The Web This Blog

Tuesday, August 13, 2024

আহ্বান-ধ্বনি (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র)


০১। বন্দে পুরুষোত্তমম্!

০২। আর্য্যস্থান -- পিতৃস্থান

       উচ্চ সবার -- পূর্য্যমান।

০৩। অমর রহুক -- আর্য্যবাদ

       জাগুক উঠুক -- আর্য্যজাত।

০৪। ফুলিয়ে তোল -- দুলিয়ে তোল

       তাথৈ তালে -- আর্য্য-রোল।

০৫। অন্যে বাঁচায় -- নিজে থাকে

       ধর্ম্ম ব'লে -- জানিস্ তাকে।

০৬। ধর্ম্মে সবাই -- বাঁচে বাড়ে

       সম্প্রদায়টা -- ধর্ম না রে।

০৭। ধর্ম্মে জীবন -- দীপ্ত রয়  

       ধর্ম্ম জানিস -- একই হয়।

০৮। সমান বিয়ের -- সাম্য ধাঁজ

       অনুলোমে -- বাড়ায় ঝাঁজ।

০৯। পুরুষের বিয়ে -- উচ্চ ঘরে

       বাড়ে আপদ -- বংশ মরে।

১০। নিম্ন বর্ণে -- নারীর রতি

      এর বাড়া নেই -- ঘৃণ্য গতি।

১১। মুখে জানে -- ব্যবহারে নাই

      সেই শিক্ষার -- মুখে ছাই।

১২। অভ্যাস ব্যবহার -- ভাল যত

      শিক্ষাও তার -- জানিস্ তত।

১৩। শিক্ষকের নাই -- ইষ্টে টান

       কে জাগাবে -- ছাত্রপ্রাণ।

১৪। শিক্ষাগুরু থাক না অনেক

          শিখো যেমন পার,

       ইষ্টগুরু একই কিন্তু

নিষ্ঠা সহ ধর।

১৫। ইষ্ট তোমার দাঁড়িয়ে আছেন

জীবন ভূমির পারে ওপারে,

      আপন ক'রে নে তাঁরে তুই

কর্ম্ম আচার ব্যবহারে।

১৬। পয়সা নিয়ে ইষ্ট সেবা

পালন করতে পরিবার,

      বোধ বিদ্যা নিকাশেই ধায়

ব্যর্থ জীবন হয়ই তার।

১৭। দেব-দেবতা হাজার ধরিস্

আচার্য্য যা'র ইষ্ট নয়,

       স্পষ্টতর বুঝে রাখিস্

জীবন চলায় নেহাৎ ভয়।

১৮। ইষ্টনিষ্ঠায় ভাঙ্গন ধরায়

এমন সঙ্গই অসৎ বলে,

       ঊর্জ্জী পরাক্রমে নিরোধ

ক'রবি তা'দের অবহেলে।

১৯। নিষ্ঠা-প্রীতি দ্বৈধ হ'লে

রয়না বুকে কিছু,

      স্বার্থলুব্ধ হয়ই তারা

ঘোরেই তাহার পিছু।

২০। (যারা) স্বার্থ-সেবী হীন বুদ্ধি

ইষ্টনিষ্ঠ হয়না তা'রা,

       অশ্রেয়কেই ভজন করে

বোধ ও কৃতি শ্রেয় হারা।

২১। নিষ্ঠা মানেই লেগে থাকা

ইষ্টসত্তায় নিরন্তর,

       ভাঙ্গাচোরা হয় যেমনটি যার

জানিস্ সেজন তেমন ইতর।

২২। আচার্য্যগুরু, ইষ্ট যিনি

ত্যাজ্য ননকো তিনি কখন,--

       ত্যাজ্য হ'লে হয় না সার্থক

ব্যক্তিত্বতে তার জীবন।

২৩। আচার্য্যগুরু নন্ তো ত্যাজ্য

ভরজীবনে তিনি,

       সারা জীবনেই সাধতে হবে

তাঁহার নিদেশ বাণী।

২৪। বেত্তা যিনি তিনিই আচার্য্য

অন্য যা' সব বিশেষ,

       বিশেষ জেনে নির্ব্বিশেষে

হয়ে থাকেন অশেষ।

২৫। আচার্য্য ছেড়ে আচার্য্য ধরলি

মূর্খতাতে দিলি পা,

       জ্ঞানের বুকে মারলি ছুরি

লাভ হ'লো তোর ধৃষ্টতা।

২৬। টলায়মান যাদের নিষ্ঠা

বোধও তাদের তেমনি,

       অসৎকে তারা সৎই ভাবে

সৎকে উল্টো সেমনি।

২৭। ভণ্ড-ঠগী দেখবে যেথায়

ক'রো সামাল সবায়,

       কেউ যেন না ঠকে পড়ে

এদের ভাঁওতায়।

২৮। ব্যাহত যার মানসদীপ্তি

বিকৃত যা'র চলন,

       ইষ্টাসনে সদ্গুরু ছাড়া

হয় কি শিষ্ট মন?

২৯। বেত্তা পুরুষ মূর্ত যিনি

ধরেন ধৃতি প্রীতি দিয়ে,

       আচার্য্যত্বে উদ্ভাসিত

পুরুষোত্তম আসেন হয়ে।

৩০। সদ্গুরুই তো আচার্য্যগুরু

কৃতিতপে জানেন যিনি,

       কৃতিতপী সার্থকতায়

বিভূতি ঐ কৃতি তিনি।

৩১। ইষ্টার্থটির ব্যতিক্রম যা'

যতই মহান যেমন বলুক,

      ধরবি নেকো করবি নিরোধ

অসৎ-আপদ যাই আসুক।

৩২। ইষ্টপূরণ নয়কো বড়

আপোষ রফায় ভ্রষ্টগতি,

       নিশ্চয় জেনো অন্ধবধির

ধরেই তারে ক্রুর নিয়তি।

৩৩। ইষ্টাদর্শে পায়ে দ'লে

যেই গোলামী ভ'জে,

       জীবন পথে অনেক কাঁটা

লোভে বংশ মজে।

৩৪। সত্যিকার আদর্শ যিনি

সদ্গুরুও তিনি,

       বেফাঁস লোকে বিভেদ দেখে

বাস্তবে না চিনি।

৩৫। নিষ্ঠা ভাঙ্গা ঋত্বিক হ'লে

দীক্ষা তাহার ব্যর্থ,

       প্রবৃত্তিই তাদের স্বার্থ হ'য়ে

খুঁজে বেড়ায় অর্থ।

৩৬। দীক্ষা নিলে জানিস মনে

ইষ্টভৃতি করতেই হয়,

       ইষ্টভৃতি বিহীন দীক্ষা

কভু কিরে চেতন রয়?

৩৭। যা' ক'রেই বেড়াস না তুই

ভাবনা কি রে তোর,

       স্বস্ত্যয়নীর পাঁচটি নীতি

পালিস জীবন ভোর।

৩৮। অঘমর্যী যজ্ঞ ক'রে

পাতিত্য সব পুড়িয়ে দে,

       সপ্তার্চ্চিকে বরণ ক'রে

পঞ্চবর্হির স্মরণ নে।

৩৯। করেছ কি হবেই বা কি

যা' করেছ, হয়েছ,

       সুখ-সুবিধা অসুখ-বিসুখ

তেমনতরই পেয়েছ।

৪০। গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে

ভাবছ মনে সবই হ'ল,

       তা' নয় কিন্তু তা' তো নয়ই

নিষ্ঠা সহ যদি না পাল।

৪১। শঙ্খচক্রী -- আজও নারায়ণ

       ধর্মস্থাপনে -- জনম লন।

 

 

বন্দে আর্য্যপিতৃন্! বন্দে মাতৃবর্গান্!

বন্দেহহং কৃষ্টিদৈবতান্!

পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রজী কি জয়!

বন্দে পুরুষোত্তমম্!

