর্মন্যে বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। যার বাংলা অর্থ করলে হয় কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কর্মফল তোমার হাতে নেই। তুমি যেমন ইচ্ছা কর্ম করতে পার কিন্তু তার ফল প্রকৃতির হাতে। প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে কর্মের প্রতিফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, মৃত্যুদণ্ড বা প্রাণদণ্ড হল আইনি পদ্ধতিতে কোনো মানুষকে শাস্তিস্বরূপ একপ্রকার হত্যা করা। যেসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে সাধারণত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে সেগুলোকে বলা হয়ে থাকে "মৃত্যুদণ্ডার্হ অপরাধ"। অতীতকালে প্রায় সকল দেশেই মৃত্যুদণ্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে শুধুমাত্র ৫৮টি দেশ প্রত্যক্ষভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে। ৯৫টি দেশ এই প্রথা ইতিমধ্যেই অবলুপ্ত করে দিয়েছে। এখন অনেক দেশেই মৃত্যুদণ্ড একটি বিতর্কের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছে। অনেক দেশেই মনে করে একটি অপরাধের জন্য অপরাধী ব্যাক্তিকে শাস্তি না দিয়ে সংশোধনের সুজোগ দিলে মানুষ পরবর্তীতে অপরাধ করা থেকে বিরত হয়।

একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, মনে করেন একজন চোর চুরি করলো, তাকে পুলিশ দিয়ে ধরে আনা হলো, সমাজের বিচারপতি তাকে শাস্তিস্বরুপ কিছুদিন জেল-জরিপানা দিলো, এতে কি তার চোর প্রবৃত্বি পরিবর্তন বা সমাজ থেকে চুরি বন্ধ হয়ে গেলো? দেখা যাবে কিছুদিন পর সেই চোর মুক্তি পেয়ে প্রথমে পুলিশের বাড়িতেই আবার চুরি করবে, কারন তাকে তো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে বাঁচতে হবে। কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্র যদি চোরকে বুঝাতে সক্ষম হয় চুরি করার ক্ষতিকারক দিকগুলো এবং তাকে বিকল্প একটি কর্মের ব্যবস্থা করে দিতে পারে তাহলে হয়তো এর সমাধান হতে পারে। এরকম অনেক সমাধান ও উদাহরণ আমাদের আশেপাশে দেখা যাবে।

প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। স্যার আইজ্যাক নিউটনের তৃতীয় সূত্র এর ওপর ভিত্তি করেই টিকে আছে এই পৃথিবী, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। শ্রীশ্রীঠাকুর এখানে বলতে চেয়েছেন, আপনি যদি কাহাকেও অন্যায়-অপরাধের জন্য যদি কোন শাস্তি নির্ধারণ করেন, তাহলে পরমপিতা বা প্রকৃতি প্রদত্ত আপনাকে সেই শাস্তির কিছু অংশ ভোগ করতে হবে। কারন যে অন্যায়ের জন্য আপনি তাকে দোষি সাব্স্ত করছেন, নিরবে ভেবে দেখবেন আপনার এমন কোন কর্ম, এমন কোন কাজ বা এমন কোন একটি পূর্ব ঘটনাই কোন না কোন ভাবে আজকের জন্য দায়ী। তাহলে কি একটি দোষের জন্য দুইপক্ষই দায়ী নয়? তাহলে শাস্তি শুধু একজন পাবে কেন?

পিতার জন্য, সত্যের জন্য দুঃখ ভোগ করো, অনন্ত শান্তি পাবে।
তুমি সত্যে অবস্থান কর, অন্যায়কে সহ্য করতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ করো না, শীঘ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে।

সত্য এসেছে অস্‌ ধাতু থেকে। অস্‌ শব্দের মানে অস্তিত্ব বা বিদ্যমানতা। এখানে সত্যে অবস্থান করার কথা বলা হচ্ছে, মানে ইষ্টকে ধ'রে রাখার কথা বলা হচ্ছে। অস্তিত্বের মূর্ত প্রতীক মানে যাঁকে অবলম্বন ক'রে চললে নিজের অস্তিত্ব বজায় থাকে, বিদ্যমানতা বজায় থাকে, তিনি তোমার ইষ্ট। সত্যে অবস্থান করা মানে ইষ্টের সাথে লেগে থাকা।

পবিত্র বাইবেলে প্রভু যীশু বলেছেন, যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহা হারাইবে; এবং যে কেহ আমার নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা রক্ষা করিবে যুগ-পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় সখা-ভক্ত অর্জুনকে গীতা জ্ঞান দান করেছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। এতো হাজার বছর পর সাধারণ মানুষ এখন তার মর্ম পড়ে অনুধাবন করতে চেষ্টা করছে। এই আধুনিক যুগে এসে বাংলা ১৩১৬ সালে শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রদ্ধেয় ভক্ত অতুলচন্দ্র ভট্টাচার্য কে তার অমৃত-নির্দ্দেশ জ্ঞান স্বহস্তে লিখে দিলেন। এখন যা প্রতিটি সৎসঙ্গীর নিত্য পঠিত গ্রন্থ।

আজকের লেখার একবারে উপসংহারে এসে বলতে হয়, অনেকের কাছেই হয়তো বিষয়টি পরিষ্কার নাও হতে পারে, প্রশ্নও থাকতে পার অনেক। লিখতে পারেন আমাকে, যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাও জানাবেন নির্বিধায় নিজেকে আরো ধন্য,  সমৃদ্ধ এবং সংশোধিত করতে পারবো তাহলে। শ্রীশ্রীঠাকুর-এর একটি বাণী- পুরুষোত্তম এর কৃতি আচরণ, তিনি না বুঝালে বুঝে কোন জন। তাঁকে বুঝবার জ্ঞান এখনো আমার হয়নি। শুধুই আমার ক্ষুদ্র উপলব্ধি থেকে বলতে পারি, আমাদের ভালো, মন্দ, মান, জ্ঞান সকল কিছু যদি তাঁর চরনে দিয়ে নিজে শুধু তাঁরই নির্দেশিত কর্ম করে যেতে পারি তাহলে হয়তো সুখে থাকতে পারবো।

শেষে শ্রীশ্রীঠাকুর-এর একটি বাণী মনে পরছে

ভাবছো বসে, চলবে কিসে,
ভাববার তুমি কে?
ভাববার যিনি ভাবছেন তিনি
তুমি ভাবো তাকে।

~ সকলকে জয়গুরু ~

No comments:

Post a Comment