The Web This Blog

Saturday, March 14, 2020

আমি থেকে যাজক



~ শুরু ~

আমি” এই কথা বা শব্দটি তে রয়েছে অনেক তেজ, গাম্ভীর্য, গর্ব, স্বার্থপরতা ও আত্নঅহংকারে ভরা। কিন্তু আমি থেকে যখনি “আমরা” বা “আমাদের” বলি তখনই সব আত্নঅহংকার কেমন যেন শূন্য হয়ে যায়। জীবনের প্রায় ৩৮ টি বসন্ত পার হয়ে গেলও এখনও আমি প্রকৃতির কাছে শিশুই রয়েই গেলাম শেখা হয়নি জীবনের অনেক কিছুই। বেশ কিছুদিন যাবত অন্য একটি লেখা মাথায় ঘুরাফেরা করছিল, কিন্তু বর্তমান লেখাটা আগে লিখতে হচ্ছে। 
 
প্রতি লেখার মত এই লেখাটি উৎসর্গ করছি আমার দীক্ষা দাতা সহ-প্রতি ঋত্বিক স্বর্গীয় শ্রীঅমর চন্দ্র শীল কে। লেখার প্রয়জনে অনেকের নামই আমাকে লিখতে হবে হয়তো অনেকের নাম বাদ পরে যেতে পারে কোন ভূল হয়ে থাকলে উভয়ের কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুরের একটি বানী দিয়ে লেখার মূল অংশ শুরু করবো,
সদ দীক্ষা তুই এক্ষুনি নে
ইষ্টেতে রাখ সম্প্রীতি,
মরণ তারণ এ নাম জপে
কাটেই অকাল যমভীতি।

১৯৯২ সালের জুন মাসে আমার এক কাকার বিয়ে হয় তখন আমার বয়স প্রায় ১০ বছর। বিয়ে উপলক্ষে পরিবারের অনেক আত্বীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আমার ঠাকুর দাদার ছোট ভাই সহ-প্রতি ঋত্বিক শ্রীঅমর চন্দ্র শীল, বিবাহ পর্ব শেষ হলে পরিবারের অনেক সদস্যের সেদিন দীক্ষা হয়। আমিও অনকেটা না বুঝেই জ্বিদ ধরলাম দীক্ষা নিবো, অনেক কিছুর পর আমার জ্বিদের জয় হলো আমাকেও দীক্ষা দিলেন আমি হয়ে গেলাম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের একজন না বুঝা শিষ্য।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাত-মুখ ধুয়ে কিছু সময় ইষ্টনাম জপ ও তারপর ইষ্টভৃতি করার মধ্যেই সীমিত আমার ইষ্টকাজ। এইভাবে চলতে থাকে দিন-মাস-বছর। ১৯৯৮ সাল আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়, অনেক অবসর। হটাৎ একদিন আমার স্কুল জীবনের বন্ধু চন্দন চক্রবর্ত্তীর সাথে দেখা, তখন সে একটা ইলেকট্রিক দোকানে কাজ করতো। নানান কথা বলার ফাকে সে আমাকে বলে আমি (চন্দন) যখন কারেন্টের কাজ করি তখন ঠাকুরের নাম জপ করতে থাকি তাহলে কোন বিপদ হয় না। আমি কিছুটা অবাক হই বলি ঠাকুর মানে কোন ঠাকুর? সে বলে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নাম শুনেছো তুমি? আমি বলি আমিওতো তারই দীক্ষিত। অনেকটাই মনের অজান্তে খুবই খুশী হই একেই বলে গুরু ভাই।