R K Sharkar Bappy

Print by: bappria.com

01842-795563


Sunday, June 30, 2024

শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত ও আমি

সনাতন ধর্ম বা মতানুসারে অনেক পূজা-পার্বণ, ব্রত, উপবাস, নানান বর্ণ-গোত্রের বিভিন্ন নিয়ম কানুন দেখা যায়। বেদ ও বিভিন্ন পুরাণে ভিন্ন ভিন্ন ব্রতাদির কথা নানা ভাবে উল্যেক্ষ পাওয়া যায়। আজ আমি তেমনি একটি ব্রত নিয়ে আমার অভিমত ও অভিজ্ঞতা জানাবো, এখানে যে কোন ভুল বা সংশোধনের বিষয় যদি আপনার চখে আসে তবে আমাকে নির্বিধায় জানাবেন এতে আমি নিজিকে ধন্য মনে করে আরো সমৃদ্ধ করে নিবো। লেখার মূল তথ্যগুলো সৎসঙ্গ-র ঋষি পুরুষ পূজ্যপাদ শ্রীবিদ্যুৎরঞ্জন চক্রবর্ত্তী দাদার সংকলিত “প্রার্থনা” গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।

মূল লেখা শুরু করার পূর্বে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলতেই হয়, আমরা কেন ব্রত করবো? অন্ন-জল না খেয়ে, বিভিন্ন নিয়ন কানুনের ভিতর দিয়ে নিজের শরীর ও মনকে কষ্ট দিয়ে কিইবা লাভ! ব্রত কথাটির তাৎপর্যই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বা উন্নত কিছুকে বরণ করে তৎকর্ম্মনিষ্ঠ হওয়া এবং তার বিরোধী যা কিছু আছে তাকে অবরোধ করা। অপরদিকে প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে বৃত্তির যে-সাড়ায় মানুষের ভিতর অপকর্ম্মের সৃষ্টি হয়, নিয়মিত মনন ও আচরণে তাতে অধিগমন করে, তা আবিষ্কার করে তাকে এমনতরভাবে নিঃশেষ করা যাতে তা আর কোনক্রমেই নিজের চরিত্রের ভিতর চারিয়ে ঐ অপকর্ম্মের সৃষ্টি না করতে পারে।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলছেন, মানুষ যখন কদাচারদোষদুষ্ট হয় তখন তার সূক্ষ্ম সাড়াপ্রবণতা হারিয়ে ফেলে। প্রায়শ্চিত্ত মানেই হলো ব্রতপালন দ্বারা পুনরায় চিৎত্বে গমন করা বা নষ্ট সাড়াপ্রবণতাকে আবার নিজের জীননে ফিরিয়ে আনা। শাস্ত্র মতে প্রায়শ্চিত্তের কয়টা অধ্যায় আছে, (ক) খ্যাপন (খ) মার্জন (গ) স্খালন (ঘ) অঘমর্ষণ (ঙ) ঐকান্তিকতার সহিত শ্রেয়ানুশীলন।

ক) খ্যাপন বলতে, নিজের পাপের কথা উপযুক্ত যে কোন দরদী ব্যক্তিত্বের কাছে খুলে বলতে হবে।
খ) মার্জন বলতে, নিজেকে মেজে/পরিষ্কার করে নিতে হবে।
গ) স্খালন বলতে, নিজে নিজে ময়লাবিমুক্ত হওয়া বা Devoid of Dirties।  
ঘ) অঘমর্ষণ বলতে, পাপের চিন্তা একেবারে নাশ করে ফেলা বা পাপে একদম নির্লোভ হওয়া, আসক্তিবিহীন হওয়া।

আমরা যে-কোন রকম প্রায়শ্চিত্তই করি না কেন এই কয়টা নিয়মের মধ্য-দিয়েই যেতেই হবে। এইভাবে ক্রমে ক্রমে নির্লোভ হয়ে আমাদের পাপের প্রতি আসক্তিবিহীন হতেই হবে।সর্বশেষে প্রয়োজন ঙ) ঐকান্তিকতার সহিত শ্রেয়ানুশীলন। এই ধাপগুলি ধারাবাহিক ভাবে পালন ও অতিক্রম করতে পারলেই আমাদের প্রায়শ্চিত্ত করা সম্পূর্ণ হবে।

মনে রাখতে হবে ব্রতাচরণ বা প্রায়শ্চিত্ত কোন শাস্তি বিশেষ নয়। এটি একটি আত্মিক শক্তির বৃদ্ধি ও পাপক্ষয়ের এক মনোবিজ্ঞান ও দেহবিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়া। মানুষ ঠিক ঠিক প্রায়শ্চিত্ত তখনই করে, যখন সে আর পূর্ব্ব পাপের পুনরাবৃত্তি করে না। আত্মশক্তির উদ্বোধন ও বিকাশের জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরের বিধিনির্দিষ্ট ব্রত ও প্রায়শ্চিত্তাদি প্রয়োজনানুসারে আমাদের অবশ্যই পালনীয়।

যে কোন ব্রত শুরু করার আগের দিন নিষ্ঠার সাথে ব্রতধারীকে সংযমে থাকতে হয়। সংযমটা হলো একরকম ব্রতের প্রস্তুতি-পর্ব্ব। সংযমের দিন সৎসঙ্গীদের সকালে নিত্য করণীয় জপ-ধ্যান, ইষ্টভৃতি, স্বস্ত্যয়নী, প্রার্থনা ইত্যাদি করার পর শুচিশুদ্ধ অন্তঃকরণে শ্রীশ্রীঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণামী ও ভোজ্যাদি নিবেদন করতে হবে। তারপর পূর্ব্বাহ্নে হবিষ্যান্ন অর্থাৎ প্রথমে আতপচালে ডাল বাটা, কাঁচাকলা দিয়ে ফেনশুদ্ধ ভাত ঘি ও সৈন্ধব লবণসহ, পরে দুধ-কলা-গুড়সহ খেয়ে সারাদিন আর কিছু না খেয়ে সংযম পালন করতে হবে। তেমন প্রয়োজন হলে বা অশক্ত হলে রাত্রে একটু দুধ খাওয়া যেতে পারে। এইভাবে সারাদিন থেকে পরের দিন থেকে সঙ্কল্পিত ব্রত আরম্ভ করতে হবে। সংযমের প্রধান জিনিষ হল নিজের মনটাকে ইষ্টঝোঁকা করে তোলা ও নিজেকে নামময় করে তোলা।

বার দিনের প্রাজাপত্য-ব্রত এর কথা বেদে উল্যেক্ষ আছে, বিভিন্ন কারনে আমাদের এই ব্রত পালন করতে হয়। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত করতে বলেছেন আমাদের। শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত চারদিন ধরে করতে হয়। প্রথম দিন পূর্ব্বাহ্নে হবিষ্যান্ন, দ্বিতীয় দিন অপরাহ্নে হবিষ্যান্ন, তৃতীয় দিন অযাচিত- হবিষ্যান্ন অর্থাৎ না চাইতেই যদি কেউ হবিষ্যান্নে গ্রহণযোগ্য ভোজ্য দেয় তা' দিয়ে হবিষ্যান্ন এবং চতুর্থ দিন নিরম্বু উপবাস থেকে পঞ্চম দিন প্রাতে যথাসাধ্য ইষ্টপ্রণামী নিবেদন করে ব্রত উদযাপন করতে হবে।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশনের ঋত্বিক সম্মেলনে পূজনীয় শ্রীবিনায়ক চক্রবর্ত্তী-দাদা শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত বিষয়ক নানান আলোচনা করলেন এবং সকল কর্মীদের নির্দেশ দিলেন বৎসরে একবার এই ব্রত করতে হবে। অনেক কর্মীই তখন মনে মনে এই ব্রত করার সিদ্ধান্ত নেয় তাদের মধ্যে আমিও একজন। কিন্তু সমস্যা হলো ৫-৬ দিন ছুটি নিয়ে মন্দিরে থেকে এই ব্রত করতে হবে। কি করা যায় ভাবতে ছিলাম……….

আমি ও নারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক) গেন্ডারিয়া, ঢাকা থেকে প্রথম শিশু প্রাজাপত্য ব্রত করার সিন্ধান্ত নিলাম। নিয়মানুসারে আমাদের ঋত্বিক সচিব শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্র চক্রবর্তী (সহ-প্রতি ঋত্বিক) দাদার তত্বাবধানে এই ব্রত সম্পূর্ণ করতে হবে। তাই করা হলো, শ্রদ্ধেয় ঋত্বিক সচিব মহোদয় একটি তালিকা করে দিলেন কখন কি কি নিয়ম পালন করতে হবে আমাদের। আমরা সিন্ধান্ত নিলাম ঈদ-উল-আযহা এর বন্ধে গেন্ডারিয়া থেকে আমরা ব্রত করবো।

এখন কে কে করবে তার খোজ করতে শুরু করলাম আমরা। তখন কেরাণীগঞ্জে আমাদের মন্দিরের দ্বিতীয় তলা সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই ব্রত দ্বিতীয় তলাতেই শুরু করলাম আমরা। তারিখ ঠিক করলাম ঈদ-উল-আযহার পরদিন থেকে শুরু হবে তাই ঈদের দিন আমরা সবাই একত্রে মন্দিরে থাকবো। ১১ই জুলাই ২০২২ ইং থেকে ১৪ই জুলাই ২০২২ ইং আমাদের শিশু প্রাজাপত্য ব্রত চললো। 

যারা যারা করেছিলাম ……….

শ্রীনারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীপিযুষ কান্তি দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিমল দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীস্বপন কুমার বিশ্বাস (অধ্বর্য্যু), নরসিংদি
শ্রীরাম কৃষ্ণ সরকার (যাজক) আমি

ত্রিসন্ধ্যা স্নান করতে হবে, স্নানের সময় সাবান, শ্যাম্পু ও তেল ব্যবহার করা যাবে না, তোষক-বালিসে শ্বয়ন করা যাবে না, মা ব্যাতিত কোন নারীর মুখ দর্শন-কথা বলা নিষিদ্ধ ইত্যাদি।

আমাদের যা যা করতে হতো ……

প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহূর্তে নিদ্রাত্যাগ করার পর থেকে। (সময় কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে, এখানে উদাহরন স্বরুপ দেওয়া হল)

নাম ধ্যান ৪.০০ মিনিট পর্যন্ত
শয্যাত্যাগ ভোর ৪.০০ মিনিট
প্রাকৃতিক কাজ ৪.০১-৪.৩০ মিনিট
নামজপ ও ইষ্টভৃতি ৪.৩১-৪.৫৩ মিনিট
প্রার্থনা ভোর ৪.৫৪-৫.২৪ মিনিট
স্বাধ্যয় ভোর ৫.২৫-৭.০০ মিনিট
শব ধ্যান সকাল ৭.০১-৭.০৫ মিনিট
মৌনব্রত সকাল ৭.০৬-৭.৩০ মিনিট
ইষ্টালোচনা ৭.৩১-৮.০০ মিনিট
ধ্যান সকাল ৮.০১-৮.৪৫ মিনিট
স্বাধ্যয় সকাল ৮.৪৬-৯.৩০ মিনিট
মৌনব্রত ৯.৩১-১০.০০ মিনিট
নামধ্যান ১০.০১-১০.৪৫ মিনিট
স্বাধ্যয় ১০.৪৬-১১.৩০ মিনিট
ইষ্টালোচনা সকাল ১১.৩১- দুপুর ১২.১৫ মিনিট
নাম-ধ্যান দুপুর ১২.১৬-১.০০ মিনিট
মৌনব্রত দুপুর ১.০১-২.৩০ মিনিট
ইষ্টালোচনা বিকেল ২.৩১ -৪.০০ মিনিট
স্বাধ্যয় বিকেল ৪.০১-৫.০০ মিনিট
শবধ্যান বিকেল ৫.০১-৫.০৬ মিনিট
নাম-ধ্যান বিকেল ৫.০৬ -৫.৫০ মিনিট
মৌনব্রত বিকেল ৫.৫১-৬১৫ মিনিট
প্রার্থনার প্রস্তুতি গ্রহণ বিকেল ৬.১৫-৬.৫০ মিনিট
সান্ধ্যকালীন প্রার্থনা সন্ধ্যা ৬.৫১-৭.২০ মিনিট
ইষ্টালোচনা সন্ধ্যা ৭.২১-৭.৫০ মিনিট
নাম-ধ্যান রাত ৭.৫১-৮.৩৫ মিনিট
স্বাধ্যয় রাত ৮.৩৬-৯.০০ মিনিট
শবধ্যান রাত ৯.০১-৯.০৬ মিনিট
ইষ্টালোচনা রাত ৯.০৬-৯.৩০ মিনিট
নাম-ধ্যান রাত ৯.৩১-১০.১৫ মিনিট
শয্যাগ্রহণ ১০.১৬ মিনিট
নিদ্রা ব্রাহ্মমুহূর্ত পর্যন্ত

১৫ ই জুলাই সকালে প্রার্থনা শেষ করে জল গ্রহনের মাধ্যামে শেষ হয় আমাদের ১ম শিশু প্রাজাপ্রত্য ব্রত।

***************************

সময় ঘুরে আবার ২০২৩ এর ঈদ-উল-আযহা চলে এলো আমাদের দ্বিতীয় শিশু প্রাজাপ্রত করার দিন। ঈদ এর বন্ধে গেন্ডারিয়া থেকে আমরা, ৩০শে জুন ২০২৩ ইং থেকে ০৩রা জুলাই ২০২৩ ইং আমাদের ব্রত করলাম। তৃতীয় তলায় আলাদা আলাদা কক্ষে। 

যারা যারা করেছিলাম ……….

শ্রীনারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীপিযুষ কান্তি দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিমল দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীরাম কৃষ্ণ সরকার (অধ্বর্য্যু) আমি
শ্রীনারায়ন চক্রবর্ত্তী (স্বস্তয়নী)
শ্রীবলরাম সরকার
শ্রীসৌরভ পোদ্দার পাপ্পু

আরো কয়েকজন গুরুভাই আমাদের কয়েকদিন আগে ও পরে শিশু প্রাজাপত্য ব্রত শুরু করেছিলেন।

******************

আমার তৃতীয় শিশু প্রাজাপত্য ব্রত সম্পন্য করি, ১৮শে জুন ২০২৪ ইং থেকে ২১শে জুন ২০২৪ ইং ৩য় তালায় আলাদা আলাদা কক্ষে, একই ভাবে ঈদ-উল-আযহা এর বন্ধে

যারা যারা করেছিলাম ……….

শ্রীনারায়ন চন্দ্র চন্দ (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিধান চন্দ্র শীল (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিমল দাস (সহ-প্রতি ঋত্বিক)
শ্রীবিনন্দ সাহা রায় (সহ-প্রতি ঋত্বিক), নেত্রকোনা
শ্রীরাজিব কর্মকার (অধ্বর্য্যু), কক্সবাজার
শ্রীরাম কৃষ্ণ সরকার (অধ্বর্য্যু) আমি

আরো কয়েকজন গুরুভাই আমাদের কয়েকদিন আগে ও পরে শিশু প্রাজাপত্য ব্রত শুরু করেছিলেন।

সবাই আমার জন্য আশির্বাদ করবেন আমি যেন পরমপিতার একনিষ্ঠ সেবক হয়ে উঠতে পারি।

Wednesday, May 22, 2024

আর্য্য শাস্ত্র মনু সংহিতায় বর্ণিত “ইদং স্বস্ত্যয়নং” অর্থ কি?

মনুর ১ । ১০৬ ৷ সম্পূর্ন শ্লোকটি হলো “ইদং স্বস্ত্যয়নং শ্রেষ্ঠমিদং বুদ্ধিবিবর্দ্ধনং। ইদং যশস্যমায়ুষ্যমিদং নিঃশ্রেয়সৎপরং” ॥ যার বাংলা অর্থ অনেকটা “এই শাস্ত্র অধ্যয়নই স্বস্ত্যয়ন অর্থাৎ অভীষ্ট সিদ্ধিদায়ক এবং শ্রেষ্ঠ এই শাস্ত্রাভ্যাসে বুদ্ধি বৃদ্ধি হওত আয়ুঃযশ এবং মোক্ষ লাভ হয়”।

উক্ত প্রতিজ্ঞ যুক্তি সিদ্ধ মনুষ্য মাত্রকে এবং পশ্বাদিকে ব্যবহার করিতে হইতেছে এবং যে ব্যবহার করতেছে ফল প্রাপ্ত অদ্যাপি হইতেছে এবং চিরকাল হইবেক, অত্র সন্দেহ মাত্র নাই ৷

আলোচনা প্রসঙ্গ থেকে পাওয়া যায়, ১৩৫৫ বাংলা সনের ৩২শে আষাঢ়, শুক্রবার, কথা পসঙ্গে উমাশঙ্কর চরন দা শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রশ্ন করেছিলেন, “স্বস্ত্যয়নী জিনিসটা কী? ইষ্টভৃতি তো আছে।“