বন্ধুটির মাধ্যমেই জানতেপারি শাখারীবাজার একটি শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্দির আছে এবং প্রতি শুক্রবার সকালে গ্লাস ফ্যাকটরি, গেন্ডারিয়ার একটি বাসায় প্রার্থনা হয় এবং সেখানে বেশ লোক হয়। ছোটবেলা থেকেই শুক্রবার দেরি করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস, তাই আর সকালের প্রার্থনায় অংশগ্রহন করা হয় না। শুরু করলাম শাখারীবাজার মন্দিরে যাতায়াত। কেমন যেন একটা অভ্যাসে পরিনিত হয়ে গেল না গেলেই মনটা কেমন জানি করতো। তেমন কেও আমাকে চেনে না কারন আমি খুব কম কথা বলতাম। তার বেশ অনেকদিন পর একদিন শুক্রবার সকালে হাজির হই সেই গ্লাস ফ্যাকটরির বাসায় সেইখানে দেখা হয় গৃহ কর্তা শ্রীনারায়ন চন্দ্র চন্দ (বর্তমানে তিনি সহ-প্রতি ঋত্বিক), সহ-প্রতি ঋত্বিক শ্রীক্ষিতীন্দ্র চক্রবর্ত্তী, সহ-প্রতি ঋত্বিক শ্রীক্ষেত্রমোহন অধিকারী, সহ-প্রতি ঋত্বিক শ্রীহরেকৃষ্ণ বসু সহ অনেকের সাথে। প্রার্থনা শেষে ক্ষেত্রমোহন দাদু জিজ্ঞাসা করে নানান কথা কোথায় থাকি, কি করি, ঋত্বিক কে ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে বললো তিনি যাবেন মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে। তারপর প্রসাদ ও আনন্দ বাজার শেষে চলে আসলাম বাড়ীতে।

ইষ্টকাজে আমার যতটুকু চেষ্টা তার শুরু হয়েছিল আমার বন্ধুটির কাছ থেকেই। আমি আর চন্দন শুরু করলাম একে অপরের সাথে ঠাকুর বিষয়ক নানান আলোচনা, কখনো বুড়িগঙ্গা নদীর পারে, কখনো ধুপখোলা মাঠের ছাদ, কখনোবা নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জ ও তার আশেপাশের এলাকায়। এখনো মনে পরে মাঝে মাঝে ছুটি পেলেই সকালে নাস্তা খেয়ে বের হতাম হাটতে-হাটতে কথা বলতে-বলতে এমনও অচেনা জায়গায় চলে যেতাম যার নাম এখন আর মনেও নেই।

শাখারী বাজার মন্দিরে যাতায়াত করতে করতে অনেকের সাথেই পরিচয় হতে থাকে যাদের মধ্যে একজন আমার খুবই ভাললাগার একজন মানুষ সহ-প্রতি ঋত্বিক স্বর্গীয় নকুল কিশোর দাস, তার নামের আগে স্বর্গীয় লিখতে মন চাচ্ছিল না কিন্তু লিখতে হলো বাস্তবতা মেনে। তিনি এতা দ্রুত আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাবা যায় না। নকুল দা তখনও বিয়ে করেননি ছাত্র মানুষ তারপর স্বস্ত্যয়নী ব্রতধারী একজন। অনকে ভাল ভাল কথা বলতেন আমাদের এবং স্নেহ করতেন। 
 
যতটুকু মনে পরে ২০০০ বা ২০০১ সালের দিকে তালনবমী তিথি, হেমায়েতপুর, পাবনায় শ্রীশ্রীঠাকুরের আবির্ভাব তিথীতে সকলেই সেখানে যাচ্ছে, শুনে মনটা আমারও যেতে চাইলো। বাসায় বলাতে বাবা-মা রাজি হয়না, যদিও আমাকে ছোটবেলা থেকেই কোথাও তেমন যেতে দিতেন না। ঘটনাক্রমে আমার স্নেহের কাকাত ভাই বলরাম সরকারও যেতে চাইলো ঠাকুরবাড়ী। পাবনার একজন স্থানীয় কেচি ব্যাবসায়ী মানিক কাকা বলে আমরা তাকে চিনি। তিনি সব শুনে আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে যেতে রাজী হলেন। গাবতলী থেকে বাসে উঠে পাবনা যখন নামী তখন গভীর রাত। বাসে যেতে যেতে তিনি ঠাকুর বাড়ীর নানান গল্প করতে লাগলেন, বিশেষ করে আনন্দ বাজারের কথা, কারন ছোট বেলায় তিনি প্রায়ই আনন্দ বাজারের প্রসাদ খাবার জন্য আশ্রমে আসতেন। পাশেই পাগলা গারদ তার কথাও তিনি বললেন। 
 