প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর উত্তরে বলছেন, স্বস্ত্যয়নী একটা ব্রতবিশেষ। পাঁচটি নীতি নিয়ে স্বস্ত্যয়নী। এতে ক্রমোন্নতির অন্তরায়গুলি যেমন নিরুদ্ধ হয়, তেমনি উন্নতিলাভের পক্ষে অপরিহার্য্য গুণগুলি আয়ত্ত হয়, যাতে ক’রে সর্ব্ববিধ অমঙ্গল দূরীভূত হ’য়ে মঙ্গলের পথ প্রশস্ত হয়। তাছাড়া, এতে গ্রহবিপাক খণ্ডে। গ্রহ মানে that which makes one'S intellect obsessed ( যা' মানুষের বুদ্ধিকে অভিভুত করে)। যেমন শনিগ্রহ, রাহুগ্রহ। কর্ম্মফলে গ্রহ কুপিত হলে যে-সব শান্তি- স্বস্ত্যয়ন করে, তার থেকে ঢের ফল হয় স্বস্ত্যয়নী নীতিগুলি নিখুঁতভাবে পালন করায়। এ ব্রতের মূল কথা হ’লো যুগপৎ এই পাঁচটি নীতি পালন করতে হবেঃ-

(১) শরীরকে ইষ্টপুজার যন্ত্র বিবেচনা ক’রে সুস্থ ও সহনপটু ক’রে তুলতে হবে।

(২) মনের কোণে যখনই যে-কোন প্রবৃত্তি উকি মারুক না কেনো, তাকে ইষ্টস্বার্থ ও ইষ্টপ্রতিষ্ঠার অনুকূলে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।

(৩) যে- কাজে যখনই যা' ভাল ব’লে মনে হবে, তা' কাজে ফুটিয়ে তুলতে হবে।

(৪) পারিপার্শ্বিকের বাঁচা-বাড়াকে নিজেরই বাঁচা-বাড়ার স্বার্থজ্ঞানে তাদের যাজনসেবায় ইষ্টে আকৃষ্ট ও যুক্ত ক’রে উন্নত-চলৎশীল করে তুলতে হবে।

(৫) আর, চাই নিজের কর্ম্মশক্তি, উদ্ভাবনীবুদ্ধি ও অর্জ্জনপটুতাকে বাড়িয়ে তুলে নিত্য বিধিমাফিক অর্ঘ্য-নিবেদন। এই সবগুলি আচরণ করলে তবেই স্বস্ত্যয়নী পালন করা হলো।

সূর্য্যের যেমন রোজই সংক্রমণ হচ্ছে। একটা range (এলাকা) থেকে যখন অন্য range-এ ( এলাকায়) যায়, তখন তাকে বলে সংক্রন্তি। স্বস্ত্যয়নী ব্রত নিষ্ঠাসহকারে প্রতিটি নীতিবিধিসহ পালন করতে থাকলে আমাদেরও তেমনি সূর্য্যের সাথে-সাথে নিত্য সেই ব্রতনুযায়ী জীবন-চলনার ক্ষেত্রে ধীরে-ধীরে এক নতুন জগতে সংক্রমণ অর্থাৎ অনুপ্রবেশ সংঘটিত হ’তে থাকে। এই ইষ্টাভিমুখী সংক্রমণের ফলে প্রবৃত্তি-অভিভূতির নাগপাশ থেকে আমরা ধীরে ধীরে মুক্তিলাভ করতে পারি, তখন গ্রহ বা গেরো বা complex -এর (প্রবৃত্তির) knot (গ্রন্থি) আমাদের কাবেজ করতে পারে কমই।

স্বস্ত্যয়নী যেহেতু একটা ব্রতবিশেষ। পাঁচটি নীতি নিয়েই শ্রীশ্রীঠাকুর প্রবর্তিত এই স্বস্ত্যয়নী। আলোচনা প্রসঙ্গে থেকে বুঝতে পারি এই ব্রত পালন করলে ক্রমোন্নতির-অন্তরায়গুলি যেমন নিরুদ্ধ হয়, তেমনি উন্নতি লাভের পক্ষে অপরিহার্য্য গুণগুলি আয়ত্ত হয়, যাতে করে সৰ্ব্ববিধ অমঙ্গল দূরীভূত হয়ে মঙ্গলের পথ প্রশস্ত হয় মানুষের। তাছাড়া, এতে গ্রহবিপাকও খণ্ডে বা কেটে যায়। এখানে গ্রহ মানে যা মানুষের বুদ্ধিকে অভিভূত করে রাখে। আমাদের কর্ম্মফলের কারনে গ্রহ কুপিত হলে যে-সব শান্তি-স্বস্ত্যয়ন করা হয়, তার থেকে ঢের বেশী ফল হয় স্বস্ত্যয়নীর  নীতিগুলি নিখুঁত ভাবে পালন করায়। শ্রীশ্রীঠাকুর-এর সকল দীক্ষিতদের ‘ইষ্টভৃতি’ দীক্ষা নিলেই করতে হয় দীক্ষাকে চেতন রাখবার জন্য, জীয়ন্ত রাখবার জন্য। আমরা জানি যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি অস্তিত্বকে ধরে রাখে কিন্তু আরোতর বর্দ্ধনার জন্য স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহণ ও পালন করে চলতেই হবে।

এই স্বস্ত্যয়নী কথাটা এসেছে ‘স্বস্ত্যয়ন’ কথা থেকে যার মানে – “সু+অস্তি+অয়ন”- অর্থাৎ প্রকৃষ্টভাবে বেঁচে থাকার পথ। মানব জীবনের চরম ও পরম সম্ভাব্যতাকে বাস্তবে ফুটিয়ে তোলাই হলো জীবনের সাধনা। তার জন্য আমাদের চাই দেহ, মন, ইচ্ছাশক্তি ও পারিপার্শ্বিকের ইষ্টানুকূল নিয়ন্ত্রণ, সামঞ্জস্য ও সমাধান ৷ তারই অপূর্ব্ব সঙ্কেত আছে স্বস্ত্যয়নীর পাঁচটি নীতির মধ্যে। স্বস্ত্যয়নী ব্রত পালন করা মানেই হলো ঐ পাঁচটি নীতিরই নিখুঁত অনুশীলন ও অনুসরণ করা।

সাধারণত অনেকেই মনেকরেন, স্বস্ত্যয়নী মানেই হচ্ছে নিরামিষ আহার, যারা স্বস্ত্যয়নী নেয়নি তাদের হাতে ভাত না খাওয়া, তিন টাকা ইষ্টার্ঘ্য হিসাবে পাঠিয়ে বাকি টাকা নিজের কাছে গচ্ছিত রাখা ইত্যাদি। আসলেই কি তাই? সনাতন ধর্মের মানুষ হাজার বছর ধরে তিন ধরনের খাবার গ্রহন করে আসছে, ক) সাত্ত্বিক আহার খ) রাজসিক আহার গ) তামসিক আহার। সংক্ষেপে এই বিষয়ে একটু বলি……

ক) সাত্ত্বিক খাবার হল, এমন সকল খাদ্য যা খাদ্যের উপর ভিত্তি করে তিনটি যোগিক গুণাবলীর মধ্যে গুণ ধারণ করে যা ‘সত্ত্ব’ নামে পরিচিত। প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় যুগের সাহিত্যে থেকে দেখা যায় ধারণাটি মিতাহার, যার আক্ষরিক অর্থ হলো “খাওয়ার মধ্যপন্থা”। তাছাড়া সাত্ত্বিক খাদ্য হল আয়ুর্বেদিক সাহিত্যে প্রস্তাবিত এক ধরনের চিকিৎসা। সাত্ত্বিক শব্দটি সত্ত্ব থেকে উদ্ভূত যা একটি সংস্কৃত শব্দ। সত্ত্ব হল ভারতীয় দর্শনের একটি জটিল ধারণা, যা অনেক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়ছে এবং এর অর্থ হল "বিশুদ্ধ, সারাংশ, প্রকৃতি, অত্যাবশ্যক, শক্তি, পরিষ্কার, সচেতন, শক্তিশালী, সাহস, সত্য, সৎ, জ্ঞানী, জীবনের মৌলিকতা" ইত্যাদি। এইভাবে সাত্ত্বিক খাদ্যের অর্থ হল খাদ্য ও খাওয়ার অভ্যাসকে অন্তর্ভুক্ত করা যা "বিশুদ্ধ, অপরিহার্য, প্রাকৃতিক, অত্যাবশ্যক, শক্তি প্রদানকারী, পরিষ্কার, সচেতন, সত্য, সৎ, জ্ঞানী"।

খ) রাজসিক বা রাজস খাদ্যকে মশলাদার, গরম, ভাজা বা অম্লীয় খাবার হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে। এই ধরনের খাবার দুঃখ বা অসুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। জাঙ্ক ফুড বা সংরক্ষিত খাবারকে প্রায়ই রাজসিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। 

গ) তামসিক খাবার বা স্ট্যাটিক ফুডও বলা হয়, এমন খাবার যা যোগব্যায়াম অনুসারে খাওয়া মন ও শরীর উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। মনের ক্ষতির মধ্যে এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত যা একটি নিস্তেজ, কম পরিমার্জিত চেতনার অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে। শারীরিক ক্ষতির মধ্যে এমন কোনো খাবার অন্তর্ভুক্ত যা কোনো শারীরিক অঙ্গের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিকর চাপ সৃষ্টি করবে।

এবার একটু জৈন নিরামিষবাদ জেনে নেই আমরা, জৈন সংস্কৃতি এবং দর্শনের অনুগামীরা অনুসরণ করে গঠিত। এটি হলো ভারতীয় উপমহাদেশ এবং তার বাইরে আধ্যাত্মিকভাবে অনুপ্রাণিত খাদ্যতালিকার সবচেয়ে কঠোর রূপগুলির মধ্যে একটি নীতি। জৈন ধর্মের রন্ধনপ্রণালী সম্পূর্ণরূপে ল্যাকটো বা নিরামিষ ভোজন। আমরা অনেকেই হয়তো যানি না, জৈনরা ছোট পোকামাকড় এবং অণুজীবের ক্ষতি আটকাতে এবং পুরো গাছটিকে উপড়ে ফেলাতে গাছটির মারা যাওয়ার সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করতেই তারা মূল এবং ভূগর্ভস্থ সবজি যেমন- আলু, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি খাবার খায় না।

এই নিয়ম জৈন তপস্বী এবং সাধারণ জৈনরা মেনে চলছে হাজার বছর ধরে। অহিংসা নীতির উপর ভিত্তি করেই সাধারনত মাংস, মাছ এবং ডিম খাওয়ার নিষেধগুলি তৈরি। জৈন-রা মনে করেন, প্রত্যেকটি কাজ যার দ্বারা কোন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যা বা আঘাতকে সমর্থন করে তাকে সহিংসতার কাজ হিসাবে দেখা হয় যা ক্ষতিকর কর্মফল সৃষ্টি করে থাকে। অহিংসার মূল উদ্দেশ্যই হল এই ধরনের কর্মের সঞ্চয় রোধ করা। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই সদিচ্ছার কার্যকরিতা ব্যাপকভাবে আলাদা মত রয়েছে।

নিয়ম অনুসারে লেখা শেষ করতে হবে, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র লোক কল্যানে মনু সংহিতার উক্ত মন্ত্রকে নবীকরণ করতে প্রবর্তন করলে স্বস্ত্যয়নী ব্রতবিধির । যদিও স্বস্ত্যয়নীর প্রবর্তন করেছিলেন প্রথমে ১৯৩৭ খ্রীষ্টাব্দে আর ১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দে ইষ্টভৃতি।

পঞ্চনীতি সমন্বিত এই স্বস্ত্যয়নী ব্রতের প্রবর্তন করেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর, বাণী আকারে বলেছেন……

১. শ্রীবিগ্রহের মন্দির ভেবে 
যত্ন করিস শরীরটাকে, 
সহনপটু সুস্থ রাখিস 
বিধি মাফিক পালিস তাকে;

২. প্রবৃত্তি তোর যখন যেমন
যেভাবেই উঁকি মারুক,
ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠাতে ঘুরিয়ে দিবি
তা’র সে ঝোঁক;

৩. যে-কাজে যা’ ভাল ব’লে
আসবে মনে তৎক্ষনাৎ 
হাতে-কলমে করবি রে তা’ 
রোধ করে তা’র সব ব্যাঘাত;

৪. পাড়াপড়শীর বাঁচা-বাড়ায়
রাখিস রে তুই স্বার্থটান,
তাদের ভালয় চেতিয়ে তুলিস
ইষ্টানুগ ক’রে প্রাণ;

৫. নিজের সেবার আগে রোজই
শক্তি মত যেমন পারিস,
ইষ্ট অর্ঘ্য ভক্তিভরে
শুচিতে নিবেদন করিস;
এই নিয়মে নিত্যদিন
প্রতি কাজেই সর্ব্বক্ষণ
স্বস্ত্যয়নীর নিয়মগুলি
পালিস দিয়ে অটুট মন;
ত্রিশটি দিন পুরে গেলে
মাসিক অর্ঘ্য সদক্ষিণায়
ইষ্টভোজ্য পাঠিয়ে বাকি
মজুত রাখবি বর্দ্ধনায়;
চিরজীবন এমনি ক’রে
ইষ্টস্থানে হয় নিরত,
তা’কেই বলে স্বস্ত্যয়নী
সবার সেরা মহান ব্রত।

 ~ জয়গুরু সকলকে ~

Monday, May 20, 2024

কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো – পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ ক’রে দেবেন।

আজকে আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ও উপলব্ধি থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্বহস্তে লিখিত সত্যানুসরণ গ্রন্থের ২৭ নং বাণীসমূহ একটি লাইন কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো-পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ করে দেবেন। নিয়ে আলোচনা করবো। লেখার উদ্দেশ্য কাউকে কষ্ট দেওয়া বা হেয় করার জন্য নয়, তবুও সম্পূর্ণ লেখা পড়ে ও বুঝে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত।

মূল লেখা শুরু করার পূর্বে আমরা অমৃত-নিষ্যন্দী স্বতঃ-উৎসারী ২৭ নং বাণীসমূহ সম্পূর্ণটি পড়ে নেই একবার…….

.......

ক্ষমা কর, কিন্তু অন্তরের সহিত; ভিতর গরম রেখে অপারগতাবশতঃ ক্ষমাশীল হতে যেও না।

বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপনহাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার উপর ন্যস্ত কর, ভাল হবে।
কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো-পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ করে দেবেন।
পিতার জন্য, সত্যের জন্য দুঃখ ভোগ করো, অনন্ত শান্তি পাবে।
তুমি সত্যে অবস্থান কর, অন্যায়কে সহ্য করতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ করো না, শীঘ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে।
.........

অনেক কঠিন কঠিন কথা ……..

ক্ষমা কর, কিন্তু অন্তরের সহিত; ভিতর গরম রেখে অপারগতাবশতঃ ক্ষমাশীল হতে যেও না। বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপনহাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার উপর ন্যস্ত কর, ভাল হবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যার ক্ষমতা আছে সে না হয় ভেতর গরম না রেখে ক্ষমা ক'রতে পারে। কিন্তু যার ক্ষমতা নেই, তার কি হবে? সে কি ক্ষমা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে বা কাউকে ক্ষমা করবে না? সহজ কথায় তোমার যদি কোন প্রকার অপারগতা থাকে, তুমি ক্ষমা করতে পারবে না। কেউ যদি কোনো দোষ করে আর তাকে যদি ক্ষমা করতেই হয়। তবে ভেতরে রাগ রেখে ক্ষমা করলে, এ ক্ষমা করার কোন অর্থ হবে না। অনেক কঠিন একটি ব্যপার, চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

আমার তো অনেক ক্ষমতা অর্থ, প্রতিপত্তি, লোকবল ইত্যাদি এখন আমার সাথে কেউ যদি অন্যায় করে তবে কি আমি শাস্তি দিতে পারবো না? আমি কেন পরমপিতা বা সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিবো, তিনি যা করেন তাই হোক? বর্তমান সমাজ তো তাহলে আমাকে কাপুরুষ বলবে। আমরা তো সামাজিক জীব।

এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শেষ সাতটি বাণীগুলোর মধ্যে প্রথমটি খুব মনে পরছে আমার……

ভগবান যীশুর ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় এই প্রথম উক্তিটিকে প্রথাগতভাবে "ক্ষমার বাক্য" বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই বাক্যটি ছিল যে, তখনকার রোমান সৈন্যগণ যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল এবং অন্য আরও যারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধকরণের সঙ্গে জড়িত ছিল তাঁদের ক্ষমার জন্য প্রভু যীশুর পরমপিতার কাছে প্রার্থনা।

পিতা, এদের ক্ষমা করো; কারণ, এরা জানে না এরা কী করছে।

কাহাকেও অন্যায়ের জন্য যদি তুমি শাস্তিবিধান কর, নিশ্চয়ই জেনো-পরমপিতা ঐ শাস্তি উভয়ের মধ্যে তারতম্যানুসারে ভাগ করে দেবেন।