শ্রীশ্রীঠাকুর সত্যানুসরণে বলেছেন, “যেখানে গমন করিলে মনের গ্রন্থির মোচন বা সমাধান হয়-তাই তীর্থ” তাই মানুষ তীর্থ ভ্রমন করে, কিছু পাওয়ার আসায়। যদি তীর্থে যেয়ে মনের গ্রন্থিগুলোর মোচন নাই হলো তাহলে কি লাভ গাটের টাকা ও সময় খরচ করে তীর্থে যাওয়ার। 
 
রাতটুকু সেই কাকার বাসাতেই থাকলাম, সকালে নাস্তা খেয়ে আমি, বলরাম, মানিক কাকা ও তার দুই ছেলে-মেয়ে সকলে ঠাকুর বাড়িতে যাই। সেখানে আগেথেকেই আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য পরিবারের অন্যান্ন সদস্যদের (কুষ্টিয়া থেকে আগত) সাথে থাকার জায়গা ঠিক করে রেখেছিলেন আমার ঠাকুর দাদা শ্রীঅমর চন্দ্র শীল। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর মন্দিরের পুরো কাজ শেষ হয়নি। আমরা সেখানেই থাকলাম। অনেক লোকের সমাগম। তখন আনন্দবাজারের প্রসাদ খাওয়া আর ঘুরাঘুরি ছাড়া কিছুই বুজতাম না। মাতৃমন্দিরে কিছু সময় ধ্যান করেছিলাম। মনে পরছে সহ-প্রতি ঋত্বিক শ্রীভক্ত পদ সরকার এর সাথে নগর কীর্তনের কথা, শারীরিক আকারে আমার মত তিনিও ছোট-খাট একজন মানুষ কি করে এতো শরীরে জোর পান ভেবে অবাক হয়েছিলাম। কিভাবে তিনটি দিন কেটে গেল মনে নেই। পরম নিশ্চিন্তে খাওয়া, ঘুম, শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুভব করা আরো কত কি, কোন ভয় বা সংকা ছিল না মনে। সেখান থেকে কুষ্টিয়া গেলাম সেখানে কয়েকদিন থেকে আবার ঢাকায়।

সময়ের নিয়মে দিন কাটতে থাকে, তারপর থেকে প্রতি বছর উৎসবে হেমায়েতপুর না গেলেই কেমন যেন লাগতো। তাই দল বেধে যাওয়া তারপর বাস রিজার্ভ করে যাওয়া এভাবেই আমার সৎসঙ্গের সাথে চলা শুরু। ধিরে ধিরে পরিচয় ও সম্পর্কে গভিরতা হতে থাকে, পিযুষ কান্তী ঘোষ (,প্র,), সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশেন এর বর্তমান সাধারন সম্পাদক পার্থ সারথি চক্রবর্ত্তী (,প্র,), মিলন দেব রনী, প্রহল্লাদ পোদ্দার, বিমল দাস, পিযুষ কান্তি দাস সহ অনেকের সাথে। চাকরি জীবনে আমি বছরে দুইবার বাধ্যতামুলক ছুটি নিতাম এক তাল নবমী তিথি হেমায়েতপুর যাওয়ার জন্য দুই মাঘী পূর্নিমা তিথি গ্রামের বাড়ি কালী পূজার জন্য। 
 

No comments:

Post a Comment