এটা কেমন কথা হলো! মনে করেন আমি এলাকার একজন ক্ষমতাধর ব্যাক্তি বা বিচারপতি, এখন আমার সাথে বা দেশে একজন মানুষ যে কোন অন্যায়-অপরাধ করলো আমি তাকে সমাজসৃষ্ট সংবিধান অনুসারে শাস্তি দিলাম, সেখানে আমাকে কেন সৃষ্টিকর্তা শাস্তি দিবেন? সাধারন দৃষ্টিতে দেখলে বা শুনলে কেমন যেন অযৌক্তিক মনে হয় কথাটি! তাহলে তো সমাজ-রাষ্ট্রে অপরাধ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।

সনাতন ধর্ম-মতের বিশ্বাসী মানুষসহ অনেকেই মনেকরে পূর্বজন্ম কর্মফল অনুসারে মানুষ বর্তমান জীবন ভোগ করে থাকে। পৃথিবীতে যারাই মানব শরীর নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন সে, ভগবান-অবতার-মহাপুরুষ-যোগী-ধ্যানি-সাধরণ মানুষ সকলকেই কর্মফল ভোগ করতে হবে। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,- কর্মন্যে বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। যার বাংলা অর্থ করলে হয় কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কর্মফল তোমার হাতে নেই। তুমি যেমন ইচ্ছা কর্ম করতে পার কিন্তু তার ফল প্রকৃতির হাতে। প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে কর্মের প্রতিফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, মৃত্যুদণ্ড বা প্রাণদণ্ড হল আইনি পদ্ধতিতে কোনো মানুষকে শাস্তিস্বরূপ একপ্রকার হত্যা করা। যেসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে সাধারণত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে সেগুলোকে বলা হয়ে থাকে "মৃত্যুদণ্ডার্হ অপরাধ"। অতীতকালে প্রায় সকল দেশেই মৃত্যুদণ্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে শুধুমাত্র ৫৮টি দেশ প্রত্যক্ষভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে। ৯৫টি দেশ এই প্রথা ইতিমধ্যেই অবলুপ্ত করে দিয়েছে। এখন অনেক দেশেই মৃত্যুদণ্ড একটি বিতর্কের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছে। অনেক দেশেই মনে করে একটি অপরাধের জন্য অপরাধী ব্যাক্তিকে শাস্তি না দিয়ে সংশোধনের সুজোগ দিলে মানুষ পরবর্তীতে অপরাধ করা থেকে বিরত হয়।

একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, মনে করেন একজন চোর চুরি করলো, তাকে পুলিশ দিয়ে ধরে আনা হলো, সমাজের বিচারপতি তাকে শাস্তিস্বরুপ কিছুদিন জেল-জরিপানা দিলো, এতে কি তার চোর প্রবৃত্বি পরিবর্তন বা সমাজ থেকে চুরি বন্ধ হয়ে গেলো? দেখা যাবে কিছুদিন পর সেই চোর মুক্তি পেয়ে প্রথমে পুলিশের বাড়িতেই আবার চুরি করবে, কারন তাকে তো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে বাঁচতে হবে। কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্র যদি চোরকে বুঝাতে সক্ষম হয় চুরি করার ক্ষতিকারক দিকগুলো এবং তাকে বিকল্প একটি কর্মের ব্যবস্থা করে দিতে পারে তাহলে হয়তো এর সমাধান হতে পারে। এরকম অনেক সমাধান ও উদাহরণ আমাদের আশেপাশে দেখা যাবে।

প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। স্যার আইজ্যাক নিউটনের তৃতীয় সূত্র এর ওপর ভিত্তি করেই টিকে আছে এই পৃথিবী, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। শ্রীশ্রীঠাকুর এখানে বলতে চেয়েছেন, আপনি যদি কাহাকেও অন্যায়-অপরাধের জন্য যদি কোন শাস্তি নির্ধারণ করেন, তাহলে পরমপিতা বা প্রকৃতি প্রদত্ত আপনাকে সেই শাস্তির কিছু অংশ ভোগ করতে হবে। কারন যে অন্যায়ের জন্য আপনি তাকে দোষি সাব্স্ত করছেন, নিরবে ভেবে দেখবেন আপনার এমন কোন কর্ম, এমন কোন কাজ বা এমন কোন একটি পূর্ব ঘটনাই কোন না কোন ভাবে আজকের জন্য দায়ী। তাহলে কি একটি দোষের জন্য দুইপক্ষই দায়ী নয়? তাহলে শাস্তি শুধু একজন পাবে কেন?

পিতার জন্য, সত্যের জন্য দুঃখ ভোগ করো, অনন্ত শান্তি পাবে।
তুমি সত্যে অবস্থান কর, অন্যায়কে সহ্য করতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ করো না, শীঘ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে।

সত্য এসেছে অস্‌ ধাতু থেকে। অস্‌ শব্দের মানে অস্তিত্ব বা বিদ্যমানতা। এখানে সত্যে অবস্থান করার কথা বলা হচ্ছে, মানে ইষ্টকে ধ'রে রাখার কথা বলা হচ্ছে। অস্তিত্বের মূর্ত প্রতীক মানে যাঁকে অবলম্বন ক'রে চললে নিজের অস্তিত্ব বজায় থাকে, বিদ্যমানতা বজায় থাকে, তিনি তোমার ইষ্ট। সত্যে অবস্থান করা মানে ইষ্টের সাথে লেগে থাকা।

পবিত্র বাইবেলে প্রভু যীশু বলেছেন, যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহা হারাইবে; এবং যে কেহ আমার নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা রক্ষা করিবে যুগ-পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় সখা-ভক্ত অর্জুনকে গীতা জ্ঞান দান করেছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। এতো হাজার বছর পর সাধারণ মানুষ এখন তার মর্ম পড়ে অনুধাবন করতে চেষ্টা করছে। এই আধুনিক যুগে এসে বাংলা ১৩১৬ সালে শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রদ্ধেয় ভক্ত অতুলচন্দ্র ভট্টাচার্য কে তার অমৃত-নির্দ্দেশ জ্ঞান স্বহস্তে লিখে দিলেন। এখন যা প্রতিটি সৎসঙ্গীর নিত্য পঠিত গ্রন্থ।

আজকের লেখার একবারে উপসংহারে এসে বলতে হয়, অনেকের কাছেই হয়তো বিষয়টি পরিষ্কার নাও হতে পারে, প্রশ্নও থাকতে পার অনেক। লিখতে পারেন আমাকে, যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাও জানাবেন নির্বিধায় নিজেকে আরো ধন্য,  সমৃদ্ধ এবং সংশোধিত করতে পারবো তাহলে। শ্রীশ্রীঠাকুর-এর একটি বাণী- পুরুষোত্তম এর কৃতি আচরণ, তিনি না বুঝালে বুঝে কোন জন। তাঁকে বুঝবার জ্ঞান এখনো আমার হয়নি। শুধুই আমার ক্ষুদ্র উপলব্ধি থেকে বলতে পারি, আমাদের ভালো, মন্দ, মান, জ্ঞান সকল কিছু যদি তাঁর চরনে দিয়ে নিজে শুধু তাঁরই নির্দেশিত কর্ম করে যেতে পারি তাহলে হয়তো সুখে থাকতে পারবো।

শেষে শ্রীশ্রীঠাকুর-এর একটি বাণী মনে পরছে

ভাবছো বসে, চলবে কিসে,
ভাববার তুমি কে?
ভাববার যিনি ভাবছেন তিনি
তুমি ভাবো তাকে।

~ সকলকে জয়গুরু ~

Saturday, April 27, 2024

দেওঘর ভ্রমন, একাদশ দিন, ~ ১৮-০৪-২০২৪ই, বৃহস্পতিবার

দশম দিন ...

খুব ভোরে উঠে আমরা রওনা হলাম। অনেকগুলো ব্যাগ ও ট্রলির কারনে বিধান কাকা ও দিপক একটি টেক্সি এবং আমি ও কল্যান দা একটি টেক্সি করে শিয়ালদা জংশন পৌছাই। ভোর ৫ টার ট্রেনে করে শিয়ালদা থেকে বনগাঁ রওনা হই। বনগাঁ যখন নামি তখন প্রায় সকাল ৭টা। 

আবারও দুইটি সিএনজি যোগে আমরা পেট্রাপোল বর্ডার পৌছাই। ঈদের ছুটি শেষ, তাই বেশ ভিড় উপেক্ষা করে সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা পর আমরা প্রিয় জন্মভূমির মাটি স্পর্শ করি। তখন ঘড়ির কাটায় প্রায় ১০ টার কিছু বেশি সময় হবে।

কল্যান দা, বিধান কাকা ও দিপক একটি টেক্সি করে সরাসরি পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মাঝ পথে কুষ্টিয়াতে বিধান কাকা নেমে যায়। কোন বাসের ভালো সিট পাচ্ছিলাম না, তখন আমি ১১.৩০ মিনিটে Golden Line পরিবহনে ঢাকার উদ্দেশ্য়ে রওনা হই। ঢাকার বাসায় পৌছাই প্রায় বিকাল ৪ টার দিকে। 

এই ভাবেই শেষ হলো আমার প্রথম দেওঘর ও কলকাতা ভ্রমন। প্রায় ১০ দিনের এই সফরে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে, যা এক সাথে চলতে গেলে হতেই পারে। কিছু কথা সময়ের কারনে ও কিছু কথা ইচ্ছাকৃত আর লেখা হলো না। লিখলে হয়তো অন্যের ভাল লাগলেও অনেকেই কষ্ট পেতে পারে। চাওয়া-পাওয়ার এই জীবনে অনেক কিছুই যেমন না-চাইতে পেয়েছি, আবার অনেক কিছুই এখনও পাওয়া হয়নি। নাপাওয়া গুলো পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে আজকের মত এখানেই শেষ করতে হচ্ছে।

অনেক বছর পর একটি দীর্ঘ লেখার চেষ্টা করলাম। যারা এতক্ষন এই লেখাটি পরলেন তাদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আপনাদের যেকোন মতামত ও পরামর্শ আমাকে পরবর্তী লেখার অনুপ্রেরনা যোগাবে। তাই মতামত ও পরামর্শ দিতে ভুল করবেন না।

~অনুকূলঃ সদা প্রভুঃ পদ্মনাভ মনোবিভুঃ~

~ জয়গুরু সকলকে ~

আবার যাত্রা শুরু ....


 

  


দশম দিন, ~ ১৭-০৪-২০২৪ই, বুধবার

নবম দিন ....

আজ আমার ভ্রমনের শেষ দিন। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট আমরা। কল্যান দা তার এক জজমানের বাড়িতে গিয়েছিলেন ফিরে আসেন প্রায় রাত ১০ টার দিকে। আমি আর বিধান কাকা বাগুইআটি মন্দিরে সময় কাটাচ্ছি ও এই কয়দিনের ভ্রমনের নানান বিষয় নিয়ে গল্প করছিলাম। এতইটা গরম ছিল যে বারইরে যাবার ইচ্ছা হলো না। বিকালদিকে কিছুটা গরম কমলে আমরা বাগুইআটি ও এর আশে পাশের এলাকায় ঘুরা ঘুরি করলাম। 

সন্ধায় মন্দিরে সমবেত প্রার্থনা শেষ করলাম। রেলপুকুরের বিপরিতে একটি নিরামিষ দোকান আছে এই কয়দিনের নাস্তার ভরসা ছিল এটাই। শেষবারের মত কিছু নাস্তা সেরে নিলাম বিধান কাকা, দিপক ও আমি। মন্দিরে ফিরে এসে ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে। ভোরে রওনা হওয়ার অপেক্ষা।

রাতের খাবার শেষ করতে করতে প্রায় রাত ১২ টা। ভোর তিনটার দিকে আমাদের উঠতে হবে। আমি আর বিধান কাকা ঘন্টা খানেক ঘুমালাম। কল্যান দার তার ব্যাগ গুছাতে গুছাতে আর ঘুমাতে পারলো না। 

শেষ দিন ....

  

  


Friday, April 26, 2024

নবম দিন, ~ ১৬-০৪-২০২৪ই, মঙ্গলবার

অষ্টম দিন ....

কলকাতা প্রচন্ড গরম ছিল গত কয়েকদিন। গত রাত্রে বিধান কাকা তার মাসি বাড়ি নেমে যায় ও প্রহলাদ দা বাংলাদেশের উদ্দেশ্য়ে রওনা হয়ে যায়। ভোরে কিছুটা ঘুম দিয়ে সকালে আমি ও কল্যান দা নাস্তা সেরে চলে যাই বাজারে। প্রয়জনীয় কিছু কেনাকাটা করে রান্না করা হলো। সকালের খাবার শেষ করে আমরা চলে আসি বড় বাজার যা যা কেনাকাটা বাকি ছিল তা শেষ করলাম। কিছুক্ষন পর বিধান কাকা তার মাসি বাড়ি থেকে বড় বাজার এসে মিলিত হলাম সবাই। 

কেনাকাটা শেষ করে মন্দির ফিরে এসে সবাই সকলের ব্যাগ-পত্র গুছাতে থাকলাম। বলরাম তার ছেলেকে নিয়ে রাতে মন্দির আসলো। সবাই একসাথে রাতের খাবার শেষ করলাম। বলরাম ভোরে বাংলাদেশ ফিরে আসবে, তাই রাতেই বিদায় নিয়ে সবাই যার যার মত ঘুমিয়ে গেলাম।

দশম দিন ....



 

 

 


অষ্টম দিন, ~ ১৫-০৪-২০২৪ই, সোমবার

সপ্তম দিন ....

গত কয়েকদিনের মত আজও আমরা সবাই নহবত দেখার জন্য ব্রাহ্মমুহূর্তের পূর্বেই স্নান ও ইষ্টভৃতি শেষ করে চলে আসি উৎসব অঙ্গনে। তারপর উষাকীর্তন দিয়ে নগর পরিক্রমা করলাম। আজ উৎসবের শেষ দিন। অনেক ভক্তই গতকাল ফিরে চলে গেছেন। যারা ছিলেন তাদের অনেক ভক্তবৃন্দ উৎসব অঙ্গনে এসে হাজির হতে থাকে। কিছুক্ষন পর পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন দাদা এসে উপস্থিৎ হন সমবেত প্রার্থনাতে। 

প্রাতঃ ৪.৪৫ মিনিটঃ- সমবেত প্রার্থনা ও বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ (বাংলা, হিন্দি, নেপালী, অসমীয় ও ওড়িয়া)।

সকাল ৭.৩০ মিনিটঃ- শ্রীশ্রীঠাকুর পুজা, ভোগ নিবেদন ও প্রসাদ বিতরন।

সকাল ১০ ঘটিকাঃ- “যুক্ত জীবনই সুপ্ত জীবনকে জাগাতে পারে” – একথার তাৎপর্য বিষয়ক বোধবীক্ষনী আলোচনা সভা হলো।

সকালে বাজারে হাটা হাটা করার সময় দেখা হয়ে গেল ‘স্মৃতির মালা’ গ্রন্থের লেখক শ্রীমনিলাল চক্রবর্ত্তী দাদার সাথে। তার সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করে। স্বর্গীয় কেদারনাথ ভট্টাচার্য দাদার পুত্র, স্বর্গীয় কুমার কৃষ্ণ ভট্টচার্য (শ্রীশ্রীঠাকুর বিষয়ক বহু গ্রন্থের রচয়িতা) দাদার বাড়ি তে যাই কল্যান দা, প্রহলাদ দা ও আমি। সাথে ছিল স্বর্গীয় শ্রীনাথ দার পুত্র শ্রীউমা নাথ দা তিনিই আমাদের কুমার কৃষ্ণ ভট্টচার্য দাদার বাড়ীতে নিয়ে যান। “কেদারনাথ ভবনে” কিছুক্ষনপর আমাদের সাথে যুক্ত হলো স্নেহের কৌশিক চক্রবর্ত্তী (সহ-প্রতি ঋত্বিক) ও অর্কপ্রভ চ্যাটার্জী। সেখানে তার পুত্র বধুর আতিথিয়তায় আমরা সবাই মুদ্ধ। শ্রদ্ধয়া মা কুমার কৃষ্ণ ভট্টচার্য দাদার লেখা কয়েকটি বই এবং নিজ গাছের একটি করে লেবু আমাদের সকলকে উপহার দেন।

মধ্যাহ্নে আনন্দ বাজার বড় বাড়িতে সেরে কিছু সময় ভাত ঘুম দিলাম। আজও উৎসব অঙ্গনে অপরাহ্ন ৩ টায় ভক্তিগীতি চলছিল। আমার খুবই কাঙ্ক্ষিত একটি শ্রীশ্রীঠাকুর বিগ্রহ ক্রয় করি পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন দাদার কাছ থেকে। আজ “যাজন পথে” বইটি ক্রয় করে পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন দাদার কাছ থেকে স্মৃতি সাক্ষর সংগ্রহ করি। আজ রাতের ট্রেনে আমাদের কলকাতা ফিরে আসতে হবে তাই যাদের সাথে দেখা হচ্ছে তাদের কাছ থেকেই বিদায় নিয়ে নিলাম।

সন্ধা ৬.০৬ মিনিটেঃ- সন্ধা সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ ও ভক্তিগীতি হলো।

সন্ধা ৭.০০ মিনিটঃ- “শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবাদর্শে শিক্ষাব্যবস্থা”- এই বিষয়ক বিভিন্ন ভাষায় আলোচনা ও অধিবেশন চললো।

রাত ১০ টার দিকে আমরা কুম্ভূ ইক্সপ্রেস ট্রেনে করে কলকাতা ফিরে আসবো তাই কিছুটা আগেই আনন্দ বাজার শেষ করলাম সবাই। পূজনীয় সকল দাদাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত রাজেন্দ্র দাদার সিএনজি করে জাশিডিই জংশনে পৌছাই। সেখানে স্লিপিং কোচে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চেপে এক ঘুমেই চলে আসলাম হাওড়া জংশনে। তখন প্রায় মধ্য রাত, ৩.৩০ মিনিট। একটি টেক্সি করে আমি ও কল্যান দা চলে আসলাম বাগুইআটি মন্দির। শিয়ালদা জংশনে নামিয়ে দেয়া হলে প্রহলাদ দা, বিধান কাকা ও দিপক কে। 

 
 
 
   

Thursday, April 25, 2024

সপ্তম দিন, ~ ১৪-০৪-২০২৪ই, রবিবার

ষষ্ঠ দিন..... 

আজ ১ লা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা, ব্রাহ্মমুহূর্তে জাগরনী ও নহবতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। আজও আমরা সবাই নহবত দেখার জন্য ব্রাহ্মমুহূর্তের পূর্বেই স্নান ও ইষ্টভৃতি শেষ করে চলে আসি উৎসব অঙ্গনে। তারপর উষাকীর্তন দিয়ে নগর পরিক্রমা হলো। ধিরে ধিরে আরো ভক্তবৃন্দ উৎসব অঙ্গনে এসে হাজির হতে থাকে। কিছুক্ষন পর পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন চক্রবর্ত্তী দাদা এসে উপস্থিৎ হন।

প্রাতঃ ৪.৪৫ মিনিটঃ- সমবেত প্রার্থনা ও শ্রীশ্রীঠাকুরের আশীষবানী পাঠ হলো।

সকাল ৭.৩০ মিনিটঃ- শ্রীশ্রীঠাকুর পুজা, ভোগ নিবেদন ও প্রসাদ বিতরন।

সকাল ৯ টায়ঃ- পরিবারের ভাঙ্গন রোধে “নারীর নীতি” বিষয়ক মাতৃ সম্মেলন।

সকাল ১০ ঘটিকাঃ- ঋত্বিক ভবনে পূজ্যপাদ দাদার উপস্থিতিতে শুরু হয় ৯৮ তম, প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র চর্য্যাশ্রমের সর্ব্বভারতীয় ঋত্বিক সম্মেলন, সেখানে উপস্থিৎ ছিলাম আমরা।

মধ্যাহ্নে আনন্দ বাজার গ্রহন করে কিছু সময় ভাত ঘুম। উৎসব অঙ্গনে তখন অপরাহ্ন ৩ টায় ভক্তিগীতি চলছিল।

সন্ধা ৬.০৬ মিনিটেঃ- সন্ধা সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ ও ভক্তিগীতি।

পূর্বঘোষিত পূজ্যপাদ অধক্ষ্য শ্রীবিদ্যুৎরঞ্জন চক্রবর্ত্তী দাদাকে ভক্তদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হলো। অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই চমকপ্রদ ও সুন্দর একটি উপস্থাপনা। পূজ্যেপাদ দাদার সংক্ষিপ্ত জীবনি ও কিছু কর্মযোগ্য দেখানো হলো প্রজেক্টরে।

সন্ধা ৭.০০ মিনিটঃ- “নির্দ্বন্দ্ব আপূরয়মাণ আচার্য্যই জীবনবৃদ্ধির পথ”- এই বিষয়ক বিভিন্ন ভাষায় আলোচনা ও অধিবেশন চললো।

সেইদিন পরিকল্পনা করে সবাই বড় বাড়ীতে রাতের আনন্দ বাজার করলাম। সেখানে খেলার মাঠে কিছু সময় কাটিয়ে সেইদিনের কার্যক্রম শেষ হলো আমাদের।

অষ্টম দিন .....


    
 




ষষ্ঠ দিন, ~ ১৩-০৪-২০২৪ই, শনিবার

পশ্চম দিন.....

আজ ৩০ শে চৈত্র, প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্র চর্য্যাশ্রম কর্তৃক আয়োজিত “নববর্ষ পুরুষোত্তম স্বস্তি-তীর্থ মহাযজ্ঞ” এর প্রথম দিন। ব্রাহ্মমুহূর্তে জাগরনী ও নহবতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। নহবত অর্থ “কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে প্রহরে প্রহরে সানাই প্রভৃতির বৃন্দবাদন।“ আমরা সবাই নহবত দেখার জন্য ব্রাহ্মমুহূর্তের পূর্বেই স্নান ও ইষ্টভৃতি শেষ করে চলে আসি উৎসব অঙ্গনে। তারপর উষাকীর্তন দিয়ে নগর পরিক্রমা হলো। ধিরে ধিরে আরো ভক্তবৃন্দ উৎসব অঙ্গনে এসে হাজির হতে থাকে। কিছুক্ষন পর পূজনীয় শ্রীবৌধায়ন চক্রবর্ত্তী দাদা এসে উপস্থিৎ হন।

প্রাতঃ ৪.৪৫ মিনিটঃ- সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ (বাংলা, হিন্দি, নেপালী, অসমীয় ও ওড়িয়া) ।

সকাল ৭ টাঃ- আর্য্যকৃষ্টি পতাকা উত্তোলন এবং নববর্ষ পুরুষোত্তম স্বস্তি-তীর্থ মহাযজ্ঞ এর শুভ উদ্বোধন।

সকাল ৭.৩০ মিনিটঃ- শ্রীশ্রীঠাকুর পুজা, ভোগ নিবেদন ও প্রসাদ বিতরন।

এই সময়ে আমরা সবাই শ্রীশ্রীঠাকুর বাড়ি যাই প্রিয়পরমকে প্রনাম করতে। সেখানে পূজনীয় শ্রীঅর্কদূতি চক্রবর্ত্তী ওরফে বাবাই দাদার আলোচনা চলছিল। কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করে চলে আসলাম।

সকাল ১০ ঘটিকায়ঃ- “নিরামিষ আহারই স্বাস্থ্যপ্রদ ও জীবনীয়” বিষয়ক বোধবীক্ষনী আলোচনা সভা হলো। 

আজ আমদের সাথে যুক্ত হলো কুষ্টিয়া থেকে দিপক নামে বিধান কাকার এক গ্রাম্য ভাই। মধ্যাহ্নে আনন্দ বাজার শেষ করে সবাই কিছুটা ভাত ঘুম দিলাম। ইতি মধ্যে উৎপল কাকা, বলরাম ও তার ছেলে বিক্রমজিত বিদায় নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। 

অপরাহ্ন ৩ টায়ঃ- গীতি-আলেখ্য ও কীর্ত্তন চলছিল।

সন্ধা ৬.০৬ মিনিটেঃ- সন্ধা সমবেত প্রার্থনা, বিভিন্ন ভাষায় সত্যানুসরণ পাঠ ও ভক্তিগীতি।

সন্ধা ৭.০০ মিনিটঃ- “স্বস্ত্যয়নী মুক্তি আনে রাষ্টসহ প্রতি জনে”- কেন ও কিভাবে এই বিষয়ক বিভিন্ন ভাষায় আলোচনা ও অধিবেশন চললো।

বলতেই হয় শ্রদ্ধেয় গোপাল তেওয়ারী (সহ-প্রতি ঋত্বিক) দাদার সুন্দর সঞ্চালায় মুগ্ধ আমি। 

রাতে যথা সময়ে আনন্দ বাজার গ্রহন করে, শ্রীশ্রীঠাকুর বাড়ীর আশে পাশে ঘুরা ঘুরি করে সেই দিনের কর্যক্রম শেষ করলাম আমরা।